স্কুল ফাকির সেই দিনটি

সবাই কেমন আছেন? আশা করি ভালো এবং সুস্থ আছেন। কথা আর না বাড়িয়ে চলুন আমার জীবনের মজার একটি অভিজ্ঞতা শেয়ার করা যাক। আমি বর্তমানে অনার্স ১ম বর্ষের একজন ছাত্র। যদিও ঘটনাটি আজ থেকে প্রায় ৭ বছর আগে ঘটেছিল। তখন আমি ক্লাস সেভেনে পড়ি। আমি স্কুল জীবনে বরাবরই একজন ফাকিবাজ টাইপ ছাত্র ছিলাম। যখন যা ইচ্ছে হত তখন তাই করতাম। আমাদের স্কুলে ক্লাস শুরু হত সকাল ১০ঃ৩০ মিনিটে। একদিন কেন যেন খুব তারাতারি স্কুলে গেলাম, গিয়ে দেখি বন্ধুরা এখনো কেউ স্কুলে আসেনি তাই আমি অপেক্ষা করতে লাগলাম ওদের জন্য। যথারীতি বন্ধুরা স্কুলে আসলো। সাকিল, রাজু, রিয়াদ, ও জুয়েল আমরা ৫ জন স্কুল লাইফে সব সময় এক সাথে থাকতাম। আমাদের সবার বাসাও ছিল খুব কাছে। তো যাই হোক ক্লাস শুরু হওয়ার আগে আমি হঠাত বল্লাম দোস্ত আজ ক্লাস করতে ভালো লাগছে না আর তাছাড়া আজ আমি অনেক আগে স্কুলে চলে আসছি তাই চল আজ ক্লাস ফাকি দেই কোথাও ঘুরে আসি তারপর বাসায় চলে যাবো। জুয়েল প্রথমে রাজি হচ্ছিল না কিন্তু সবার চাপাচাপিতে রাজি হয়ে গেল। তো স্কুল থেকে একটু সামনে এসে সবাই ঠিক করতে শুরু করলাম আজ কোথায় ঘুরতে যাওয়া যায়। সাকিল বল্লো দোস্ত চল আজ আমার নানী বাড়ি যাই ঘুরে আসি, ওখানে জায়গা গুলো খুব সুন্দর। সাকিলের নানী বাড়ি ছিল পাশের গ্রামেই তো যেই ভাবা সেই কাজ সবাই ইউনিফর্ম খুলে ভিতরের টি শার্ট পড়েই হাটতে লাগলাম। একটু হাটার পড় বাসের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম কারন হেটে যাওয়া পসিবল ছিল না। বাস আসলো আমরা সবাই মজা করতে করতে যেতে লাগলাম। খুব একটা দেরি হয়নি আমরা খুব তারাতারি পৌছে গেলাম। বাস থেকে নেমে আমরা হাটতে লাগলাম কারন সাকিলের নানি বাড়ি ছিল একটু ভিতরে। গ্রামের ধান খেতের মাঝখান দিয়ে আমরা হাটতে লাগলাম। আমাদের কাছে টাকা বেশি ছিল না যা ছিল বাস ভাড়ায় চলে গিয়েছিল। ধান খেতের মাঝখান দিয়ে হাটতেছি সাকিল জুয়েল আর রাজু সামনে আর আমি আর রিয়াদ একট পিছনে এক সাথে কথা বলতে বলতে হাটতেছি। হঠাত রিয়াদ আমাকে বললো দোস্ত দেখ ওই যে আখ খেত গ্রামের ভাষায় যাকে বলা হয় কুশোল। তো রিয়াদ বললো দোস্ত চল কয়েকটা আখ ভেংগে নিয়ে আসি খুব খেতে ইচ্ছে করছে। আমি বললাম কেউ দেখে ফেল্লে সর্বনাশ আর গ্রামে আখ চুরির ব্যাপারে একটা নিয়ম আছে কেউ যদি আখ চুরি করতে গিয়ে ধরা খায় তাহলে তাকে সেই চুরি করা আখ দিয়ে ইচ্ছে মত পিটানো হয়। তো যাই হোক রিয়াদ আমি গেলাম আখ চুরি করতে। রাজু সাকিল আর জুয়েল ওরা সামনে ছিল তাই ওদের না বলেই আমরা আখ চুরি করতে গেলাম কারন আখ খেত টা কাছেই ছিল। আমি পাহারা দিলাম রিয়াদ দুইটা আখ ভেংগে নিয়ে আসলো। তারপর তারাতারি চলে এলাম। আমরা তখনো হাটতেছিলাম কারন সাকিলের নানী বাড়ি এখনো পৌছাইনি। তো যাই হোক বাকি বন্ধুরাও মিলে সেই দুটা আখ খেলাম। জুয়েল বললো দোস্ত এত কম নিয়ে আসছিস কেন চল আরো ভেংগে নিয়ে আসি সাকিল বললো দোস্ত আর যাইস না কেউ দেখে নাই ভাগ্য ভালো এবার নিশ্চিত ধরা খাবি আর এটা আমাদের গ্রাম না মনে রাখিস। আমরা সাকিলের কথায় গুরুত্ব দিলাম না। যদিও সাকিল আমাদের সাথে আখ চুরি করতে আসলো না দুরেই দাড়িয়ে রইলো। রিয়াদ আর জুয়েল যেই আখ ভাংতে শুরু করলো তখন হঠাত আখ খেতের ওপাশ থেকে কেউ একজন বলে উঠলো কেরে আখ কাটছিস ধর ধর ধর! আমি রিয়াদ আর জুয়েল কয়েকটা আখ হাতে নিয়ে দিলাম দৌড় সামনে সাকিল বুঝতে পেরে সাকিল ও দিল দৌড় কিন্তু রাজু দৌড়ালো না ওর আবার একটু সাহস ছিল বেশি আমরা দৌড়াতে দৌড়াতে সাকিল এর নানীর বাড়ি এসে তারাতারি ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলাম। তার একটু পড়ে দেখি বাইরে চেচামেচির আওয়াজ যে দেখেছিল চুরি করতে উনি দেখি রাজু কে ধরে নিয়ে আসছে আর চেচামেচি করতে বাকি হারামজাদা গুলা কই সাকিলের নানীর নাম ছিল ফুলি উনি ডাকতে লাগলো ও ফুলি খালা ও ফুলি খালা। সাকিলের নানি (ফুলি) এসে কিছুই বুঝতে পারলো না আমরা তারপর রাজু সীকার করলো আর নানী আমাদের ঘর থেকে বেড়োতে বল্লো। সাকিল আর জুয়েল বেরিয়েছিল আমি আর রিয়াব বেরোইনি ভয়ে। তারপর যাই হোক সাকিলের নানীর জন্য আমরা বেচে গেলাম। তাই দেরি না করে কিছু খাওয়া দাওয়া করে সবাই মিলে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম হাতে টাকা ছিল না বলে অনেকটা রাস্তা হেটে আসতে হয়েছে। যাওয়া সময় অন্য রাস্তা দিয়ে গিয়েছিলাম কারন ওই রাস্তা দিয়ে গেলে আবার ওই লোকটা দেখে ফেলতে পারেন। তাই বিকল্প রাস্তা দিয়ে হেটে আসতে অনেক সময় লেগেছিল। অনেক কষ্টে বাসায় আসলাম৷ ভাবছিলাম এই যাত্রায় বেচে গেছি কিন্তু না সাকিলের নানী ফোন করে সাকিলের মাকে চুরির ঘটনাটা বলে দিল। সাকিলের মা আবার আমাদের সবার মা কে বলে দিল এক নালিশ হিসেবে এই নিয়ে অনেক কথা শুনতে হয়েছে আমরা বন্ধুরা যার যার মার কাছে অনেক বকা খেলাম৷তারপর ৩ ৪ মাসের আর আমরা ক্লাস ফাকি দেইনি। হঠাত আরেকদিন স্কুল ফাকি দিলাম পাশের গ্রামে ভিডিও গেইমস খেলতে,,,,,,,, তো যাই হোক এটা অন্য একদিন শেয়ার করবো এই ছিল আমার স্কুল জীবনের একটা মজার ও দুহসাহসিক এক অভিজ্ঞতা। জানি না গুছিয়ে লিখতে পেরেছি কিনা সবাই ভালো থাকবেন।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত