শাড়ি সমাচার

শাড়ি সমাচার
বিয়ের পর থেকে আমার হাসবেন্ড হুটহাট উপহার দিয়ে আমাকে চমকে দিত।উপহার পেলে কে-না খুশি হয়?আমিও হতাম।তবে মাঝে মাঝে সেটা ভীষণ বিরক্তির কারন হত।।কখনো কখনো সে এমন কিছু কিনত যা আমি ব্যবহার করতাম না।এটা আবার তার কাছে খুব খারাপ লাগত।তখন না পারতাম গিলতে না পারতাম উগরাতে।
বছর ছয়েক আগের ঘটনা।২৯ জুলাই রাত ১২টার পর সে আমাকে ডেকে একটা উপহার দিল।প্যাকেট দেখেই বুঝলাম শাড়ি।শাড়ির প্রতি আমার বরাবরই দূর্বলতা ছিল।বিয়ের আগে আমার সব জন্মদিনে আমি শাড়ি পড়তাম।কিন্তু শাড়ির প্যাকেট টা খুলেই আমি হতাশ হলাম। যেই শাড়ি এনেছে সেই রকম শাড়ি আমি পড়িনা।আমার বরাবরই সুতি,তাঁত,হাফসিল্ক,জামদানি শাড়ি পছন্দ।জর্জেট শাড়ি পরে কেন জানি আমি কমফোর্টেবল ফিল করিনা।যদিও তখন তাকে কথাটা বললাম না পাছে সে যদি কষ্ট পায়?
পরদিন শাড়িটা পরে সেজেগুজে ঘরোয়াভাবে জন্মদিন পালন করলাম।সে ত বারবার শাড়ির প্রশংসা করছে।কিন্তু আমি কোন উচ্চবাচ্চ করিনি।রাতে তাকে বুঝিয়ে বললাম। এই শাড়ি পরে আমি কোনদিন ও বাইরে যাবনা।শুধুশুধু এতগুলো টাকা নষ্ট করে কি লাভ?তার চেয়ে শাড়িটা বদলে আমি অন্য কোন শাড়ি আনি।কিছুক্ষন দোনামোনা করে সে রাজি হল।যেহেতু শাড়িটা পরিচিত দোকান থেকে এনেছিল আর জর্জেট হওয়ায় ভাজ ও নষ্ট হয়নি।তাই খুব সহজেই আমি ওটা বদলে আনলাম।কিন্তুওই দোকানে আমার পছন্দের কোন শাড়ি না পেয়ে একটা থ্রি পিস নিয়ে আসলাম।আমি মনে মনে ভীষণ খুশি হয়েছিলাম।যদিও তা প্রকাশ করিনি।কিন্তু কিছুদিন পরেই বুঝলাম আমি মস্ত বোকামি করে ফেলেছি।কিন্তু তখন আর করার কিছুই ছিলনা।এই ঘটনার পর আমার হাসবেন্ড আর কখনো আমাকে শাড়ি কিনে দেয়নি।এমনকি আমি শাড়ি পরতে চাইলে বিভিন্ন অজুহাতে না করত।বিশেষ করে সুতি শাড়ি পরলে।
যেকোন বিশেষ দিন আমরা ৩ জন একসাথে কাটাই।তেমন কিছুই করিনা।হয়ত সবার পছন্দের খাবার রান্না করি।নয়ত কোথাও ঘুরতে যাই।
গত বছর আমার জন্মদিনের সন্ধ্যায় হঠাত করে আমার ছেলে মোবাইল নিয়ে দরজা বন্ধ করে বসে আছে।ভাবলাম নিশ্চিত গেম গেলছে।কয়েকবার ডাকাডাকির পর ও দরজা খুললনা।কিছুক্ষন পর সে নিজেই বেড়িয়ে এলো।হাতে লাল,নীল রঙের ফুল।সে ইউটিউব দেখে আমার জন্যে ফুলগুলো বানিয়ে এনেছে।ছেলের দেয়া উপহার পেয়ে আমি ত মহা খুশি।ছেলে এবার বায়না ধরল শাড়ি পরতে হবে।এবার আমি আরো খুশি হলাম।যাক ছেলের বাবা না বললেও আমার ছেলে ত বলেছে।শাড়ির প্রতি আমার অন্যরকম ভাললাগা কাজ করে।খুশিতে গদগদ হয়ে শাড়ি খুঁজতে গেলাম।কিন্তু ওয়ারড্রবে আমার পছন্দের একটা শাড়িও পেলামনা।পরে মনে পরল নতুন বাসায় আসার সময় সব শাড়ি একটা ব্যাগে ভরে খাটের নিচে রেখেছিলাম।কিন্তু ওই রুমে খুব একটা যাওয়া হয়না।
তাই আমি ভুলেই গিয়েছিলাম।আর তাই এখানে এসে আর শাড়িগুলো গুছিয়ে রাখা হয়নি।শাড়ি বের করতে ব্যাগ খুলেই আমি লাফ দিয়ে ৩ হাত দূরে সরে গেলাম।হায় হায়!ব্যাগের মধ্যে ২ টা ইঁদুর তার ২টা ছানা নিয়ে দিব্যি সংসার পেতেছে।আমার আর বুঝতে বাকি রইলনা শাড়িগুলোর কি হতে পারে।ছেলে আর ওর বাবা ইঁদুর তাড়িয়ে যখন শাড়িগুলো ব্যাগ থেকে বের করল তখন আমার চক্ষু চড়কগাছ।১৪ টা শাড়ির সবগুলোই মাঝ বরাবর ইঁদুর খেয়ে ফেলেছে।এঈ শাড়িগুলোই আমার সবচেয়ে পছন্দের ছিল।প্রতিবার বাসা পাল্টানোর সময় হাসবেন্ডের কাছে এগুলোর জন্যে কত কথা শুনেছি।আর আজ সেই শাড়িগুলোর এই দূর্দশা আমি সহ্য করতে পারছিলামনা।মনের দুঃখ মনে চেপে ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে একটা জর্জেট শাড়ি খুঁজে বের করে পরলাম।এখন আর ওটা পরা ছাড়া কোন উপায় ও নেই। ছেলেটাও শাড়িগুলোর জন্যে খুব মন খারাপ করল।
কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার এতকিছু ঘটে গেল অথচ আমার হাসবেন্ডের মধ্যে কোন হেলদোল নেই।এমনকি সামান্য দুঃখ প্রকাশ ও করলনা।অথচ অন্য সময় হলে সামান্য কিছু নষ্ট হলেই তার কষ্টের সীমা থাকেনা।আমার কেন জানি ওকে দেখে খুব খুশি খুশি লাগছিল।জানিনা সেটা আমার মনের ভুল কিনা।এই প্রথম আমি আমার প্রিয়তমের মনের কথা পড়তে পারলাম।আমি স্পষ্ট শুনতে পেলাম সে মনে মনে বলছে,বেশ হয়েছে, আমার কিনে দেয়া শাড়ি পছন্দ হয়না।পর এখন নিজের পছন্দের শাড়ি।
রাগে আমার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিল।কি করব ভেবে না পেয়ে তাকেই জিজ্ঞেস করলাম আমার এত পছন্দের শাড়িগুলো নষ্ট হয়ে গেল অথচ তুমি কিছুই বললেনা? সে কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বলল।ইঁদুর ও বোঝে কোন শাড়িতে তোমাকে সুন্দর লাগে অথচ তুমি বুঝলেনা।আফসোস!হায় আফসোস! তার কথা শুনে আমি নির্বাক হয়ে গেলাম।অনেকক্ষন পর ছেলের ডাকে আমার হুশ ফিরল।হুশ ফেরার পরে মনে হল বাকিটা জীবন এমন নির্বাক হয়ে থাকলেই বুঝি ভাল হত।
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত