জীবন সুন্দর

জীবন সুন্দর
মাথায় এক বাটি তেল দেওয়া একটা মেয়েকে সেদিন প্রপোজ করেছিলাম।মেয়েটার নাম রূপা।দেখতে কালো একেবারে যে কুচকুচে কালো তা না।কুচকুচে কালোর চেয়ে একটু ফর্সা।কাপড় পড়েছে ঢিলেঢালা।আমি যখন প্রেম নিবেদনের জন্য রূপার সামনে একটা গোলাপ নিয়ে হাজির হয়েছি আমার দিকে ঢেপঢেপ করে তাকিয়ে আছে।আর বার বার অপ্রস্তুত ভাবে ওড়নাটা ঠিক করছে।সেদিন আমি ফুলটা হাতে ধরিয়ে দেওয়ার আগেই সে দ্রুত গতিতে চলে গেল।ফুলটা আর দেওয়া হলো না। পরেরদিন একই সময়ে একই পথে আবার দাঁড়িয়েছি।হাতে একটা তরতাজা গোলাপ
“দাঁড়াও”
“পথ ছাড়ুন আমার”
“আগে ফুলটা নাও”
“না”
“সমস্যা কোথায়?”কি হলো চুপ হয়ে আছো কেন?জবাব দাও!”
রূপা অনেকটা ইতস্ততা নিয়ে বলল “আপনার মত এত সুন্দর একটা ছেলে আমাকে ভালোবাসতে যাবে কেন?নিশ্চয় গরমিল আছে কোথাও” আমি অন্য পাশে মুখ ফিরিয়ে মুচকি হেসে আবার রূপার দিকে তাকিয়ে একটা ধমক দিয়ে বললাম “এক্ষুনি নাও।না হলে তোমাকে উঠিয়ে নিয়ে যাব” ধমকে কাজ হয়েছে।ফুলটা হাতে নিয়ে কাপতে কাপতে চলে গেল।প্রপোজ করার আগে অনেকদিন ধরে রূপাকে অব্জার্ভ করছিলাম মেয়েটা ভীষণ ভীতু অল্পতে ভয় পায় আর একটু আগে আমি সেটার সুযোগ নিলাম! রূপা দেখতে বড্ড সেকেলে।কথা বলার ধরণ,হাটা-চলা,সহজে ছেলেদের সাথে না মিশা সব মিলিয়ে একটু আলাদা। যে রাস্তায় রূপার জন্য আমি অপেক্ষা করি সেই রাস্তা দিয়ে রূপা টিউশনে যায়।যেদিন ফুল দিয়েছি তার পরেরদিন রূপার আর কোনো দেখা পাইনি।অকেক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলাম।মহারাণীর আসার কোনো নাম নেই।ভাবলাম হয়তো আমার জন্যই যাচ্ছে না।
পরেরদিন আবার সেই একই অপেক্ষা।কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর মহারাণীর দেখা পেলাম।রূপাকে দেখে ভিতরটা কেমন যেনো মোচড় দিয়ে উঠলো।হৃদস্পন্দনটাও বেড়ে গেল।আমাকে দেখে রূপা একটা মুচকি হাসি দিল।রূপার মুচকি হাসি দেখেই আমার ভিতরটা আরো মোচড় দিয়ে উঠলো।বুঝলাম প্রেমের প্রস্তাবে সে রাজি।মুচকি হাসিটা ছিল গ্রিন সিগনাল! রূপার সাথে পায়ে পা মিলিয়ে হাটতে হাটতে জিজ্ঞেস করলাম
“কাল দেখলাম না কেন?ব্যস্ত ছিলে?”
“হুম”
“কি নিয়ে?”
“নিজেকে নিয়ে!”
“মানে?”
“আপনি কি কিছুই দেখতে পাচ্ছেন না?” খেয়াল করলাম রূপার চুলগুলো বাতাসে উড়ছে।
“ও বুঝেছি আজ তেল দাওনি তাই তো?”
“হু”
“কেন দাওনি?”
“ছেলেরা মেয়েদের উড়ন্ত চুল পছন্দ করে তাই” আমি একটু হেসে বললাম “কে বলল?” “আমার বান্ধবী” পরেরদিন খেয়াল করলাম রূপার পোশাকে পরিবর্তন এসেছে।আস্তে আস্তে কথাবার্তায় ও আধুনিকতার ছোয়া।দিন দিন রূপার পরিবর্তন আমি উপলব্ধি করছি। রূপাকে আগের মত তেল দিতে দেখি না।শালীনতার ভিতরে থাকলেও কিছুটা আধুনিক জামা কাপড় পড়ছে।সব কিছু কেমন যেনো উলটপালট মনে হচ্ছে। বেশ কিছুদিন পর রূপার বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠালাম আমার ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড আমার চাকরি আমার সব কিছু দেখে রূপার পরিবার আমাকে মেনে নিল।বিয়েটাও হলো।
বিয়ের দিন রাতে রূপা জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আছে।ভরা পূর্ণিমা।জানালার গ্রিল ছোয়ে পূর্নিমার আলো রূপার গায়ে আচড় কাটছে।আবছা আলোয় রূপাকে বউয়ের সাজে কি যে মায়াবতী লাগছে ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না আমি! আমাকে দেখতে পেয়ে রূপা বলল “এমন বিশেষ দিনে তুমি আমার কাছে কি চাও?” “আমার পুরনো রূপাকে” রূপা অনেকটা অবাক হয়ে বলল “মানে?” “মানে অনেক সহজ!সেই এক বাটি তেল মাথায় দেওয়া মেয়েটাকে আমার চাই,সেই ঢিলেঢালা কাপড় পড়া মেয়াটাকে আমার চাই,কথাবার্তায় আর চাল চলনে বড্ড সেকেলে মেয়েটাকেই আমার চাই।অবশেষে আমি আমার পুরনো রূপাকে ফিরে পেতে চাই।”
রূপার চোখে পানি টলমল করছে।আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রূপা বলল “এতটা পরিবর্তন আমি তোমার জন্য হয়েছি।আমি ভেবেছি আমি সেকেলে হয়ে থাকলে তুমি অন্য কারো হয়ে যাবে।আমি ভেবেছি তুমি আমাকে আর ভালোবাসবে না।ক্ষমা করো আমায়” রূপাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললা ” সব পুরুষ মানুষ এক হয় না।সবাই রূপের জন্য ভালোবাসে না।কোনো কোনো পুরুষ মানুষ কালো রঙের মাঝে হালকা ফর্সা রঙটাকে ভালবেসে ফেলে,কোনো কোনো পুরুষ মানুষ ঢেপঢেপিয়ে তাকিয়ে থাকার মায়ায় পড়ে যায়,কোনো কোনো পুরুষ মানুষ হঠাৎ দেখায় মুচকি হাসিটাই আজীবন সুখে থাকার একমাত্র কারণ বানিয়ে নেয়।”
বিয়ের ৪৫ বছর পর ও আমি রূপার মাথায় তেল দিয়ে দিই।রূপা যখন ঢেপঢেপ করে তাকিয়ে থাকে তখন আমি রূপার প্রেমে পড়ি।মেয়েটার নাম হয়তো রূপা কিন্তু সে আমার জন্য হীরার টুকরো ছাড়া আর কিছুই না।
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত