ইশাদের বারান্দায় পেতে রাখা চেয়ারটায় আমি চুপচাপ বসে রইলাম৷ দু’টো চেয়ার৷ ইশা কিনেছিল আমায় সাথে নিয়ে৷
সামনের ছোট্ট টেবিলে রাখা তাজা পত্রিকাখানা উল্টে পাল্টে দেখছি৷”
খানিক বাদে ট্রে হাতে ইশা আসে৷ ফোলা চোখ, গালগুলো লাল হয়ে আছে৷ নাকটাও লাল৷” রূপবতীদের এই সমস্যা৷ এরা কিছু লুকোতে পারেনা৷ হাসি-কান্না, রাগ-দুঃখ সবই এদের নাকে,চোখে-মুখে লেগে থাকে৷” ইশার সাথে কথা বলার সাহস হলোনা আমার৷ সামনে রাখা গ্লাসের লেবুর শরবতখানি এক চুমুকে খেলাম৷” ইশার দিকে তাকিয়ে বলতে চাইলাম,কেমন আছো?” আবার ভাবলাম, নাহ৷ চেহারায়তো বলছে৷” ইশার ছোটবোন পর্দার আড়াল থেকে দেখছে আমায়৷ বুক পকেটে রাখা সানগ্লাসটা চোখে লাগালাম৷ পিচ্চিটার চোখাচোখি হতেই মুচকি হাসলাম৷” ইশা কিছু বলেনা৷ আমিও নাহ৷ ইশা চুপচাপ প্রস্থান নেয়৷” লুঙ্গি আর ধবধবে সাদা পান্জাবী পরে ভেতর থেকে বেরিয়ে আসলো ইশার বাবা৷” আমি দাঁড়িয়ে সালাম দেই৷ মূচকি হাসি৷ ইশার বাবা মাথা নাড়িয়ে বসতে বলে৷ আমি চুপচাপ বসি৷”
-কেন ডেকেছি জানো?” বলল ইশার বাবা৷” আমি মুখ না নেড়ে মাথা নাড়িয়ে বলি, না৷ জানি না৷” “আমার ছেলে পেলে নেই জানো৷ ইশার বিয়ের বাজারের একটা ব্যাপার আছে৷ কাকে ডাকি ভাবতে বসলাম পরশু৷ তোমার কথাই মনে পড়লো৷ তুমি সেদিন বলছিলে শুনলাম, যাইহোক ইশার পাশে ছিলে পাশে থাকবে৷” তাই তোমাকেই ভরসা করছি৷” আমি মুচকি হাসলাম৷ সানগ্লাসের আড়ালে আমার চোখ দু’টো লাল হচ্ছে৷ চোখের পলক ফেললেই গড়িয়ে পড়বে৷ পলক ফেললাম না তাই৷ একটু জ্বলছে৷” ইশার বাবা বসা থেকে দাঁড়িয়ে বলল, তুমি বসো৷ আমি আসছি৷” আমি লম্বা শ্বাস নেই৷ চোখে পলক ফেলি৷ লুকিয়ে চোখের জল মুছি৷ ভাবলাম কেউ দেখেনি৷
ধারণা ভুল হলো৷ জানালার পর্দা খানিক সরিয়ে টিপটিপ করে তাকিয়ে আছে ইশা৷ চোখের চাহনীতে বিষণ্ণতা আর না পাওয়ার দুঃখ লেগে আছে মেয়েটার৷ তা আমি টের পাই৷” ইশাকে না পাওয়ার বিষন্নতা আর বেদনা আমারো আছে৷” সানগ্লাসের কাঁচ ভেদ করে সে বিষণ্ণতা হয়তো ঈশার দৃষ্টিগোচর হয়না৷ কিজানি হতেও পারে৷” আমি দীর্ঘঃশ্বাস ফেলি৷ না পাওয়ার দীর্ঘঃশ্বাস৷ বেদনা আষ্টেপৃষ্ঠে ধরে আমাকে৷” আমি চোখের সানগ্লাসটা আবার খুলি৷ চোখ দু’টো সামনে রাখা আয়নায় ফেলি৷ মুচকি হেসে চোখ দু’টোকে বললাম একবার, বেঈমানী না করলে তোরা, ঈশাটা আমারই হতো৷” ঠোঁটচেপে কান্না আটাকায় আমি৷” আমার চোখ দু’টো জন্মের পর থেকেই অস্বাভাবিক৷ বয়সের সাথে পাল্লা দিয়ে যেন ভয়ংকর রকমের দৃষ্টিকটু দেখতে হয়েছে তারা৷”
এই রূপ চোখের অধিকারী আমার জীবনে আমি দু’জন দেখিনি৷ তবে মাছ দেখেছিলাম একজোড়া৷ আমাদের বাড়ির সামনের পুকুরটাতে মাছজোড়া ভেসে বেড়াতো৷ চোখ দু’টো তাদের আমার মতো৷ অনেকখানি বড় বড়৷ সামনের দিকে বেরিয়ে আসতে চাইছে যেন৷ কে যেন একবার মেরে ফেলেছিল তাদের৷ আমার কষ্ট লেগেছে খানিকটা” আমার ছোটবোন আমাকে কিনামে ডাকতো আমি ভুলে গিয়েছি৷ নামটা শুনতে বিষ লাগতো আমার৷” একবার তাকে ভীষণ মেরেছিলাম৷ আমার সাথে আর ভালোভাবে কথা বলেনা৷ বড় হয়েও বলেনা৷” ভার্সিটিতে ভর্তি করিয়ে শহরে পাঠালো আব্বা৷ ইট-পাথরের শহরে এসে আমি নির্লিপ্ত হয়ে বসে থাকি৷ মাথার উপরের সিলিং ফ্যানের ঘূর্ণনগতি মাপার ব্যর্থচেস্টা চালাই৷ আব্বা মাঝেমধ্যে ফোন করে৷ আম্মা করেনা, বোনও না৷” আমি যেদিন শহরে আসবো৷ বিকেলে আম্মা শুয়ে ছিল৷ চোখ লেগেছে বোধই৷ আমি পা ছুঁতেই উঠে বসলো দ্রুত৷ আমি হাসলাম৷
আম্মা ভ্রু কুচকে বলল, বাপ তোরে বলছি এভাবে ধুম করে সামনে আসবিনা৷ চোখগুলো হুট করে দেখলে আত্মা কাঁপে আমার৷” আমার মন খারাপ হলো একটু৷ আম্মা আবার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়৷” ছোটবোনকে জাগাইনি৷ হাত বুলিয়ে চলে এসেছি৷” আব্বা বাদে আমার বড় বড় চোখগুলো ভয় পায় যেকেউ৷” শহরে যে রুমটাতে উঠেছি৷ সাথে একভাই থাকে৷ বয়সে আমার চেয়ে বড়৷ নাম রাফি৷ আমি প্রথমদিন ঈতস্তত করে রুমে ঢুকি৷ চোখে সানগ্লাস৷ বুদ্ধিটা আমাকে আব্বা দিয়েছে৷ সানগ্লাসটা আব্বার কিনে দেয়া৷” রাফি ভাই ভ্রু কুচকে বলল, এখানে রোদ নেই৷ সানগ্লাস কেন?” আমি চুপ করে থাকি৷ রাফি ভাই কিছু বলেনা৷” ফোনের গ্যালারি ঘেটে একখানা ছবি বের করলাম আমার৷ ছবি তোলা হয়না আমার তেমন৷ আয়নাও দেখিনা বহুদিন৷” রাফি ভাই সামনের খাটে বসে বলল,
-এখনো লাগিয়ে রেখেছো?” আমি হাতের ফোনটা রাফি ভাইয়ের দিকে এগিয়ে দেই৷ ভাবলাম চমকে উঠে বলবে, তুমি বেরোও নয় আমি বেরোই৷” রাফি ভাই একটু সময় নিয়ে দেখছে৷ সিখারেট মুখে দিয়ে বলল, ব্যাপার না৷” আমি নিশ্চিন্ত হলাম৷” সন্ধ্যা হতেই আমাকে নিয়ে বেরোলো রাফি ভাই সেদিন৷ আমার চোখে সানগ্লাস, পরনে সাদাসিধে পান্জাবী৷ সানগ্লাসের সাথে বেমানান একটু৷”
সামনের শপিং থেকে দু’চারটা শার্ট কিনলেন রাফি ভাই৷ আসার সময় বিরিয়ানী খাওয়ালেন৷” আমি ঘুমিয়ে পড়েছি রুমে ফিরতেই৷ পরদিন ঘুম ভাঙতেই রাফি ভাই বলল, এই শার্টগুলা পড়বি৷ ভেতরে হালকা টিশার্ট থাকবে৷ শার্টের বোতাম থাকবে খোলা, চোখে সানগ্লাস৷ ঐদিকে আমার জেল রাখা আছে৷ চুলে খাঁড়া করে নিবি৷” এভাবেই বেরোবি বুঝলি৷” আমি চরমভাবে অবাক হলাম৷ চোখ গড়িয়ে পানি ঝরছে৷ অবাক হলে চোখে জল ঝরবে কেন আজব!” আমি রাফি ভাইকে জড়িয়ে ধরেছিলাম৷ পাথুরে শহরে রাফি ভাইয়ের মতো নরম মনের মানুষ পেয়ে আমার ঝংয়ে ধরা মনটা একটু শান্ত হলো৷” ভার্সিটি গিয়ে পড়লাম বিপদে৷ ক্লাসের ভেতরে সানগ্লাস পরে থাকাটা দৃষ্টিকটু বটে৷ রাফি ভাইকে জানাতেই ব্যবস্থা হয়ে গেল৷” আমি আবারো কৃতজ্ঞ হয়েছিলাম মানুষটার কাছে৷”
নতুন শহরে মানিয়ে নিতে বেগ পাচ্ছি নিয়ম করে৷ সবাই একে অপরের সাথে বন্ধু পাতছে৷ সিনিয়ররা টুকটাক র্যাগ দিচ্ছে৷ জুনিয়র রূপবতীদের টুকটাক হেল্প করে পটানোর ধান্দায় অল্পকিছু৷” ক্লাসে আমাকে নিয়েও সবার জল্পনা-কল্পণা৷ আমার ভাব বেশি! সানগ্লাস দিয়ে চলা নাক উচু ছেলে৷” আমি কোণের টেবিলটায় আলাদা বসি৷ ক্লাস শেষ হতেই রীতিমত দৌঁড়ে পালাই৷ আমি যেন এক অপার রহস্য তাদের কাছে৷ দিন কয়েক বেশ উপভোগ করছি৷ রুমে শুয়ে চুপচাপ হাসি৷ রাফি ভাই বলে, কিরে প্রেমে পড়েছিস?” আমি মুখ কালো করে বলি, এই চোখ দেখে মা-বোনই ভয় পায়৷ আর প্রেমিকা! হাহ! বন্ধুই নাই একখানা৷” নিজেকে তাচ্ছিল্য করলাম একটু৷ অদ্ভূত শান্তি পেলাম৷” ইশা মেয়েটার সাথে রাফি ভাই পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল আমাকে৷ ইশাকে হুট করে ধরে নিয়ে এসে বলেছিল, তোর বান্ধবী এইটা৷” আমার আকাশ থেকে পড়া অবস্থা৷ ইশা একবার তাকিয়ে মুচকি হাসলো৷ আমি মুগ্ধ হলাম৷ ইচ্ছে হল, গালগুলো টিপে দেই একবার৷ নাকটা টানি৷ নিজেকে দমিয়ে রাখলাম৷”
রাফি ভাইয়ের হাত ধরে বলেছিলাম, ভাই! সানগ্লাস খোলার পর মেয়ে যদি বেহুশ হয়ে যায়!” মরেও যেতে পারে ভয়ংকর চোখ দেখে৷” রাফি ভাই আমার কাঁধ চাপড়ে আস্বস্ত করলেন, মরবেনা৷ ছবি দেখিয়েছি৷ আমার কাছে পড়ে বুঝলি৷ তোর সমান৷” রাফি ভাই হাঁটা দেয়৷ আমি ইশার পাশে বসি৷ একবার ভাবি, সানগ্লাস খুলবো?” পরক্ষণেই ভাবি “নাহ”৷ চুপচাপ বসে থাকি৷ ইশা টুপ করে সানগ্লাস খুলে৷ তাঁর চোখে লাগিয়ে বলে, কেমন লাগছে বল?”গাল দু’টো হালকা টিপে দিয়ে বলি, মিষ্টি লাগছে৷” গোলগাল মুখওয়ালা সহজ সরল মেয়েটা আমার সাথে মিশে গেল একদম৷ আমার বিষণ্ণ পৃথিবীটা হুট করে রঙিন হল৷ অনুভূতিগুলো নীল আকাশে পাখা মেলে উড়ছে৷ রৌদ্রজ্জল কিংবা মেঘাচ্ছন্ন সকাল, অমাবশ্যা কিংবা পূর্ণচাঁদের আলোয় ভরা রাত্রি৷ সবকিছুই হুট করে রঙিন হওয়া শুরু করেছে৷” আমার পছন্দ-অপছন্দের সবকিছু জুড়ে মেয়েটা৷
আমি অনূভব করি, মেয়েটাকে আমি ভালোবাসি৷ আমাদের মধ্যে প্রেম হচ্ছে৷” যদিও সে প্রেম কিংবা ভালোবাসার পূর্ণতা হবে না আমি জানি৷” একবিকেলে ইশা উদাস হয়ে বলেছিল, আচ্ছা শুভ্র, প্রেম মানে কী?” আমি বলি, “অপ্রাপ্তি”৷ জবাবে সে কিছু বলেনি৷ আমিও বলিনি৷” এরকম বিকেল আমরা অনেক কাটিয়েছি৷ হা করে আকাশ দেখেছি৷ হাত ধরে বসে থেকেছি৷ ফুচকা গিলেছি৷ চুলের খোপায় গোলাপ গুজেছি৷” সে বাসন্তি শাড়ি জড়িয়েছ, আমি সাদা পান্জাবীতে ঘুরেছি৷ কত শত মধুময় বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা রাত অবধী ঘুরেছি৷” কিন্তু ভালোবাসি বলা হয়নি৷ আমার বলা হয়নি৷ সে কি ভেবেছে আমার জানা নেই৷” আমি প্রেমটাকে অপ্রাপ্তি ভেবেই নিয়েছি৷” আমার গত জন্মদিনে ইশা বলেছিল, আজ তোর বিরিয়ানীর দাওয়াত৷ চলে আসবি৷ আমি রান্না করবো৷” আমি প্রস্তুতি নেই৷ খানিক বাদে আবার ফোন আসে৷ ওপাশ থেকে আধবয়স্ক কেউ বলছে, শুভ্র?
-হ্যা
আমি ইশার বাবা৷ তোমার জন্মদিন শুনলাম৷ আমার মেয়ে বিরিয়ানী রাঁধছে৷ খুবই স্পেশাল৷” আমি বাজারে বেরোচ্ছি৷ তুমি একবার আসবে?” একসাথে বাজার করি?” আমি চুপ রইলাম৷” “কি আসবে?” ওপাশ থেকে বলল৷ আমি বলি, আসবো৷” সংকোচবোধ করলাম একটু৷ গ্লাস খানেক পানি গিলে আমার রাফি ভাইয়ের কথা মনে পড়লো৷ বছর দুয়েক হলো বিদেশ পাড়ি দিয়েছে৷ যোগাযোগ নেই৷ প্রেমিকার উপহার হিসেবে বেদনা পেয়েছিল৷” যাওয়ার আগে বলেছিল,
-প্রেম মানে অপ্রাপ্তি৷ ভালো থাকবি৷” আমি শুধু চেয়ে দেখেছি মানুষটার যাওয়ার পথ৷” ইশার বাবার সামনাসামনি হতেই কেমন করে যেন তাকালো৷ আমি নিজের দিকে তাকিয়ে লজ্জিত হলাম একটু৷ শার্টের বোতামগুলো লাগালাম৷ চুল বসালাম৷ ইশার বাবা বলল, চল চা খাই৷” চায়ে চুমুক দিয়ে তিনি বললেন,
-কী করছো এখন?
-টিউশন আছে কয়েকটা৷”
উনি ভ্রু উচিয়ে বললেন, টিউশন করো! তা এভাবেই যাওয়া হয়? চুল খাড়া, শার্টের বোতাম খোলা, চোখে সানগ্লাস!” আমি জবাব দেইনা৷ সানগ্লাস খুলে তাকাই৷” মানুষটা নড়েচড়ে বসলেন৷ আমি মুচকি হাসলাম৷” চা শেষে পান চিবোতে চিবোতে বলল, সানগ্লাস লাগাতে পারো৷” আমার বুকপকেটে দু’টো শ’টাকার নোট গুজে দিয়ে বলল,
-দুপুরে বিরিয়ানী খেয়ে নিও৷” আমি নিতে চাইলাম না৷ উনি চেপে দিয়ে বললেন, রাখো৷ ইশা দিয়েছে৷ সে একটু অসুস্থ৷ তোমার যাওয়ার দরকার নেই৷” মানুষটা হাঁটা দিল৷ আমি ঠাঁই দাড়িয়ে রইলাম৷” ঘন্টা পেরিয়ে ঈশার ফোন আসে৷ ভারী গলায় বলল, আমার অসুখ৷ তোর আসা লাগবেনা৷” আমি কিছু বলার আগে ফোন কেটে গেল৷ পরক্ষণে আবার ফোন দেই আমি৷ নরম গলায় বলি, একবার আসি আমি? তোকে দেখে চলে আসবো৷” ইশা খানিকটা নীরবতা পালন করে বলল, এখানে বাচ্চা কাচ্চা এসেছে আমায় দেখতে৷ তোকে দেখে ভয় পাবে৷” আমার গলাটা ধরে এসেছিল৷ ধরা গলায় আমি আর কিছু বলতে পারিনি৷” সেদিনের পর মাসখানেক কোনো খবর নেই মেয়েটার৷ দিন দুয়েক আগে ফোন আসে৷ ইশা’র নয়৷ তাঁর বাবার৷ ভারী গলায় বলল, ইশা’র বিয়ে ঠিক হয়েছে৷ তুমি আসবে?”
আমি না করিনি৷ সেই সুবাদে ঈশার বাসায় আসা আমার৷” ইশা’র ছোটবোনকে ডাকলাম হাতের ইশারায়৷ এক টুকরো কাগজ আর কলম বলতেই নিয়ে আসলো৷ আমি সাবধানে লিখি, প্রেম মানে যদি অপ্রাপ্তি হয়৷ তবে আমাদেরটা প্রেম ছিল৷” পান্জাবীর পকেটে গুজে রাখি৷ যাওয়ার আগে দিয়ে যাবো৷” আমার অস্থির লাগছে একটু৷ গলাটা ধরে আসছে৷ ইশা’র বিয়ের বাজারটা করেই চলে যাবো, পালাবো আমি৷ ইশা’র বাবা ভেতর থেকে বের হননি এখনো৷ আমি অপেক্ষা করি৷” আমার অপেক্ষার অবসান হয়৷ বেরোবার আগে একবার উখিঝুকি মারলাম ইশা’কে দেখবো বলে৷ দেখা পেলাম নাহ৷” আমি হাঁটা দিলাম৷ চোখে সানগ্লাস৷ নির্লিপ্তভাবে ইশা’র বাবার পেছন পেছন হাঁটি সামনের বাজারে৷” বাজারে ঢুকতেই বললেন,
-তোমার কেমন বিরিয়ানী পছন্দ?” আমি কিছু বললাম না৷ আবার বললেন,
-গরুর না মুরগী? বলো?
-মুরগী৷”
মুরগীর বাজার ঘুরে বড় মুরগীটা কিনলাম৷ আমি মানুষটার দিকে তাকালাম৷ একটু অবাকের সহিত৷” তারপর ঘটলো অষ্টমআশ্চর্য ঘটনা৷ মানুষটা টুপ করে সানগ্লাস বের করলো পান্জাবীর পকেট থেকে৷ চোখে লাগিয়ে মুচকি হেসে বলল, ইশা বিরিয়ানী রাঁধবে৷ মাসখানেক ধরে রাতদিন কেঁদে চলেছে আমার পরীটা! আজ জমিয়ে বিরিয়ানী খাবো আমরা৷”
-বিয়ের বাজার?”
-বিরিয়ানী পোষাবেনা তোমার?”
আমি মুচকি হেসে বললাম, পোষাবে৷” আমরা হাঁটা ধরলাম৷” পান্জাবীর পকেটের চিরকুটখানার উল্টো পিঠে লিখি “প্রেমের সংজ্ঞা শিখাবি?” ইশা’র হাতে গুজে দিতেই ফিসফিস করে বলল, সানগ্লাস আমার চোখে লাগা৷ নয় চোখ দেখে মরে যাবো৷
গল্পের বিষয়:
গল্প