– লাইফে শান্তি নাই বুঝলা বাবা। লাইফ ইজ ভেরি টাফ।
আমার পাশের সীটের ভদ্রলোক বিরক্তি স্বরে বললেন। আমি যাব কল্যানপুর, বাস এলিফেন্ট রোডে সিগনালে আটকে আছি।
– জ্বি চাচা। শান্তি নাই। শান্তির মাও নাই। বাবা কোমায় আছে। যে কোন মুহুর্তে তিনিও মারা পারেন। হাই তুলতে তুলতে বললাম আমি।
ভদ্রলোক চোখ বড় বড় করে তাকানোর চেস্টা করলেন। বিশেষ সুবিধা হলনা। ভদ্রলোকের চোখই ছোটছোট। খরগোশ চোখ। সেই চোখে সন্দেহ। বোঝার চেষ্টা করছেন আমি মজা করছি কি না। আমার চেহারা এমনিতেই গোমরা। আরও গোমরা করে ফেললাম। চোখ থেকে সন্দেহ কেটে গেল ভদ্রলোকের।
– কি কর বাবা?
– আপনার সাথে গল্প করি চাচা।
– না মানে পড়াশোনা? চাকরি বাকরি?
– পড়াশোনা শেষ চাচা।
– চাকরি?
– ওটাও শেষ।
ভদ্রলোকের খরগোশ চোখে সন্দেহ ফিরে এল আবার। ছেলের বয়সী কোন অচেনা ছোকড়া তাঁর সাথে মজা করবে এটা মেনে নিতে পারছেন না। সমস্যা হল তিনি নিশ্চিতও হতে পারছেন না, আমি মজা করছি কি না।
– আমার কথা থাক চাচা। আপনি কি করেন বলুন? তারাতারি বললাম আমি।
– চাকরি করি বাবা। মতিঝিলে অফিস। নয়টা ছয়টা অফিস। শান্তি নাই বাবা বুঝলা। লাইপে শান্তি নাই।
– জ্বি চাচা। শান্তির মা মারা গেছে অনেক আগেই… শান্তির বাবা…
ভদ্রলোকের খরগোশ চোখ এবার বড় হয়ে গেল, চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে। কিছু বলার জন্য মুখ খুলতে যাচ্ছেন কিন্তু হঠাৎ তাঁর মোবাইল ফোনটা বেজে ওঠায় হা বন্ধ করে কলটা রিসিভ করলেন।
– হ্যালো? … আমি রাস্তায়… এলিফেন্ট রোড…
– হুম।
– অনেক জ্যাম।…
– উম?…
-কি?…
– শান্তি এখনও বাসায় ফেরে নাই? … ফোন রিসিভ করে না?… আমি আগেই বলছিলাম এই অবরোধ হরতালের মধ্যে শান্তিরে বাসা থেকে বের হইতে দিও না! … একটাই মেয়ে আমার!… কি করবা? … আমার মাথা করবা… দেখ শান্তির মা…………..
আমি কোনদিক না তাকিয়ে বাস থেকে নেমে পড়লাম। এই জ্যামে বাসের মধ্যে বসে থাকার কোন অর্থ হয় না।