বলি লজ্জা শরম কি কিছু আছে, না নদীতে ভাইসা গেছে । দিনে দুপুরে ঘরের দরজা লাগাইয়া রাখতে হইব ক্যান। আমরাও তো বউ আছিলাম। কই আদিখ্যেতা তো করি নাই। শরমের বালাই যদি থাকতো। পোড়া কপাল আমার।
– আপনেরে আগেই কইছিলাম দরজা লাগানোর দরকার নাই। এখন শোনেন,,
– দূর মায়ের কথা বাদ দেও। চিল্লাক
– কথা গুলাতো আপনেরে কইতেছেনা কইতাছে আমারে। এই লন কোল বালিশ। এটার উপর খায়েশ মেটান আমি গেলাম।
– আরে কই যাও তুমি
– দেখেন হাত ছাড়েন, নাইলে কিন্তু কামড় দিমু।
– দূর এইটা কিছু হইলো।
হাসতে হাসতে ঘর থেকে বেরিয়ে যায় আছিয়া কিন্তু শ্বাশুড়ি কাছে গিয়ে ঘুমটা টেনে ভেজা বেড়ালের মতো দাঁড়িয়ে থাকে।
– আচ্ছা বউমা আমার পোলাটা না হয় মরদ মানুষ বাচ বিচার মানে না, এই ভর দুপুরে দরজা লাগায় রাখতে হইবো কেন?
– আমার কি দোষ, আপনের পোলায়ই তো আটকাইয়া রাখছে।
– হইছে আর নিজের দোষ ঢাকতে হইবো না। পুকুরপারতে এত কলশ পানি নিয়া আইস, বেলা হইছে রানতে হইবো।
– আচ্ছা আনি, ,
– আর হোন বছিরে কি আইজই চাইলা যাইব ঢাহা।
– আজই না কাইল বিয়ানে যাইবো
– আচ্ছা যাও,,,
জোয়াদ্দার বাড়ির সান বাধানো ঘাট, কাচেঁর মতো স্বচ্ছ পানি। আধা পুকুর ভরে আছে কচুরিপানায়। খাওয়া গোসল এই পুকুরের পানিতেই হয়, এখনও টিউবওয়েল বসানোর সামর্থ্য হয়নি বছিরের তাই এই বাড়ির পুকুরটিই তাদের ভরসা। কিন্তু জোয়ারদার বাড়ির বড় ছেলে নওশেদ এর নজর ভালো না। আছিয়া বা মহিলারা গোসল করার সময় পুকুরের অপর প্রান্তে বসে থাকে। কামুক চোখে তাদের গোসলের দৃশ্য অবলোকন করে। বিশেষ করে আছিয়ার প্রতি তার কুনজর টা বেশি। আজ পানি আনার সময় সামনের ঘাটেই দাঁড়িয়ে ছিল তবে তার মতিগতি দেখে আছিয়ার ভালো লাগছিল না ।
– কি গো বছিরের বউ শরীলডা ভালানি। আজ যেন দুপুরে গোসল করতে আইলানা ?
– আমার গোসল নিয়া আপনার এতো মাথা ব্যথা ক্যান?
– মাথা আছে বইলাই তো মাথা ব্যাথা করে। ও,,, ভুইলা গেছি বছির তো বাড়িত, গোসল তো মনে হয় সকালেই সাইরা ফেলছ।
– দেখেন আইজেরা কথা কইবেন না, রাস্তা ছাড়েন যাইতে দেন।
– যাও তোমারে ধইরা রাখছে কে, তয় আমাগো দিকে একটু নজর টজর দিও আর কি। শত হইলেও পাড়া প্রতিবেশি। টেকা পয়সা লাগলে নিও সমস্যা নাই। খারাপ ইঙ্গিতটা বুঝতে আছিয়ার সময় লাগেনা। রাগে শরীর ফুলতে থাকে।
– এখনও ভাতে মরি নাই যে টেকার লাইগা ইজ্জত বেচতে হইব।
– আরে দূর দূর দূর, কি কও, ইজ্জত বেচার কি হইলো । সবই তো হইব আপসে। এই সব কি আর রাগের মাথায় হয়। বছির ঢাহা যাক তারপর না হয় চিন্তা ভাবনা কইরো।
– সরেন কইলাম, তা না হইলে কিন্তু মাথায় কলস ভাঙগুম।
– দেহ মাগির চেত দেহ। পাছায় নাই কাপড় আবার হেডাম কত?
– গরিব হইবার পারি তয় আপনার মতো লুচ্চা না। কথাটা বলেই আছিয়া নওশেরকে এক প্রকার রাস্তা থেকে সরিয়ে বাড়ির পথে হাঁটা ধরে।
– আরে যা যা তোর মতো মইয়া বাজারে পঞ্চাশ টেকা হইলে পাওয়া যায় আবার আইছে বড় বড় কথা কইতে।
আছিয়ার চেহারা দেখেই বছির বুঝতে পারে কিছু একটা হয়েছে। সুন্দর মুখে আকাশের কালো মেঘ ভর করেছে ,মনে হচ্ছে মুষলধারে বৃষ্টি নামবে।
– আপনি বাড়িত, টিউবওয়েল বসাইবেন, নাকি বসাইবেন না হেইটা কন ? আর যদি না বসান আজই আমি বাড়ি চইলা যামু।
– আরে বাবা কি হইছে খুইলা কইবা তো।
– ঘাটে পানি আনতে গেলে জোয়াদ্দার বাড়ির নওশেদ্দা কুনজরে তাকায়, উল্টা পাল্টা কথা কয়।
– কি উল্টা পাল্টা কথা কয় নওশেদ্দা? রাগে অনেকটা গজগজ করে বলে উঠে বছির।
– হেই কথা হোনোনের কাম নাই, যত তাড়াতাড়ি পারেন টিউবওয়েলের ব্যবস্থা করেন। আর নওশেদরে কিছু জিগাইতে যাইয়েন না। ও মানুষ ভালা না।
তবুও বছির ছাড়ার পাত্র না, নওশেদের মুখোমুখি সে ঠিকই হয়। কিন্তু নওশেদ তাকে এমন ভাবে বুঝি দেয়। আছিয়া তার ভাবি লাগে একটু দুষ্টুমি করছে আর কিছুই না। চাকরির সুবাদে বছিরকে আবার ঢাকা মুখি হতে হয়। বাড়িতে রেখে যেতে হয় তার বিয়ে করা বউ, যদিও বা বছর দেড়েক হয়েছে এখনও সন্তানাদি হয়নি। তবুও বউয়ের প্রতি তার টান আকাশ পরিমাণ। বাড়িতে একটা টিউবওয়েল বসানো খুব বেশি জরুরী কিন্তু কুলিয়ে উঠতে পারছেনা বছির। তবে এবার যেভাবে হোক টাকা যোগাড় করেই তবে বাড়ি ফিরবে।
বছির চলে গেছে আজ পাঁচ দিন এর মাঝে আর বদমাইশ নওশেদ তেমন কোন বিরক্ত করেনি। ঘাটের অপর প্রান্তে বসে শুধু গুই সাপের মতো দূর থেকে কামুকতার রক্ত চুষেছে। অন্যান্য রাতের তুলোনায় আজকের রাতটা যেন একটু বেশিই অন্ধকার। চাঁদের দেখা নাই, হয়তো অমাবস্যা। ঝি ঝি পোকা ডেকে চলেছে, তার সাথে সখ্যতা গড়েছে জোনাকি। আর নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ি আছে দুটো প্রানী। বছির না থাকলে শ্বাশুড়ির সাথেই ঘুমায় আছিয়া। আজও ঘুমিয়ে ছিল।
ছনের ঘর, দরজার খিল দেওয়ার পাকা পোক্ত কোন ব্যাবস্থা নেই। সামান্য একটু জোড়ে ধাক্কা দিলেই খুলে যাওয়ার কথা। হ্যা খুলে গেছে, তিনটা মুখঢাকা দানব প্রবেশ করেছে আছিয়ার ঘরে। কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই আছিয়ার শ্বাশুড়ির মুখ হাত চেপে ধরছে দুইজন আর আছিয়াকে আরেক জন। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে আছিয়া অজ্ঞান হয়ে গেছে। শ্বাশুড়ির সামনেই অন্ধ কুটিরে আছিয়াকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে তিনজন কিন্তু আছিয়া বা আছিয়ার শ্বাশুড়ি কাউকেই চিনতে পারেনা, কারণ সবার মুখ ঢাকা ছিল, এছাড়া ঘর ছিলো অন্ধকার তবে আছিয়া জানে এরা কারা, কার লালসার শিকার সে, কিন্তু কোন প্রমান নেই। মান সম্মানের ভয়ে কাউকেই কিছু জানায়নি তারা শুধু আছিয়ার অসুস্থতা আর নিরাপত্তার ভয়ে বছিরকে শুধু খবর দিয়েছে মা। আছিয়ার শ্বাশুড়ি ছেলেকে পর্যন্ত কিছু জানাতে চায়নি, কারন সে জানে পুরুষ মানুষ বউয়ের নির্যাতনের খবর শুনলে হয়তো বউকেই গ্রহন করতে চাইবেনা । উপরে যাই হোক আছিয়াকে সে প্রচণ্ড ভালোবাসে।
বছিরেরও বুঝতে বাকি নেই কাজটা কে করেছে কিন্তু কোন প্রমান নেই এছাড়া জোয়াদ্দার বাড়ির বিরুদ্ধে কিছু করার ক্ষমতা তাদের নেই। হঠাৎ করেই একজনের দিকে আঙুল তুলে বলা যায় না, তুই আমার বউয়ের ধর্ষক। আর মান সম্মানের ভয় তো আছেই। চাইলেই তো বউকে ফেলে দেওয়া যায়না। তবে তার কি করণীয় সেটা সে মনের ভেতর গেঁথে রেখেছে কাউকেই ঘুণাক্ষরেও টের পেতে দেয়নি, এমনকি মা বা আছিয়াকেও না। আছিয়া আর বছির পাশাপাশি শুয়ে আছে তবে কারো মুখে কোন কথা নেই। আছিয়ার নিজের শরীরকে বড়ই অপবিত্র মনে হয়। আর যাই হোক অপবিত্র শরীর নিয়ে স্বামীর কাছে যাওয়া যায় না। কয়েকবার বছির নিজের কাছে ডেকেছে কিন্তু আছিয়া নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়েছে বারবার
– আমারে তালাক দিয়া দেন, আপনে আরেকটা বিয়া করেন। অপবিত্র শরীর এখন আর আপনার ভালা লাগবো না।
– এ কথা কইসনা বউ, মানুষের শরীলডাই কি সব। তোরে যে আমি খুব ভালা পাই, আর অন্তর দিয়া ভালাবাসি। ভালাবাসার দাম কী শরীল দিয়া হয়রে।
– তবুও আমার নিজেরে খুব ঘৃণ্ণা লাগে, মইরা যাইতে ইচ্ছা হয়।
– ঐ কথা কইসনা বউ। শরীল একদিন মাটি হইবো, পোকায় খাইব, ভালাবাসাডাই থাইকা যাইব। একটু কাছে আয় বউ, কতদিন আদর করি না।
নিজের অনিচ্ছা সত্ত্বেও স্বামীর কাছে নিজেকে সপে দেয় আছিয়া। আর সৃষ্টকর্তার কাছে প্রার্থনা করে। যে তার এই ক্ষতি করছে আল্লায় যেন তার বিচার করে । হঠাৎ করেই জোয়াদ্দার বাড়িতে আজ কান্নার রোল পরেছে, কে বা কারা নওশেদকে মেরে শিমতলি ব্রিজের নিচে ফেলে রেখেছে। কে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে কেউ বুঝতে পারছে না এমনকি পুলিশ পর্যন্ত না। কোন প্রমান নেই, কোন ক্রু নেই, এ যেন এক অভেদ্য রহস্য।
গল্পের বিষয়:
গল্প