মাঝরাতের ছ্যাঁকা

মাঝরাতের ছ্যাঁকা
অযু করে টেংরা মুন্সি সেজে বিছানার উপর বসে আছি৷ ঠিক তখনই একটা অপরিচিত মেয়ে আইডি থেকে মেসেজ আসল…
–আমি আপনার বউ হতে চাই।
মেসেজটা দেখা মাত্রই পরানডা ছ্যাঁত করে উঠলো৷ আহা এ কি পেলাম আমি। এটা স্বপ্ন নয়তো আবার৷ আমি বিছানা থেকে নামলাম। দরজার চিপায় বাম পায়ের বুড়ো আঙ্গুল রেখে হালকা চাপ দিলাম। মাগো..ইসস…ব্যাথা পেয়েছি। তারমানে ব্যাপারটা সত্যি। কোন স্বপ্ন নয়৷ খুশিতে রুমেই ঘুরে ঘুরান্টি ডান্স দিলাম। উফস শিট ম্যান অযু টাই নষ্ট হয়ে গেলো। আমি দৌড়ে অযু করতে গেলাম। অযু করতে ভাবলাম আমাদের ভবিষ্যতের কথা৷ সে রান্না ঘরে রান্না করবে আমি পিছন থেকে তাকে জড়িয়ে ধরব। সে বিরক্ত হয়ে বলবে….
-এই কি শুরু করলে?
–তোমাকে ছাড়তে ইচ্ছে করেনা প্রিয়তমা।
-সারারাত দুষ্টুমি করো এখন রান্নাঘরেও দুষ্টুমি।
–কি করব বলো? আমি যে তোমার দুষ্ট রুপ্পেল জামাই।
-হয়েছে ঢং করতে হবেনা ছাড়ো আমায়। তরকারি পুরে যাবে।
আমি অভিমান করব। অভিমান করে পাশের রুমে চলে যাব। আমার মাথায় শয়তানি বুদ্ধি আসবে। আমি ইঁন্দুর ধরে নিয়ে রান্না ঘরে যাব৷ তার সামনে গিয়ে ইঁন্দুর ছেড়ে দিয়ে বলব…
–ঘাউউউউউইউ….
সে ভয় পেয়ে চিল্লানি দিবে। ইঁন্দুরটা লাফ দিয়ে তরকারি তে পরে যাবে। সে ভয়ে ফ্লোরে পরে যাবে। আমি ভাববো সে ভং ধরলো নাতো? তাকে কাতুকুতু দিব, নাহ সে ভং ধরেনি। জ্ঞান হারিয়েছে। আমি তরকারি ফেলে দিব। বউকে বিছানায় শুয়ে দিয়ে হোটেল থেকে বিরিয়ানি এনে রাতে দুজম খাব। আহ! কি রোমান্টিক ভাবনা। এসব ভাবতে ভাবতেই আমার অযু শেষ হয়ে গেলো। আমি আবারো বিছানায় টেংরা মুন্সির সেজে বসলাম। ছু মন্তর ছু দিয়ে মোবাইল হাতে নিলাম। তার ফোন থেকে আবারো মেসেজ এসেছে….
–আমাকে আপনার বউ বানাবেন? মেসেজটা দিয়েছে ৩ মিনিট হলো। ইসসস অযু করতে গিয়ে দেরি করে ফেলেছি। সে অফলাইনে গেছে। আমি রিপ্লে দিলাম…
-ইসসস এভাবে কেউ বলে। একটু পরই রিপ্লে এলো….
–ওমা আমি কি বললাম?
-ঢং করবেন নাতো, জানেন আমি কখনো ভাবিনি আমাকে এভাবে কেউ বলবে।
–আহা তাই বুঝি।
-হ্যাঁগো হ্যাঁ…তা কবে তুমি হবে আমার?
–মানে?
-আমার বউ হবেন কবে?
–আমি আপনার বউ হতে যাব কেন?
-কেন একটু আগেইতো আপনি আমায় মেসেজ দিছেন..’আমি আপনার বউ হতে চাই।’
–আসলে ওটা একটা মিস্টেক, আমি বোন লিখেছিলাম সেটা বউ হয়েছে।
-মানে?
–মানে আমি বোন হতে চাই, বাট বোনের জায়গায় বউ হয়েছে। এটা মিস্টেক হয়েছে।
-এ কেমন মিস্টেক?
–সরি ভাই…আমি আপনার বোন হতে চাই।
আমি আহাম্মক হয়ে গেলাম। এ কেমন মিস্টেক নানি। আমরে দাও একটু পঁচা পানি। তোমার মনে যে এই ছিল সেইটা মুই নো জানি। ওরে খাচ্চুন্নি এত বড় বাটপারি। তাও মাঝরাতে একজনের ইমোশন নিয়ে খেলা। এমনিতেই ফেসবুকে বোনের অভাব নেই। তরে কেন বইন বানামু৷ তুই মনে কষ্ট দিছস৷ আমি রিপ্লে করলাম….
–চুপ কর হারামজাদি..আমার লগে মজা করো?
-হোয়াট কি বলছে এসব?
–উফফফ সরি, আসলে হারামজাদি হয়েছে কি আমার কিবোর্ডে সমস্যা।
-মানে কি?
–সরি হারামজাদি, আমি তোমাকে হারামজাদি বানাবো…!
-দেখুন ফাজলামু করবেননা।
–আসলে আপু আমার কিবোর্ডে সমস্যা। যদি ‘Bon’ লিখতে যাই তাহলে সেটা বাংলায় হারামজাদি উঠে। এখানে আমি কি করব?
-আপনি মজা নিচ্ছেন আমার সাথে?
–দেখুন হারামজাদি আপনার সাথে আমি কেন ফাজলামো করব।
-মুখ সামলে কথা বলুন।
–হারামজাদি আপনি রাগ করবেননা।
মেয়েটি আর কিছু বললনা। আমায় ব্লক করে দিলো। সে বুঝেছে তারচেয়ে বড় বাটপার আমি। আমি ডুকরে ডুকরে কেঁদে উঠলাম৷ আমার অসহায় মন নিয়ে সে খেলল। আমার কান্না পাচ্ছে কিন্তু চোখে পানি আসছেনা। রুমে পেঁয়াজ ছিল৷ আমি পেঁয়াজ নিয়ে আসলাম। চোখে পেঁয়াজ দিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছি। সিঙ্গেলদের দুঃখ কেউ বোঝেনারে বেয়াই।
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত