হাসতে হাসতে আমি শেষ, আপনারাও একটু হাসেন ধ্রুব প্রায় ঝড়ের গতিতে আমার রুমে এলো।এসেই বললো,ধূলি আপু ব্রেকিং নিউজ পাইছোনি? আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,কি হইছে রে?
ধ্রুব বললো,আমাদের বড় আপুরে তো শ্বশুরবাড়ি থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়েছে।যাকে বলে,এক দরজা দিয়ে নিয়ে আরেক দরজা দিয়ে ভাগিয়ে দেয়া। আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম।বাঁদরটা এগুলো কি বলছে?জুলি আপুর বিয়ে হয়েছে মাত্র পাঁচদিন।কাল বিলম্ব না করে বসার ঘরে গেলাম।ফুল স্পিডে ফ্যান চলছে তাও মা বাবাকে তাল পাতার পাখা দিয়ে বাতাস করছে। আর আমার দাদি ইন্সট্রাকশন দিচ্ছেন,ও বউ হাতো কি জোর নাই?দশ মণ কইরা তিন বেলায় তিরিশ মণ খানা খাও তাও আমার পোলাডারে একটু জোরে বাতাস করবার পারো না? মা মুখ ঝামটা দিয়ে বললো,আমি ত্রিশ মণ খাইলে আপনি পঞ্চাশ মণ খান।
দাদি বিলাপ শুরু করে দিলো,ওরে আল্লারে!কি পোলার বউ আমার খাওন লইয়া হিংসা করে। মূহুর্তেই বিলাপ বন্ধ করে ঝাঁঝালো কন্ঠে বললো,আমার পোলার কামাই আমি একশ মণ খামু।কার কি? ধ্রুব আমার পিছনে এসে কখন দাঁড়িয়েছে বুঝতে পারিনি।সে বললো,দেখছো আপু ওয়ার্ল্ড খাদক কম্পিটিশনের দুই স্বর্ণজয়ী খেলোয়াড়ের বাস আমাদের বাসায়। আমি হতাস হয়ে বললাম,ধুরররর দাদি আর আম্মুর আজাইরা প্যাঁচালের জন্য জুলি আপুর কেইসটা বুঝতেছি না। হঠাৎই,বাবা খুব রেগে গিয়ে লাফানোর ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে গেলো। মায়ের দিকে তাকিয়ে হুংকার দিয়ে বললো,আরেকটা কথা বললে তোমারে কুরবানি কইরা ফালামু।আর আম্মা আপনে তিন পা কবরে দিয়া রাখছেন,বুড়া মানুষ আপনে সব কথার মধ্যে লাফাইতে লাফাইতে আসেন ক্যান?
মাও বাবার দিকে তাকিয়ে ধমক দিয়ে বললো,কথা বলার সময় তোমার মুখ দিয়ে এতো থুতু বের হয় কোন কারণে?আরেক বার যদি আমার গায়ে থুতু পরে তাহলে আমি তোমার মুখে স্ট্যাপল করে দিবো। বাবা রাগে কটমট করে বললো,মুখ সামলে কথা বইলো মা বললো,তুমি আগে তোমার থুতু সামলাও।মাইন্ড ইউর থুতু এদিকে দাদি নাইকাদের মতো দৌঁড়ে রুমে গিয়ে দরজা সজোরে বন্ধ করে তার জাতীয় বিলাপ শুরু করে দিলো। ‘কিয়ের লিগা…কিয়ের লিগা আমারে এতো অফমান?হু?আমি বুড়ি না?এহনো হাজ-গোজ করলে দাদি কথা শেষ করলেন না।কান্নার গতি বাড়ালেন। বাবা জুলি আপুর দিকে তাকিয়ে বললেন,তোরে যদি জুতা দিয়া দুইটা বারি দেই কোনো অন্যায় হইবো নি আমার বল? জুলি আপু কাঁদতেই লাগলো। মা বললো,জুলি তো কিছু বলছেই না।তুমি কিছু জেনে থাকলে প্লিজ বলো। বাবা বলল,তোমার অতি আদরের গুণধর মেয়ে তার শ্বশুরের বুক পুড়িয়ে ফেলেছে।
– কিহ?কিভাবে?
-তার শ্বশুরের গায়ে থাকা পাঞ্জাবি না খুলেই গায়ের উপর ইস্ত্রি লাগিয়ে দিয়েছে।বেচারা ঘুমিয়ে ছিলো তখন।
জুলি আপু কাঁদতে কাঁদতে বললো,আমি তো ভালোর জন্যেই করছি।ভাবছি ঘুম থেকে উঠে ইস্ত্রি করা পাঞ্জাবি দেখে খুশি হবে। মা কপালে হাত দিয়ে বসে পরলেন বাবা বললেন,শোন জুলি তোরে গরু বললে গরু আমারে বলবে ,এক্সকিউজ মি !আমারে ইনসাল্ট করবেন না। ধ্রুব হাতে তালি বাজিয়ে ঘরে এন্ট্রি নিলো।বলতে লাগলো,বাহ! বাবা বাহ! তুমি তো দারুন ইংরেজি বলছো উইথ প্রোপার প্রোনাউন্স। বাবা রাগে কাঁপতে কাঁপতে বললো,এই নোংরা জানোয়ারটা কি এতোক্ষন এখানে ছিলো? ধ্রুব বললো,জ্বি আমি ঘটনাটা অবজার্ভ করছিলাম।এখন একটু জিজ্ঞাসাবাদ করবো বাবা ধ্রুবের পিঠে ঠাস ঠাস করে থাপ্পড় লাগালো এরপর বললো,উফফ…হাতে এতো ব্যাথা পাইলাম কেন?
– মেবি আমি গন্ডার হয়ে গেছি। বাবা বললো,তুই পিঠে কি বেঁধেছিস?
– ইটস লাইফ জ্যাকেট বাবা। বাবা ওর গালে চড় দিলো। আমি ভাবলাম বেচারাকে আজকে মেরেই ফেলবে। এমন সময় দরজায় কলিং বেল বাজলো।দরজা খুলে দেখা গেলো,আপুর স্বামী,শ্বশুর,দেবর ,শ্বাশুরি আরো একজন বয়স্ক লোক এসেছে। তারা বাবাকে বললো,আপুকে নিতে এসেছে।যা হয়েছে হয়েছে সেসব নিয়ে আর ভাববে না।
আমার জুলি আপু বিয়ে করেছে আমার আর ধ্রুবের ইংরেজি প্রাইভেট স্যারকে। যাই হোক,বাবা-মা খুশিতে গদগদ হয়ে উনাদের বসালেন।খাবার দাবারের ব্যবস্থা করতে ছুটোছুটি শুরু করে দিলেন। আমি মাকে সাহায্য করতে রান্নাঘরে গেলাম।আর ধ্রুব টিভির রুমে গেলো। দাদি মেহমান আসার খবর এখনো পায়নি।বর্তমানে তিনি বিলাপ বন্ধ রেখে বাংলা সিনেমা দেখছেন। ধ্রুব তার অভ্যাস মতো চ্যানেল চেঞ্জ করে হিন্দি চ্যানেলে দিলো। সানি লিওনের গান দেখে বদলায় দিয়ে আবার দাদির চ্যানেলে এনে দিলো। দাদি অবাক হয়ে বললো,তুই এতো ভালা?আমি যেইটা দেখতাছি ঐটা দেখবি? ধ্রুব বললো,সানি লিওনের গান দেয় তাই আপাতত তোমার শাবানার বিরহের মুভি চলুক দাদি জিজ্ঞেস করলো,এই সানি লিওনটা কেরে? ধ্রুব ম্যানেজ দেয়ার জন্য বললো,খুবই সতী লক্ষী মহিলা।খুব মন
-প্রাণ দিয়ে সংসার সামলায়।ধৈর্য্যশীলা,বুদ্ধিমতি ধ্রুবের এসব উক্তি আমি রান্নাঘর থেকে শুনছিলাম। একটু পর খাবার-দাবার নিয়ে বসার ঘরে গিয়ে দেখি দাদিও সেখানে উপস্থিত হয়েছেন।ধ্রুব দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে। আপুর শ্বশুর বললো,বুক সামান্য একটু পুড়েছে তাতে কষ্ট পাই নাই।রাগের মাথায় চলে যেতে বলায় যে আমার বউমা সত্যিই আমাদের ছেড়ে চলে আসলো এর জন্য কষ্ট পেলাম।
দাদি হঠাৎ বলে উঠলো,নির্বোদ মাইয়া মানুষ তো এর লিগা।সংসার করতে গেছস মন দিয়া করবি না সানি লিয়ন না কি জানি হের মতো হওন লাগবো।এই যে তোর দাদি মানে আমি আছিলাম একদম খাঁটি সানি লিয়ানের মতন।তোকেও সানি লিয়ন হইতে হইবো সবাই হতবাক হয়ে দাদির দিকে তাকিয়ে আছে।কেবল বাবা কটমট করে ধ্রুবর দিকে তাকাচ্ছে। দাদি ব্যাপার কিছুই বুঝছে না। বাবা সবটা স্বাভাবিক করার জন্য একটু কেশে বললেন,আসলে মায়ের কথা ধরবেন না।একটু বয়স হইছে বিধায় ভুল ভাল বকে। দাদি বললো,কি ?তুই আমারে গোস্ট গো (গেস্ট) সামনে ইনডাইবারলি(ইনডিরেক্টলি)অফমান করলি?আমি পাগল না হু?আমি মোটেই পাগল না আমি সানি লিয়ন। বাবা বললেন,আম্মা আপনে ঘরে যান। দাদি কঠিন চোখে তাকিয়ে রইলেন। বাবা আমাদের স্যার মানে দুলাভাইকে জিজ্ঞেস করলো,তা বাবা আদাউর তুমি আবার জুলির উপর রাগ করে নেই তো?
ধ্রুব দরজার কাছ থেকে বললো,বাবা আদাউর না আতাউর।আদাউর বলতে বলতে ভুলে যদি পাদাউর বলে ফালাও তাহলে তো ধ্রুব কথা শেষ করতে পারলো না।তার আগেই বাবা ওর দিকে পেপার ওয়েট ছুড়ে মারলো।ও দরজার আড়ালে চলে গেলো।সে সময় আবার মা পানির জগ,গ্লাস নিয়ে রুমে প্রবেশ করছিল।পেপার ওয়েট গিয়ে পরলো মায়ের কাঁচের জগে।ফলে সেটা ভেঙে গেলো।আর মা কান্না শুরু করে দিলো,কেমন স্বামীর সাথে ঘর করি আমি?আমারে জনসম্মুখে হত্যা করতে চাইতাছে এদিকে দাদিও কান্না শুরু করে দিলো।চোখে পানি নেই কিন্তু বিলাপ চলছে,চলবে।দাদি বলতেছে,কেমন পোলা পেডে নিলাম রে…এ…এ…আমারে বুড়া কয়,পাগল কয় …অ..অ.. এতো ঝামেলার মধ্যেও আপুর দেবর খাওয়া থামায়নি।সে মনে হয় মহা খাদক।
দ্রুত গিলতে গিয়ে গলায় অাটকে গেছে খাবার।সে খক খক করে কাশা শুরু করে দিয়েছে।আপুর শ্বশুর তাকে দ্রুত একটু খানি শরবত মুখে তুলে দিলো।সে শরবত মুখে নিয়ে ফুস করে সেটা আপুর শ্বশুরের পাঞ্জাবিতেই ফেললো।ভদ্রলোক দ্রুত পাঞ্জাবি ঝাড়ার চেষ্টা করছে।সে সময় জনাব দেবর মশাই তার পাঞ্জাবিতে বমিই করে দিলো।এমন বমি যেনো পেটের নাড়ি-ভুড়ি সব এই পাঞ্জাবিতেই ফেলবে।খাওয়াটা বোধহয় তার বেশি হয়ে গেছে। এমন সময় কোত্থেকে এক আর্শোলা উড়াল দিয়ে এসে আপুর গায়ে পরলো।আপু চিৎকার দিয়ে আতাউর ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে ফেললো।আতাউর ভাইয়া লজ্জায় কালো হয়ে গেলো।তার মা অর্থাৎ জনাবা শ্বাশুড়ি বললো,ছি: ছি: কি বেহায়া বেশরম বউ এটা। এমন সময় আর্শোলাটা উড়ে তার গায়ে পরলো।আর তিনি আপুর শ্বশুর মানে তার স্বামীকে জড়িয়ে ধরে ফেললো।বেচারার পাঞ্জাবিতে বমি।সে চিঁ চিঁ করে বলছে,আল্লাহর দোহাই লাগে আমারে ছাড়ো আতার মা।আমার বুকে ব্যাথা।ইসতারি দিয়া পুইড়া গেছে।
এসব কির্তী দেখে আরেকজন যেই বয়স্ক মতো ভদ্রলোক এসেছিলেন উনি , নাউজুবিল্লাহ , নাউজুবিল্লাহ বলে ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।সেসময় পায়ে কাঁচ ভাঙা বিঁধে ওমাগো বলে বসে পরলেন। আমার বাবা সোফার উপর দাঁড়িয়ে একটা চামচ মাইকের মতো বানিয়ে বলছে,সবাই থামো…স্টপ ,স্টপ…স্টপ ইন দ্যা নেইম অফ ল কিন্তু ,কে শোনে কার কথা।সবাই যারযার পজিশনে অনড় আমি খেয়াল করলাম ধ্রুব কোথাও নেই।ওকে খুঁজতে বাইরে এসে দেখি ও একটা চোঙ নিয়ে বলছে,চলিতেছে সার্কাস,চলিতেছে সার্কাস…সার্কাস দেখতে চাইলে আমাদের বাসায় সকলে এন্ট্রি নিন।জনপ্রতি টিকিট দশ টাকা।আমার হাতে দশ টাকা দিয়ে ঘরে ঢুকে যান।
আমি পুরা হতবাক।কয়েকজন উৎসুক জনতা দেখলাম সত্যিই দশটাকা করে ধ্রুবর হাতে দিয়ে ঘরে ঢুকছে।
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি। ধ্রুব সব দাঁত বের করে বললো,বুঝলা আপু ,নিউ বিজনেস স্টার্ট করছি। আমি ভয় পেতে লাগলাম।কি করা যায় হঠাৎ,কি মনে করে লোকাল থানায় ফোন করে ফেললাম।বললাম,আমাদের বাসায় অনেক সন্ত্রাসী ঢুকে গেছে।ব্লা..ব্লা ফোন কেটেও পরেছি আরেক ঝামেলায়।সন্ত্রাশী তো নেই….এখন পুলিশ যদি এসে আমাকে জেলে নেয়????
গল্পের বিষয়:
গল্প