সাদিয়ার ঈদ শপিং

সাদিয়ার ঈদ শপিং
সাদিয়া আর রাকিব গেছে শপিংয়ে। পারিবারিক ভাবে বিয়ের পর এই তাদের প্রথম ঈদ। বাসা থেকে মার্কেট পর্যন্ত যাওয়ার মধ্যে কমপক্ষে ১০০ বার বলেছে,”বাবু আমি তোমার পছন্দেই ড্রেস কিনবো। তোমার পছন্দই আমার পছন্দ। ‘ ১ ঘন্টার মধ্যে শপিং শেষ হয়ে যাবে এই ভেবে রাকিব তো মহাখুশি। বিয়ের আগে সুস্থ শরীরে গার্লফ্রেন্ডদের নিয়ে শপিংয়ে যেত। কিন্তু সারাদিন পরে আধমরা হয়ে বাসায় ফিরতো। আগের দুর্বিষহ ঘটনার সাথে সাদিয়ার কোনো মিল নেই। তাই সে সাদিয়ার হাত চেপে বলে,”তোমার মতো একটা মেয়েকে বিয়ে করতে পেরে আমি অনেক লাকী। সত্যিই আজকাল তোমার মতো ভালো মেয়ে পাওয়াই যায় না।” সাদিয়া লজ্জায় মুচকি হাসে। দোকানে ঢুকেই রাকিব বললো,”ভাই, ও নীল রঙের জামাটা দেখান তো।”
সাদিয়া : নীল রঙের জামা তো আমার অনেক আছে। নীল বাদ দেই বাবু?
রাকিব : আচ্ছা ভাই, লালটা দেখান।
সাদিয়া : বিয়েতে তো লাল রঙের শাড়ি পরে হাজার খানেক ছবি তুলেছি। এখন আবার লাল পরবো?
রাকিব : আচ্ছা ভাই, তাহলে ওই সাদাটা দেখান।
সাদিয়া : মাত্র কয়েকদিন হলো বিয়ে হইছে আমার। এর মধ্যে তুমি কি আমাকে বিধবা বানাতে চাও? সাদা পরলে লোকে কি বলবে? জামাই থাকতেও বিধবা! এটা কি তোমার ভালো লাগবে? বলো?
রাকিব : ভাই কালো রঙের জামা দেখান তো তাহলে। বাবু, তোমায় কালো রঙ অনেক মানাবে।
সাদিয়া : ঈদের দিন কি শোক দিবস পালন করবো? কালো রঙ তো শোকের রঙ।
রাকিব : আচ্ছা তাহলে হলুদ রঙ এর নাও?
সাদিয়া : হলুদ তো চইরা রঙ। এই রঙের কিছু পরলে আমাকে ক্ষ্যাত লাগবে।
রাকিব : বেগুনি রঙ নিবা? এটা তো আনকমন রঙ।
সাদিয়া : এহ্! কে বলছে তোমাকে? আমার বান্ধবী নুসরাত এই রঙের জামা কিনে আনছে কালকে। বুঝছো? এটা তো আমি কিনবোই না। ও ভাববে আমি ওকে নকল করেছি।
রাকিব : ওহ্ বুঝছি। পিংক নিতে চাচ্ছো তাই না?
সাদিয়া : একদমই না। সেদিন ফেসবুকে কে যেন পোস্ট দিছে, সে পিংক কালারের ছাগল বিক্রি করবে। আমি কি ছাগল যে পিংক পরবো?”
রাকিব : তাইলে কি কিনবা তুমি? সব রঙেই তো তোমার প্রব্লেম দেখা যাচ্ছে। তোমার মনে কি চায়? বলো?
সাদিয়া : তুমি যেটা বলবা সেটাই তো কিনতে চাচ্ছি। এমন করো কেন?
রাকিব : ওকে। ভাই, একটা সবুজ রঙের জামা দেখান।
সাদিয়া : সবুজ আমার এক্স বয়ফ্রেন্ডের নাম।
এই রঙের জামা আমি কোনোদিনও পরবো না বাবু। তুমি কি চাও আমি সবুজ আমার গায়ের সাথে লেপ্টে থাকুক? কোনোমতে রাগ সংবরণ করে রাকিব ঈষৎ হেসে বললো,”আচ্ছা তাহলে তুমি তোমার পছন্দেই কিনো না! তোমার যেটা ইচ্ছা হয় নিয়ে নাও। আমাকে পছন্দ করতে বলো না।” ন্যাকা সুরে সাদিয়া বললো,”কি যে বলো না! তোমার পছন্দই তো আমার পছন্দ। তুমি যেটা বলবা সেটাই তো কিনবো।” ১৬ টা দোকান ঘোরা শেষ করে ১৭ তম দোকানে ঢুকলো তারা। এখন পর্যন্ত একটা জামা/শাড়ী পছন্দ করতে পারেনাই সাদিয়া। অথচ রাকিবকে বলেই যাচ্ছে,”তুমি যেটা পছন্দ করে কিনে দিবা, আমি সেটাই কিনবো। তোমার পছন্দই আমার পছন্দ। ” এদিকে গরমে,ভীড়ে আর সাদিয়ার এই কান্ড কারখানা দেখে আধা পাগল হওয়ার জোগাড় রাকিবের।
রাকিব : প্রায় সবগুলা দোকান ঘোরা শেষ। তুমি কি আজকে কিছু পছন্দ করতে পারবা? নাকি চলে যাবা? কিছুই তো পছন্দ হচ্ছে না তোমার। ঘুরতে ঘুরতে পা ব্যাথা হয়ে গেলো।
সাদিয়া : আশ্চর্য! চলে যাবো মানে কি? ও বুঝছি শপিং না করে দেওয়ার ধান্দা তাই না? কখন থেকেই তো বলছি তোমার পছন্দই আমার পছন্দ! তারপরও এক কথা বার বার কেন বলো? রাকিব প্রচন্ড ধৈর্য সহকারে সাদিয়াকে বললো,”আচ্ছা বাবু, তুমি একটা কালার বলো দোকানীকে। আমি পছন্দ করে দিচ্ছি।” সাদিয়া খুশি হয়ে দোকানদারকে বললো,”ভাই, ইট ১ দিন ভিজিয়ে রাখার পর এর সাথে গরুর মাংসের তরকারি মিক্স করলে যে রঙটা হয়, ওইটা আছে?” দোকানদার অবাক হয়ে বললো,”নাহ্।”
সাদিয়া : তাহলে ৭ দিন দাঁত ব্রাশ না করে শুধু জাম খেলে দাঁতের যে কালার হয় ওই কালারটা নিশ্চয় আছে? ঢোক গিলে দোকানী বললো, “তাও নেই।” রেগে গিয়ে সাদিয়া বললো,”আছেটা কি এই দোকানে! টাইম ওয়েস্ট শুধু শুধু। আনকমন কিছুই দেখাতে পারেন না আশ্চর্য! দোকান খুলেছেন কেন? বাবু, চলো তো অন্য দোকানে যাই।” রাকিব কিছু না বলে শুধু হা করে তাকিয়ে রইলো। সাদিয়া যা বলছে যন্ত্রের মতো শুধু দেখেই যাচ্ছে। শেষমেশ সাদিয়ার ২ টা জামা পছন্দ হলো। খুশিতে প্রায় কেঁদেই দিলো রাকিব। ফাইনালি সে বাসায় যেতে পারবে।
সাদিয়া : ২ টা ভালো লেগেছে। তোমার পছন্দই তো আমার পছন্দ। তুমি যেটা বলবে সেটাই নিবো।
রাকিব : ২ টাই নাও। ২ টাই সুন্দর।
সাদিয়া : না একটাই নিবো বাবু।
২ টা কিনলে অনেক টাকা খরচ হয়ে যাবে। একটার দামই তো ১২,৫৫০ টাকা। ২ টা কিনলে সবার জন্য কিনবা কেমনে? খুশিতে রাকিবের লাফ দিতে ইচ্ছা করলো। পাব্লিক প্লেস দেখে দিলো না। কিন্তু এই ২ টা জামাতেও বাছাবাছি শুরু হয়ে গেলো। সাদিয়া একবার বলে এটা ভালো। আবার বলে না না ওইটা ভালো। ওইটা পরলে এইটা হবে, এইটা না পরলে ওইটা হবে। এইটা পরলে মোটা লাগবে কিন্তু ওইটা পরলে কালো লাগবে। ওইটা পরলে কিউট লাগবে কিন্তু এইটা পরলে কিউট নাওও লাগতে পারে ইত্যাদি ইত্যাদি। রাকিব লটারির আয়োজন করলো। পরে রং চায়ের মধ্যে এনার্জী প্লাস বিস্কুট চুবালে যে রঙ হয় সেই রঙের জামাটা নিয়ে নিলো সাদিয়া।
বাসায় আসার পর জামাটা খুলে তার মনে হলো ইলিশ মাছ বছরের পর বছর ফ্রিজে রাখলে শুকিয়ে যে কালারটা হয় ওই কালারের জামাটাই ভালো ছিলো। বাইরের জামা কাপড় ছেড়ে ফ্রেশ হয়ে মাত্র বিছানায় গা এলিয়ে দেওয়া একদিনে আধপাগল হয়ে যাওয়া রাকিবের কাছে কাঁদোকাঁদো হয়ে সাদিয়া বললো,”এই জামাটা ভালো লাগছে না বাবু। প্লিজ এটা ফেরত দিয়ে ওই জামাটা নিয়ে আসো। নয়তো বিয়ের প্রথম ঈদ আমার মাটি হয়ে যাবে। তুমি কি চাও ঈদের দিন তোমার বউ মন খারাপ করে বসে থাকুক?”
কোনোমতে কান্না সংবরণ করে রাকিব আবার মার্কেটে গেলো। দোকানদারের সাথে অনেক কথা কাটাকাটি, অপমান সহ্য করে শেষমেশ এই জামাটা ফেরত দিয়ে ওই জামাটা নিতে পারলো সে। বাসায় গিয়ে সাদিয়াকে জামাটা হাতে দেওয়ার সাথে সাথেই মুখ কাচুমাচু করে সাদিয়া বলে উঠলো,”আগের জামাটাই বোধহয় ভালো ছিলো। তুমি কি ওইটা এইটুক শোনার সাথে সাথে রাকিব অজ্ঞান হয়ে গেলো। জ্ঞান হারানোর একটু আগে মনে মনে দোয়া করলো,”হে আল্লাহ্! ঈদের আগে যেন আমার জ্ঞান না ফেরে।”
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত