ঘুমন্ত নদী

ঘুমন্ত নদী
তালা খুলে অকৃ রুমে ঢুকতেই আফজাল সাহেব বললেন,
-অকৃ বাবা,এক মেয়ে আসছিল!এই কাগজটা দিয়ে গেছে। আফজাল সাহেব,এই বাড়ির মালিক।বেশ ভালো লোক,বিধবা মেয়ে আর এক নাতনি নিয়ে ভালোই আছেন।অকৃ কাগজটা হাতে নিতেই দেখতে পেল লেখা,নন্দিনী! একটি খোলা চিঠি।রুমে ঢুকে অকৃ অবাক হয়ে গেল।পুরো রুম সুন্দর ভাবে সাজানো।যেন কোন রুচিশীল ব্যক্তির কক্ষ।চিঠিটা নিয়ে খাটে শুয়ে পড়ল অকৃ।এখনও চিঠির যুগ রয়েছে নাকি!মানুষ চিঠি লিখা শুরু করল যে!চিঠিটা এখনই পড়তে হবে,নন্দিনীর চিঠি বলে কথা!
“আজব মানুষ তো তুমি।ঘরটা একটু গুছিয়ে রাখতে পারো না?থাক ঘর না গোছালে,পড়ার টেবিল তো একটু সুন্দর করে সাজিয়ে রাখলে কি হয়?কবে যে তুমি ভালো হবে।তুমি না চিলেকোঠার মানব? টেবিল গোছানোর সময় তোমার ডায়েরি থেকে একটি মেয়ের ফটো পেয়েছি,দেখতে বেশ!মনে হয় তোমার বোন কামিনী।চেহারার মিল আছে।বাবা,মার ফটোও পেয়েছি।নিয়ে এসেছি তা,বাধাই করে দিবো। তোমাকে কতদিন ফোন করেছি।ফোন থাকে তোমার বন্ধ।তাই নতুন ফোন তোমার জন্য এনেছি।আজ মা বিরিয়ানি রান্না করেছে,তোমার জন্য নিয়ে এসেছি।টেবিলে আছে খেয়ে নিও। অদ্বিতীয়া নামে এক মেয়ে এসেছিল।বলল তোমার বন্ধু হয়।ভালো কথা,কিন্তু মেয়েটাকে আপসেট মনে হয়েছে।
মেয়েটার নাকি খুব প্রয়োজন তোমাকে,তাই জলদি দেখা করবে। আর শোন পারলে দরজায় খোলা তালা রেখে চলে যেও,অল্পতেই ধনী হতে পারবে।যদি পারো একবার আমায় দেখা দিও! তোমার নন্দিনী” অকৃ ঘরটাকে আবার দেখে নিল,খুব সুন্দর করে সাজিয়েছে।টেবিলের উপর নতুন মোবাইলের বক্স আর টিফিন বক্স!এখন অকৃকে বের হতে হবে,অদ্বিতীয়ার উদ্দেশ্যে।কি না ঝামেলা পাকিয়েছে,কে জানে! অদ্বিতীয়া অকৃর ভালো বন্ধু হলেও,অদ্বিতীয়ার বাড়িতে কখনো যাওয়া হয়নি অকৃর।অদ্বিতীয়ার বাবা,মা কি বলবে?তবুও মেয়েটা নাকি দুশ্চিন্তায় ভুগছে।দরজায় কড়া নাড়তেই এক মহিলা খোলল।মাঝবয়সী,দেখতে খারাপ না অদ্বিতীয়ার মতো,হয়তো অদ্বিতীয়ার মা।চোখ দিয়েই জিজ্ঞাসা করল কি চাই?
-আন্টি আমি অদ্বিতীয়ার বন্ধু।একই ভার্সিটি পড়ি।ওর নাকি আমাকে প্রয়োজন।যদি একটু ডেকে দিতেন।
-নাম কি তোমার?
-অকৃ!
-কি বললে?
-জি আন্টি,কাউসার আমার নাম।
-আগে যে কি বললে?
-অকৃ,আমার ডাক নাম।
-ও.. আগে তো কখনো তোমাকে দেখিনি?
-জি!যদি একটু অদ্বিতীয়াকে ডেকে দিতেন…
অকৃ দরজার বাইরেই দাঁড়িয়ে আছে।এখন আর সেই যুগ নেই,ভিতর নিয়ে আদর আপ্যায়ন করবে।কত রঙে সাজবে এই দুনিয়া! অকৃ আর অদ্বিতীয়া পাশাপাশি হাটছে।বিদুতের তারে বসা দুটো কাক তাদেরকে এক দৃষ্টিতে দেখছে।মেয়েটা শ্যমলা বর্ণের হলেও,দেখতে দারুণ লাগে।শ্যামলা বর্ণের মেয়েরা কথা বেশি বলে।অদ্বিতীয়া সেই রকম।কলেজ লাইফে পরিচয়,সেখান থেকে বন্ধুত্ব।সেই বন্ধুত্ব গভীর থেকে গভীরে।অকৃ অদ্বিতীয়াকে ভালোবাসলেও,সে ভালোবাসে অন্যকে!তাদের মাঝে বন্ধুত্বটাই এখন সম্পর্ক!
-বিয়ে করেছিস অকৃ?
-না তো!
-তাহলে মেয়েটা কে?
-বন্ধু।
-বন্ধু?তাহলে এমন ভাবে ঘর গোছিয়েছে যেন বাড়ির বউ!
-হ্যা,বন্ধু থেকে একটু বেশি সম্পর্ক।
-ভালো লাগা? ভালোবাসা?
-আচ্ছা বাদে দে।বাসায় গিয়েছিলি কেন?
-হু,তুই তো জানস আমি জয়কে ভালোবাসি!
-কেন কি হয়েছে?বিয়ে করতে চাচ্ছে?বিয়ে করে ফেল!
-আরে না!
-তাহলে কি?তোর বিয়ে ঠিক হয়েছে?পালিয়ে যাবি?সমস্যা নেই আমি আছি!
-আরে দূর!এসব না।
-তুই বল কি?এমন মন খারাপ করে আছিস কেন?একটু হাস।তুই না হাসলে ভালো লাগে না!
-শোন না আমার কথা,জয় বাড়ি থেকে উদাও!
-পালিয়েছে?
-জানি না।আজ ৮দিন ধরে জয়কে পাওয়া যাচ্ছে না।কি করি বলতো?
-আমার কাছে মনে হয়,ও কোন মেয়ে নিয়ে পালিয়েছে!
-তুই কিন্তু জয়কে নিয়ে খারাপ কথা বলতাছোত!
-এ আর কি বললাম!
-তোর অনুমান কি বলে?জয় কোথায়?
-অনুমান এখন কাজ করে না।সে আমাকে ছেড়ে চলে গেছে।
-দেখ,আমি কিন্তু সিরিয়াস।জয়ের খবর না পেলে আমি মারা যাবো!
-আমার কি করতে হবে?
-জয়কে খুজে বের কর!
-কিভাবে?
-তোর অনুমানের মাধ্যমে আর তোর অতীত দিয়ে!
অকৃর জয়কে খুজে বের করতে হবে।কিভাবে?সে সাধারণ এক পেপার বিক্রেতা মাত্র!জয়ের বাসায় চলল অকৃ।
চারটি নোনতা বিস্কুট একটি বিশাল পিরিচে আর এক গ্লাস পানি দিল জয়ের মা।অকৃ সোফায় বসে আছে।জয়ের বাবা একটু দূরে একটি চেয়ারে বসে কিসের যেন কাগজ নাড়াচাড়া করছে।ছেলে হারিয়েছে,তিনি মনে হয় জানেন না।কিন্তু জয়ের মা রাতে মনে হয় ঘুমান না।চোখের নিচে প্রচুর কালো দাগ জমে আছে।স্বাস্থ্যও ভেঙ্গে পড়েছে।
বিস্কুট মুখে দিতেই অকৃ নিজেকে অন্যরকম আবিষ্কার করল।বিস্কুট নষ্ট হয়ে গেছে।কিভাবে যে জয়ের মা তা দিল,কে জানে? হয়তো ছেলের হারানোর শোকে সবকিছু উল্টো করছেন।তবুও অকৃ বিস্কুট খেয়ে ফেলল,চারটাই!আর কারো কপালে যেন না পড়ে।জয়ের মা খাওয়া দেখে বলল,
-বাবা,তুমি যে জয়ের বন্ধু আগে তো দেখিনি।জয় যে কোথায় গেল?
-আন্টি,জয় যাওয়ার আগে কিছু বলে যায়নি?
-না,বাবা।শুধু একটি চিঠি লিখে রেখে গেছে।তুমি বসো আমি নিয়ে আসছি। জয়ের মা চলে গেল।জয়ের বাবা চেয়ার ছেড়ে উঠে এসে অকৃর পাশে বসলেন।
-তোমার সাথে জয়ের ভালো সম্পর্ক নয়,আমি বুঝতে পেরেছি।সেটা আমি জানতে চাই না।জয়ের মা ছেলের শোকে পাগল হয়ে যাচ্ছে দিন দিন,তাই তোমাকে নষ্ট বিস্কুট দিয়েছে।সে মেহমান আসলে খালি মুখে ফিরিয়ে দিতে পারে না।এজন্য আমি দুঃখিত।
-সমস্যা নেই আঙ্কেল।আমি গরিবের ছেলে।সকল কিছুতেই অভ্যস্ত। অকৃ জয়কে কোথায় খুজবে?এই বিশাল শহরে। কোথায় হারিয়েছে জয়?চিঠিতেও ঘর ছেড়ে যাওয়ার কোন কারণ নেই।জয়ের অভাবে অদ্বিতীয়া আর জয়ের মা কতই না কষ্ট পাচ্ছেন।জয়কে খুজতে হবে অদ্বিতীয়ার জন্য অদ্বিতীয়ার হাসির জন্য!কোথায় পাবে অকৃ জয়কে?
-এই অকৃ… এই.. অকৃ পিছন ফিরে তাকাল।রাহাত ডাকছে চায়ের টঙের দোকান থেকে।রাহাত জয়ের ভালো বন্ধু।বেস্টফ্রেন্ড যাহাকে বলে,গলায় গলায় ভাব ওদের!
-কি অকৃ?হঠাৎ এই দিকে?
-হ্যা,তোমার বাসায় যাচ্ছিলাম।
-কেন?আমাকে আবার তোমার কি প্রয়োজন?
-জয়কে পাওয়া যাচ্ছে না,তা তো জানো?
-হুম,পত্রিকায় নিখোঁজ সংবাদ দিয়েছে।কিন্তু জয়ের কোন খবর নেই।
-এক কাজ করা যায় না?এখন তো আধুনিক যুগ ফেসবুক,টুইটার,ইন্সটাগ্রামে জয়ের ব্যাপারে পোস্ট করা যায় না?
-গুড আইডিয়া!আমি আজই করবো।
-কোন খবর পেলে আমাকে জানাবে?
-আচ্ছা,কিন্তু জয় তো তোমার এত ঘনিষ্ঠ নয়!ওর জন্য তোমার এত ব্যস্ততা কেন?
-মানুষ মানুষের ভাই বলে!
অকৃ চিলেকোঠায় শুয়ে আছে।জানালা দিয়ে জ্যোৎস্না আকাশ দেখা যাচ্ছে।আকাশে মেঘ নেই,তারাগুলো জ্বলছে।চাঁদটা জানালা দিয়ে দেখা যাচ্ছে না।অকৃ মনে পড়ল,অনেক আগে সে একজনকে খুজছিল।কিন্তু পায়নি।হঠাৎ এক বৃদ্ধ তাকে বলল,
-বাবা,কাউকে খোজছ?পাবে না!এটা অনেক বড় দুনিয়া।এক এক করে খুজে পাবে না।যাকে খুজছো তাকে হাওয়ায়
ঊড়িয়ে দাও,সে তোমাকে খুজবে! সে বৃদ্ধের সূত্রে কি এখন জয়কে খুজতে হবে অকৃর।অকৃ ভাবছে ভিন্ন কথা,আচ্ছা পত্রিকায় একটি করে কাগজে লিখে দেওয়া যায় না? “জয় তোমাকে চাই,অদ্বিতীয়া! ” হয়তো ফিরে আসতে পারে।কিন্তু সে কি পেপার পড়ে? না,এই রাতের আকাশে,তারাদের মাঝে অকৃ জয়ের নিখোঁজ সংবাদ ছড়িয়ে দিবে!জয় ফিরে এসো! দেখতে দেখতে দু’দিন চলে গেল।জয়ের কোন খবর নেই।সে কি আদৌ বেচে আছে না..? তা হয় না!অদ্বিতীয়া বাঁচবে না তাহলে!অদ্বিতীয়ার জন্য এতটুকু করতে পারবে না অকৃ! অকৃর ভাবনার বিচ্ছেদ হলো।নন্দিনীর দেওয়া ফোনটা বেজে উঠল।আননোন নাম্বার!
-হ্যালো!
-অকৃ,আমি রাহাত।জয়কে নাকি একলোক বেশ কয়েকদিন আগে লঞ্চঘাটে দেখেছে।আমি যাচ্ছি,তুমি যাবে?
-আমি একটু ব্যস্ত!তুমি যাও,আমিও যাবো!
কাউকে খোজতে অকৃর একা যেতে হবে।না হলে অনুমান কাজ করবে না। পুরনো ঢাকার এই পথ গুলো এত সরু!দু’জন যেতে হলে গা লাগিয়ে যেতে হবে।অকৃ হাটছে,জয়ের খোজে!নিশ্চুপ ভাবে বাতাসে সরিয়ে দিচ্ছে নিখোঁজ সংবাদ। “জয়,তোমাকে খুজছি!তুমি কি শোনতে পাচ্ছো?” এই পদ্ধতিতে নাকি যার নাম ধরে খোজা হবে,সেই শুধু শোনতে পারবে,বৃদ্ধ বলেছিল।শব্দ করে বলা না হলেও,বাতাস সেই ব্যক্তির কানে তা পৌছে দিবে।অকৃ ভাবছিল আর হাসছিল!কি অদ্ভুত পদ্ধতি!কে যেন পিছন থেকে অকৃর বাম কাধে হাত রাখল।অকৃ পিছনে তাকাতেই এক ছেলে বলল,
-ভাই,আমাকে খোজছেন?
-নাম কি তোমার?
-জয়!
-কি করো?
-বাখরখানি বানাই!
-কিভাবে বুঝলে আমি তোমাকে খুজছি?
-আমাকে কে যেন বলছে,আপনি আমাকে খোজছেন!
-হুম,কিন্তু আমি অন্য কাউকে খোজছি!
পদ্ধতিটা আসলেই কার্যকর!কিন্তু জয় কোথায়?এই তো লঞ্চঘাট।নেই জয়,নেই!হারিয়ে গেছে অন্ধকারে!কিন্তু অদ্বিতীয়াকে ভাবতেই চোখ পড়ল অকৃর রাস্তার ওপারে এক লোকের উপর।কালো কোর্ট,তার নিচে সাদা শার্ট পরে আছে,প্যান্ট সম্ভবত ধূসর রঙের!কিছু কিশোর ছেলে শুনছে তার কথা একমনে।বলছে সে,
– স্বাধীনতা!স্বাধীনতা এমন জিনিস আজ তা এই দুনিয়ায় নেই।সবাই আমরা নিয়ম,দ্বারার মাঝে বন্দি।প্রকৃতির কোলের মাঝে রয়েছে এক ঘুমন্ত নদী।সেখানেই স্বাধীনতা! কথাগুলো শুনতে শুনতে অকৃ তার কাছে গেল,লোকটাকে ভালো লাগছে না।কিন্তু ভালো লাগছে,কি যেন সম্মোহন করছে লোকটার দিকে।কথা শুনতে এখন মিষ্টি লাগছে অকৃর।
-সেই ঘুমন্ত নদীর মাঝে রয়েছে সকল সুখ,স্বর্গ সুখ!অধিবাসী হবে তোমরা? সেই ছেলেদের সাথে অকৃও বলে উঠল,
-জি গুরুজি।
-তাহলে এই ধরার সকল মায়া ত্যাগ করে কাল সন্ধ্যেবেলা এসো।
-জি আজ্ঞে গুরু!
অকৃ হাটছে,ভালো লাগছে না তার।স্বাধীনতা চায় সে।মায়া ত্যাগ করবে এই ধরার।অকৃ হাটছে,খুব দ্রুত হাটছে ফুটপাত ধরে।চায় না সে এই ধরার মায়া।অকৃ চায় প্রকৃত সুখ,সেই গুরুর কাছ থেকে।সে ভাবছে! অকৃ ভাবছে,চিন্তার এক কোণ থেকে জেগে উঠল শ্যাম বর্ণের একটি মেয়ের দুঃখে গ্রাস করা মুখ।কে যেন অকৃকে বলছে,
-সে কি আর হাসবে না?
অকৃ চিন্তা পাল্টিয়ে যায়,কি হচ্ছে এসব।কি চায় সে?অকৃ পানি খোজছে,দ্রুত ঢুকে গেল এক হোটেলে।এক লোক জগ থেকে মগে পানি ঢালছিল,সেটা জোর করে নিয়ে বাইরে এসে মুখে পানি ঝাপটিয়ে দেয়,মাথায় পানি ঢালে।থেমে যায় লুচি ভাজা লোকটার লুচি ভাজা।স্তব্ধ হয়ে দেখছে পাগলের এই কান্ড কারখানা! অকৃ তাকিয়ে দেখে সবাই তার দিকে তাকিয়ে আছে,যেন এক আজব চিড়িয়া দেখছে!ভেসে উঠে চোখের সামনে সেই মুখ!আবার পানি দেয় মুখে অকৃ! একটু স্বাভাবিক হলে জগটা ফিরিয়ে দিয়ে হোটেলওয়ালাকে পাঁচ টাকা দিতে চায় অকৃ।লোকটা নিবে না,
-না ভাই,সমস্যা নেই।আপনার খারাপ লাগছিল বলে পানি নিয়েছেন।পানি এমন আর কি জিনিস!থাক রেখে দেন!
কিছু মানুষ এই পৃথিবীতে এখনও আছে,যারা প্রতিকুল পরিস্থিতিতে মানুষকে সাহায্য করে।অদ্বিতীয়ার সাথে দেখা করতে হবে অকৃর।
-ডেকেছিস কেন?জয়ের খোজ পেলি?
-না,পাই নি।হয়তো পেয়ে যাবো!
-তুই পাবি না জানি।তুই খোজতে যাস নি!
-শোন যদি জয় মারা যায়..?
-কি?
-যদি..?
-ইম্পসিবল!আমি বাঁচবো না।তুই কি পারবি না বাচিয়ে আনতে?
-মৃত্যুর আগে বাচাতে পারবো।কিন্তু কারো মৃত্যু হয়ে গেলে ফিরানো সম্ভব নয়!
-আমি কিছু শোনতে চাই না!আমি শুধু জয়কে চাই!
অকৃ পত্রিকা বিক্রি করে কিন্তু পড়ে না।ওর চিন্তায় বারবার একই কথা ভাবছে।সেদিন এক কলামিস্ট লিখেছিল,
“মানুষ আধুনিকতায় বন্দি হয়ে গেছে।খোজছে স্বাধীনতা।প্রকৃতির মাঝে খোজছে সুখ!কিন্তু সেই প্রকৃতি কোথায়?”
জয় কি সেই প্রকৃতির খোজে গেছে?অকৃকে ভাবাচ্ছে।সেই কোর্ট পরা লোকটার কাছে যাওয়ার পর সব পাল্টে গেছে!এক সম্মোহন কাজ করছিল তার মাঝে,এখনও করছে!তাকে কাল যেতে বলেছে!জেগে উঠছে পুরনো নেশা!প্রতিশোধ নয় এটা,পাপের বিচার!
গত কালের সেই ছেলে দু’টোকে নিয়ে কোর্ট পরা লোকটা কোথায় যেন যাচ্ছে।গতকালের কোর্ট পরা আজও!অকৃ আড়ালে অনুসরণ করছে তাকে।এক পুরনো বাড়িতে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিল।পুরনো ঢাকার সবই পুরনো!কাঠের দরজা টপকিয়ে অকৃ ভিতরে ঢুকে।ছোট একটি উঠোন,তাকে ঘিরে অসংখ্য রুম।ধুলো পড়ে আছে চারপাশে,স্তব্ধ।
কোথায় যেন পানির ঢেউয়ের শব্দ হচ্ছে,কিন্তু এখান থেকে নদী তো অনেক দূর!সেদিকে গেল অকৃ।গত কালের সেই দুটো ছেলে একটি ভেলার মাঝে ঘুমিয়ে আছে।
নিচের পানির ঢেউ,মনে হচ্ছে এটি একটি নদী।কাচের প্রতিবিম্ব অকৃর বুঝতে অসুবিধা হলো না যে,মিথ্যে নদী এটি।ঘুমন্ত নদী!চারপাশে ঘুমিয়ে আছে অনেক ছেলেমেয়ে।তারা কি জীবিত?অকৃ এদের মাঝে জয়কে খোঁজতে লাগল,পেলো না।প্রত্যেকে জীবিত অথচ ঘুমন্ত,কিন্তু এদের শরীর ঠান্ডা! অকৃ একটি রুমে দেখতে পারল সেই লোকটি একটি টেবিলে বসে খাচ্ছে।ছোট্ট একটি টেবিল,দুপাশে দু’টো চেয়ার।কিন্তু পুরো রুমে লোকটি একা।পাশ রুম থেকে কিসের যেন শব্দ আসছে অকৃর কানে।শব্দকে অনুসরণ করে অকৃ চলল সেদিকে। জয় শুয়ে আছে একটি বেডে,হাসপাতালের বেডে!সোনালী রঙের এক ডাক্তার জয়ের পেট মাত্র কেটেছে।ডাক্তার লোকটা বিদেশী,বয়স ত্রিশ থেকে পঁয়ত্রিশ হবে।
-এ ইউ!কি করছেন?
-হু আর ইউ?
-পুলিশ!
পুলিশ শব্দটা শুনেই লোকটা হাতে থাকা ছুরিটা নিয়ে অকৃর দিকে তেড়ে আসল।অকৃ পাশে থাকা রোলার দিয়ে লোকটা মাথায় বাড়ি দিল।মাথা ফেটে লোকটি পড়ে গেল।লোকটার হাতে থাকা ছুরি পেটে বসিয়ে দিল অকৃ।তখনই পাশের রুম থেকে সোনালী চুলের একটি মেয়ে আসল।অকৃ ছুরিটা নিয়ে সেদিকে গেল।মেয়েটা লোকটার লাশ দেখে হাতে থাকা ট্রে ফেলে দিয়ে বলল,
-ডোন্ট কিল মি!ডোন্ট কিল মি! আমি এদের সাথে নেই,আমাকে জোর করে রেখেছে। অকৃ খালি চেয়ারে যেয়ে বসল।কোর্ট পরা লোকটি প্রথমে দেখে অবাক হলো,
-তুমি?সময় মতো আসোনি কেন?
-এই ব্যবসা কতদিন স্যার?
-কিসের ব্যবসা?
-এই যে প্রকৃতির সৌন্দর্য ভোগ করানো!
-তুমি এখানে কেন এসেছো?
-আপনাকে ধ্বংস করতে!
-স্যামুয়েল,জিনা….
-ডেকে লাভ নেই,ওরা আসবে না!
-মানে?
-জিনা বেচে আছে।স্যামুয়েল প্রকৃতির সৌন্দর্য ভোগ করছে।
-কি?
-হ্যা,আপনার নাম?
-সেটা জেনে লাভ কি?
-জানতে হবে না কিডনি,চোখ বিক্রেতার গডফাদারের নাম?যিনি রুমে সাজিয়ে রেখেছেন শো পিসের মতো কিডনি,চোখ,হৃদপিন্ড!
-আই এম মীর আমির!
নাম বলার সাথে সাথে মীর টেবিলের উপর দিয়ে এসে ছুরি নিয়ে বসিয়ে দিতে চাইল অকৃর বুকে।অকৃ সরে গেল।বাম হাত দিয়ে মীরের হাত ধরে ডান হাতে ছুরি নিয়ে বসিয়ে দিল মীরের ঘাড়ে।ঘাড়ের মাঝ বরাবর ঢুকে গেল,ফিনকি দিয়ে বেরিয়ে আসল রক্ত।ভেসে আসছে অকৃর কানে মীরের আর্তনাদ।অকৃ ভাবল এভাবে মারলে পুলিশ সন্দেহ করবে,অবশ্য অকৃ তো মৃত! তাই অকৃ ছুরি ঘাড় থেকে বের করে হাতের কব্জিতে ঢুকিয়ে দিল,পায়ের নাড়িটা কেটে ফেলল।বসিয়ে দিল ছুরি মীরের পেটে!ভেসে আসছে মীরের আর্তনাদ!ঘুমন্ত নদীর আর্তনাদ!
-জয়,এই জয়!উঠো… জয়,দেখ অদ্বিতীয়া এসেছে।জয়,তুমি চোখ খোলো! অকৃ দেখতে পেল তার শ্যাম বর্ণের বন্ধুর সেই হাসি,যাকে হাসলে অনেক সুন্দর লাগে!
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত