মা-বাবা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ উপহার

মা-বাবা সন্তানের জন্য পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ নেয়ামত। সৃষ্টিজগতের এক শ্রেষ্ঠ উপহার। দুনিয়ার সব মানুষের বিকল্প কল্পনা করা গেলেও মা-বাবার বিকল্প চিন্তা করার সুযোগ নেই। যেমন- ভাই, বোন, সন্তান চাচা-ফুফু একাধিক হতেও কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু মা-বাবা দুনিয়া ছেড়ে চলে গেলে তাদের বিকল্প কোনোভাবেই কল্পনা করা যায় না। এ জন্যই মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন মা-বাবার খেদমত করার প্রতি নির্দেশ দিয়ে এরশাদ করেছেন ‘আপনার পালনকর্তা নির্দেশ দিয়েছেন যে, তাকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করনা এবং পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার কর। আলোচ্য আয়াতে লক্ষণীয় ব্যাপার হলো এই যে, মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন তাঁর এবাদতের পর অন্য কোনো ব্যাপার উল্লেখ না করে সরাসরি পিতা-মাতার সঙ্গে ভালো আচরণ ও তাদের খেদমতের নির্দেশ দিয়েছেন।
আয়াতের পরবর্তী অংশে পিতা-মাতার সঙ্গে শ্রদ্ধাপূর্ণ আচার-আচরণ ও বার্ধক্য বয়সে তাদের খেদমতের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এবং তাদের জন্য দোয়া করার প্রতিও তাগিদ দেওয়া হয়েছে। হাদিসের কিতাবগুলোতেও পিতা-মাতার খেদমতের বিষয়ে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অসংখ্য বাণী পাওয়া যায়। হজরত আবু হোরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, একবার এক ব্যক্তি বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমার সম্পর্কিত লোকদের মধ্যে কে সর্বাধিক সৌজন্যমূলক আচরণ লাভের অধিকারী? তিনি বললেন, তোমার মা। তিনি পূনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, তারপর কে, তিনি বললেন, তোমার মা। আবার জিজ্ঞাসা, করলেন তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। তিনি আবারও জিজ্ঞাসা করলেন তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার পিতা। অন্য এক বর্ণনায় রয়েছে তিনি বললেন, তোমার মা, তারপর তোমার মা। তারপর তোমার মা। অতঃপর তোমার পিতা। এরপর তোমার (পর্যায়ক্রমে) নিকটবর্তী ব্যক্তিরা (বুখারি ও মুসলিম)।

পরপর তিনবার মায়ের কথা উল্লেখ করলেন এবং চতুর্থবার বাবার কথা উল্লেখ করলেন। কারণ সন্তান গর্ভে ধারণ, জন্মের পর থেকে শুরু করে প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া পর্যন্ত তাকে লালন-পালনে মায়ের কষ্ট ও অবদান বাবার চেয়ে বহুগুণে বেশি। প্রিয় পাঠক! সন্তানের সুখের জন্য মা-বাবা নিজেদের তিলে তিলে ক্ষয় করেন। সুখ-শান্তি বিসর্জন দেন, যা পৃথিবীর অন্য কোন ত্যাগের চাইতে হাজারো গুণ বেশি। সন্তান যখন মা-বাবা হয় তখন প্রত্যেকে ঠিকই বুঝতে পারে। তাদের প্রতি মা-বাবার কতই ইহসান রয়েছে। রসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী থেকেই অনুধাবন করা যায়। সন্তানের প্রতি মা-বাবার কত ত্যাগ রয়েছে ও আল্লাহর পক্ষ থেকে মা-বাবা সন্তানের জন্য কত বড় নেয়ামত। তাই রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মা-বাবার খেদমত করার নির্দেশ দিয়েছেন। হাদিস শরীফে রাসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, তার নাসিকা ধূলিমলিন হোক, তার নাসিকা ধূলিমলিন হোক, তার নাসিকা ধূলিমলিন হোক। জিজ্ঞাসা করা হলো, ইয়া রাসুলুল্লাহ! কে সে? তিনি বললেন, যে ব্যক্তি তার পিতা-মাতার কোনো একজনকে অথবা উভয়জনকে তাদের জীবিত অবস্থায় পেল কিন্তু খেদমত করে বেহেশত লাভ করতে পারল না (মুসলিম)। আমরা যদি নবী করীম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবন আদর্শ তালাশ করলে তিনি তার সম্মানিতা দুধমা হযরত হালিমাতুস সাদিয়া (রা.)-এর সম্মানার্থে দাঁড়িয়ে গায়ের চাদর বিছিয়ে দিয়েছিলেন।
উক্ত ঘটনায় নবীয়ে আরাবি মোহাম্মদ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মায়ের সম্মানের এক দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। ইতিহাস সাক্ষী, এই ধরায় অনেক ওলী আল্লাহ মায়ের খেদমত ও দোয়ায় ইতিহাসে অমলিন হয়ে আছেন।
আমরা জগত বিখ্যাত ওলী বায়েজিদ বোস্তামি (র.)-এর নাম শুনেছি। তার জীবনী তালাশ করলে দেখা যায় তিনি অসুস্থ মায়ের শিয়রে এক গ্লাস পানি নিয়ে সারা রাত দাঁড়িয়ে ছিলেন। ফজরের সময় মায়ের ঘুম ভাঙলে দেখেন তার সন্তান তার শিয়রে পানির গ্লাস নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মা খুশি হয়ে খোদার কাছে দোয়া করেছিলেন যে, হে আল্লাহ তুমি আমার বায়েজিদ বোস্তামিকে ওলী বানিয়ে দাও। সেই দোয়া আল্লাহ কবুল করে বায়েজিদ বোস্তামির নাম ওলীদের খাতায় লিখে দিলেন।
পরিশেষে, আল্লাহ যেন আমাদেরকে মা বাবার খেদমতের তাওফিক দান করে। আমিন।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত