অকৃ দ্যা সিরিয়াল কিলার

অকৃ দ্যা সিরিয়াল কিলার
-একটি উনিশ বছরের মেয়েকে ধর্ষন করার চেষ্টা করছে,তুই কিছুই বলবি না?
-আমি কি বলবো?
-বাধা দে যা..
-আমার দ্বারা সম্ভব না।তাতে আমার ক্ষতি হতে পারে।কেন পায়ে পাড়া দিয়ে সমস্যা নিজ কাধে নিয়ে আসবো?
-যা না!কিছু কর,মেয়েটার বুকের কাপড় ছিড়ে ফেলছে ওরা।
-নয়জন লোকের সাথে আমি কি করবো?আমি তো মার খাবো ফ্রি!
-লোকগুলো মেয়েটার সামনে আপত্তিকর অবস্থা করে ফেলছে।নয়জন পুরুষ আর একজন কিশোরী।এরচেয়ে মেয়েটার মৃত্যুই শ্রেয়।
-মরে যাক,মরলেই শান্তি পাবে!
-তবুও তোর তো একটা দ্বায়িত্ব রয়েছে?
-দ্বায়িত্ব! কিসের দ্বায়িত্ব?এই দ্বায়িত্ব কোথায় গেছিল সেদিন।দুজন লোক আমার বোনকে ধর্ষন করছে,আর পুরো দুনিয়া হা করে দেখেছে।কেউ তো সেদিন কিছু বলেনি।বাবা গেল মামলা করতে,পুলিশ মামলা নিল না!বোন আমার লজ্জায় গলায় ফাসি দিলো।পুলিশ তখন আসছে ময়না তদন্ত করতে!হায় রে!বাবা বোনের শোকে আর সম্মানের কারণে সেও বোনের পথ ধরল।মাও চলে গেল তাদের সাথে। এলাকার সেই লুইচ্চা নেতারা আমাকে বলে,”খোকা তুমি এত বড় বাড়ি দিয়া কি করবা?” ৫০০টাকা ধরাইয়া দিয়া বাড়ি থেকে আমাকে বের করে দিল!কি দুনিয়া!সেদিন কোন কারো দ্বায়িত্ব ছিল না!
-তুই মেয়েটা কে বাঁচা।তোর মার দোহাই লাগে “ব্রেকিং নিউজ,গতকাল মিরপুরে এক বাসে নয়জনের উলঙ্গ লাশ পাওয়া গেছে।কে বা কারা খুন করেছে,জানা যায় নি।তথ্যসুত্র বলছে,লোকগুলো ঐ বাস পরিবহনের কর্মচারী। আর তাদেরকে একটি ছুরি দিয়ে হত্যা করা হয়।পুলিশ এই নিয়ে তদন্ত করছে।বাকি খবর জানতে আমাদের পাশেই থাকুন।” টিভিটা বন্ধ করে দিল নন্দিনী।তিক্ত লাগছে তার কাছে এই দুনিয়া। ঠকঠক করে কড়া নাড়লো দরজায় কেউ।নন্দিনী উঠে যেয়ে দরজা খুলল,
-কি চাই?
-আমরা মিরপুর থানা থেকে এসেছি।আমি ওসি…
-তা দেখতেই পাচ্ছি!কি করতে হবে আমাকে?
পুলিশের সাথে এভাবে কথা বলা,অবাক হচ্ছে সিনিয়র ওসি শহিদ উদ্দিন।নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,
-গতকাল রাতে বাসে খুনের ঘটনা নিশ্চয়ই জানেন আপনি?কেননা আপনার একমাত্র ছবি সেখানকার সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে?
-হুম,এই যে নেন প্রুফ।গতকাল তারা আমাকে ধর্ষন করতে চেয়েছিল,তাই তারা খুন হয়েছে।
-খুন কি আপনি করেছেন?
-আমাকে দেখে কি মনে হয়?
-তাহলে কে খুন করেছিল?আর কি হয়েছিল সেই রাতে?
– শুনুন তাহলে,”ফ্রেন্ডের বাসা থেকে প্যাক্টিকেল শেষ করতে রাত এগারটা বেজে যায়।রাস্তাঘাট ফাকা হয়ে গেছে।
কোন বাস নেই।অবশেষে একটি বাস পাওয়া যায়।উঠে পড়ি তাতে।বাসে যারা মারা গেছে তারা এবং আরো একজন ছিল।আমি বরাবরের মতো সামনে মহিলা সিটে বসি।কিছুক্ষণ যাওয়ার পর এক লোক আমাকে বলে,খুকি কোথায় যাচ্ছ?তোমার ওড়না তো অনেক সুন্দর! এই বলে আমার ওড়না টান দেয়।শুরু হয় ধস্তাধস্তি,বাকি লোকগুলো উঠে আসে। আমার জামা ছিড়ে ফেলে, তারাও আপত্তিকর অবস্থায় চলে আসে।আমার মুখ বেধে রেখেছিল,তাই চিৎকার করতে পারছিলাম।
কিন্তু সে হঠাৎ উঠে আসে।আমি মনে করেছিলাম, সেও তাদের দলে।না,সে তার পকেট থেকে ছুরি বার করে।প্রথমে একজনের গলায়,অপরজনের পেটে,তারপর বুকে।এভাবেই ধর্ষনকারীরা কিছু বুঝে উঠার আগে সে শান্ত ভাবেই তাদের খুন করে,আর কি যেন বিড়বিড় করে বলছিল। ছুরিটা ফেলে দেয়। তার পরনের শার্ট খুলে আমাকে দেয় এবং বলে,
-বাসায় চলে যাও।আর কেউ কিছু করবে না।বাসায় যেয়ে কুসুম গরম পানি দিয়ে আধ ঘন্টা সময় নিয়ে গোসল করবে।আর তোমার জামাকাপড় খুলে একটি পলিথিনে রাখবে,কাল পুলিশকে দিবে।সুইসাইড করার কথা ভাববে না।যাও..” আমি চলে আসি বাসায়। স্টোরি শুনে অবাক হয়ে যায় ওসি শহিদ উদ্দিন। বলে,
-নাম কি ছেলেটার?জানো কিছু? নন্দিনী শান্ত ভাবেই বলে,
-হুম জিজ্ঞাসা করেছিলাম বলেছে অকৃ।
-অকৃ!ভেরি ইন্টারেস্টিং ন্যাম।বয়স কি রকম হবে?
-আঠার থেকে কুড়ি।
-হুম গুড।
-আপনার নাম কি?আপনাকেও থানায় যেতে হবে।এই খুনের সাথে আপনিও জড়িত আছেন।
-তা জানি।নাম আমার জেনে যান।নন্দিনী।ছেলেটা আমাকে আরো কিছু বলে গেছে আপনাদের বলতে।
-কি বলেছে?
-বলেছে,”পুলিশকে বলবেন আপনার নাম মিডিয়ায় এবং আপনাকে এই মামলা যুক্ত না করে।শুধু আমার নাম বলবেন!”
-আচ্ছা আসি আজ। ওসি শহিদ উদ্দিন আর তার সহকারী বের হয়ে আসে নন্দিনীর বাসা থেকে।সহকারী শামসুল বলে,
-স্যার অকৃর কথায় কি মেয়েটাকে ছেড়ে দিবেন?
-তুমি কি চাও পঙ্গু হয়ে ঘরে বসে থাকতে বা এই সুন্দর চেহারা পুড়ে দিতে?
-নো স্যার।তাহলে ওই মেয়ের নাম মুখে নিবে না।অকৃ ইজ ড্যাঞ্জারাস ম্যান।
-তাই বলে কি তাকে ধরা হবে না?
-তাকে কেউ দেখেনি।কে সে কেউ জানে না।তবে অকৃ খুন করেছে সবাই জানে।এই নিয়ে তার হলো ৫৭তম খুন।এটা পুলিশের হিসাব।বাকিটা ওপরওয়ালায় জানে।
-এরকম খুনিকে তো আমরা ছেড়ে দিতে পারি না।
-নতুন এসেছ চেপে যাও।বহুত রঙ আছে তাতে।শুনেছি আমাদের এক সিনিয়র তাকে নিয়ে একটা আর্টিকেল লিখছেন।তিনি অকৃকে দেখেছেন,তাকে ধরে রাখতে পারেন নি।কোন প্রমাণ ছিল না তার হাতে।তাহলে তো আমরা রাস্তার বিড়াল..
-কে এই অকৃ? কি তার পরিচয়?
-অকৃ! হি ইজ আ সিরিয়াল কিলার!
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত