বাসর রাতে আমার বর সৌরভ আমাকে জিঙ্গাসা করেছিলো তোমার প্রিয় খাবার কী আতিকা? আমি বলেছিলাম গরুর মাংশ।আর চিংড়ি মাছ। তারপর সৌজন্য বোধে আমিও তাকে জিঙ্গাসা করেছিলাম আপনার প্রিয় খাবার কী? সে বলেছিলো আমি সব রকম খাবারি খাই।সবি আমার প্রিয়।আলাদা ভাবে আমার কোনো পছন্দ নেই। কথাটা শুনে মনে মনে খুবি খুশি হয়েছিলাম। ভেবেছিলাম যা রান্না করবো তাই খাবে।কোনো অভিযোগ করবে না।কী মজা। পরিবার থেকে দেখাশোনা করে বিয়ে হয়েছে আমাদের। মাশাআল্লাহ্ ১বছর হয়ে গেছে বিয়ের। সে কখনো আমার উপরে রাগ করা তো দুর উচুঁ গলাই কথা পর্যন্ত কথা বলেনি।মাঝে মাঝে ভাবি ছেলে মানুষ এমন শান্ত স্বভাবের কেমন করে হয়।এত ভালো মানুষ আমি জীবনে দেখিনি।ওকে পেয়ে যেনো জীবন আমার ধন্য।
পাশের বাড়ির ভাবিরা আমাকে দেখে আর বলে খুব ভাগ্য করে এমন একটা বর পেয়েছো আতিকা। আমি ভীষন বদ রাগি। একটু থেকে একটু কিছু হলেই সৌরভের উপরে চেচামেচি করি কিন্ত ও কখনো একটা টু শব্দ ও করেনা। যখনি আমার আর সৌরভের ঝগড়া হয় সৌরভ তখনি বাজারে গিয়ে ব্যাগ ভর্তি করে বাজার করে আনে।সব আমার পছন্দের খাবার সাথে থাকে ২/৩ কেজি চুনো মাছ।আগে এই মাছ কখনো কেনেনি ও।গত দুই তিন মাস ধরে কিনছে।বাসায় ফ্রিজো নেই তাই সেই ২/৩ কেজি চুনো মাছ কাটতে আমার ২/৩ ঘন্টা সময় লাগে।সেই মাছ কাটতে কাটতে আমার মাজা পিঠ বেথাই টন টন করে।তবুও কাটি জানি ও খেতে ভালোবাসে সে জন্য।আমি রান্না করা শেষে ও সেটা খেয়ে আবার কার সাথে যেনো হেসে হেসে ফোনে কথা বলে। একদিন বাধ্য হয়ে ওকে জিঙ্গাসা করেই ফেললাম,
-আচ্ছা সৌরভ তুমি তো বলো সব খাবারি তোমার প্রিয়। আলাদা ভাবে তোমার কোনো খাবার পছন্দ নেই।তাহলে এই চুনো মাছ আনো কেনো এত এত?আমারা সংসারে মাত্র দুজন।তুমি আর আমি।আর তুমি তো জানো আমি এই চুনো মাছ খাই না।তুমিও তো দেখি অল্প অল্প খাও তাহলে এত এত কেনো কিনো?
-আরে চুনো মাছ খেলে আমার রাগ কমে তাই খাই।রাগ সব ঝাড়ি চুনো মাছের উপরে।জোরে জোরে চিবিয়ে চিবিয়ে(সৌরভ)।
-কি বলছো সত্যি?
-হ্যাঁ।তোমাকে তো বড্ড ভালোবাসি তাই তোমার উপরে তো আর রাগ দেখাতে পারি না তাই চুনোমাছ চিবিয়ে রাগ কমাই।
আমি সৌরভের কথা শুনে আশ্চর্য হয়ে গেলাম। কিছুদিন পর সৌরভের সাথে আবার তুমুল আকারে ঝগড়া লাগলো আমার।ঝড়ার একটা সময় আমি ড্রেসিংটেবিলের আয়নাটা ভেঙে ফেলি।আমি ওকে যা তা বলছি আর ও চুপ করে বসে আছে।ঝগড়া শেষে ও উঠে চলে গেলো।আমিও চুপ করে গেলাম একা একা আর কতক্ষন ঝগড়া করবো।আর কার সাথেই বা করবো। ঝগড়া শেষে দেখলাম সৌরভ বাজারের ব্যাগটা নিয়ে বাজারে যাবার জন্য রেডি হচ্ছে।
-কোথাই যাচ্ছ?
-বাজারে।
-বাজার লাগবে না। সব বাজার আছে বাড়িতে।২ দিন আগে বাজার করেছো ভুলে গেছো?
-চুনো মাছ আছে?(সৌরভ)
-না।
-আনতে হবে না চুনো মাছ আজ।আমি বুঝিনা ঝগড়া লাগলেই তুমি বাজারে কেনো দৌড়াও।
আর চুনো মাছি বা কেনো কিনে আনো। আমি বারন করা শর্তেও সৌরভ গটগট করে বাজারের ব্যাগ বিয়ে বাইরে চলে গেলো বাজার করতে। পাক্কা ৩০ মিনিট পর গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে সৌরভ ৩ কেজি চুনো মাছ নিয়ে হাজির।তারপর বাজারের ব্যাগটা আমার হাতে দিয়ে বললো’ সোনা এগুলো কেটে সুন্দর করে রান্না করো প্লিজ।খুব খেতে ইচ্ছা করছে।
-এত কেনো?এত আমি কীভাবে কাটবো?
-প্লিজ সোনা?আমার একটা বন্ধু আসবে ও খুব ভালোবাসে চুনোমাছ।প্লিজ প্লিজ।
-কী আর করা আমিও বাধ্য হয়ে রাজি হয়ে গেলাম।সে আবদার করেছে কি করে না বলি।
মাছ কেটে রান্না করতে করতে ৩ঘন্টা লেগে গেলো।তারপর সৌরভ কে খেতে দিয়ে আমি গোছল করতে গেলাম।বের হয়ে দেখি সৌরভ নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। আমি ওর পাশে গিয়ে বসলাম একদম বাচ্চাদের মত লাগছে ওকে।একদম আলাভোলা বরটা আমার।ওর মাথাই হাত বোলাতে যাবো ঠিক তখনি ওর, ফোনটা বেজে উঠলো। সৌরভ ঘুমাচ্ছে তাই আমি ওকে আর ডাকলাম না।কলটা আমি রিসিভ করলাম।আমি রিসিভ করে কিছু বলার আগেই ফোনের ওপাশ থেকে একজন বলে উঠলো।
‘কিরে সৌরভ ঐ দিকের আবহাওয়া কেমন?’ মাছ কেটেছিলো তো সব?এবার বুঝবে কত ধাবে কত চাল,কী এবার বল আমার আইডিয়াটা কেমন ছিলো? আমারটারেও আমি এমন ভাবেই টাইট দেই।হা হা হা।গায়ে হাত তোলা আর ঝগড়া করা তো মূর্খদের কাজ।আমরা তো আর ওদের মতো মূর্খ না তাই না। এমন কাজ করবো যাতে সাপো মরে লাঠিও না ভাঙে।তুই যে তোর বৌয়ের উপরে এভাবে রাগ মেটালি সেটা তোর বৌ বুঝতেও পারলো না আবার তুই বদলাও নিলি আবার তুই ওর কাছে ভালোও থাকলি।কী বুদ্ধি টাই না দিলাম তোকে বল এবার। কথাগুলো শুনে আমার মাথাই আগুন ধরে গেলো।
-কে আপনি?(আমি)।
-আপনি কে?
-আপনি এতক্ষন যাকে টাইট দেওয়ার কথা বলছিলেন আমি সেই মানুষটি।
-কী?
-জ্বী।
-ইয়ে মানে ভাবি।আসলে।
অবশেষে ফোনটা কোটে দিলো লোকটা।এটাই হবার ছিলো।ও এত এত মাছ এনেছে আমি কখনো রাগ করিনি শুধু ভেবেছি ও খেতে ভালোবাসে একটু না হয় কষ্ট হলো রান্না করতে তাতে কি।খাবে তো ঐ।কিন্ত এটা ভেবে মাথাই আগুন ধরে গেলো যে মাছ কিনতো আমাকে টাইট দেবার জন্য।
ফোনটা রাগের মাথাই দিলাম একটা আছাড়।তাকিয়ে দেখি সৌরভ হা করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।মনে হচ্ছে ও সবটা শুনেছে।বুঝতে পেরেছে। ও এক দৌড়ে বাসা থেকে বের হয়ে গেলো।আজ দুদিন হলো ওর কোনো খবর নেই। আবশেষে খবর নিয়ে জানলাম ও আমারি বাপের বাড়ি বসে আছে গত দুদিন ধরে। মাকে কল দিয়ে বললাম’মা ওকে ধরে রাখো আমি আসছি। আমি ২ কেজি চুনো মাছে এক কেজি ঝাল দিয়ে রান্না করে নিয়ে গেলাম সৌরভের জন্য। সৌরভ আমাকে দেখে বললো।সরি আতিকা।ভুল হয়ে গেছে আমার।
-না না সোনা রাগ করবো কেনো।তুমি চুনো মাছ খেতে ভালোবাসো। আমি রান্না করবো না তো কে রান্না কবরে।এই দেখো তোমার জন্য আমি চুনো মাছ রান্না করে এনেছি।আসো আমি নিজের হাতে খাইয়ে দেবো আজ তোমাকে।এসো সোনা।
-না আমি আর খাবো না চুনো মাছ।(সৌরভ)।
-কেনো সোনা আমি এত কষ্ট করে রান্না করলাম আর তুমি খাবেনা। কথাটা বলে আমি অন্যদিকে মুখ করে দাড়িয়ে রইলাম।
-আচ্ছা দাও খাইয়ে।(সৌরভ)
-আমি সৌরভের মুখে তুলে দিলাম মাছ।ও সাথে সাথে চোখ বড় বড় করে তাকালো আমার দিকে।বুঝতে পারলাম ঝাল লেগেছে ওর।
-কি সোনা ভালো হয়নি রান্না?
-হ্যাঁ হ্যাঁ সোনা খুব ভালো হয়েছে।
-তাহলে পুরোটাই খেতে হবে কিন্তু।
-কী? কী বললে? সৌরভ চোখ দুটো বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো আমার দিকে।
-হ্যাঁ সোনা।চুনো মাছ না তোমার খুব পছন্দ নাও এবার প্রান ভরে খাও।
-সোনা পুরোটা না খেলে হয় না?মুখ কাচুমাচু করে বললো সৌরভ।
-না সোনা পুরোটাই খেতে হবে।
সেই চুনোমাছ খেয়ে সৌরভ সেইদিন ৭ বার টইলেটে গিয়েছিলো।হি হি হি।সেদিনের পর থেকে আর কখনো ও চুনোমাছ আনা তো দুররের কথা চুনো মাছের নামো বলে না হা হা হা।পুরুষ মানুষকে চেনা বড় দুষ্কর।
গল্পের বিষয়:
গল্প