আমি পরিক্ষার হলে যে মেয়েটির পাশে বসে আছি তার নাম প্রিয়ন্তি। মেয়েটির নাম যে প্রিয়ন্তি তা দেখেছি তার খাতায় নাম লিখার সময় আড় চোখে তাকিয়ে। এইভাবে কারো নাম আড় চোখে দেখা ঠিক নই। আমি বেঠিক কাজটা করে ছোটখাট অপরাধবোধে ভুগছি।
অপরাধবোধ কমানোর জন্য মেয়েটির দিকে তাকালাম, স্যরি বলা দরকার। মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আমার মন খারাপ হয়ে গেলো। সে তার সাদা খাতায় ছোট একটা বিড়াল ছানা একে মন খারাপ করে বসে আছে। পরিক্ষার হলে বিড়াল ছানা আঁকার কারণ একটা হতে পারে ঠিক যে কারণে আমার পরিক্ষার খাতাটি এখনো সাদা ! দুজনের কারোই পরিক্ষার প্রশ্ন কমন আসেনি। প্রিয়ন্তি খুব সম্ভবত বিবিএ এর প্রথম বর্ষের ছাত্রী। আমি ইইই দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছি। প্রিয়ন্তি বিবিএ এর ছাত্রী তা অনুমান করেছি রুম প্ল্যান দেখে। আমি কনুই দিয়ে আলতো করে প্রিয়ন্তিকে গুতো দিলাম। প্রিয়ন্তি ভুর কুচকে তাকালো। শ্যামলা গড়নের প্রিয়ন্তির চোখ জোড়া সুন্দর। প্রিয়ন্তি তার সুন্দর চোখ বার কয়েক নেড়ে জিজ্ঞাসু দৃষ্টি নিয়ে তাকালো। আমি লজ্জা পেয়ে ঢোক গিল্লাম
পরিক্ষার হলে কাউকে এইভাবে গুতো দেয়া কি সমুচিন? নিজেকে প্রশ্ন করে ছোটখাটো আরেকটি অপরাধবোধ জন্ম নিয়েছে। আমি তাকিয়ে থাকতে না পেরে বেঞ্চের দিকে চোখ ফিরালাম। প্রিয়ন্তি ততক্ষণে তার আঁকা বিড়াল ছানার লেজ আঁকায় মন দিয়েছে। আমি আড় চোখে ফের তাকাতেই প্রিয়ন্তি বুঝে ফেলল। আমি খুব দ্রুত চোখ ফেরালাম নিজের খাতায়। প্রশ্নর দিকে চোখ নিয়ে হতাশ হলাম। ঐ প্রশ্ন দেখে আমি কেবল প্রশ্নই লিখতে পারব “উত্তর” না।
মিনিট দশ পার হয়ে গেছে । ইতিমধ্যে প্রিয়ন্তি তার বিড়াল ছানার লেজ আঁকা শেষ করেছে। আমি তার খাতায় তাকানোর লোভ সামলাতে না পেরে তাকাতে গিয়ে চোখাচোখি হলাম। এইবার হাসল প্রিয়ন্তি। প্রতি উত্তরে হাসার ভান করলাম আমিও। নিজের সাদা খাতার দিকে তাকিয়ে দুইজনেই হাসছি। প্রিয়ন্তি তার কনুই দিয়ে আলতো করে গুতো মেরে নিজের খাতায় লিখলো “প্রশ্ন কমন আসেনি?”
আমি তার দিকে তাকিয়ে হাসলাম। প্রতি উত্তরে নিজের খাতায় লিখলাম, “না” ফিক করে হেসে দিলো প্রিয়ন্তি। আমি খাতায় লিখলাম “বিড়াল ছানা একা কেন?” “তার বাবা মা তাকে একা রেখে বেড়িয়ে পড়েছে” – নিজের খাতায় লিখে জানিয়ে হাসল প্রিয়ন্তি। দুই জনই মুচকি হাসছি। আমাদের মুচকি হাসি গোফওয়ালা স্যারের পছন্দ হয়নি। স্যার আমাদের কাছে এসে ছোট খাটো ধমকের সুরে সাবধান করে গেলেন। আমরা নিজেদের খাতায় মনোযোগ দিলাম। হেসে কথা বলা যাবে না। খাতায় লিখে কথা বলতে হবে। প্রিয়ন্তি তার খাতায় লিখল “বিড়াল ছানার লেজ মোটা”? “হ্যা” বলতেই প্রিয়ন্তি ফিক করে হাসল। স্যারের এই দিকে মনোযোগ নেই।
প্রিয়ন্তি ইরেজারে বিড়াল ছানার লেজ মুছা শুরু করেছে। আমি তা দেখে হেসে আমার খাতার পৃষ্টা উল্টোলাম। বিড়াল ছানার বাবা মা খোঁজা দরকার। প্রিয়ন্তি আমার আঁকার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে। মিনিট বিশ একের পর বিড়াল ছানার মা কে মোটামুটি একে ফেললাম। আলতো করে গুতো দিলাম প্রিয়ন্তকে। প্রিয়ন্তি বিড়াল ছানার মা কে আমার খাতায় দেখে মুখ টিপে টিপে হাসছে। আমাদের অবস্থা দেখে সামনের বেঞ্চের একজন ঘাড় ঘুড়িয়ে তাকালো। দুজনের খাতায় দুটো বেড়াল দেখে সে ভুত দেখার মত চমকালো, বলল না কিছুই। “বিড়াল ছানার বাচ্চার মা এটি?” _ খাতায় লিখে জানতে চাইলো প্রিয়ন্তি “হ্যা” _ উত্তরে লিখলাম আমি।
“আমার বিড়াল ছানার বাবা কোথায়?”_ লিখে হাসির ইমো আঁকল সে। “যেহেতু বিড়াল ছানার মা একা গোমড়া মুখে দাঁড়িয়ে সেহেতু নিশ্চয় তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়েছে” আমার খাতায় লিখাটি পড়ে হাসল প্রিয়ন্তি। তার চেহারা দেখে অনুমান করাই যাই পরিক্ষার হল না হলে সে নিশ্চিত রুম কাঁপিয়ে হাসতো। চেয়ারা বসা স্যার আমাদের ক্ষানিক পরপর ফিক করে হেসে দেয়াটাকে ভালোভাবে নিতে পারছেন না। একই ডিপার্টমেন্টের হলে “দেখে লেখার” একটা ব্যাপার থাকতে পারে। ভিন্ন ডিপার্টমেন্টের হয়েও কেন আমরা হাসছি? স্যার উঠে এসে দ্বিতীয়বারের মত সাবধান করে গেলেন। এখন আমাদের দুজনের চোখ দুজনের খাতায়।
আমি এক ফাকে ঘড়ির দিকে তাকালাম। সময় আরো এক ঘন্টা বাকি। এই এক ঘন্টা কি করা যায় ভাবছি। বিড়াল ছানার মায়ের পাশে আমি ছোট খাটো একটা বাগান একে ফেললাম। বাগানে দুই তিনতে গাছ। একটা গাছে সুর্যমুখী ফুল। নিচে ঘাষের মাঝে গোমড়া মুখে দাঁড়ানো প্রিয়ন্তির বিড়াল ছানার মা। বিড়াল ছানার বাবার সাথে বিড়াল ছানার মায়ের কেন ঝগড়া লাগলো তা ভাবার বিষয়। ভাবার বিষয় ভাবতে গিয়ে প্রিয়ন্তির হাতের গুতো খেলাম। গুতো খেয়ে তাকালাম প্রিয়ন্তির খাতায়। সে খাতায় বিড়াল ছানার বাবাকে একেঁছে। বিড়াল ছানার বাবা এক হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করা ফেরিওয়ালার সামনে দাঁড়িয়ে। মনে মনে হাসলাম আমি। বিড়াল ছানার মা তাহলে এই কারনে রেগেছে। জানার জন্যই লিখলাম খাতায় “বিড়াল ছানার বাবা হাওয়াই মিঠাই খাবে?” _ প্রিয়ন্তি লিখাটা পড়ে হাসল। মেয়েটির হাসি সত্যি সুন্দর। এই হাসির প্রেমে পড়া যায় “বাবা খাবে না, আমার বিড়াল ছানার মা হাওয়াই মিঠাই খাবে। তা নিতেই বিড়াল ছানার বাবা হাওয়াই মিঠাই নিতে এসেছে” _ লিখল প্রিয়ন্তি। আমি সে লিখা পড়ে হাসলাম। প্রিয়ন্তি কিছুক্ষণ মুখ টিপে হেসে তার খাতায় লিখল “বিড়াল ছানার মায়ের পাশে সুর্যমুখী কেন??”
“কারণ বিড়াল ছানার মা কে যে একেঁছে সে এই ফুলটা ছাড়া অন্য ফুল আঁকতে পারে না” _ উত্তর লিখে হাসলাম প্রিয়ন্তি আমার লিখা পড়ে শব্দ করে হেসে ফেলল। তার হাসির শব্দ গোফওয়ালা স্যারের কান এড়ালো না। তিনি আমাদের সামনে এলেন। এসে দুজনের খাতা নিয়ে হা হয়ে তাকিয়ে রইলেন। প্রিয়ন্তি এবং আমি দুজনই দাড়য়ে মুখ টিপে টিপে হাসছি। আমাদের খাতায় বিড়াল আঁকা দেখে গোফওয়ালা স্যারের মাথায় ছোট খাটো একটা ঝড় বয়ে গেলো তা অনুমান করা যায়। স্যার আমাদের দুইজনের দিকে তাকিয়ে খাতা নিয়ে বের হয়ে গেলেন। আমরা তখনো দুজন মুখ টিপে টিপে হাসছি। আমি আর প্রিয়ন্তি দাঁড়িয়ে আছি আমাদের ভার্সিটির ডীন স্যারের কক্ষে। আমার ভয়ে হাটু কাঁপছে, প্রিয়ন্তির চেহারায় ভয়ের লেশ মাত্র নেই। আমি তার দিকে তাকিয়ে হতাশ হলাম।
আমাদের ভার্সিটি ডীনের নাম আব্দুর সোবহান। সোবহান স্যার খুব মনোযোগ দিয়ে প্রিয়ন্তির প্রথম পৃষ্ঠায় আঁকা বিড়াল ছানা দেখছে। তার নাকের ডগায় চশমা ঝুলানো। তিনি চোখের চশমা মুছে ফের তাকালেন প্রিয়ন্তির খাতায়। দেখার পর ঘাড় তুলে তাকালেন প্রিয়িন্তির দিকে “এটা কি একেঁছ??” _ প্রিয়ন্তি কে প্রশ্ন করে সোবহান স্যার উত্তরের অপেক্ষা করছেন। “এটা একটা বিড়াল ছানা” _ উত্তরে বলল প্রিয়ন্তি “বিড়াল ছানা এখানে কি করছে?” _ সোবহান স্যার মুখ কঠিন করে জিজ্ঞেস করলেন ” তার বাবা মা তাকে একা বাসায় রেখে ঘুরতে বের হয়েছে তাই সে একা বসে আছে” সোবহান স্যার ছোট একটা দ্বীর্ঘশ্বাস ফেললেন। আমাদের দিকে তাকিয়ে বললেন, “তোদের দুইজনের ই কি প্রশ্ন কমন আসেনি?” আমি আর প্রিয়ন্তি না সুচক মাথা নাড়ালাম। সোবহান স্যার দ্বিতীয়বার দ্বীর্ঘশ্বাস ফেলে পৃষ্ঠা উল্টালেন। তাতে বিড়াল ছানার বাবা হাওয়াই মিঠাইর দিকে তাকিয়ে আছে। “এই বিড়াল এখানে কি করছে?” _ ভুর কুচকে বললেন সোবহান স্যার “বিড়লা ছানার মায়ের জন্য হাওয়াই মিঠাই কিনতে গিয়েছে” _ উত্তরে বললাম আমি
– বিড়াল ছানার জন্য??
– না, বিড়াল ছানার মায়ের জন্য। সে রেগে পার্কে দাঁড়িয়ে আছে। হাওয়াই মিঠাই খাইয়ে রাগ ভাঙাবে
– বিড়াল ছানার মা কোথায়?? _ সোবহান স্যারের প্রশ্নে আমি আমার খাতা দেখিয়ে মাথা নিচু করে তাকিয়ে আছি। সোবহান স্যার আমার খাতা উল্টালেন। সেখানে বিড়াল ছানার মা দাঁড়িয়ে আছে গোমড়া মুখে।
– সে কি হাওয়াই মিঠাইয়ের জন্য রাগ করেছে??
– হতে পারে আবার নাও হতে পারে। তাদের মাঝে ঝগড়ার কারণ স্পষ্ট না। তবে হাওয়াই মিঠাই খাইয়ে রাগ ভাঙানোর চেষ্টা করা হয়েছে __ সোবহান স্যারের প্রশ্নের উত্তরে বলল প্রিয়ন্তি। স্যার কিছুক্ষন আমার খাতায় আঁকা বিড়াল ছানার মায়ের দিকে তাকিয়ে রইলেন। বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললেন
– বিড়াল ছানার মা হাওয়াই মিঠায়ের জন্য রাগ করেনি। সে রাগ করেছে এই বিশ্রী পার্কটার জন্য। বউকে নিয়ে কেউ কি এই বিশ্রী পার্কে আসে? তার উপর সুর্যমুখি ফুল উল্টা মুখে তাকিয়ে!! স্যারের কথায় প্রিয়ন্তি হেসে দিলো। আমি অপরাধ বোধ থেকে অপমান বোধ করতে লাগলাম। প্রিয়ন্তি আমার চেহারার দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হাসছে শুধু। সোবহান স্যার আমাদের দিকে তাকিয়ে গম্ভির মুখে বললেন,
” তোমরা বাহিরে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করো” প্রিয়ন্তি এবং আমি বাহিরে এসে দাড়ালাম। প্রিয়ন্তির চেহারায় টেনশনের ছিটেফোটা নেই। আমি টেনশনে আছি ডিন স্যার ভার্সিটি থেকে তাড়িয়ে দেন কিনা সে ভয়ে। ভয় কমানোর জন্য প্রিয়ন্তিকে জিজ্ঞেস করলাম “তোমার টেনশন হচ্ছে??” প্রিয়ন্তি উত্তরের বলল “হ্যা হচ্ছে, বিড়াল ছানাটি একা একাকা বসে আছে। সে আর কতক্ষন থাকবে?” আমি প্রিয়ন্তির কথায় দ্বীর্ঘশ্বাস ফেললাম। এই মেয়ের বিন্দুমাত্র চিন্তা নেই। ক্ষানিক চুপ থেকে প্রিয়ন্তি বলল আবার “আমার বিড়াল ছানার বাচ্চা মায়ের জন্যও চিন্তা হচ্ছে” “কেনো, টেনশনের কি আছে?”
“ওমন পার্কে বেচারি একা থেকে রেগে বসে আছে” _ বলেই ফিক করে হেসে উঠল। তার হাসি দেখে আমি দ্বিতীয়বার অপমানবোধ করলাম। পার্কের বাগানটা এতটা খারাপ না যে দুটো বিড়াল ড্যাটিং করতে পারবে না। ঘন্টা ক্ষানিক পর পিয়ন এলো ডীন স্যারের রুম থেকে। আমি ভয়ে ভয়ে আর প্রিয়ন্তি হাসতে হাসতে ডিন স্যারের রুমের ঢুকলাম ডীন স্যারের সামনে কাগজ দেখে বুঝেছি ওটা নিশ্চিত ক্যাম্পাস থেকে তাড়িয়ে দেয়ার কিছু একটা হবে। স্যার আমামাদের দিকে তাকিয়ে গম্ভির মুখ করে বললেন। “বিড়াল ছানার বাবা মার ঝগড়া মিটে গেছে। তোমার কথায় ঠিক, হাওয়াই মিঠাই রাগ ভেঙেছে”
স্যারের কথায় হাসল প্রিয়ন্তি। স্যার আমাদের সামনে একটি কাগজ বাড়িয়ে দিলেন। তাতে বিড়াল ছানার পাশে বিড়াল ছানার বাবা মা। বিড়াল ছানার সামনে হাওয়াই মিঠাইয়ের প্যাকেট। বিড়াল ছানাটি হাসি হাসি মুখে হাওয়াই মিঠাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। বিড়াল ছানার মায়ের দিকে তাকাতেই আমার মন খারাপ হয়ে গেলো। তার পায়ের পাশেই আমার আঁকা সুর্যমুখী ফুল অসহায় ভাবে পরে আছে। সেই ফুলের দিকে তাকিয়ে প্রিয়ন্তি ফিক করে হেসে দিলো। তার হাসি দেখে সোবহান স্যার হাসছেন। তাদের দুজনের হাসি দেখে আমি স্যারের বাড়িয়ে দেয়া কাগজের দিকে তাকালাম। বিড়াল ছানাটির সাথে তার পরিবার দেখে আমার ও হাসি পেলো। হাসির ফাকে প্রিয়ন্তির দিকে তাকালাম। তখনো হাসছে সে। প্রেমে হুড়মুড়ি খেয়ে পড়ার মতো হাসি।
ডীন স্যার এই যাত্রায় বললেন না কিছুই। সাবধান করে ছেড়ে দিলেন। ফেরার পথে আমি আর প্রিয়ন্তি গেলাম খাতা জমা দিতি। পরিক্ষার খাতায় যা লিখি না কেন জমা দেয়া আবশ্যক। খাতা জমা দেয়ার সময় পড়লাম বিপদে। আমার খাতায় বিড়াল ছানার মা, এটা কোন সমমস্যা না। প্রিয়ন্তির খাতায় বিড়াল ছানা আর তার বাবা হাওয়াই মিঠাইয়ের সামনে সেটাও সমস্যা না। সমস্যা বাঁধলো ডীন স্যারের দেয়া কাগজটা নিয়ে। বের হওয়ার সময় কাগজ নিয়ে বের হয়ে ছিলাম। দুটো ডিপার্টমেন্টে দুটো অসমাপ্ত চিত্র যাবে!
আমরা দুজন গোফওয়ালা স্যারের সামনে খাতা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। প্রিয়ন্তি মুচকি মুচকি হাসছে। সে হাসি দেখে আমিও হাসছি। গোফওয়ালা স্যার বিরক্ত হলেন। গোফ নাড়িয়ে জিগেস করলেন “তোমাদের সাহস তো কম না” আমি আর প্রিয়ন্তি তখনো চুপচাপ দাঁড়িয়ে। স্যার বিরক্ত হলেন। হাত বাড়িয়ে দুজন থেকে খাতা নিলেন। শুধু আমার হাতের কাগজটি বাদে। প্রিয়ন্তি মুচকি হেসে বলল “স্যার এই কাগজটিও জমা নিতে হবে” “কোন কাগজ?” _ জিগাসু দৃষ্টিতে বললেন স্যার। প্রিয়ন্তি দাঁত বের করে হেসে আমার হাতের কাগজ এগিয়ে দিলো। কাগজ উল্টিয়ে গোফ ওয়ালা স্যার ছোটখাট ধাক্কা খেলেন্। ধাক্কা সামলিয়ে বললেন “এটা কে একেঁছে?” প্রিয়ন্তি ফিক করে হেসে দিয়ে বলল “ডীন স্যার” প্রিয়ন্তির কথা শুনে গোফওয়ালা স্যারের চেহারা ফ্যাকাসে হয়ে গেলো। আমরা আর না দাঁড়িয়ে উল্টো পথে হাটা ধরলাম । সত্যি বলতে কি পিছনে গোফওয়ালা স্যারের চেহারা মনে করে আমার ক্লাস কাঁপিয়ে হাসতে ইচ্ছা করছে। আমরা দুজন মুচকি হেসে নিচে নামলাম
আমি আর প্রিয়ন্তি ক্যাম্পাসের গেইটে দাঁড়িয়ে। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। প্রিয়ন্তির হাসি থাভছেই না, আমিও হাসিতে যোগ দিলাম। এতক্ষণ ধরে হাসি পেটে চেপে ছিলো। দুজন ছেলে মেয়ে ক্যাম্পাসের বাহিরে দাঁড়িয়ে এমনভাবে হাসার দৃশ্যটা অপরিচত নয়। তবে আমাদের এমন হাসি আমাদের পরিক্ষার হলে থাকা ছেলেমেয়েদের কাছে অপরিচত ঠেকলো। আমাদের রুমে যে মেয়েটি বিড়াল ছানা খাতায় দেখে ভুত দেখার মতো চমকে তাকিয়ে ছিলো সেও ভুর কুচকে তাঁকালো।
আমি প্রথমবারের মতো প্রিয়ন্তির হাত স্পর্শ করে থামালাম । হাসতে হাসতে চোখ থেকে পানি পড়ছে তার। সে হাসি থামিয়ে সামলালো নিজেকে। আমিও হাসি থামালাম। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি বাড়তে লাগলো। প্রিয়ন্তির সাথে হাটছি আমি। আর কিছুদূর গেলেই রিক্সা পেয়ে যাবো। রিক্সার কথা মনে পড়তেই মন খারাপ হয়ে গেলো আমার । পরিক্ষার এই দুই ঘন্টায় আমি এই মেয়ের হাসির মায়ায় পড়ে গেছি।
“আপনার বাড়ি কোথায়”_ প্রিয়ন্তি জানতে চাইলো কিছুক্ষণ ভেবে বললাম, “আপনার বাড়ি যেখানে হবে তার ক্ষানিক আগে” _ বলেই ফিক করে হাসলাম। প্রিয়ন্তির চেহারায় মুচকি হাসি। আমরা দুজন হাটছি। প্রিয়ন্তি সামনে রিক্সা দেখে থামালো। উঠেই আমার দিকে তাকালো একবার। বৃষ্টি ততক্ষনে জোড়ে পড়া শুরু হয়েছে। প্রিয়ন্তি হেসে বলল “উঠে পড়ুন, আমার বাড়ির একটু সামনে নেমে ভাড়াটা দিয়ে দিবেন।” প্রিয়ন্তির কথায় মাথা চুকিয়ে হাসলাম আমি। রিক্সায় উঠতেই প্রিয়ন্তি হুড নামিয়ে দিলো ।
ঝুম বৃষ্টিতে আমরা দুজন ভিজে ভিজে রিক্সায় চড়ছি। রিক্সাওয়ালা মামার কাছে দৃশ্যটা নতুন না হলেও আমার জন্য নতুন । স্কুলে থাকতে আমার ও সখ হতো রিক্সায় করে টুম্পাকে নিয়ে ঘুরার। টুম্পা আমার স্কুলের ফার্স্ট গার্ল। ঘুরা হয়নি, টুম্পাকে এখন বৃষ্টিতে রিক্সায় বেড় হতে দেখি। সে হুড নামিয়ে রিক্সায় চড়ে। বূষ্টিতে ভিজলে তার মেয়ের ঠান্ডা লেগে যাবে তাই । কি সব ছাইপাস ভাবছি আমি! প্রিয়ন্তির দিকে তাকালাম । প্রিয়ন্তি তখনো মুচকি হাসছে । জিগেস করলাম , “ভাবছি , সূর্যমুখীর মুখ মানুষ উল্টো করে আঁকে কিভাবে?” বলেই শব্দ করে হাসল প্রিয়ন্তি। আমিও সে হাসিতে যোগ দিলাম। আমাদের হুট করে এইভাবে হেসে দেয়া দেখে ভুর কুচকে পিছন ফিরে তাকালো রিক্সাওয়ালা । প্রিয়ন্তি হেসে রিক্সা থাভাতে বলল আমি আশেপাশে তাকিয়ে অবাক হলাম। আশেপাশে কোন বাড়ি নেই। প্রিয়ন্তি রিক্সা থামালো কেন?
প্রিয়ন্তি হেসে সামনে ইশারা করল। আমি তাকাতেই হাসলাম মনে মনে। এক হাওয়াই মিঠাই ওয়ালা বৃষ্টিতে হাওয়াই মিঠাইর প্যাকেট নিয়ে গাছের নিচে দাঁড়িয়ে আছে। রিক্সাওয়ালাকে থামিয়ে নামলাম। হাওয়াই মিঠাইয়ের সামনে গেলাম আমি আর প্রিয়ন্তি। আমার আর প্রিয়ন্তির হাতে হাওয়াই মিঠাই। ঝুম বৃষ্টিতে হাওয়াই মিঠাই খাওয়ার আগেই হাওয়া হয়ে যাচ্ছে। যতটুকু পারা যায় খাচ্ছি। আমাদের খাওয়া দেখে হাওয়াই মিঠাই ফেরিওয়ালা আমাদের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। প্রিয়ন্তি আমার দিকে তাকিয়ে বলল “বাড়তি একটা হাওয়াই মিঠাই নিন তো” “কেন আবার? আমার বিড়াল ছানার জন্য!”
প্রিয়ন্তির কথায় হেসে দিলাম আমি। আমার সাথে হাসছে প্রিয়ন্তিও। মাঝ রাস্তায় রিক্সাওয়ালা আর হাওয়াই মিঠাইয়ের ফেরিওয়ালার কাছে এই দৃশ্য পরিচিত নয়। দুজনেই হা হয়ে তাকিয়ে আছে। আমাদের দুজনের হাসির সাথে বৃষ্টি পড়ার শব্দ মিশে একাকার যখন তখন আমি প্রিয়ন্তির হাসির দিকে তাকিয়ে বুঝলাম , আমি এই হাসির প্রেমে পড়ে গেছি…
গল্পের বিষয়:
গল্প