মশারী

মশারী
বউ আমার দিকে কঠিন চোখে তাকিয়ে আছে। আমি বললাম, ঘটনা কী বউ? এটম বোম হয়ে আছো কেন? ভারত পাকিস্তানের লোকজনও তো একে অপরের দিকে এভাবে তাকায় না! কাহিনী কী? বউ বললো, সারাদিন তোমার কাজটা কী, শুনি? আমি নিরীহ গলায় বললাম, করোনার কারনে অফিস আদালত সব বন্ধ। আমারও কোন কামকাজ নাই। বাসা থেকেও বের হতে পারছি না। আমার কাজ হচ্ছে খাওয়া আর ঘুম,আবার ঘুম আর খাওয়া!!
সারাদিনে তো আমাকে একটু সাহায্য করতে পারো,সংসার তো আমার একার না।তোমার কোন দায়িত্ব নাই?
কে বলছে আমি দায়িত্ব পালন করি না! এই যে তুমি ইউটিউব দেখে দেখে কচু শাকের হালুয়া,শুটকির স্যুপ,মরিচ দিয়ে মিষ্টি, শ্বাশুড়ির পোলায় খায়,সতীনের নাতিন খায় জাতীয় অখাদ্য কুখাদ্য তৈরি কর,এগুলো খেয়ে কে শেষ করে? আমি তো এগুলো মহান দায়িত্ব মনে করেই খাই।আমি না খেলে,,,,, সারাদিন কোন কাজ কর না,রাতে শোয়ার সময় মশারীটা টানাতে পার না? কাল থেকে আমি আর মশারী টানিয়ে দিবো না, তুমি টানিয়ে নেবে!
আমি একা আলাদা ঘুমাই।বউ বাচ্চাদের নিয়ে অন্য খাটে শোয়। আমি বললাম, অসম্ভব! আমি মশারী টানাতে পারবো না। প্রয়োজনে আমাকে ঘরের ময়লা হাঁড়ি পাতিল ধুতে বল,ঘরদোর মুছতে বল,তরকারি কেটে দিতে বল,সব করে দিব। দেখা যাবে। কাল থেকে তোমাকেই মশারী টানাতে হবে। আমি আর পারবো না। বাসায় বসে আছি বলে সুযোগ নিচ্ছো?অন্য কোনদিন তো বল নাই! কাল থেকে তোমার সব কাপড় চোপড় আমি ধুয়ে দিবো।প্রয়োজনে শহীদ হয়ে যাবো। জেলে যাবো।তবুও মশারী টানাতে পারবো না! যতোই ধানাইপানাই কর,কাল তোমাকে দিয়ে আমি মশারী টানিয়েই ছাড়বো! এ কাভি হো নেহি সাকতা!
দেখা যাবে,বলেই বউ মশারী টানিয়ে দিয়ে রাগ করে চলে গেলো। কেউ যদি আমাকে প্রশ্ন করে, পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কাজটা কী? আমি বলবো,রাতে শোয়ার সময় মশারী টানানো! এটা আমার কাছে অসম্ভব বিরক্তিকর কাজ বলেই মনে হয়। কোনদিন যদি বউয়ের সাথে আমার ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়, তাহলে আমি নিশ্চিত এই মশারী টানানো নিয়েই হবে!! কতদিন গেছে, বউ বাসায় নাই, বাপের বাড়ি গেছে, আমি মশারী না টানিয়ে শুয়ে আছি। সারারাত মশারা কানের কাছে ভনভন করছে, কামড় দিয়ে পাছা ফুলিয়ে দিয়েছে, তবু্ও মশারী টানাতে যাইনি।অসহ্য হলে ফুল স্পিডে ফ্যান ছেড়ে দিয়ে লুঙ্গি গায়ে দিয়ে শুয়ে থেকেছি!!
পরের দিন ঘুম থেকে উঠলাম সকাল দশটায়। রোজার দিন। লকডাউনের কারনে কামকাজও বন্ধ। কিছুক্ষণ টিভি দেখলাম। তারপর ধুত্তেরি ছাই! বলে উঠে বসলাম। বেশিক্ষন টিভি দেখতেও ভালো লাগে না।টিভির একই খবর,শুধু করোনা! রান্নাঘরে গেলাম। বউ তরকারি কুটছিল। আমি বললাম, কী কর বউ? বউ বললো,এই তো আমার এক্স বয়ফেন্ডের সাথে একটু গল্পগুজব করছি। আমার হাতে তো অফুরন্ত সময়, টাইমপাস করতে হবে না! আমি খাতির জমানোর জন্য বললাম, আজ জানি কী বার? সোমবার।
আচ্ছা, আজকে সোমবার। তারপর দিন কী বার হবে? বউ চোখ রাঙিয়ে বললো, শুক্রবার! আচ্ছা, সোমবারের পরের দিন হচ্ছে শুক্রবার। ভালো। আজকে কী তরকারি পাক করবে? ডাল না দুধ? দুধ কি তরকারি? ঘটনা কী? উল্টাপাল্টা কথা বলছো কেন? কী জানি বউ! আজাইরা থাকতে থাকতে বোধ হয় মাথা আউলাইয়া গেছে! কি বলতে কি বলি!খাওয়া আর ঘুম ছাড়া তো কোন কাজ নাই। কাহাতক সহ্য হয়! আগে কাজ করতে করতে ভাবতাম,আহা! এক সপ্তাহের জন্য যদি কাজ বাদ দিয়ে বিশ্রাম নিতে পারতাম! এখন ভাবি, দূর শালা! কাজ করতে না পারলে তো মরেই যাবো! কবে যে কাজে ফিরতে পারবো!! কাজ কর, মন ভালো হয়ে যাবে। আমাকে কতগুলো পেঁয়াজ ছিলে দাও।
আমি উপোত হয়ে পেঁয়াজ ছিলতে বসে গেলাম। কখনো এই কাজ করিনি। চোখ দিয়ে দরদর করে পানি ঝরতে লাগলো। পেঁয়াজের ঝাঁজ অনেক কড়া! আমার ছোট মেয়ে এসে বললো, আব্বু কাঁদছো কেন? তোমার কী হয়েছে? আম্মু বকেছে? আমি চোখ মুছতে মুছতেই বললাম, অতি সুখে কাঁদছি রে মা!কেউ কেউ কাজে ক্লান্ত হয়ে কষ্টে কাঁদে। আমি কাজ করতে না পেরে কাঁদছি! অতি সুখ ভালো নয় রে মা!! বিকেলে বউ ইফতারি তৈরি করছে। আমি কাছে গিয়ে কিছুক্ষণ ঝিম মেরে বসে রইলাম। সময় কাটছে না। আমি বললাম, কী বানাও বউ? পেঁয়াজু আর বেগুনি। পেঁয়াজু আর বেগুনি কী দিয়ে বানায়?
তুমি জান না পেঁয়াজু আর বেগুনি কী দিয়ে বানায়? পেঁয়াজু বানায় বেগুন দিয়ে আর বেগুনি বানায় পেঁয়াজ দিয়ে। এবার হয়েছে? আহা, রাগ কর কেন, বউ? দশটা না পাঁচটা না, তুমি আমার একমাত্র বউ!তোমার কাছে আমার রান্নাবান্না শিখতে হবে না?আচ্ছা বউ,বেগুন দিয়ে বানায় বেগুনি। তাহলে পেপে দিয়ে সেটা বানালে কী হবে? পেপেনি? কুমড়া দিয়ে বানালে হবে কুমড়ানি? দেখ, আমার সাথে রসিকতা করার চেষ্টা করবে না, আমি তোমার বউ। গার্লফ্রেন্ড না! অবশ্যই তোমার সাথে রসিকতা করতে পারি। তুমি আমার বউ। দর্জাল শাশুড়ী না! আমি চলে আসতে গেলাম, বউ বললো, কোথায় যাও? আমি উঠতে উঠতে বললাম, একটু বাজারের দিকে যাই, কয়টা ডাব কিনে নিয়ে আসি! ইফতারে ডাব প্রতিদিন খেতেই হবে? ডাব না খেলে কী হয়? ডাব না খেলে আবার কী হয়, নারকেল হয়! কী বললা?
আমি হাসতে হাসতে বললাম, মধু বল্লা!! রাতে খাওয়াদাওয়া করতে করতে এগারোটা বেজে গেল। আমার মাথায় আছে আজ আমাকে বউ মশারী টানাতে বলবে! পুরুষ মানুষ হয়ে সামান্য বউয়ের কাছে হেরে যাবো? তা কি হয়! খাওয়ার পর বউকে বললাম, বউ মনে হচ্ছে মাথা ঘুরাচ্ছে। পেট গুলাচ্ছে,বমি-টমি হয়ে যাবে কিনা কে জানে! বউ বললো, নো ধানাইপানাই! মশারী তোমাকে টানাতেই হবে!! আরে দূর! তোমার মশারীর কথা ভাবছে কে?মনে হচ্ছে প্রেশার বেড়ে গেছে। ঘাড় ব্যাথা করছে। মাথায় পানি ঢালতে হবে!
বল কি! এক কাজ কর,বিছানায় শুয়ে পড়।আমি মাথায় পানি ঢেলে দিচ্ছি! আমি টুপ করে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম। বউ বালতি মগ এনে মাথাটা তার কোলে নিয়ে পানি ঢালতে লাগলো। অনেকক্ষন মাথায় পানি ঢেলে গামছা দিয়ে মাথা মুছে সুন্দর করে শুইয়ে দিল।আমি মনে মনে হাসতে লাগলাম। অবশ্য দুই একবার ওহ, আহ শব্দও করতে হলো!! বউ মশারী টানাতে টানাতে বললো, একটা কড়া করে ঘুম দাও। আমি ঘাড় ম্যাসেজ করে দেই। তাহলে ব্যাথা কমে যাবে। আমি মনে মনে হাসতে হাসতে বললাম, এই না হলে বউ।
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত