বিয়ের পর নতুন জামাই শ্বশুর বাড়ি যাবে। শ্বশুর বাজার থেকে বড় কাতলমাছ কিনে আনবে, সেই কাতল মাছের মাথা শ্বাশুড়ি মুড়ি খন্ড করে জামাইকে খাওয়াবে এটাই তো স্বাভাবিক কিন্তু আমার কপালে এমনটা হয় নি। শ্রাবণীকে বিয়ের পর প্রথম যেদিন শ্বশুর বাড়ি যায় সেদিন মজা করে আমার শালীকে বলেছিলাম,
–“তোমার চোখগুলো তোমার বোনের থেকেও সুন্দর।” আর এই কথাটা শ্রাবণী আড়াল থেকে শুনে ফেলে ছিলো। তারপর থেকে আমার শ্বশুরবাড়ি যাওয়া বন্ধ। শ্রাবণী বলেছে যেদিন ওর বোনের বিয়ে হবে সেদিন আমি শ্বশুরবাড়ি যেতে পারবো তার আগে যেন শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার নাম না নেই সেদিন আমার অফিসের কগিল মধুমিতার সাথে আমি একটা সেলফি তুললাম। সেলফিতে আমি দুষ্টামি করে দাঁত বের করে হেসেছিলাম। আর মধুমিতাও সেই সেলফি মজা করে আমাকে ট্যাগ করে ফেইসবুকে দিয়ে দেয়।যার শাস্তি সরূপ আমাকে সন্ধ্যা ৭ টা থেকে রাত ২ টা পর্যন্ত দাঁত বের করে হাসি দিয়ে বিভিন্ন এংগেলে শ্রাবণীর সাথে ১০০০ টা সেলফি তুলতে হয়। আর এতক্ষণ এইভাবে সেলফি তুলতে গিয়ে আমার মুখটাই এমন হয়ে গিয়েছে যে আমি এখন সারাক্ষণ দাঁত বের করে হাসি।
পর দিন আফিসের বস যখন আমাকে ডেকে নিয়ে গিয়ে বললো, তার ছোট মেয়েটা বাথরুমে পড়ে গিয়ে পা ভেঙে ফেলেছে তখন আমি না চাইতেও দাঁত বের করে হাসি দিয়ে ফেললাম। যার ফল সরূপ বস আমাকে ননসেন্স বলে গালি দিয়ে রুম থেকে বের করে দিলেন।বস আমায় বিনা কারণে গালি দিলো। বস তো আর এটা জানে না সারারাত বউয়ের সাথে সেলফি তুলতে গিয়ে আমার মুখটাই এমন হয়ে গেছে আজ অনেকদিন পর শ্রাবণীকে নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছি। শ্রাবণী একটা নীল রঙের শাড়ি পরেছে আর আমি সাদা পাঞ্জাবি। দুইজনে যখন হাত ধরাধরি করে হাতিরঝিলে হাটছি তখন পাশের ফ্ল্যাটের ভাবীর সাথে দেখা। উনার স্বামী আবার বিদেশ থাকেন। আমাকে দেখেই ভাবী আহ্লাদের সুরে বলতে লাগলেন,
– “ওমা, পিয়াস ভাইয়া এইখানে? ভাইয়া আপনাকে এই পাঞ্জাবিতে যা হ্যান্ডসাম লাগছে না। আমি তো আপনাকে দেখেই ফিদা হয়ে গেছি।” এইকথা বলে ভাবী আমার দিকে তাকিয়ে বাঁকা ঠোঁটের হাসি দিয়ে চলে গেলো। আর আমি মনে মনে আয়াতুল কুসরী পড়তে লাগলাম। না জানি আমার কপালে আজ কি আছে। একটু পর মনে হলো কে যেন আমার পাঞ্জাবি পিছন থেকে অর্ধেকটা ছিড়ে ফেলেছে। তাকিয়ে দেখি শ্রাবণী আমার দিকে আগুন ভরা চোখে তাকিয়ে আছে। আমি বাকি অর্ধেকটা পাঞ্জাবি নিয়ে দৌড়াতে লাগলাম আর বলতে লাগলাম,
— ওগো লক্ষ্মী বউ, আমি তলে সেন্টুগেঞ্জি পরি নাই। তুমি আমাকে এতগুলো মানুষের সামনে বিবস্ত্র করো না কয়েকদিন পর মাঝ রাতে আমার মনে হলো কে যেন আমার গলা টিপে ধরেছে। আমি চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি শ্রাবণী আমার গলা টিপছে। আমি শ্রাবণীর হাত আমার গলা থেকে কোন রকমে সরিয়ে বললাম,
— তুমি কি পাগল হয়ে গেছো? এত রাতে তুমি আমার গলা টিপছো। আমায় মেরে ফেলবে না কি? শ্রাবণী কিছুটা রেগে গিয়ে বললো,
~ আমি স্বপ্নে দেখেছি তুমি মারা গেছো। সকল আত্মীয় স্বজন কান্নাকাটি করছে আর আমি যেহেতু তোমার স্ত্রী সেহেতু আমি একটু বেশিই কান্না করবো এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু না, কোথা থেকে একটা মেয়ে এসে আমার চেয়েও বেশি কান্না করছে। আমি জানতে চাই সেই মেয়েটা কে। তাই আগে তোমায় মারবো তারপর দেখবো ঐ মেয়েটা কে, যে কি না তোমার মৃত্যুতে আমার চেয়েও বেশি কান্না করেছে। শ্রাবণীর কথা শুনে আমার মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। আর সহ্য করা যাবে না এই মেয়েকে। আমি রেগে গিয়ে শ্রাবণীকে বললাম,
— স্বামীকে নিয়ে খারাপ স্বপ্ন দেখেছো কোথায় কয়েকটা এতিম পোলাপান খাওয়াবে মসজিদে দোয়া পড়াবে কিন্তু তা না করে তুমি নিজেই আমাকে মারতে চাইছো। এখন বুঝতে পারছো তুমি সন্দেহর সব লেভেল অতিক্রম করে ফেলেছো? শ্রাবণী আমার কথাগুলো মাথা নিচু করে চুপচাপ শুনলো। তারপর চোখের পানি নাকের পানি মুছতে মুছতে বললো,
~ হে, আমি সব বুঝতে পেরেছি। তোমার মনে হয় গলা শুকিয়ে গেছে। তুমি বসো আমি তোমার জন্য এক গ্লাস শরবত করে নিয়ে আসি। একটু পর শ্রাবণী শরবতের গ্লাস হাতে নিয়ে ভিতরে ঢুকলো। আমি শরবতের গ্লাস হাতে নিয়ে বললাম,
— এটা নতুন আইটেমের শরবত না কি? কেমন জানি নীল নীল রঙের দেখাচ্ছে। শ্রাবণী মুচকি হাসি দিয়ে বললো,
~হারপিক দিয়ে শরবত বানিয়েছি তো তাই নীল দেখাচ্ছে। তুমি নাকে চাপ দিয়ে একটানে খেয়ে ফেলো তারপর আরাম করে মরে যাও। তুমি মরার পর দেখি আমার চেয়ে কে বেশি কান্না করতে পারে আমি শরবতের গ্লাসটা ফেলে দিয়ে বাসা থেকে এক দৌড়ে বের হলাম। দৌড়ানোর অবস্থায় শ্বশুরকে ফোন দিলাম। শ্বশুর ফোন রিসিভ করতেই আমি বলতে লাগলাম,
— কি মেয়ে জন্ম দিয়েছেন যে, আমাকে অলটাইম দৌড়ের উপর থাকতে হয়। আজ আপনার একদিন আর আমার যতদিন লাগে। আমি আসছি শ্বশুরবাড়ি
গল্পের বিষয়:
গল্প