লাইট অফ করে দরজা জানালা বন্ধ করে একটা হরর মুভি দেখছিলাম। ভয়ে উত্তেজনায় চোখ বড় বড় করে ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। এমন সময় আম্মু এসে কানের কাছে একটা চিল্লানি দিলো, “পেয়েছি ! পেয়েছি !” শকটা কাটিয়ে উঠতে মিনিট দুয়েক সময় লাগলো। তড়িঘড়ি করে লাইটটা অন করে আম্মুর দিকে রাগী রাগী গলায় জিজ্ঞেস করলাম, “কি এমন কোহিনূর পেয়েছ? এভাবে কেউ চিৎকার করে!” আম্মু চোখ চকচক করে বলল,”তোর ভাইয়ের জন্য একটা মেয়ে পেয়েছি। মেয়ে তো একেবারে মডেল !” আমি হাই তুলতে তুলতে বিছানায় এসে বসলাম। শুধু শুধু আমার এতগুলো মিনিট আম্মু নষ্ট করলো !
আমার কোন রকম আগ্রহ না দেখে আম্মু বলল, তোর কাছে যেজন্য এসেছি সেটা শোন একটা চিরকুট আমার হাতে দিয়ে বলল, এই যে মেয়ের ফেসবুক ইন্সটা আরও কি কি যেন একাউন্টের নাম। একটু চেক কর তো ! শুনলাম মেয়ের নাকি অনেক ফলোয়ার ! কি সব টিকটিক না কি যেন করে…আমি আরো ভাবি সে তো আর টিকটিকি না যে টিকটিক করবে ! বিরক্ত মুখে কাগজটা হাতে নিয়ে বললাম, টিকটিক না আম্মু। টিকটক ওটা। আচ্ছা তুমি যাও এখন। আমি পরে চেক করব। এখন মুভি দেখছি। আমি হতাশ ভঙ্গিতে ঘর থেকে চলে গেল। অতঃপর আমি মুভি দেখা শেষ করে নতুন ভাবীর ফেসবুক, টিকটক, ইন্সটাগ্রাম চেক করতে লাগলাম। মা ভুল শোনেনি। মেয়ে তো আসলেই সেলিব্রিটি ! মেয়ের দেখি সব জায়গায় হাজার হাজার ফলোয়ার।
আবার সবখানেই বায়োতে লেখা “Model at Facebook, actress and dancer at tiktok” কি অদ্ভুত ! তার কন্ঠে কিছু টিকটক ভিডিও দেখে বড় একটা শক খেলাম। একি ভাবী যে বাংলা ঠিকমতো বলতেই পারে না ! ভাঙা ভাঙা বাংলা বলে তাও আবার নাঁকি সুরে ঢং করে ! দুইদিন পরে যখন আমরা তাকে দেখতে গেলাম, সামনাসামনি অবস্থা আরও ভয়াবহ। মুখে গাদাগাদা মেক আপ, ভ্রু আর্ট করা, চোখে লেন্স, চুল রিবাউন্ডিং। তার ওপর সালাম থেকে শুরু করে সব কথা ঢং করে বলে ! মাকে ব্যাপারটা বলতেই মা একটা ঝামটা দিয়ে বলল, আজকালকার মেয়ে কি না, একটু ওভাবে তো কথা বলবেই! ভাইয়ারও এক দেখাতে মেয়ে পছন্দ হয়ে গেল৷ এখানে আমি আর কি বলি !
মাস দেড়েক হলো বাসার সবাই কোয়ারেন্টাইনে৷ ভাইয়া ভাবী তিন মাস আগেই বিয়ে করে আলাদা ফ্লাটে থাকে। গত দেড় মাসে ভাইয়ার সাথে আমাদের প্রায়ই ভিডিও কলে কথা হয়। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার গত দেড় মাসে একবারও ভাবী আমাদের সামনে আসে নি ! মা তো এই ব্যাপারটা নিয়ে বাসায় হুলস্থুল কান্ড বাধিয়ে ফেলেছে। চিৎকার করে আর বলে, এ কেমন বেয়াদব মেয়েকে ঘরে আনলাম। আমিও ব্যাপারটা ভাইয়াকেবলতে সেও কেন যেন ইগ্নোর করে বা কথা পাল্টিয়ে ফেলে। অতঃপর একদিন ভাইয়া আমাকে কল দিয়ে কাতর স্বরে বলছে,
-তোর ভাবী কেমন যেন করছে ! আমি অবাক হয়ে বললাম,
-কি করছে?
-কি যে হয়েছে ওর! বারবার বলছে মরে যাব। বেঁচে থেকে কি হবে!
-(কাঁপা কাঁপা কন্ঠে)ভাইয়া তুমি একটু ভাবীর কাছে ফোনটা দাও। আমি দেখছি ব্যাপার কি ভাবী ফোনটা হাতে নিয়ে কাঁদো কাঁদো স্বরে বলল,
-আনিকা ! এই জীবন আমি আর রাখব না ! এত্ত চাপ আমি নিতে পারছি না ! এত্ত চাপ ! আমি শান্তনা দিয়ে বললাম,
-এত চাপ যদি আরেএফএল পাইপ নিতে পারে, তুমি কেন পারবে না ! ভাবী এখন ভালোয় ভালোয় বলো তো কি হয়েছে বলো…
-আমাদের শহর লকডাউন হওয়ার কারণে এখানে সব বন্ধ। শহরের সব পার্লারও ! একটা পার্লারও খোলা নেই ! গত দেড় মাস ধরে আমি পার্লারে যাই না। কতদিন হয়ে গেল ভ্রু প্লাগ, হেয়ার স্পা, ফেসিয়াল কিছুই করা হয়না ! এখন নিজেই নিজেকে আয়নায় দেখতে পারিনা। তোমার ভাইয়াও আমার থেকে দূরে দূরে থাকে। কোনমতে হাসি আটকিয়ে ভাবীকে বললাম,
-কেঁদো না ভাইয়াকে ফোনটা দাও ভাইয়া ফোন হাতে নিতেই বললাম, ভাইয়া ভিডিও কল দাও এক্ষুনি ! আমার কথামত ভিডিও কল দিতেই চোখে পড়ল, সব এলোমেলো অবস্থায় এক অদ্ভুত চেহারার নারী মেঝেতে বসে আছে ! কোথায় সেই অপ্সরী মডেল ভাবী?
ভাবীকে দেখামাত্রই হো হো করে হেসে ফেলেছি ! ভাবীর ভ্রুগুলো বড় হয়ে চারপাশে ছড়িয়ে আছে, চেহারার রঙ পাল্টে গেছে, চোখের নিচে কালি পড়েছে, চুল কেমন যেন ঝাড়ুর মত হয়ে গেছে ! এক কথায় পুরো জংলী অবস্থা ! ভাগ্যিস আমার ক্যামেরা অফ ছিল। তাড়াহুড়ো করে একটা স্ক্রিনশট তুলে আম্মুকে দেখিয়ে বললাম, এই দেখো তোমার মডেল বৌ মা ! মা কিচ্ছুক্ষণ অপলক দৃষ্টিতে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে। আম্মুর রিয়্যাকশন দেখে আমি আবার হাসতে হাসতে বিছানায় গড়াগড়ি দিতে লাগলাম
গল্পের বিষয়:
গল্প