মানুষ

মানুষ
ভালো করে পড়াশোনা কর নাহলে বাবা রিকশাওয়ালার সাথে বিয়ে দিয়ে দিবে।
— তো তাতে কি রিকশাওয়ালা কি মানুষ না! একটা মানুষ হলে ই চলবে। ছোটবোনটার এমন কথা শুনে আর কিছু বললাম না। পড়ালেখায় অষ্টরম্ভা। যা মন চায় তাই বলে।
সত্যি সত্যি এইচএসসি তে ফেল করার পর বাবা ওর বিয়ে দিয়ে দেন একটা নিম্নবিত্ত পরিবারে। আমি তখন অনার্স শেষ করার পথে। আমাদের বোনের সংখ্যা বেশি হওয়ায় বাবা তাঁর উপর ফরজ কাজ আদায়ে আগপিছ না ভেবে বিয়ে দিয়ে দেন। এতে আমার ছোটবোনেরও এত অমত ছিল না। ওর যেকোনো একটা হলে ই হল। আমি অনার্স শেষ করার সাথে সাথে ই বিয়ে নিয়ে অনেকটা চাপাচাপিতে পরি। কিন্তু আমার একটা ই কথা আগে নিজে কিছু একটা করি তারপর না হয় এসব চিন্তা।
কেউ না বুঝলেও বাবা ঠিক ই বুঝে আমাকে। তাই সময় দিলেন কিছুটা পড়ালেখা শেষ করে খুব তাড়াতারি কিছু একটা করার চেষ্টা করলাম তখন ই পরিচয় হয় আসিফের সাথে। কাজ নিয়ে কথাবার্তা থেকে অনেক দূর অব্দি আমাদের সম্পর্ক গড়ায়। আসিফ আমাদের বাসায় বিয়ের প্রস্তাব আনলেও বাবা করলেন অমত..! বাবার একটা ই কথা আমরা মধ্যবিত্ত এত উচ্চবিত্ত পরিবারে খাপ খাওয়াতে পারব না রে মা এরপরে আর বলার কিছু থাকে না আমার। তারপরেও বললাম আসিফ বা আসিফের পরিবার অন্য সবার মত না। কেউ না হোক আসিফ আমাকে বুঝবে আমাকে সাপোর্ট করবে। অনেক ভাবে আসিফ আর আমি বাবাকে মানাই। বিয়েটা হয় আমাদের। নতুন পরিবারে যাওয়ার পর আসিফের পরিবারে আভিজাত্য তাদের সবার বিদেশের হাইয়ার লেভেলের ডিগ্রী দেখে অনেকটা সংকুচিত হলাম নিজে। এত এত উচ্চ শিক্ষিতদের ভীড়ে অনেকটা ছোট ই মনে হল নিজেকে।
সবসময় ই নিজের মাঝে কোথায় যেন সংকীর্ণতা কাজ করত যা আগে কখনো ছিল না আমার মাঝে। সব শেষে বাধ সাধলো আমার চাকরিতে। এত ছোট একটা চাকরির জন্য ঘরের বউ বাইরে যাবে এটা উনাদের কাছে গ্রহনযোগ্য নয়। কিন্তু আমার মনে আছে যখন থেকে বুঝতে শিখেছি বাবা কে দেখতাম কোন কাজ ই তিনি ছোট করে দেখতেন না আমাকেও তেমন টা শিখিয়েছেন। আর আমার ঐ মধ্যবিত্ত পরিবারে এই চাকরিটা যে কতটুকু হাসি এনে দিয়েছিল মুখে তা আজও আমার চোখের সামনে জ্বলজ্বল করে..! আসিফকে বললাম অনেক বুঝালাম এমন টা না করলে হয় না.! আর আমাকে তো আগে বলনি এমন করতে হবে বা হতে পারে। সবার মতের সামনে আসিফ টিকে থাকতে পারল না। তবে একটা উপায় দিল ওর বিজনেসে আমি হেল্প করব। সেখানের একটা পার্ট আমাকে দিবে। কিছু না করা থেকে এমন একটা করা খারাপ না ভেবে সিদ্ধান্ত নিলাম চাকরি ছেড়ে দিব।
তখন ইদের ছুটি চলছিল অফিসে। খোলার পর আর যাব না। কিন্তু সময় যাওয়ার সাথে সাথে বুঝতে পারলাম বাস্তবতা টা। ঘরের অফিসে কাজ করা যায় না। সেখানে সংসার নামক শিকল বাধা দেয়। আর তাই হল আমার সাথে। আসিফের সাথে কাজ করব ঠিক কিন্তু সংসারের বাকি সব কাজে অফিসের কাজের সময় করে উঠতে ই পারি না কিছু তে..! তার উপর বড় ফ্যামেলি এই যখন তখন মেহমান সাথে দেশের বাইরে থেকেও পরিবারের সদস্যদের আনাগোনা। আর তো আমার সন্তানের আগমন। সারাদিন ঘরের কাজ করে যেন হাঁপিয়ে উঠে ছিলাম। আসিফ ওর মত ব্যবসা সামলাচ্ছে সে তো তার টা বলেছে এখন আমি করতে না পারলে দোষ টা তো ওর না..! তাই কিছু বলতে পারিনা আর।
কিন্তু সে যে খাঁচা খুলে দিয়ে পায়ে শিকঁল দিয়ে রেখেছে তা বুঝতে আমারো তেমন সময় লাগে নি। যখন একা একা বসি তখন মনের অজান্তে চোখে জল আসে কি চেয়েছিলাম আমি আর কোথায় আছি সবসময় ই তো চাইতাম নিজের একটা পরিচয় হোক আর আজ সত্যি প্রকৃতি অদ্ভুত ভাবে বুঝিয়ে দেয় যেখানে তোমার মূল্য আছে সেখানে যেতে হয়। নিজের থেকে উপর লেভেলের মানুষরা তোমাকে কখনো বুঝবে না বুঝতে চেষ্টাও করবে না।
বাবার কথা খুব মনে পড়ছে মেয়েদের জীবন টা বড় বেশি জটিল করে দিয়েছেন বিধাতা অনেক দিন অফিস থেকে ফোন আসে চাকরি যদি না করি তাহলে রেজিগনেশন লেটার যেন দিয়ে যাই। ফরমালিটি তো মেন্টেইন করতে হবে অনেক ঝামেলা পেড়িয়ে একটু সময় বের করে অফিসে লেটার হাতে গেলাম। নামার সময় সিড়ি তে দেখা হল আমার ছোট বোনটার সাথে। বিয়ের কয়েক বছর পর রিনি স্বামির সাথে গ্রামে চলে যায় কোনো এক দরকারে। অনেক দিন যাবত কথা হয়নি। দেখা হতে ই জড়িয়ে ধরল। আমিও যেন একটু শান্তি পেলাম বোনটা কে দেখে।
হাসি মুখে জানাল, আপু তোর অফিসের সিনিয়র অফিসার পদে আমার জয়েনিং হয়েছে আমি অনেকটা অবাক হলাম। শুনেছিলাম ও পড়ালেখা শুরু করেছে। রায়হান মানে ওর স্বামি ছিল সাথে আমাকে সালাম দিল। তবে এতদূর তা জানিনি। চোখ মুখে যেন ওর আনন্দ উঁপচে পড়ছিল। আপু বলেছিলাম না একটা মানুষ হলে ই চলবে.! দেখ একটা মানুষ ই পেয়েছি। বলে ই রায়হানের হাতটা শক্ত করে ধরল। সত্যি জীবনে একটা মানুষের খুব দরকার আমাদের মন ভরে দোয়া করলাম অনেক সুখি হ বোন। সত্যি তুই ভাগ্যবতী একটা মানুষ পেয়েছিস..!
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত