পাশের বাসার ভাবী

পাশের বাসার ভাবী
আমার আর আমার স্ত্রী জেরিনের একটু আগে ঝগড়া হলো। টুকটাক ঝগড়াঝাঁটি আগেও হতো। কিন্তু ইদানীং বেশী হচ্ছে। বছর খানেক আগে আমাদের পাশের ফ্ল্যাটে এক ভাবী উঠেন। ভাবীর সাথে জেরিন আর আমার দুজনেরই বেশ ভালো সম্পর্ক। আমাদের ঝগড়াঝাঁটি হলে প্রথম দিকে কয়েকবার ভাবী মিলিয়েও দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন আর সেটা পারছেন না বা মিলিয়ে দিচ্ছেন না। তো, এবার ঝগড়া হওয়ার পরও প্রতিবারের মতো আমি ভাবীর কাছে গেলাম। ভাবী আমার মুখ দেখেই বললেন, ‘কী আবার লাগছ?’ আমি অনেকক্ষণ কিছু বললাম না। তারপর আস্তে করে বললাম, ‘হু’
-তোমাদের নিয়া আর পারা গেল না!
-প্লিজ ভাবী, একটা কিছু করেন। ও এবার ভীষণ রেগে আছে।
-কী করব? তোমরা তো আর বাচ্চা পোলাপান না! এভাবে কতদিন..তোমরা বরং আলাদাই হইয়া যাও।
-এসব কী বলেন ভাবী!
-ভাবী ঠিকই বলি। আরেএএএ..ঐ মাইয়া কী তোমার যোগ্য না-কি? জামাইয়ের লগে কেউ অমন সাপের মতো ফুসফাস করে? আমি করি, দেখছ আজ পর্যন্ত তোমার ভাইয়ের লগে অমন কিছু?
-না, তা দেখি নাই।
-শুনো মিয়া, তোমার বউ হইলো বদ রাগী। এমন বদ রাগী মাইয়া লইয়া সংসার করন যায় না, সংসারের অমঙ্গল হয়। আর তা ছাড়া…
-তা ছাড়া?
-তা ছাড়া ঐ মাইয়া তোমার যোগ্য না-কি! কত বড় চাকরি করো তুমি। কত বড় বড় মানুষের লগে তোমার ওঠবস । ঐ মাইয়ারে তোমার পাশে মানায়? একটা গেরাইম্যা মাইয়ার লগে তোমারে বিয়া দিয়া তোমার বাপ-মা তোমারে ঠকাইছে, বুঝলা?
-তাহলে ভাবী আলাদা হয়ে যেতে বলছেন?
-হ, আলাদা। বারবার এক কথা কইতে ভালো লাগে না।
-আচ্ছা ভাবী থাকেন তাহলে। ভেবে দেখি।
-হ, ভাবো। চাইরটা খাইয়া যাও। তোমার যে বউ, ঝগড়াঝাঁটি হইলেই তো আবার রান্ধন বন্ধ কইরা বইসা থাকে।
-না ভাবী, আমি বাইরে খেয়ে নিব।
-আরে লজ্জা পাইয়ো না, বসো। ভাবী আছি বইলাই তো করি..
-না ভাবী। আজ না, আরেকদিন।
আমি সুলতানা ভাবীর ঘর থেকে বের হলাম। কিন্তু বের হয়েই ভূত দেখার মতো চমকে উঠলাম। জেরিন দাঁড়িয়ে। তবে জেরিন আমাকে দেখে একটা টু শব্দও করল না। আমি হলাম গিয়ে পাশের বাড়ির পুরুষ মানুষ এমন একটা ভাব দেখিয়ে আমাকে এড়িয়েই জেরিন সুলতানা ভাবীর ঘরে ঢুকে গেল। এখন জেরিন আর সুলতানা ভাবী কথা বলছে। জেরিন বলল, ‘ভাবী সব তো শুনছেনই বোধহয়?’
-হুম, শুনলাম। কী হয় তোমাগোর দুইদিন পর পর কও তো?
-আমার কী দোষ! আমি কিছু করি না-কি…
-সে আমি জানি। তোমার জামাইয়ের মন হইলো উড়ুউড়ু..বুঝলা।
-উড়ুউড়ু?
-হ, উড়ুউড়ু।
দেখ না বাচ্চাকাচ্চা নিতে চায় না। সারাদিন খালি অফিস, পার্টি, হ্যানত্যান! বউয়ের দিকে নজর আছে?
জেরিন কিছু বলছে না। মাথা নিচু করে চুপচাপ বসে আছে। জেরিন অনেকক্ষণ কিছু বলছে না দেখে সুলতানা ভাবী আবার বলতে শুরু করল, ‘তাছাড়া ঐ হতচ্ছাড়া বান্দরটা কী তোমার যোগ্য না-কি? তুমি কত্ত লক্ষ্মী একটা মাইয়া।’
-কিন্তু ভাবী ও তো আমায় ভালোবাসে।
-ভালোবাসে না ছাই! ভালোবাসলে কী আর কেউ অমন দুইদিন পর পর বউয়ের লগে ঝগড়া করে! আরে পুরুষ মানুষ হইবো পুরুষ মানুষের মতন, সে ক্যান মহিলাগোর সব কথায় নাক গলাইতে যাইব?
-হুম! কিন্তু ভাবী, এখন আমি কী করতে পারি?
-ছাইড়া দেও ঐটারে।
-ছেড়ে দিব?
-হুম ছাইড়া দাও। দুইদিন পর পর এমন ক্যাচ-ক্যাচ ফ্যাস-ফ্যাসের চেয়ে শান্তিতে আলাদা থাকন ভালো। আর এছাড়া তোমার কতোই-বা বয়স। জীবন তো মাত্র শুরু। মাশাল্লাহ! তোমার যা রূপ..পোলারা তো এহনো হিড়হিড় কইরা তোমার পিছে লাইন ধরব।
-আচ্ছা ভাবী। ভালো লাগছে না আর, আমি উঠি আজ।
-যাইবা, যাও। তয় আমার কথাডা ভাইবো। আর দেখো ভালো কইরা খোঁজ নিয়া অফিসে কারো লগে ইটিশ-পিটিশ আছে কি-না। পুরুষ মানুষরে দিয়া কোনো ভরসা নাই। তাগোর ঘরে একটা লাগে, বাইরে একটা লাগে। ভাবী তোমার ভালো চাই দেইখাই কথাটা কইলাম।
-আচ্ছা ভাবী দেখব…
-খাইয়া যাও চাইরটা? নিশ্চয় রান্না-বান্না কিছু করো নাই, মনে শান্তি না থাকলে কী আর রান্ধন যায়!তোমার জামাই তো বাইরে গিয়া ঠিকই গিলব।
-না ভাবী, থাক…
জেরিন না করলেও সুলতানা ভাবী তাকে না খাইয়ে ছাড়ল না। জোর করে খাওয়াল। খাওয়া-দাওয়া শেষে জেরিন বাসায় ফিরতেই আমি ওর হাত ধরে টেনে শোয়ার ঘরে নিয়ে গেলাম। বললাম, ‘ভাবী যা বলছে তুমি দরজার পাশে দাঁড়িয়ে সব শুনছ?’
-তুমিও তো শুনছ..
-হুম। তোমার আর কিছু বলার আছে?
-না। তোমার?
-না..
পরের দিনের কথা। আমি ডায়রিয়ার অজুহাতে অফিস গেলাম না। দুজন মিলে বাইরে গেলাম। শপিং করলাম। বাইরে খাওয়া-দাওয়া করলাম। একসাথে মুভি দেখলাম। সারাদিন বাইরে কাটালাম। আমাদের ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। পথেই সুলতানা ভাবীর সাথে দেখা। ছোটবেলায় বরফ-পানি খেলার সময় কেউ হঠাৎ করে বরফ বললে আমরা যেমন পথের মধ্যেই খাম্বার মতো দাঁড়িয়ে যেতাম সুলতানা ভাবীও হঠাৎ করে আমাদের দেখে অমন খাম্বার মতো দাঁড়িয়ে গেল। অনেকটা অবাক হয়েই বলল, ‘দুজন মিলে কই গেছিলা?’ জেরিন জবাব দিল, ‘ভাবী, কাজী অফিসে।’
-কাজী অফিসে?
-হুম, কাজী অফিসে..
-হঠাৎ কাজী অফিসে ক্যান?
-ওমা..আপনিই না সেদিন আমাদের বললেন ডিভোর্স দিয়ে দিতে। ডিভোর্স দিয়ে আসলাম।
-ধুরু…তোমরা আজকালকার পোলাপান মজাও বুঝো না, আমি আবার অমনটা কখন বললাম! তা এত শপিং কিসের?
জেরিন আমার দিকে তাকিয়ে একটা চোখ টিপ দিয়ে বলল, ‘ভাবী আপনি মুরুব্বী মানুষ, আপনার কথা কী আর ফেলতে পারি? তাই ডিভোর্স দিয়ে আসলাম। কিন্তু ভেবে দেখলাম আমাদের আবার আলাদা থাকাও সম্ভব না। তাই কিছুদিন পর আমরা আবার বিয়ে করছি। তা, বিয়ের জন্য শপিং করা লাগবে না?’ জেরিনের কথা শুনে সুলতানা ভাবী ফ্যাস-ফ্যাস করে ঠিক কী বলল বুঝা গেল না। শুধু এইটুকু বুঝলাম শেষে মুখটা বাঁকিয়ে আজকালকার পোলাপানের ঢং দেখলে বাঁচি না বলতে বলতে হনহন করে চলে গেলন। জেরিন তাকে পিছন থেকে ডেকে চিৎকার করে বলল, ‘ভাবী বাসায় এসে বিয়ের মিষ্টি খেয়ে যাবেন কিন্তু। মিষ্টি খেয়ে নতুন জামাই-বউকে দোয়া করে যাবেন। হাজার হলেও আপনি মুরুব্বী মানুষ।’
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত