বিয়ের কিছুদিন পর জানতে পারলাম আমার বউ এর বিড়াল অনেক পছন্দ। সে একজন বিড়ালপ্রেমী! সে অনেকদিন ধরেই আবদার করছে যেন তাকে একটা কিউট বিড়াল গিফট করি। আমি বারবার নানান বাহানা করে তার আবদার এড়িয়ে যাই। এভাবে চলতে চলতে একদিন সে বেশ ক্ষিপ্ত হয়ে আমার সামনে এসে বললো, ” বিয়ের পর জামাইরা বউকে কত্ত কিছু গিফট করে। আর তুমি আমাকে একটা বিড়াল গিফট করতে পারবা না? তুমি কেমন জামাই? তুমি আমাকে একটুও ভালোবাসো নাহ” আমি একটু ভয় পেলাম ওর অগ্নিমূর্তি দেখে। কিন্তু বাইরে সেটা প্রকাশ করলাম না। বেশ ভাব নিয়ে বললাম, “আশ্চর্য! বিড়াল আমি কোথায় পাব?! ” “কোথায় পাবা জানি না! আমাকে একটা বিড়াল এনে দিতেই হবে তোমাকে” আমি পড়লাম ভীষণ বিপদে। বিড়াল এখন আমি কোথায় পাই?
অবশেষে উপায় পাওয়া গেল একটা। ফেসবুকে ‘Cat Society of Bangladesh’ নামে একটা গ্রুপ আছে। সেখানে পোস্ট ঘাটতে ঘাটতে একটা পোস্টে চোখ আটকে গেল। একজন তার বিড়াল এডপ্ট করার জন্য দিতে চায়। আমি পোস্টের ডিটেইলস পড়লাম। সেখান থেকে কন্ট্যাক্ট নাম্বার নিয়ে উনার সাথে যোগাযোগ করলাম। অবশেষে পাওয়া গেল সেই কাংখিত বিড়াল! মৌমিতার জন্মদিনে আমি ওকে বিড়াল গিফট করলাম। বিড়াল পেয়ে মেয়েটা ভীষণ খুশি। খুশির চোটে সে আমার জন্য আমার সব প্রিয় আইটেমগুলো রান্না করলো। অনেক দিন পর একদম তৃপ্তির ঢেকুর তুলে খেলাম। আমি ভাবলাম বিড়াল বিষয়ক ঝামেলার হয়ত পরিসমাপ্তি ঘটেছে। এখন শুধু শান্তি আর শান্তি। কিন্তু না! সেই রাতেই মেয়েটা আবারও বিড়াল বিষয়ক ঝামেলা নিয়ে আসলো,
“আচ্ছা আমাদের বাবুটার নাম কী রাখা যায়?”
“আমাদের বাবু মানে? বাবু কোত্থেকে আসলো?!”
“আরে গাধা আমি আমাদের বিড়ালটার কথা বলছি”
“ওহ আচ্ছা। তাই বলো! বিড়াল তো তোমার। তুমিই ঠিক করো নাম। “
“আমার বিড়াল বলতেসো ক্যান? এটা আমাদের দুজনেরই। তাই দুজন মিলেই নাম ঠিক করব! ” তারপর আমরা সারারাত ধরে শখানেক নাম ঠিক করলাম। একটা নাম আমার ভালো লাগে তো ওর ভালো লাগে না, আবার কোনটা ওর ভালো লাগে তো আমার ভালো লাগে না। এভাবে চলতে চলতে ভোররাতের দিকে দুজনের সর্বসম্মতিক্রমে বিড়ালের নাম রাখা হলো ‘বুচি’। বিড়ালের নাকটা একটু বোচা তাই এই নাম রাখা হলো। পরের দিন থেকে বুচিকে নিয়ে মৌমিতা একদম ব্যস্ত হয়ে পড়লো। বুচির জন্য আলাদা করে ছোট্ট একটা ক্যাট হাউজ বানানো হলো। বুচিকে পটি ট্রেনিং দেয়া হলো। কয়েকদিনের মধ্যে গ্রাম থেকে আসা চাচাতো বোন টাইপ বিড়াল হয়ে গেল শহরের স্মার্ট বিড়াল। যাইহোক, সবকিছু মোটামুটি ভালোই চলছিল। এর মধ্যে একদিন অফিস থেকে বাসায় ফিরে ঘরে কাপড় চেঞ্জ করছি। পাশের ঘর থেকে শুনতে পেলাম মৌমিতা গজগজ করে কী যেন বলছে।
“পাশের বাসার ওর সাথে তোমার এত কী? টাংকি মারা শুরু করেছ তুমি? এখন তো আর আমার সাথে টাইম পাস করতে তোমার ভালো লাগে না আমার আত্মা শুকিয়ে গেল। গত পরশুদিন সিড়ি দিয়ে নামার সময় পাশের বাসার জুলেখা ভাবীর সাথে একটু হেসে হেসে কথা বলেছিলাম। সেটা কি মৌমিতা দেখে ফেলেছে? সামান্য তো একটু কথাই বলেছি। এটা তো তেমন মারাত্মক কোন অপরাধ না। তাতেই মেয়েটা এমন তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো কেন? ঝগড়া মোটামুটি নিশ্চিত জেনে আমি আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য কিছু যুক্তি দাঁড় করালাম। তারপর ভীরু পায়ে পাশের ঘরে গেলাম। গিয়ে দেখি মৌমিতা বুচির সাথে কথা বলছে। আমি বিভ্রান্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
“কী হয়েছে?”
“কী আর হবে? আমাদের বুচি এখন আর সেই ভদ্র মেয়ে নাই। সে এখন ভীষণ দুষ্ট হয়ে গেছে। পাশের বাসার বিড়ালের সাথে খালি টাংকি মারে। আমাকে আর সময় দেয় না আমি হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। মৌমিতা তাহলে এতক্ষণ বুচিকে শাঁসাচ্ছিল। মেয়েটা যে কখন কী বলে কোন ঠিক নাই। বিড়ালটাকে নিয়ে পাগলী হয়ে গেছে একদম! আমি বললাম, “এভাবে বলছ ক্যানো? বুচি তো এখন বড় হয়েছে। ওর এখন প্রেম করার বয়স। ওকে আর কতদিন ছোট বাচ্চার মত আগলে রাখবা? ” “তাই বলে যার তার সাথে প্রেম করবে নাকি? আমার মেয়ে বলে কথা। ওর জন্য আমি একটা হ্যান্ডসাম বিড়াল খুঁজে বের করব। পাশের বাসার বিড়ালটাকে দেখলেই আমার গুন্ডা গুন্ডা লাগে”
“মেয়েরা একটু গুন্ডা টাইপ ছেলেদেরই পছন্দ করে। বুচির কী দোষ? “
” তাহলে তোমাকে আমার পছন্দ হলো কী করে? তুমি তো গুন্ডা টাইপ না! “
আমি আর কী বলতাম? ওর কথা শুনে মোটামুটি গলে গেলাম। মেয়েটার সাথে কখনোই আমি যুক্তিতে জিততে পারি না। ও জানে আমাকে কীভাবে হারাতে হবে! এরপরে অনেকদিন কেটে গেছে। সবকিছু ভালোই চলছিল। এর মধ্যে একদিন হঠাৎ মৌমিতা বেশ খুশিখুশি চেহারা নিয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়ালো, “একটা ভালো খবর আছে। গেইস করো কী?” “গেইস করতে পারব না। আমার অনুমান শক্তি খুবই খারাপ” “আমাদের বাসায় নতুন মেহমান আসতে যাচ্ছে!!!” মৌমিতার কথা শুনে আমার বুকটা ধ্বক করে উঠলো। আমি বললাম, “ক্যামনে কী? আমরা না ঠিক করেছিলাম এক বছর এসব নিয়ে ভাববো না! ” “আরে আশ্চর্য! কী ভাবসো তুমি? আমি আমাদের বুচির কথা বলছি। দেখছো ওর পেটটা কেমন ফোলা ফোলা হয়ে গেছে। আই থিংক শী ইজ প্রেগন্যান্ট! “
“ওহ আচ্ছা! তাই বলো। এটা তো খুবই ভালো একটা খবর। ” “হ্যা কনগ্রাচুলেশন্স। তুমি নানু হতে যাচ্ছ। ” মৌমিতার কথা শুনে নিজেকে ষাট বছরের বৃদ্ধ মনে হতে লাগলো। যাই হোক, কী আর করার। তবে বিড়ালের বেবী হবে শুনে মনটা অদ্ভুত রকমের ভালো হয়ে গেল। আমি কিছুটা আশ্চর্য হলাম। আমি তো বিড়াল তেমন একটা পছন্দ করি না! তাহলে হুট করে এত খুশি হবার কী আছে? মৌমিতার সাথে থেকে থেকে আমিও কি তাহলে বিড়ালপ্রেমী হয়ে উঠছি?
অবশেষে সেই কাংখিত দিন এলো। আমি নানু হয়ে গেলাম। বুচির তিনটা কিউট কিউট বাচ্চা হলো। কী মায়াবি তাদের চেহারা! দেখলেই আদর করে দিতে ইচ্ছে করে। মৌমিতার মতে তাদের চেহারা নাকি একদম নানুর মত হয়েছে। আমি হাসব না কাঁদব বুঝে পাই না। শুধু বুঝি, আমার ফ্যামিলিটা অদ্ভুত সুন্দর একটা ফ্যামিলি। একটু বেশিই কিউট ফ্যামিলি!
গল্পের বিষয়:
গল্প