নিউ ট্রেন্ড লেডিস প্যান্ট

নিউ ট্রেন্ড লেডিস প্যান্ট
ঈদের শপিং করতে গিয়েছি। বাজেট খুব বেশি না। তিন হাজার টাকার মধ্যে শপিং সারতে হবে। বাটা সিগন্যাল থেকে দুই হাজার পাঁচশত টাকার স্যান্ডেল দরদাম করে মাত্র পাঁচশত টাকা দিয়ে কিনে নিলাম। স্যান্ডেল জোড়া বেশ পছন্দ হয়েছে, ব্র্যান্ড ব্র্যান্ড একটা ভাব আছে। বাটা সিগন্যাল থেকে নিউ মার্কেট গিয়ে মনের মতো দুইটা টি-শার্ট কিনলাম। পাঞ্জাবীর মার্কেটে গিয়ে ভীষণ বিপত্তিতে পড়ে গেলাম, আমার সাইজের পাঞ্জাবী নাই। যেসব পছন্দ হচ্ছে সব ঢোলা, বেশিরভাগ পায়ের গোড়ালি ছুঁই ছুঁই করছে। যেগুলো গায়ে মোটামুটি ঠিকঠাক হচ্ছে সেগুলোর দাম আকাশচুম্বী, আমার বাজেটের মধ্যে নাই।
অনেক ঘোরাঘুরি করে একটা পাঞ্জাবী কিনলাম, পাঞ্জাবী ততোটা পছন্দ হয় নাই। একদিনের ব্যাপার কোনরকম চালিয়ে দিতে পারলেই হলো। শপিংয়ের ধকল বলতে গেলে শেষ, একটা জিন্স প্যান্ট কিনে সোজা গাড়িতে উঠে বাড়ি ফিরব। জগতে শপিংয়ের মধ্যে জিন্স প্যান্ট কেনার মতন বিড়ম্বনা আমার মনে হয় না আর কিছু আছে। প্যান্টের দোকানদারদের মুখের হাভ-ভাব দেখতে দেখতে সামনের দিকে যাচ্ছি, কাউকে ঠিক বিশ্বাস করা যাচ্ছে না। গতবছর ঈদের প্যান্ট ঈদের দিন আর পরতে পারিনি। ধুয়ে দিতেই আমার কালো প্যান্টটা কেমন রঙ বদলে সাদা হয়ে গিয়েছিল! তাই দেখে-বুঝে এমন কোন দোকানে ঢুকতে হবে যে আমাকে আর যাই হোক অন্তত রঙ উঠে যায় এমন প্যান্ট দিবে না। ঘুরতে ঘুরতে একটা দোকানে ঢুকে গেলাম। দোকানে ঢুকতেই দোকানদার বলল,
–ভাই কোমর কত? আমি বললাম, পঁচিশ। দোকানদার একের পর এক প্যান্ট বের করতে করতে জিজ্ঞাসা করল,
–ভাই স্টিজ পরবেন নাকি? আমি বললাম,
–হ্যাঁ, রঙ উঠবে না এমন একটা নীল রঙের প্যান্ট বের করুন। দোকানদার একটা নীল রঙের জিন্স বের করে দিয়ে আমাকে ট্রায়াল দিয়ে দেখতে বলল। আমি ট্রায়াল দিলাম। প্যান্টটা বেশ পছন্দ হলো কিন্তু খুলে পড়ে যাচ্ছিল। দোকানদার আমাকে আশ্বস্থ করে বলল,
–কোমর নিয়ে চিন্তা করবেন না কোমর দেয়া যাবে, পছন্দ হয় কিনা সেইটা দেখেন। পঁচিশ কোমরের প্যান্ট পাওয়া আমার জন্য এক বিশাল ভাগ্যের ব্যাপার। যেসব প্যান্ট পছন্দ হয় সেসব বেশিরভাগই কোমর ত্রিশের নিচে পাইনা। প্যান্ট টা বেশ পছন্দ হয়েছে কিন্তু জিপারটা ছোট। আমি দোকানদারকে জিপার দেখিয়ে বললাম,
–ভাই, প্যান্টতো পছন্দ হয়েছে কিন্তু এটার জিপার এতো ছোট কেন?” দোকানদার অন্য কিছু প্যান্টের জিপার দেখিয়ে বলল,
–নিউ ট্রেন্ড ভাই, এখন এগুলোই চলছে।
–কোমর আছে তো?”
দোকানদার বলল, আছে। সে পঁচিশ কোমরের একটা প্যান্ট বের করে ইঞ্চি ফিতা দিয়ে মেপে দেখাল। আমি বার বার জিজ্ঞাসা করলাম, “ভাই রঙ উঠবে না তো?” দোকানদার আমাকে হাসিমুখে বলল,
–ভাই রঙ উঠলে নিয়া আসবেন, ডাবল টাকা ফেরত দেবো। প্যান্ট টা একবার পরে দেখেন আবার আসতে হবে।
দামাদামি করে প্যান্ট কিনে বাড়ি ফিরলাম। বাসায় এসে কাপড়গুলো ধুতে দিয়ে দিলাম। প্যান্টের রঙ বদলায়নি দেখে ভীষণ ভাল লাগল। আমার যা ভাগ্য, প্যান্ট কিনলেই রঙ উঠে যায়। ঈদের দিন সকালে প্যান্ট-টিশার্ট পরে আয়নায় নিজেকে দেখে বেশ ভাল লাগল। প্যান্টটা বেশ ফিটিং হয়েছে। ফুরফুরে মেজাজে বাসা থেকে বের হয়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে গেলাম। বন্ধুদের সাথে দেখা হবার পর কোলাকুলির পার্ট শেষ হতেই একজন বলল,
–কিরে বেটা লেডিস প্যান্ট পরছিস কেন? আমি বেশ অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম,
–লেডিস প্যান্টের কি দেখলি? আরেক বন্ধু কাছে এসে হাসতে হাসতে বলল,
–তুই তো দেখি আসলেই লেডিস প্যান্ট পরেছিস। সবার হাসাহাসির মধ্যে পড়ে খুব অপমান বোধ করছিলাম। একরাশ বিরক্তি নিয়ে আমি জিজ্ঞাসা করলাম,
–তোরা কি দেখে লেডিস প্যান্ট বলছিস? এক বন্ধু বলল, লেডিস প্যান্টের যে থাই কম থাকে জানিস না? আর কেনার সময় জিপার টা দেখে কিনিস নাই? গাধা লেডিস প্যান্টের জিপার ছোট থাকে বুঝছিস? প্যান্ট কেনার সময় দোকানদার বলেছিল এটা নতুন ট্রেন্ড। আমিও ভেবেছিলাম, ট্রেন্ড ফলো করা উচিৎ, নতুন ট্রেন্ড যেহেতু চলছে সেহেতু কিনে নেই কিন্তু এ যে লেডিস প্যান্ট হতে পারে একবারও মাথায় আসে নাই।
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত