‘ইমু যথেষ্ট বড় হয়েছে।এখন ওকে আমাদের সাথে ঘুমাতে দেওয়া যাবে না।একা ঘুমানোর অভ্যেস করাও মেয়েকে।’
-কিন্তু ও একা ঘুমাতে পারবে বলে তো মনে হয়না।ছোট থেকে মেয়েটার আমায় বুকে নিয়ে ঘুমানোর অভ্যাস।
-আহা শায়লা!আজ নয় কাল অভ্যাস তো হয়েই যাবে তাইনা?মেয়ে এখন বড় হচ্ছে।কাল থেকে ইমুকে আলাদা বিছানায় ঘুমাতে বলবে।
-হু!
ইমুর বাবা রায়হান কি ভেবে হঠাৎ এ সিদ্ধান্ত নিলেন তা শায়লা বেগমের বুঝে আসছে না।কিন্তু একবার যখন এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তখন তার কথাই শেষ কথা।তাই আর কথা বাড়ালেন না শায়লা বেগম! রাত ৩ টা।বাহিরে প্রবল ধারায় বৃষ্টি পড়ছে।ঠান্ডা শীতল আবহাওয়া। সব বিবাহিতা দের কাছে এ যেন এক স্বর্গীয় আয়োজন!আর অবিবাহিতাদের কাছে রাতে বৃষ্টি হওয়া মানেই শান্তির এক ঘুম হবে!চারিদিকে নিরবের মেলা।জেগে আছে শুধূ অবিরাম বৃষ্টি আর ইমু।সবেমাত্র ৪র্থ শ্রেণিতে উঠেছে সে।এতক্ষণে তার এক ঘুম শেষ হওয়ার কথা!কিন্তু ঘুমাতে পারছে না সে।অদ্ভূত এক ভয় আঁকড়ে ধরেছে তাকে!
-মেয়ে সাথে থাকে বলে তোমাকে একদম কাছে পাই না।কখন সে জেগে যাবে এই ভয়ে!
-তাই বলে মেয়েটাকে আলাদা রাখা তোমার ঠিক হয়নি।
-এমনভাবে বলছো মনে হচ্ছে মেয়ে তোমার একার!আমার কেউ নয়?
-আমি কি তাই বলেছি?
-ধীরে ধীরে অভ্যাস হয়ে যাবে শায়লা।এখন ঘুমাও।অনেক রাত হয়েছে।
আশ্বাস পেয়ে শায়লা বেগমও স্বামীর বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লেন নিশ্চিন্তে! ইমুদের বাড়িটা ছিলো টিনের তৈরী।বাড়ির সামনের দিক টাতে খোলা মাঠ আর পেছনে ছিলো দোতলা এক বিল্ডিং।তবে সে বাড়িতে এখন কেউ থাকে না।পরিবার সহ সবাই বিদেশ চলে গিয়েছে।তাই বাড়ির পেছনের দিকটা নির্জন জঙ্গলের মতো পড়ে আছে।ওদিকটাতে কেউ যায় না তেমন!
বৃষ্টি শুরু হয়েছে রাত ১২ টায়।ইমু তখনও গভীর ঘুমে মগ্ন ছিলো।হঠাৎ অদ্ভূদ একটা শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায় তার।সেই যে ঘুম ভাঙ্গলো।এখন বাজে রাত ৩ টা।তবুও ঘুমাতে পারছে না ইমু। বাড়ির পেছন দিকটাতে মনে হচ্ছে কোনো বিয়ের উৎসব হচ্ছে।হিন্দুদের বিয়েতে যেমনটা হয় ঢাক ঢোলের আওয়াজ।শব্দটা ঠিক সেরকম!এতো রাতে ভূত পেত্নী ছাড়া কারই বা বিয়ে হতে পারে!তাও আবার ওরকম একটা জঙ্গলে! ভয়ে গাঁ কাপছে ইমুর।গলা দিয়ে কোনো আওয়াজ বের হচ্ছে না।শব্দ করলেই যদি ভূত রুমে চলে আসে!শুধু চোখ দিয়ে পানি ঝরছে।বালিশ অর্ধেক ভিজে গেছে।বৃষ্টি কিছুটা থেমে গেছে।ঠিক তখনি শরীরে কারো স্পর্শে কেঁপে উঠে ইমু।কে হতে পারে?ভূত নয়তো!
বি:দ্রঃসময় স্বল্পতার কারণে পার্ট বড় করতে পারিনি।বিষয়টা সবাই ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন!আর কারো গল্প কপি করলে অবশ্যই কার্টেসি সহ কপি করবেন! রাত ৩ টায় শরীরে কারো স্পর্শে কেঁপে উঠে ইমু!ভয়ে ভয়ে উপরে তাঁকাতে দেখে মাথার কাছে তার মা দাঁড়িয়ে আছে।
-মা তুমি?
-একি কাঁদছিস কেনো! এবার যেনো আরো বেশি করে কান্না পায় ইমুর।মাকে জড়িয়ে ধরেই জোরে কান্না শুরু করে দেয় মেয়েটি!
-কি হয়েছে মা?বল আমাকে!
-মা বাড়ির পেছনে ভূতের বিয়ে হচ্ছে!কোনোমতে কান্না থামিয়ে চোখ বড় করে ভয় ভয় কণ্ঠে উত্তর দিলো ইমু।
-ধূর বোকা!কি বলছিস?
-সত্যি বলছি মা!
-একা ঘুমাতে ভয় লাগছে মা?আমি ঘুমাবো তোর সাথে?
-হু!
শায়লা বেগম মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন।মেয়েকে ঘুম পাড়াতে গিয়ে তার নিজেরই ঘুমে দুচোখ বুজে আসছে।কিন্তু মেয়ের চোখে ঘুম নেই।তার মাথায় এখনও একটা চিন্তাই ঘুরছে।ভূতের বিয়ে!
-মা!
-হু! দুচোখ বন্ধ করেই ঘুম ঘুম চোখে উত্তর দিলেন শায়লা বেগম।
-আমি কিন্তু মিথ্যে বলিনি।
-কোনটা?
-ভূতের বিয়ে!
-আবার!বলছিনা ভূত বলতে কিছু নেই?খানিকটা বিরক্তির সূরে বলে উঠলেন শায়লা বেগম।
-কিন্তু আমি তো শুনলাম!
-কি শুনলি?
-ডাক ঢোলের আওয়াজ। হিন্দুদের বিয়েতে যেমনটা হয়! শায়লা বেগমের থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে ইমু আবার নিজেই বলো উঠলো…
-মা!ভূত টা কি তাহলে হিন্দু ছিলো? রাত অনেক হয়েছে।সারাদিন অনেক ধকল যায় শায়লা বেগমের উপর।তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ার অভ্যাস তার।মোটেও রাত জাগতে পারেন না। কথা বলতে বলতেই ঘুমিয়ে পড়েছেন তিনি।সাথে ইমুও মাকে জড়িয়ে ঘুমের জগতে চলে গেলো কিছুক্ষণের মধ্যে! সকাল ৯ টা!
-কি ব্যাপার শায়লা!এত বেলা হলো মেয়ে এখনো উঠছেনা কেনো?
-কাল রাতে ঘুম হয়নি মেয়েটার।ভূত নিয়ে কিসব উল্টা পাল্টা বকছিলো।কোনো স্বপ্ন দেখেছিলো হয়তো!
-তাই বলে ডাকোনি কেনো?১০ টা থেকে ক্লাস শুরু।ক্লাস বাদ দিবে নাকি?
-একদিন না গেলে কিই বা ক্ষতি হবে।আজ একটু ঘুমাক না!
-একদিনের পড়াও বাদ দেওয়া যাবে না।পড়া লেখা তো করোনি।তুমি কি করে বুঝবে পড়ালেখার মূল্য!যাও ডেকে তুলো মেয়েকে।
কথাটা শায়লা বেগমের বুকে শূলের মতো বিঁধলো।তিনি নিজেও পড়ালেখা করতে চেয়েছিলেন অনেকদূর।নিজের পায়ে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন।কম বয়সে বিয়ে হয়ে যাওয়ায় রায়হান সাহেব তাকে এস এস সি পরীক্ষাও দিতে দেননি।শায়লা বেগম বড়ই চাঁপা স্বভাবের মানুষ।মনের দুঃখ মনেই চেপে রাখলেন।মেয়েকে উঠিয়ে তৈরী করে হাসিমুখে বিদ্যালয়ে পাঠালেন। সন্ধ্যা ৭ টা থেকে আবহাওয়া কেমন যেনো হয়ে আছে।আকাশের অবস্থা ভালো না।মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে।যেকোনো সময় বৃষ্টি নামতে পারে।কিন্তু বৃষ্টি নামতে নামতে নামলো সবাই ঘুমিয়ে যাওয়ার পর।আজও সেই আগের কাহিনী ঘটলো!
বৃষ্টিও যেনো মজা নিচ্ছে ইমুর সাথে।একবার থামছে আবার জোরে বৃষ্টি হচ্ছে।এর সাথে এক অদ্ভূত ঘটনা ঘটছে।বৃষ্টি যত জোরে পড়ে ঢাক ঢোলের আওয়াজও যেনো ততো জোরালো হয়।বৃষ্টি থামলে আওয়াজও থামে! শায়লা বেগমের হঠাৎ মনে পড়লো রান্নাঘরের ফুটো দিয়ে পানি পড়ে যে জায়গায় সেখানে আজ বালতি রাখতে ভুলে গিয়েছেন!উঠতে ইচ্ছে করছে না যদিও।তবুও উঠলো সংসারের মায়ায়!বালতি টা জায়গা মতো রেখে এসে আবার ঘুমাতে যাওয়ার আগে একবার কি ভেবে ইমুর রুমে গেলেন শায়লা বেগম।গিয়ে দেখলেন আজও কাঁদছে মেয়েটা।তবে ঢাক ঢোলের শব্দটা আজ তিনিও পাচ্ছেন!
-ইমু!
-মা দেখেছো?আমি মিথ্যে বলিনি।আজও ভূতের বিয়ে হচ্ছে!
-ভূত বলতে কিছু হয়না মা।
-তাহলে শব্দ কিসের?
-হয়তো কেউ দুষ্টুমি করছে!দাঁড়া দেখছি।
শায়লা বেগম ধীরে ধীরে পেছনের দরজার কাছে গেলেন।মেয়েকে আশ্বাস দিয়ে এবার তার নিজেরই সাহস হচ্ছে না দরজা খোলার।সত্যিই ভূতের খপ্পরে পড়বে না তো! দোয়া দরূদ পড়তে পড়তে দরজা খুলে যা দেখতে পেলেন তা দেখার জন্য তিনি নিজেও প্রস্তুত ছিলেন না।হো হো করে হেসে উঠলেন শায়লা বেগম! মায়ের হাসি দেখে ভয়ে কুঁচকে যাওয়া ইমুও দৌড়ে আসলো দরজার কাছে! এসে দেখতে পেলো তার পুরনো ভাঙ্গা খেলনা ঢোলটা দেয়ালের এক কোণায় পড়ে আছে।তার ঠিক উপরে বিল্ডিং এর পাইপ থেকে বৃষ্টির পানি ঢোলের উপর পড়ছে! এবার আসল কাহিনীটা বুঝতে পেরে খানিকটা লজ্জা পেয়ে মায়ের দিকে মায়ের দিকে তাঁকালো ইমু। শায়লা বেগম ঢোলটা জায়গা থেকে সরিয়ে রেখে মেয়ের দিকে তাঁকিয়ে মুচকি হেসে বললেল,
-বলেছিলাম না?ভূত বলতে কিছু নেই!
গল্পের বিষয়:
গল্প