লুবনা ক্লাস করে রুমে আসতে নিলেই ইকবাল এর বন্ধুরা এসে দাড়ালো।
ভাবি…শুনেন..
লুবনা: কে ভাবি?
আপনি..!আমরা ইকবালের বন্ধু।
ভুলে গেছেন?
লুবনা: আমি আপনাদের ছোট।আমায় নাম ধরে ডাকবেন।ভাবি আমার ভালো লাগেনা।
তা কি করে হয়?
যাক ইকবাল জানতে চেয়েছে রান্নার জন্য কি কি বাজার আনবে?
লুবনা: শুনুন আমি এখানে লেখাপড়া করতে থাকছি।কোন সংসার বা খেলনা বাটি খেলতে আসিনি।
আপনার বন্ধুকে বলে দিবেন সে যাতে অন্য কোথাও খায়।
আমি আমার মতন থাকবো।
ইকবালের বন্ধুরা কথা না বলে দাড়িয়ে রইলো
লুবনা চলে গেল।
ইমদাদ জহিরকে বলছে,ইকবাল এ কাকে বিয়ে করলো!
জীবনটা এভাবে নরক করলো ও!
লুবনা বাসায় গিয়ে দরজার সামনে দেখে চিঠি।
সেই হলুদ খামের চিঠি।
লুবনা এদিক-সেদিক তাকিয়ে কাউকে দেখছেনা।
চিঠি খুলেই বুকের ভিতর মোচর দিল।
ইকুর চিঠি!
ইকু আমার বাসাও চিনে!
এই বলে চোখ ঝাপ্সা হয়ে গেল লুবনার।
চিঠিতে লিখা,জানিনা আমায় দেখলে আমায় আর ভালোবাসবে কিনা!
আমায় আর আপন করবে কিনা!
নাকি আমায় ঘৃনা করবে?
আচ্ছা আমায় কি দেখতে ইচ্ছে করেনা একবার ও!আজ একবার চিঠির উত্তর দিও।
রাত ৯টায় ঠিক এখানে চিঠি রেখো।
আমি অপেক্ষা করবো।
ইতি ইকু।
লুবনা চিঠি নিয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে ঘরে চলে গেল।
বিছানায় শুয়ে ভাবছে,কি করা উচিৎ!
মানুষটাকে চিনিনা জানিনা তার উপর আস্থা রাখা উচিৎ হবে!
এর মাঝেই ইকবাল আসলো।
কি বেপার শুয়ে আছেন যে?
খাবেন না?
লুবনা চোখের উপর হাত দিয়ে শুয়ে আছে।
ইকবাল: কি হলো?
লুবনা: আমি খাব না কি করবো তা আপনাকে বলে দিতে হবে?
আচ্ছা আমি কি নিজেকে বিক্রি করে দিয়েছি আপনার কাছে?
ইকবাল: সব কথায় এতো রেগে যান কেন?
আমি কি এমন বললাম?
আর আপনি কাঁদছেন কেন?
লুবনা চোখ মুছে বলছে কাঁদছি আমার কপালের কথা ভেবে।এখন যান আমার চোখের সামনে থেকে।
আর আমি রান্না করিনি আজ।
ইকবাল : রান্না করেন নি ভালো হয়েছে।আমি তবারোক নিয়ে এসেছি।
লুবনা: তবারোক?
ইকবাল: হুম আমার বন্ধুর খালা বছরে একদিন খাবার রান্না করে দেয়।
তা খেলে সকল সমস্যা চলে যায়।
লুবনা: আপনি খান।
আপনার দরকার খুব।
প্লেট এ খাবার নিয়ে এসে লুবনার সামনে ধরে বলছে খাবার নিয়ে তাচ্ছিল্য করবেন না।
খালা নারায হবেন।
লুবনা কিছুটা ভয় পেয়ে খাবারের থালা হাতে নিল।
ইকবাল মুচকি মুচকি হাসছে।
লুবনা ইকবালের দিকে তাকিয়ে ভ্রু বাঁকিয়ে বলে কি বেপার হাসছেন?
ইকবাল: কি বলো?
কই!
আমার চেহারাই এমন হাসিখুশি।
লুবনা মুখ বাঁকিয়ে বলে আপনি খান না যে?
খালা নারায হবেন..
আচ্ছা তবারোক হিসেবে বিরিয়ানি দেয় আগে জানতাম না।
ইকবাল খাচ্ছে আর বলছে খালা দেয়।
খুব নাম তার।
ইকবাল মনে মনে ভাবছে তবারোক এর কথা বলেও তো এক সাথে খেতে পারলাম।
লুবনা খাবার শেষ করে বলছে এর পর যদি কোন সমস্যা থাকে তাহলে আপনার জীবনে সমস্যা কিভাবে আনতে হয় তা আমি বুঝাবো।
ইকবাল হাসি দিয়ে ভাবছে আমার জীবনে হাসি কাঁন্না বা সমস্যা যাই আসুক তা যদি তোমার দেয়া হয় আমি তা হাসিমুখেই নিব।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল লুবনা ভাবছে রাত হলেই ইকু আসবে চিঠি নিতে।
আমি লুকিয়ে হলেও দেখতে চাই একবার।
আমি জানি ইকু দেখতে ঠিক রাজকুমারের মতন হবে।
এর মাঝেই ইকবাল এসে বললো লুবনা আমি বাইরে যাই।
লুবনা কোন কথাই বলছেনা।
না আমি এই বাস্তব ভুলে যেতে পারিনা।
আমি এখন আর মা বাবার আদুরে বাচ্চা মেয়ে নই।
আমি এখন কারো বিবাহিতা স্ত্রী।
আমার অধিকার নেই নতুন করে প্রেমে পরা।
তা যে বৈধ নয়।
নোংড়া সম্পর্ক নিয়ে ভাবা আমার উচিৎ নয়।
খাতা বের করে ইকুকে প্রথম ও শেষ চিঠি লিখছে লুবনা।
ইকু,
আমি জানিনা আপনি কে?
বা আমার জানার ইচ্ছেও নেই।
আপনি আমায় টাকা দিয়ে অনেক উপকার করেছেন।
সময় হলে আমি তা ফিরিয়ে দিব।তবে সে ঠিকানা আমার জানা নেই।
আর একটা কথা,আমি বিবাহিতা।তা আপনি জানেন কিনা জানিনা তবে এটা জেনে আশা করি আর চিঠি আমায় দিবেন না।
আমি কবে নাগাত আপনার টাকা পরিষোধ করতে পারবো তার ও নিশ্চয়তা দিতে পারছিনা।
ভালো থাকবেন।
লুবনা।
রাত বাড়তেই লুবনার বুকের ভিতর ধুকপুকানি শুরু হয়ে গেল।
এর মাঝেই ইকবাল বাসায় এসে পরলো।
লুবনা দরজার যেখানে ইকু চিঠি দিয়ে গিয়েছিল ঠিক সেখানে চিঠি রেখে দরজার আড়াল দিয়ে তাকিয়ে আছে।
ইকবাল লুবনাকে ডেকে বলছে ওখানে কি করছেন?
লুবনা: কই কিছুনা।
ভাত রান্না করা আছে খেয়ে নিন।
৯টা বেজে ১০টা। ইকুর খবর নেই।
এর মাঝে ঘরের ভিতর পরার কিছু শব্দ পেয়ে লুবনা ভিতরে গেল।
কি হয়েছে?
ইকবাল: হাত থেকে প্লেট পরে গেছে।
লুবনা: সামান্য খাবার ও খেতে পারেন না।
আর আপনি কাঁপছেন কেন?
ইকবাল: কই? জ্বর আসবে বোধয়।
লুবনা: আমি কাচ পরিষ্কার করছি আপনি যান।
ইকবাল উঠে চলে গেল।
লুবনা কাচ তড়িঘড়ি করে পরিষ্কার করে সামনে গিয়ে দেখে চিঠি নেই।
এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে কেউ নেই।
ইকবাল: কি খুঁজেন?
লুবনা: আচ্ছা এখানে কাউকে দেখেছেন?
ইকবাল: কই নাতো।
লুবনা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে ভাবছে আর হয়তো দেখা হবেনা ইকু।
দেখা হবেনা আমার উপকারী বন্ধুকে।
সব লুকোচুড়ি শেষ হলো আজ।
ইকবাল লুবনার কাছে এসে বলে।কাঁদছ আবার?
তুমি কি তিন বেলাই কান্না করো?
লুবনা রাগী চোখে ইকবালের দিকে তাকালো।
ইকবাল:আচ্ছা যাও বলবোনা।
কি হয়েছে বলবা?
লুবনা দৌড়ে ঘরে চলে গিয়ে বললো কিছুনা।
কয়েকদিন এভাবে কেটে যাবার পর ইকবাল হঠাৎ এসে বিছানায় বসে পরলো।
লুবনা পড়ার টেবিলে বসে ইকবালকে দেখে বলছে কি হয়েছে?
ইকবাল: বাবার কাছে গিয়েছিলাম।
লুবনা: কেন?
ইকবাল: টাকা চাইতে।
লুবনা: তারপর?
ইকবাল: বাবা জানিয়ে দিয়েছে তার পক্ষে দেয়া সম্ভব নয়।
লুবনা: ঠিক আছে।বাবার টাকা সিগারেট এর ধোয়ার মতন উড়ালে কোন বাবা টাকা দিবে?
ইকবাল: আমি সিগারেট খাইনা এখন আর।
লুবনা:আবার মিথ্যে?
ইকবাল: বললাম যে সেদিন জানার পর থেকে খাইনা যেইদিন বললা তুমি নিতে পারোনা।
তবে তাতে আমার খুব ই কষ্ট হয়।
অনেকদিনের অভ্যাস।
মাত্র ১৩বছরেই আমার মা প্যারালাইসড হয়ে যায়।
কেউ ছিলনা বারন করার।
লুবনা ভাবছে এই গুন্ডাটা আমার জন্যই কেন সিগারেট ছেড়েছে?
লুবনা: নিজের পায়ে দাড়াতে শিখুন।
নিজে চলতে পারেন না তার উপর বিয়েও করেছেন?
বাহ”
ইকবাল উঠে বাসা থেকে বের হয়ে গেল।
সারারাত লুবনা অপেক্ষা করার পরেও ইকবাল ফিরে আসেনি।
লুবনা বার বার নিজেকে বলছে কেন ই বা সে ইকবালের অপেক্ষা করছে!
সে যাক.. তাহলেই তো মুক্তি?
লুবনার এই প্রশ্নের উত্তর জানা নেই তার মন নামক যন্ত্রের কাছে।
পরের দিন ক্লাসে যেতেই ইমতিয়াজ সাহেব লুবনাকে ডাক দিল।
বাবা কিছু বলবেন?
মা আমি ইকবাল কে ফিরিয়ে দিয়েছি কাল।
লুবনা হেসে বলে ভালো করেছেন।
কিন্তু ওর কাছে টাকা নেই ও কি করে চলবে?
এই টাকা রাখো তুমি ওকে দিয়ে দিও।
তুমি ওকে বলোনা যে আমি দিয়েছি।
লুবনা ইমতিয়াজ সাহেবের হাতে টাকা দিয়ে বলছে বাবা এই টাকা আমি নিতে পারবোনা।
এর চেয়ে বরং আমায় একটা চাকরী দেন যা দিয়ে নিজের পায়ে দাড়াতে পারি।
ইমতিয়াজ: আচ্ছা তা না হয় পাবা।
আমার বন্ধুর স্কুল আছে,সেখানে চাকরী করবে?
লুবনা: পেলে খুব উপকার হতো।
ইমতিয়াজ : মাসে ১৫হাজার এর মতন বেতন।
আর কয়েকটা টিউশনিও পাবে।
লুবনা ভাবছে এবার তাহলে মা আর ভাইকে নিজের কাছে আনতে পারবো।
ইমতিয়াজ : কি পারবে?
ইকবাল কে বলেছিলাম সে নাকি পড়াবার ধৈর্য্য নেই
তুমি কাল সকালে আমার সাথে দেখা করো আমি নিয়ে যাব।
তুমি ভেবে নেও চাকরী কনফার্ম।
ক্লাস করে ভার্সিটির গেইট থেকে বের হতেই লুবনা রাস্তার অপর পাশে ইকবাল কে দেখে থমকে গেল।
ওর হাতে মাটি টানার পাত্র।
লুবনাকে ইকবাল দেখার আগেই লুবনা চলে আসলো।
সারাদিন পর ইকবাল সন্ধ্যায় এসেছে রুমে।
লুবনা দরজা খুলতেই ইকবাল লুবনার হাতে খাবারে প্যাকেট দিয়ে বললো নেও খাবার।
লুবনা: খালা কি রোজ তবারোক দেয়?
ইকবাল রুমের ভিতরে হেসে হেসে ঢুকছে আর বলছে আরে না।
আমি চাকরী পেয়েছি।
লুবনা ইকবালের দিকে তাকিয়ে বলে,প্রতিদিন মাইনে দিবে?
ইকবাল অবাক হয়ে বলে মানে?
লুবনা: যে চাকরী করেন তাতে প্রতিদিন ২০০পাবেন তাইনা?
ইকবাল চুপ হয়ে আছে।
লুবনা খাবার বের করে ইকবাল কে দিল আর নিজেও খেয়ে বলছে,এতে লজ্জার কিছু নেই।
আমিও ওই চাকরীর সন্ধানে গিয়েছিলাম।
আর আপনার খালার তদবির এ খুব কাজ হয়েছে।
আমারো চাকরী হয়েছে?
ইকবাল হেসে বলে কোথায়?
লুবনা: স্কুলে।প্রথম মাসের বেতন পেয়ে মাকে আর ভাইকে আনতে যাব।
তারপর ভাইকে এখানে ভর্তি করবো।
মায়ের পছন্দের জিনিস কিনবো।
ইকবাল নিঃশ্বাস ফেলে বলছে,লুবনা সুন্দর জীবনের পরিকল্পনার তালিকায় কোথাও আমার নাম নেই।
কোথাও না।
একদিন হারিয়ে যাব হুট করেই…
সারারাত ইকবাল জ্বরে কাতরাচ্ছিল।
আর লুবনা মাথায় পানি দিয়েছে।
সারাদিন রোদের মাঝে এতো কষ্টের কাজ করেছে ইকবাল শুধু আমার জন্যই!
এই ভেবে বার বার গোলকধাঁদায় পরছে।
ভোরে উঠে ইকবাল বলে কতদিন জ্বর হয়ে একা একাই সেরে গেছে।আজ এতদিন পর এতো যত্ন পেলাম।
লুবনা ভাবছে একই থাকে থাকতে থাকতে মানুষটার প্রতি আমার দূর্বলতা বাড়ছে নাতো!
ইকবাল ইদানীং লেখাপড়া করছে।
অনেকটা লুবনার ইচ্ছেকে প্রাধান্য দিয়েই।
দুজন ক্লাসে যাবার পথে হঠাৎ লুবনার সাথে রুনার দেখা হলো।
রুনা ইকবাল আর লুবনাকে একত্রে দেখে বলে যা শুনলাম তা কি ঠিক?
লুবনা: কি শুনেছিস তা আমি জানতে চাইনা।
রুনা: বিয়ে করেছিস ভালো।
আগে যে বিয়ে হয়েছিল তা কি ইনি জানে?
লুবনা থমকে ইকবালের দিকে তাকালো।
এই কথা ইকবাল জেনে কি আমায় ছেড়ে যাবে?
গেলে যাক তাতে আমার কি এই ভেবে চুপ করে আছে।
ইকবাল উঠেই বলে আপনাকে এসব কথা বলতে কে বলেছে?
আমি জানি না জানি সেটা নিয়া মাথা ঘামাবেন না।
লুবনা চলো।
লুবনা নিচু হয়ে হাটছে।
ইকবাল: বিয়ে হয়েছিল আমায় একবার বলতে।
লুবনা: আমি তাকে ডিভোর্স দিয়ে দিয়েছি
ইকবাল: তাও আমায় বলনি।
লুবনা: আপনাকে বলার কি আছে?
ইকবাল: ও হুম তাও ঠিক বলেছো।
লুবনার মনে কেন যেন হারাবার ভয় হচ্ছে আবার ও।
এতদিন এক ছাদের নিচে একত্রে থেকে মানুষটার প্রতি যে মায়া জন্মে গেছে লুবনা।
তা অস্বীকার করার মতন সাহস যে তার নেই।
মানুষটাকে বলতেও পারছেনা যে আমার প্রতি অভিমান জন্মে রাখবেন না এতে যে আমার কষ্ট হয় কিন্তু এটাও বলতে পারছেনা লুবনা।
যদি ছোট হয়ে যায়..
রুনার দেখা হলো।
রুনে ইকবাল আর লুবনাকে একত্রে দেখে বলে যা শুনলাম তা কি ঠিক?
লুবনা: কি শুনেছিস তা আমি জানতে চাইনা।
রুনা: বিয়ে করেছিস ভালো।
আগে যে বিয়ে হয়েছিল তা কি ইনি জানে?
লুবনা থমকে ইকবালের দিকে তাকালো।
এই কথা ইকবাল জেনে কি আমায় ছেড়ে যাবে?
গেলে যাক তাতে আমার কি এই ভেবে চুপ করে আছে।
ইকবাল উঠেই বলে আপনাকে এসব কথা বলতে কে বলেছে?
আমি জানি না জানি সেটা নিয়া মাথা ঘামাবেন না।
লুবনা চলো।
লুবনা নিচু হয়ে হাটছে।
ইকবাল: বিয়ে হয়েছিল আমায় একবার বলতে।
লুবনা: আমি তাকে ডিভোর্স দিয়ে দিয়েছি
ইকবাল: তাও আমায় বলনি।
লুবনা: আপনাকে বলার কি আছে?
ইকবাল: ও হুম তাও ঠিক বলেছো।
লুবনার মনে কেন যেন হারাবার ভয় হচ্ছে আবার ও।
এতদিন এক ছাদের নিচে একত্রে থেকে মানুষটার প্রতি যে মায়া জন্মে গেছে লুবনা।
তা অস্বীকার করার মতন সাহস যে তার নেই।
মানুষটাকে বলতেও পারছেনা যে আমার প্রতি অভিমান জন্মে রাখবেন না এতে যে আমার কষ্ট হয় কিন্তু এটাও বলতে পারছেনা লুবনা।
যদি ছোট হয়ে যায়..
বাসায় গিয়ে দেখে ইকবাল নেই বাসায়।
লুবনার কষ্ট হচ্ছে খুব।কেন হচ্ছে তা তার জানা নেই।
আচ্ছা ও কি আমায় ছেড়ে চলে গেল?
আমার কাছে আর ফিরবেনা?
এই ভেবে চোখ পানিতে ভরে যায়।
ওর জায়গায় থাকলে আমিও চলে যেতাম।
আমার বলা উচিৎ ছিল আমি ডিভোর্সী।এদের দয়া করতে হয় কিন্তু বিয়ে করতে হয়না।
এদের কারো সাথে সংসার করার অধিকার নেই।
এমন সময় দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ।
লুবনা দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দেখে শিমু।
লুবনা শিমুকে দেখে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিল।
শিমু: এই কি হয়েছে?
আমি সব শুনেছি।
তুই কেন ওই গুন্ডাকে বিয়ে করলি লুবনা?
এই ভুল কি করে করলি?
লুবনা :আয় ভিতরে আয়।
তুই বস আমি চা করে আনি।
শিমু: এইনা,শোন আমি বেশিক্ষণ থাকবোনা।
একটা খবর দিতে এলাম আমি মা হতে যাচ্ছি।
লুবনা খুশি হয়ে বলে সত্যি?
শিমু: হুম।বাচ্চা হলেই আমি চলে যাব বাইরে।
পড়ালেখা আর হলনা আমার।
যাক, কেন বিয়ে করলি?
ও কিকরে সুখ দিবে?
না ভালো চরিত্র,না ভালো ছাত্র..
তারউপর নেশাখোর…
লুবনা: ও ওসব ছেড়ে দিয়েছে।অন্য রকম হয়ে গেছে।
শিমু: জানি আজ ও তোর বর তাই গায়ে লাগছে তবুও আমার সামনে আর সাফাই গাসনা।
এর মাঝেই ইকবাল এসে পরলো।
দরজার পাশে দাড়িয়ে ওদের কথা শুনছে।
লুবনা: যা কপালে ছিল তাই হয়েছে।
শিমু: যত সম্ভব তাড়াতাড়ি ওকে ছেড়ে দিস।
এর চেয়ে না বিয়ে করাও ভালো।
খালাম্মা আর ছোট ভাইকে এনে নিস।
লুবনা: হুম বেতন পেলেই আনবো।
শিমু: চাকরী করিস?
লুবনা: স্কুলে।
শিমু: তাহলে এখনো কেন ওই লম্পট এর দয়ায় আছিস?
মুক্তি কর নিজেকে লুবনা।তোর ভালোর জন্য ই বলছি।
ইকবাল এসব শুনে চলে গেল।
শিমু চলে যাবার পর থেকে লুবনা বারান্দায় বসে ইকবাল এর অপেক্ষা করছে।
ইকবালের কোন খোঁজ নেই।
লুবনা ফুঁপিয়ে কাঁদছে। যাকে একটু আস্থা করি সেই রেখে চলে যায় এই বুঝি আমার জীবন!
রাত ১২টা লুবনা এখনো ইকবালের জন্য অপেক্ষা করছে।
আজ ইকবাল এলে বলেই দিবে,মিথ্যে সম্পর্ককে কি সত্য করা যায়না ইকবাল!
আমি আর হারাতে চাইনা।আমি তোমার সাথেই থাকতে চাই বাকিটা জীবনন।
কি ইকবাল দিবেনা?
এসব ই বলবে ইকবাল কে তাই মনে মনে ভেবে রেখেছে লুবনা।
আজ আর একবার বাচার জন্য আকুতি জানাবে ইকবালের কাছে।
আচ্ছা ইকবাল কি ফিরিয়ে দিবে!
এই ভেবে লুবনা কাঁদছে…
হঠাৎ ইকবালকে আসতে দেখে লুবনা হাসি মুখে দাড়ালো।
ইকবাল যত কাছে আসলো লুবনার হাসিও ফিকে হয়ে গেল।
মাতাল হয়ে টলছে ইকবাল।
লুবনা: আপনি নেশা করেছেন?
ইকবাল: হুম করেছি।
লুবনা: কেন করেছেন?
ইকবাল: তা তোকে বলবো কেন?
লুবনা: বাহ!এখন তুই করে বলা হচ্ছে।
ইকবাল কথা না বলে রুমের ভিতর গেল।
লুবনা পিছন পিছন গিয়ে বললো,শিমু ই ঠিক ছিল।
কুকুর কুকুর ই থাকে।
তাদের লেজ সোজা হয়না।
ইকবাল: কথা ভালো করে বলো।
লুবনা: নেশাখোর এর সাথে কি ভালোভাবে বলবো?
জানোয়ার..
ইকবাল রেগে লুবনার উপর চর তুলে ও হাত আটকে নিল
লুবনা: কি মারতে চানন?.
মারেন..
তবুও আমি মুক্তি চাই।
ইকবাল হেসে বিছানায় বসে বললো,মুক্তি! হুম তা চাইবেই।
তোমাদের মতন মেয়েদের তো স্বামী বদলাতে পটু..
লুবনা ইকবালের কলার ধরে বলে কতটুকু জানেন আমার সম্পর্কে?
বিয়ের রাতে যখন একটা মেয়ে দেখে তার বর পাগল?
বিয়ের আগে যাকে দেখিয়েছিল তা বরের ছোট ভাই ছিল।
তখন মেয়ে কি করবে?
নিজের মামা যদি টাকার বিনিময়ে পাগলের সাথে বিয়ে দেয় তখন মেয়ের কি করা উচিৎ?
আমি তবুও মেনে নিতাম…
এর পর যখন জানলাম আমার বরে আগেও এক বউ ছিল যাকে সে মেরে ফেলেছে।
খুনি জেনেও তার সাথে সংসার করতে চাইবে কোন মেয়ে…
ইকবাল স্থির হয়ে দাড়িয়ে আছে।
লুবনা: হুম এর পর ও আমি খারাপ।
আমার চরিত্র খারাপ..
কেননা আমি সুস্থ ভাবে বাচতে চেয়েছি।
মামার মার খেয়েও আমি পালিয়ে এসেছি।
একের পর এক ধাক্কা খেয়েও আমি মরে যাইনি।
আমার উচিৎ ছিল লজ্জায় মরে যাওয়া।
কিন্তু আমি তা করিনি এটাই অপরাধ তাইনা?
নিজের ছোট ভাই আর মাকে একবার চোখের দেখাও দেখতে না পেরেও আমি বেচে আছি কেন!
এটাই আমার ভুল তাইনা?
ইকবাল: আচ্ছা এসব বাদ দেও।
লুবনা: কালকের মাঝে আমায় ডিভোর্স দিবেন।
আর এখন এই বাসা থেকে বের হয়ে যাবেন।
আমি খারাপ তাই আমি খারাপ ভাবেই বাচতে চাই।
আমার প্রতিদিন নতুন নতুন বর লাগে।
যান বলছি…
ইকবাল: থামবে?
লুবনা ইকবাল এর হাত ধরে ঘর থেকে বের করে দিয়ে দরজা লাগিয়ে দিল।
মেঝেতে বসে বসে লুবনা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে।
বাবা!আমি আর তোমার পবিত্র মেয়ে নেই বাবা…
আমার কারো ভালোবাসা পাবার অধিকার নেই বাবা।
এতো বড় দুনিয়ায় আমি এতো তাচ্ছিল্য নিয়ে কি করে বাচবো?
আমায় নিয়ে যাও বাবা।দয়াকরে নিয়ে যাও…
ভোর হতেই দরজায় কড়া নাড়ার শব্দে ঘুম ভেঙে যায় লুবনার..
চোখ খুলে দেখে রাতে মেঝেতেই ঘুমিয়ে পড়েছিল
নিশ্চই ইকবাল এসেছে মান ভাঙাতে।
দরজা খুলতেই দেখে ছোট ভাই পলাশ।।
আপু বলেই কেঁদে জড়িয়ে ধরে লুবনাকে।
ভাই তুই?
কতদিন পর দেখলাম তোকে…
পিছনে তাকিয়ে দেখে মা দাড়িয়ে কাঁদছে।
লুবনা দৌড়ে গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরলো।
মা তুমি এসেছো.
মা লুবনার কপালে, গালে অনবরত চুমো দিতে লাগলো।
মারে তুই অভিমান করে ছিলি?
লুবনা: কি করে চিনলে তোমরা?
পলাশ: তোর বন্ধু নিয়ে এসেছে?
লুবনা: বন্ধু?
পলাশ: হুম ইকবাল ভাই।
লুবনা: ও মামার বাসা চিনলো কিকরে?
মা: ও তোর বিয়ের পর ও গিয়েছিল বাসায়।
আমি বললাম তোর বিয়ে হয়ে গেছে।খাবার আনতে ভিতরে গেলাম ছেলেকে এসে আর পেলাম না।
আজ সকালে গিয়ে বলে লুবনা আপনাদের নিতে পাঠিয়েছে।
তোর মামা আসতে দিবেনা।আমি ঝগড়া করে এসেছি।
লুবনা আমার বিয়ের আগে ইকবাল কি করে চিনতো আমায় এই ভেবে উদ্বিগ্ন হচ্ছে।
লুবনা: চলো রুমের ভিতরে।
মা: ইকবাল ছেলেটা ভালো অনেক।
ওই তোকে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছে তাইনা?
লুবনা: হুম ওনার জন্যই তোমাদের ফিরে পেলাম।
কিছুক্ষণ বাদের ইকবাকের বন্ধু এনায়েত এসে লুবনাকে ডাক দিল।
লুবনাকে একটা কাগজ দিয়ে বললো আপু ইকবাল দিয়েছে।
আজ আর আপু শুনতে ভালো লাগেনা লুবনার।
খাম খুলেই দেখে ডিভোর্স এর কাগজ।
আর একখানা চিঠি।
ইকবাল লিখেছে,
লুবনা আমি হয়তো কাল অনেক দুঃখ দিয়ে ফেলেছি।
আমি নেশার ঘোরে ছিলাম।
তবে তুমি সুস্থ ছিলে।
তুমি মুক্তি চেয়েছো সুস্থ মনে।
তাই পাঠালাম, আমি জানি আমি পথের কাটা তোমার।
তুমি সিগনেচার করে আমার বন্ধুর কাছে দিয়ে দিও।
আমি পরে সিগনেচার করে দিব।
তুমি শুধু ভালো মেয়ে নয় খুব ভালো মেয়ে।
তোমার পূর্ন অধিকার আছে ভালো ভাবে বাচার।
ভালো থেকো, দোয়া করি।
জানি আমার মতন গুন্ডার দোয়া কাজ এ দিবেনা।তবুও মন থেকে চাই ভালো থেক।
ইতি ইকবাল।
লুবনা চিঠি বুকে নিয়ে কাঁদছে।
চিঠির জন্য নয়।
এ হাতের লেখা যে খুব কাছের একজনের।
খুব চেনা সে হাতের লেখা।এ হাতের লেখা যে আর কারো নয়।
এ যে ইকুর হাতের লেখা।
লুবনা দৌড়ে ঘরে গিয়ে ইকবাল এর টেবিল এর ড্রয়ার খুঁজলো কিছু পেলনা।
সব বই মেঝেতে ফেললো,হঠাৎ মেঝেতে একটা কাগজ পেল।
কাগজ টা তুলে দেখে এ চিঠি লুবনাই ইকুকে দিয়েছিল।
তা ইকবাল যত্ন করে রেখেছে।
ইকবালের বন্ধুকে জিজ্ঞেস করলো ভাই ও কই?
জানিনা আপা।
লুবনা ঘর থেকে বের হয়ে ক্যাম্পাসে গেল।
পুকুরপাড় তন্নতন্ন করে খুঁজেও পেলনা।
অনেক খোঁজার পর পুকুরের পানির পাশে এক টিলার উপর বসে ইকবাল ঢিল ছুড়ছে পানিতে।
লুবনা তা দেখে নিচে নামলো।
পিছন থেকে ইকু বলে ডাক দিল লুবনা।
ইকবাল থতমত খেয়ে পিছন তাকিয়ে দেখে লুবনা দাড়িয়ে কাঁদছে?
ইকবাল: একি তুমি?
লুবনা: হুম আমি।তুমি আমার সাথে অভিনয় করেছো এতোদিন?
ইকবাল: মানে?
লুবনা ইকবালের কাছে এসে ঠোঁটের উপর আঙুল রেখে বলে চুপ!আর না..
আমি জানি তুমি ই ইকু।আমি ইকুর হাতের লেখা বেশ চিনি।
ইকুর হাতে লেখা আমার মুখস্ত।
ইকবাল: তা আমি যাই হই তুমি সিগনেচার করেছো?
দেও আমি করে দেই।
লুবনা: কি করে করবো সিগনেচার এর জায়গা যে পানিতে ভিজে নষ্ট করে দিয়েছেন।
ইকবাল: ও পানি খাবার সময় পরেছিল।
লুবনা জড়িয়ে ধরে বলে,আমি এতটা বোকা নই যে চোখের পানি আর খাবারের পানির পার্থক্য করতে পারবোনা।একদিন ইকুকে নিয়ে স্বপ্ন বুনতাম।
তারপর ইকবাল এর জন্য ইকুকে কবর দিয়েছি।আজ নিজেকে খুব ভাগ্যবতী মনে হয় যে আমার অদেখা ভালোবাসা আর দেখা ভালোবাসার মানুষ একই।
ইকবাল: ছাড়ো আমায়।সবাই দেখছে।
লুবনা: দেখুক..আমি কি অন্যের বরকে ধরেছি নাকি?
তুমি আগেই জানতে আমার বিয়ে হয়ে গেছে তবুও তুমি কেন এমন করলে ইকু?
ইকবাল: সেদিন শিমু আর তোমার কথা শুনে বুঝেছিলাম আমার মতন গুন্ডা আর যাই হোক কারো জীবন সঙ্গি হতে পারেনা।
লুবনা ইকবাল কে ছেড়ে দিয়ে বললো শুধু মুখের কথাই শুনলে?
কখনো কখনো খলনায়কই যে জীবনের আসল নায়ক হয়ে যায় তা বুঝি জানো না?
লুবনা কাঁদছে আর কাঁপছে…
ইকবাল: কাপছো কেন?
লুবনা: তোমার গায়ের জ্বরটা মনে হয় আমার গায়ে এসেছে
ইকবাল: এ মা…তাহলে আসো আবার নিজের জ্বর নিজে নিয়ে যাই এই বলে লুবনাকে জড়িয়ে ধরলো।
লুবনা: ছাড়ো সবাই দেখছে।।
ইকবাল: হুহ আমি মনে হয় অন্যের বউকে ধরেছি।
লুবনা: নিজের বউকে এতো নড়বড় করে জড়িয়ে ধরলে যে কেউ নিয়ে যাবে..
ইকবাল আরো শক্ত করে ধরে বলে,কার সাহস আছে গুন্ডার বউকে গুন্ডার কাছ থেকে
নিবে।পারলে নিয়ে দেখাক দেখি….
গল্পের বিষয়:
গল্প