এক্সের বিয়ে

এক্সের বিয়ে
এক্সের বিয়ে। আমারে দিছে দাওয়াত। আমি আবার ফ্রির খাবার ছাড়তে পারি না। তাই গেলাম। এতদিনের খরচপাতির কিছু অংশ যদি উঠা যায়। ফোন দিলাম আয়ান রে।…
— হ্যালো আয়ান?
— হুম সিফাত বল।
— দোস্ত। দাওয়াত আছে। যাবি?
— যাবি? হালা বল শুধু কয় টায়?
— দোস্ত গিফট টিফট কিছু কিনতে হবে না। আমি কিনছি। তুই শুধু আর কয়েকজন রে নিয়ে আমার বাসায় আয়।
— কি খবর দিলা মামা। আমি তো দেড়মিনিট পাগল থাকুম। তারপর টয়লেটে যামু। হালকা হমু। তারপর সবাইরে নিয়ে আইতাছি।
— আচ্ছা আয়। আমি অপেক্ষা করছি।
— আচ্ছা।
গিফট পেপার দিয়ে গিফট সাজাচ্ছি। গিফট খুজতে আজ আমার অবস্থা টাইট হয়ে গেছে। অনেকগুলো গিফট। হিহি। মজা হবে। বড় গিফট। আমার এক্স সেইরকম লোভী। এতদিন আমার পয়সায় মুজরা করছে এখন এক বুড়ো কাকুর গলায় ঝুলে পড়বে। আমিও কম যাই নাকি। ”খেলা হবে” আয়ান সবাইকে নিয়ে এলো। সবাই বললে ভুল হবে পুরো ফ্রেন্ড সার্কেল কে নিয়ে এলো। আদ্রিত, আবরার, সিয়াম, তনয়, জিসান, শুভ্র, মেঘ মনে হচ্ছে বর পক্ষ যাচ্ছে। সাথে ইনভিটেশন কার্ড টা নিলাম। যাতে কোনো সমস্যা না হয়।
— তোরা সব ফাকাঁ হয়ছিস তো?(আমি)
— শুধু ফাকাঁ? পেটে মনে হচ্ছে ইঁদুর দৌড়াচ্ছে। তাড়াতাড়ি চল। (আদ্রিত)
— হ্যাঁ আজকে শুধু ইঁদুর না অন্য কিছুও দৌড়াবে।(আমি)
— মানে?(আয়ান)
— মানে কথার মানে নাই। বাদ দে। চল সবাই।
— আচ্ছা মামা। বিয়েটা কার?(তনয়)
— তানিয়ার।
— কিহহহ?(সবাই)
— কি হইলো তোদের?
— ভাবীর বিয়ে আর তুই এতবড় গিফট নিয়ে বিয়া খাইতে যাচ্ছোস?(মেঘ)
— তো কি করমু? মুজরা?
— নাহ। তা করতে বলিনি। টিকটক করতে পারতি। এখন মুজরার থেকে টিকটক বেশি চলে।হাহাহা।(মেঘ)
— সালা। ছাইড়া যামু তোরে।
— না মামা আমি তো জাস্ট মজা করছিলাম।
— এখন কি যাবি তোরা?
— হ্যা চল।
সবাই মিলে বিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিলাম। কাছেই তানিয়াদের বাড়ি। যেতে বেশিক্ষন লাগলো না। বাড়িটা সুন্দর ভাবে সাজানো হয়েছে।আহা কত আশা ছিলো আর এখন ছ্যাকা খেয়ে বাকা হয়ে গেইছি। কি আফসুস। সোজা গিয়ে ঢুকলাম যেখানে খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সবাইকে দেখানোর জন্য গিফট টা উপরে রাখলাম। সব থেকে বড় গিফট। তানিয়া আর তানিয়ের বুড়া কাকু থুক্কু বড়ের জন্য স্টেজ সাজানো হয়েছে। সে সেখানে বসে আছে। আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। ভাবছিলো আসবো না। যাক গে। খাওয়া শুরু করলাম। খাচ্ছি তো খাচ্ছি খাওয়া শেষ হওয়ার নাম গন্ধ নেই। তানিয়ার বাবাকে চিন্তিত দেখাচ্ছে এসব ঘটনা দেখে। মনে হয় অর্ধেক লোকের খাবার আমরাই খেয়ে নিচ্ছি। এদিকে আয়ান শুধু যে খাচ্ছে তা কিন্তু নয়…. মামা আমার জোস যা পাচ্ছে তার অর্ধেক খাচ্ছে অর্ধেক পলিথিনে ঢুকাচ্ছে। তার দেখাদেখি অন্যরাও শুরু করলো পলিথিনে নেওয়া। একেকজন এই খাবার নিয়ে রেস্টুরেন্ট খুলার প্লান করছে। এমন সময় তানিয়ার বাবা এলো…
— কে তোমরা?বরপক্ষ না কনে পক্ষ?
— আমরা তানিয়ার জাস্ট ফ্রেন্ড আংকেল।
— তোমাদেরকে তানিয়া দাওয়াত দিছে?
–জ্বী আংকেল। এই দেখুন কার্ড। বিশ্বাস নাহলে তানিয়াকেই গিয়ে বলুন।
তারপর কিছু না বলে তানিয়ার কাছে গেলো। তার কাছে কি জানি শুনলো। তারপর তার মুখ দেখে বোঝা গেলো তিনি হতাশ হয়ে পড়ছেন। আহা রে। হাহাহা। সাবাই খাওয়া চালিয়েই যাচ্ছে। থামার কোনো নাম গন্ধ নেই। এদের দেখে নিজের মধ্যে গর্ববোধ হচ্ছে। আমি পেয়েছি তাহাদেরকে পেয়েছি”” এমন সময় তানিয়া এলো…
— সিফাত?
— দেখছো না খাচ্ছি?
— দেখতেই তো পাচ্ছি। এমন খাচ্ছো যে জীবনেও মনে হয় খাও নাই।
— খামোশ। দাওয়াত দিয়ে ডেকে এনে অপমান। এই চল তোরা আর খাবোই না।
— কিন্তু মামা আমাদের তো এখনো শেষ হয় নি?(আয়ান)
— আমাদেরকে এভাবে অপমান করছে আর তুই এখনো এখানে খাবি? চল এই ছোটলোকদের এখানে খাবো না। আমি তোদের রেস্টুরেন্টে খাওয়াবো।
— সত্যি মামা? এই খাওয়া বাদ দে। এখন আমরা চাইনিজ খাবো।(আয়ান)
সালারা এতক্ষন খাইলি তবু তোদের পেট ভরে না। পেট না ব্লাকহোল একদিকে দিয়ে ঢুকলে আরেকদিক দিয়ে বাহির হয়ে যায়।
— হ্যা চল(আমি)
— যাচ্ছো ঠিক আছে। গিফট টা তো দিয়ে যাও।
— ও আচ্ছা। সরি। জানতাম তুই ছোটলোক। এই নে। হ্যাপি ম্যারিড লাইফ।
— ধন্যবাদ।
চলে এলাম। সবাই মিলে যে খাওয়া খেয়েছি তাতে আমার স্বপ্ন আর আশা দুটোই পূরন হয়েছে। এতক্ষনে তানিয়ার আব্বুর মাথায় হাত চলে এসেছে। তার উপর যে সারপ্রাইজ দিছি ওদের তা তো মনে হয়ে না এজন্মে ভুলবে। শীস বাজাতে বাজাতে হাটছি…
— মামা এইদিকে তো কোনো রেস্টুরেন্টে নাই?(আয়ান)
— সালা তোর পেট ওটা? আরো খিদা লাগলে যেগুলো পলিথিনে রাখছিস ওগুলো খা।
— না এগুলো ছোয়াও যাবে না। এই দেখ। এই দিয়ে আমরা ব্যবসা শুরু করবো। রেস্টুরেন্টের। তাজ্জব বনে গেলাম। একেকজনের হাতে কম করে হলে ৫-৭ কেজি করে একেকটা প্যাকেট।
— আচ্ছা তোর প্যাকেট কই? আই মিন পলিথিন?
— আমি কখন পলিথিনে ঢুকাইলাম?
— তুই ঢুকাইস নাই? তাহলে তোর শেয়ার নেই। তুই বিত। ফুর।
— ভাই এগুলো কখন ঢুকাইছিলি?
— খাচ্ছিলাম আর ঢুকাচ্ছিলাম।
— এতগুলো যদি ঢুকাস এ খাইছিলি কতগুলো?
— এর দ্বিগুন?
— তবু তোর পেট ভরে নাই?
— নাহ।
— ভাই তুই থাক। আমি বাসা হতে আইতেছি। আব্বার কাছে যামু বাড়ি নিজের নামে লিখে নিয়া ওইটা বেইচ্ছা টাকা নিয়ে আইতেছি। তুই শুধু খাড়া।
— ওকে বন্ধু। আমি আছি। তুই যা।
— বলদা।
— কিছু বললি?
–না।
–আচ্ছা
কোনমতে পাশ কাটিয়ে আসলাম। বলদ টা বলে কি ১০-১২ কেজি খাওয়ার খাবার পরেও পেট ভড়েনি মানুষ না গন্ডার।যাক বাসায় এসেই ঘুম দিলাম। সকাল সকাল ফোনের রিংটোনে ঘুম ভাংগলো…
— হ্যালো?
— কি রে মামা কই তুই?(আয়ান)
— বাসায়?
— আসবি কখন?
— কই?
— কই মানে? এইখানে দাড়ায় রাইখা গেলি আর বলছিস কই?
— আরে বলদা তুই এখনো ওইখানেই আছিস?
— হ্যা। তুই না বললি আসবি?
— আচ্ছা যাচ্ছি।
বের হচ্ছিলাম। এমন সময় দেখি খবরে ব্রেকিং নিউজ দেখাচ্ছে। “ব্রেকিং নিউজ” বিয়ের রাতে গিফট খোলার পর বরের হার্ট এট্যাক। বউ আপতত কোমায় আছে। যেকোনো সময় বাইরে আসতে পারে। গিফট বক্সে ছিলো কয়েকশ ইঁদুর এবং তেলাপোকার বসবাস। এ সম্পর্কে জানতে আমাদের সাথেই থাকুন। বাহ। দারুন একটা দিন শুরু হলো। বের হতে হতে ভাবছি যাই ছেলেদেরকে আরেকবার খাইয়ে নিয়ে আসি। হাজার হোক অনেক পরিশ্রম করছে বলদগুলো। মনে হচ্ছে “”আমি তো আমার মাঝে নাই এক্সরে বাশ দিলো তেলাপোকায়”
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত