কোকিলা সমাচার-হবু শ্বশুর

কোকিলা সমাচার-হবু শ্বশুর
মহিলা কলেজ গেইটের সামনে কোকিলার সাথে দেখা।আমাকে দেখতে পেয়ে সে ভিতরে ঢুকলো না।আমার সামনে এসে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,”আচ্ছা আপনি কি চান বলেনতো? আপনাকে এতো করে বলি যে আপনার সাথে আমার যায়না। তাও আপনি শুনেননা।ঠিক করেছি, আপনার নামে আমি ইভটিজিংএর মামলা দিবো।আর বেশি বাড়াবাড়ি করবেননা প্লিজ।”
আমি মাথা নিচু করে ছিলাম।মাথাটা সোজা করে কিছু একটা বলতে যাবো, এমন সময় কোকিলা আবারও বললো,”আপনি এক কাজ করেন,আমার আব্বুর সাথে যোগাযোগ করেন।আমার বিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব তো আব্বুর কাছেই।আপনাকে যদি আমার আব্বু পছন্দ করে,তাহলে আপনাকেই আমি বিয়ে করবো।” আমি আগপাছ না ভেবে কোকিলাকে বললাম,”তোমার আব্বুর অফিসের ঠিকানা দেও।” আমার কথা শুনে কোকিলা আমতাআমতা করতে লাগলো।তারপর কি যেন ভেবে মুচকি একটা হাসি দিলো।আমাকে হাসিমুখে তার আব্বুর অফিসের ঠিকানা দিয়ে সে কলেজে চলে গেলো। দরজার সামনে এসে বললাম,”আসতে পারি স্যার?”
ভদ্রলোক কাগজ কলম থেকে মাথা তুললেননা।সেভাবেই বললেন “হু আসুন” আমি ভিতরে গেলাম।তিনি কাগজ থেকে মাথা না তুলেই বললেন “বসুন” আমি বসলাম।ভদ্রলোক গভীর মনোযোগ দিয়ে কি জানি লিখছেন। আমি কিভাবে কথা শুরু করবো বুঝতে পারলাম না।দু তিন মিনিট যাওয়ার পর তিনি নিজেই আমাকে বললেন,”বলুন কি চাই” আমি মাথা নিচু করে আছি।আমি আস্তে গলায় বললাম “আসলে আমি আসছি আলাদা একটা কারণে,ব্যক্তিগত একটা ব্যাপারে।” আমার কথার মাঝে শক্ত গলায় তিনি বললেন “বেশি ভূমিকা না করে সরাসরি বলুন।” আমি ইতস্ততভাবে বললাম “আমি আপনার মেয়ে কোকিলাকে পছন্দ করি।কোকিলা আমার নামে ইভটিজিংএর মামলা করার আগে আপনার সাথে যোগাযোগ করতে বললো।তাই আসলাম আর কি।”
তিনি আর কলম চালালেন না।আমার দিকে তাকালেন। চশমাটা অর্ধনমিত করে অফিসের পিয়নকে ডাকলেন।অফিসের পিয়ন এসে হাজির।তিনি আমার দিকে তাকিয়েই অফিসের পিয়নকে বললেন “গরম গরম চা নিয়ে আয়”  পিয়ন “জ্বী স্যার” বলে চলে গেলো।ভদ্রলোক আমার উপর থেকে চোখ সরাচ্ছেন না।কিছুক্ষণ পর পিয়ন দুই কাপ চা নিয়ে আসলো।ভদ্রলোক বিস্ফারিত চোখে পিয়নের দিকে তাকিয়ে বললো “তোকে দুই কাপ চা আনতে কইছি?”
পিয়ন ভীত হয়ে তার স্যারকে এক কাপ চা দিয়ে বাকি এক কাপ নিয়ে চলে গেলো। আমি আংশিক অপমানিত হলাম।আবহাওয়া ভালোনা।এই লোকের মাথা প্রচণ্ড হট প্রকৃতির।কোকিলা জেনেশুনে আমাকে ফাঁদে ফেলেছে।
চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে ভদ্রলোক বললেন “নাম কি তোর?” লোকটা আমাকে “তুই” করে বলা শুরু করলো।”তুই” একটা তুচ্ছার্থক শব্দ।উনি এটা ঠিক করেননি।শুধুমাত্র কোকিলার আব্বু বলে কিছু বললাম না।শান্ত গলায় উত্তর দিলাম “রিসাত”। ভদ্রলোক গলা মোটা করে এক প্রকার চিৎকার দিয়েই বললেন “হিন্দুর বাচ্চা না মুসলমানের বাচ্চা?” আমি চমকে উঠলাম।বুকে থুথু দিয়ে বললাম।”রিসাত ইসলাম,আমি মুসলমানের বাচ্চা।” ভদ্রলোকের চা শেষ।তিনি আরেকবার পিয়নকে ডাকলেন। পিয়ন এসে হাজির।তিনি বললেন “চা নিয়ে আয়”। পিয়ন একবার আমার দিকে আরেকবার কোকিলার আব্বুর দিকে তাকাতে তাকাতে চা আনতে গেলো কোকিলার আব্বু আমাকে বললেন,”রাস্তার ছেলে,বখাটে;তোর নামে শুধু ইভটিজিং না।ধর্ষণের মামলা করবো।”
আমি প্রতিবাদী গলায় বললাম, “আশ্চর্য! আপনার মেয়েকে আমি একটু লাইন মারি।এটা ইভটিজিং কি না জানিনা।ইভটিজিং হতো যদি আমি আপনার মেয়ের ওড়না ধরে টানতাম।আপনি আমার বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করতে চাচ্ছেন।আপনার মেয়েকে আমি কখনো টাচ পর্যন্ত করিনি।আর আপনি বলছেন……।ছিঃ ছিঃ” আমার কথা শুনে ভদ্রলোকের চোখ রক্তবর্ণ ধারণ করলো।পিয়ন চা নিয়ে আসলো।টেবিলে এক কাপ চা দিয়ে সে চলে যাচ্ছিলো।কোকিলার আব্বু তাকে বললো “চা নিয়ে যা।এক গ্লাস পানি নিয়ে আয়।” পিয়ন আমার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে চায়ের কাপ নিয়ে গেলো।
আমি আগবাড়িয়ে কোকিলার আব্বুকে বললাম,”দেড় বছর ধরে আপনার মেয়েকে লাইন মারছি।কিছুতেই পাত্তা দিচ্ছেনা।কেমন মেয়ে পয়দা করছেন বলেনতো?” আমার কথার মাঝখানে পিয়ন এসে হাজির।এক গ্লাস পানি কোকিলার আব্বুকে দিয়ে পিয়ন চলে যাচ্ছিলো।আমি তাকে থামিয়ে বললাম,”আরেক গ্লাস আনেন চাচা।বড়ই তৃষ্ণা পেয়েছে।” পিয়ন আমার দিকে তাকিয়ে ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে আছেন।ভদ্রলোকের কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে পিয়ন চলে গেলো। আমি কোকিলার আব্বুকে বললাম,”আপনি কি আমার পরিচয়, আমি কি করি,এসব শুনতে ইচ্ছুক?” কোকিলার আব্বু দাঁত কিড়মিড়িয়ে বললেন, “হারামজাদা,আর একটু ওয়েট কর।তোর সাহস দেখি।”
কথাটা বলেই তিনি টেলিফোনের বোতাম টিপতে লাগলেন। ততক্ষণে আমি ফোন কানে ধরে বললাম,”খুন করে ফেলছিস?? আমি কইছি যে দু একটা চড় থাপ্পড় দিবি।যাহক, লাশটা করতোয়া’র চরে ফেলে দিয়ে বিকেলে দেখা করিস।আর শোন শোন,আমি যেখানে আছি তার ঠিকানাটা তোকে টেক্সট করছি।বেশি দূরে না।পাঁচ মিনিট লাগবে আসতে।১০-১২ টা ছেলেকে নিয়ে আসবি।” কথাগুলো বলেই আমি কান থেকে ফোন নামালাম। কোকিলার আব্বু আর টেলিফোনের বোতাম চাপলেন না।গলা ঝেড়ে আমতাআমতা করে আমাকে বললেন, “বাবু তুমি কি রেগে গেছো?” “কি যে বলেন আঙ্কেল।আপনি হলেন আমার ভবিষ্যৎ শ্বশুর। আপনার উপর রাগবো কেন?”
ভদ্রলোক কিছু একটা বলতে চেয়ে থেমে গেলেন।আমি মৃদু হেসে বললাম, “আমি এখন উঠি আঙ্কেল।যা বলার আপনি কোকিলাকে বলেন।” চেয়ার থেকে উঠে দরজার পাশে আসলাম। পিছন দিকে তাকিয়ে ভদ্রলোককে বললাম,”লাশের ব্যপারটা মিথ্যা ছিলো আঙ্কেল।আপনি মারাত্মক ভয় পেয়েছেন।অসৎ লোকেরা ভয় পায় বেশি।আপনি ঘুষ খাওয়া একটু কমিয়ে দিবেন।” কথাগুলো বলেই আমি ফটাফট শ্বশুরের অফিস থেকে বিদায় হলাম।
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত