নিয়ম

নিয়ম
রাত ১টার সময় রাফি ওর গার্লফ্রেন্ড আনিকার সাথে কথা বলার এক পর্যায়ে বললো,
— বাবু, তোমার একটা ন্যূড ভিডিও দাও না! রাফির কথা শুনে আনিকা কিছুক্ষণ নীরব থেকে তারপর বললো,
-তুমি আবার এই জিনিস নিয়ে কথা বলা শুরু করলে? এই জন্যই আমি তোমার সাথে রাতে কথা বলতে চাই না। তুমি খুব ভালো করেই জানো আমি এই ধরনের কাজে অভ্যস্থ না। তবুও কেন তুমি বার বার জোর করো? আনিকার কথা শুনে রাফি কিছুটা রাগ দেখিয়ে বললো,
— আমার বন্ধুর গার্লফ্রেন্ড ওর সাথে প্রতি সপ্তাহে রুমডেট করে । আমি কি তোমকে কখনো বলেছি আমার সাথে রুম ডেট করো? শুধু একটা ন্যূড ভিডিও চেয়েছি এতেই তোমার এত আপত্তি? আনিকা এই মুহূর্তে কী করবে ঠিক বুঝতে পারছে না। কারণ আনিকা প্রচন্ডরকমভাবে ভালোবাসে রাফিকে। আনিকাকে চুপ থাকতে দেখে রাফি বললো,
— সত্যি করে বলো তো, তুমি কি আমায় বিশ্বাস করো না? আনিকা নিচু গলায় বললো,
– করি। খুব বিশ্বাস করি। রাফি এইবার বার বার রিকুয়েস্ট করতে করতে বললো,
–তাহলে প্লিজ একটু ভিডিও করে দাও। প্রমিস, আমি একবার দেখেই ডিলিট করে দিবো। রাফির এত রিকুয়েস্ট করা দেখে আনিকা বললো,
-ঠিক আছে দিবো। কিন্তু আমি তো এখন বেলকনিতে দাঁড়িয়ে কথা বলছি। রুমে লাইন অন করে ভিডিও করলে আম্মু জেগে যাবে। রাফি তখন বললো,
— তুমি তাহলে ওয়াসরুমে গিয়ে ভিডিও করে দাও। আনিকা অবাক হয়ে বললো,
– ওয়াশরুমে মোবাইল নিয়ে যাবো যদি কেউ দেখে ফেলে!
— দেখে ফেললে বলবে ভুলে নিয়ে চলে গিয়েছো। নয়তো কিছু একটা মিথ্যা বলে কাটিয়ে দিবে ২০ মিনিট পর রাফির ইনবক্সে আনিকার ৩মিনিটের একটা ভিডিও আসে। ভিডিও ওপেন করতেই আনিকার নগ্ন শরীরটা রাফির চোখের সামনে ভেসে উঠে। অনিকার স্পর্শ কাতর অঙ্গ গুলো দেখার পর রাফি ফোনটা রেখে যখন ওয়াশরুমের সামনে গেলো তখন দেখলো ওর ছোটবোন মোবাইল হাতে নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হচ্ছে। রাফিকে দেখে ওর বোন চমকে গেলো তারপর নিজ থেকেই আমতা আমতা করে বললো,
~” আসলে ভাইয়া আমি ভুল করে মোবাইল নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গিয়েছিলাম! রাফি ওর ছোট বোনকে কিছু না বলে চুপচাপ নিজের রুমে চলে আসলো। ওর কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমা হয়েছে। হঠাৎ সে শুনতে পেলো কেউ একজন ওর কানে কানে বলছে,  কি! ভয় লাগছে না কি? তুমি অন্য জনের বোনকে যেটা শিখিয়ে দিয়েছো তেমনি তোমার বোনকেও অন্যজন এই জিনিসটাই শিখিয়ে দিয়েছে। অন্যের বোনের নগ্ন শরীর দেখে তুমি যেমন তৃপ্তি পাচ্ছো; তেমনি অন্য কেউ তোমার বোনের নগ্ন শরীর দেখে ঠিক সেভাবেই তৃপ্তি নিচ্ছে। মনে রেখো, আমাদের জীবনটা একটা গোলাকার বৃত্তের মত। তুমি যেখান থেকে শুরু করবে ঠিক সেখানে এসেই শেষ হবে। এই মুহূর্তে মামুন আর লামিয়া দম্পতি ডাক্তার রেহানা ইসলামের সামনে বসে আছে। লামিয়া ১ বছর ধরে কনসিভ করার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। রিপোর্টের দিকে তাকাতেই ডাক্তার রেহানা ইসলাম ভ্রু কুঁচকে লামিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,
~ আপনি কি কোনো কারণে এবরশন করিয়েছিলেন? ডাক্তারের মুখ থেকে এমন কথা শুনে লামিয়া আর মামুন দুইজন দুইজনের দিকে তাকিয়ে রইলো। তারপর লামিয়া বললো,
– হ্যাঁ, ৪ বছর আগে করিয়েছিলাম। ডাক্তার রেহানা ইসলাম একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
~বলতে খারাপ লাগলেও এটাই সত্যি আপনি আর কখনো মা হতে পারবেন না। এবরশন করানোর সময় সমস্যা হয়েছিলো আর একারণেই এমনটা হয়েছে মধ্যরাতে জানালার গ্রিল ধরে লামিয়া বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে। এমন সময় মামুন লামিয়ার পিছনে দাঁড়িয়ে বললো,
— তোমার মনে আছে ৪ বছর আগের কথা? তুমি প্রেগন্যান্ট এই কথা শুনে আমি যতটা খুশি হয়েছিলাম, তুমি ঠিক ততটাই অখুশি হয়েছিলে। তোমার জন্য আমি আমার খুশিটা কারো সাথে শেয়ার করতে পারি নি। তুমি বলেছিলে এখন তুমি বাচ্চা চাও না কারণ এখন তোমার ক্যারিয়ার গড়ার সময়। অফিসে নিজের পজিশন উপরে তোলার সময়। এই মুহূর্তে বাচ্চা নিয়ে তুমি ঝামেলা বাড়াতে চাও না। আমি তোমায় অনেক বুঝিয়েছিলাম বাচ্চাটা নষ্ট না করার জন্য। তোমার হাত ধরে বলেছিলাম বাচ্চা আমি মানুষ করবো। এমন কি দরকার পড়লে নিজের চাকরি ছেড়ে দিবো। কিন্তু তুমি সেদিন আমার কোন কথা শুনো নি মামুনের কথা শুনে লামিয়া নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। মামুন তখন আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো,
— তোমার ভুল ছিলো তাই তুমি মা হতে পারবে না। কিন্তু আমার তো কোন ভুল ছিলো না তাহলে আমি কেন বাবা হওয়া থেকে বঞ্চিত হবো? লামিয়ার চুপ হওয়া দেখে মামুন যখন চলে যাবে তখন লামিয়া অস্পষ্ট স্বরে বললো,
– এখন আমি কী করবো? মামুন অন্য দিকে তাকিয়ে বললো,
— তুমি চাইলে আমার সাথে থাকতে পারো। আর যদি মনে হয় তুমি সতীনের সংসার করতে পারবে না, তাহলে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দিবো। তুমি সাইন করে দিও। এই কথা বলে মামুন চলে গেলো। আর কেউ একজন লামিয়ার কানে কানে বললো,” কি! কান্না করছো না কি? আজ তোমার ক্যারিয়ার উজ্জ্বল। চাকরি ক্ষেত্রে তোমার পজিশন অনেক উপরে। কিন্তু এত কিছুর পরেও তুমি তৃপ্তি পাচ্ছো না!
কারণ নারীর স্বার্থকতা হলো মাতৃত্বে যা তুমি নিজ হাতে নষ্ট করেছো। মনে রেখো, পৃথিবী একটা নিয়মে চলে আর তুমি যদি সেই নিয়ম ভেঙে ফেলো; এর শাস্তি তোমাকে একাই ভোগ করতে হবে। অতি আপন জনেরাও এর ভাগ নিবে না আরিফ আহমেদ নাক দিয়ে গড়িয়ে পড়া রক্ত রুমাল দিয়ে মুছতে মুছতে একটা চায়ের দোকানের সামনে বসলেন। দোকানদার উনার ৩বছরের ছোট বাচ্চাকে কোলে বসিয়ে পড়াচ্ছে; অ তে অজগর, আ তে আম। আরিফ আহমেদ ভাবছেন, এত কষ্ট করে ছেলেকে মানুষ করে যখন সেই ছেলের হাতে রক্তাত্ত হতে হয় তখন সেই কষ্টটা মেনে নেওয়া যায় না। নিজের সবকিছু এমনকি নিজের পেনশনের টাকাটাও ছেলের হাতে তুলে দিলেন অথচ সেই ছেলে আজ উনাকে রক্তাত্ত করে বের করে দিলো। দোকানদারের ডাকে আরিফ আহমেদ বাস্তবে ফিরে এলেন। দোকানদার বললো,
-স্যার, আপনার কিছু লাগবে? তা না হলে আমি দোকানটা বন্ধ করতাম আরিফ আহমেদ বললো,
— এখন তো সকাল ১১ট বাজে। এখনি দোকান বন্ধ করবে? দোকানদার আরিফ সাহেবের দিকে তাকিয়ে বললো,
– স্যার, বাবাকে নিয়ে একটু ডাক্তারের কাছে যাবো। আসলে কাল রাতে ঘুমানোর সময় বাবাকে কাশতে শুনেছি। অভাব অনটনের সংসার দেখে বাবা অসুখের কথা আমায় বলে না। কিন্তু সন্তান হিসাবে আমার তো একটা দায়িত্ব আছে না কি?
আরিফ সাহেব এখনো বসে আছে আর দোকানদার দোকান বন্ধ করে চলে গেলো। হঠাৎ কেউ একজন আরিফ সাহেবের কানে কানে বললো, কি! কষ্ট হচ্ছে না কি? মনে পড়ে আগের কথা? অসুস্থতার জন্য তোমার বাবা বিছানায় বাথরুম করে দিয়েছিলো আর তুমি তখন তোমার বাবাকে খাট থেকে ফেলে দিয়েছিলে। তোমার বাবার আর খাটে জায়গা হয় নি, তেমনি আজ তোমার বাড়িতে তোমারই জায়গা হয় নি। মনে রেখো, মানুষ ভাবে প্রকৃতির নিয়ম অনেক রহস্যময় কিন্তু এটা ভুল কথা। প্রকৃতির নিয়ম অনেক সহজ। তোমার পরবর্তী জীবন কেমন হবে সেটা নির্ভর করবে আজ তোমার কর্ম কেমন তার উপর।
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত