ধোঁকা

ধোঁকা
ফর্সা মেয়ে বিয়ে করবে না নিশাত। নিশাতের পছন্দ কুচকুচে কালো মেয়ে। নিশাতের পছন্দ মত খোঁজা হচ্ছে মেয়ে।
নিশাতকে দেখে, তার বন্ধু রাতুলও বিয়ের জন্য কালো মেয়ে খোঁজছে।
রাতুল থেকে, তার বন্ধু। তার থেকে, তার বন্ধু। এভাবে সারাদেশে, সবার পছন্দ কালো মেয়ে। এখন কালো মেয়েরা রাস্তা দিয়ে হাটলে, ছেলেরা তার পিছু পিছু হাটে। ডিস্টার্ব করে। লোকজন ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকে। প্রতিদিন প্রপোজ করে। কিছু ফাজিল পোলাপান কাগজে I Love You লিখে ছুড়ে মাড়ে। কালো মেয়েদের মায়েরা বাড়ির গেটের সামনে, ঝাটা হাতে দাড়িয়ে থাকেন। বাড়ির সামনে ছেলেরা আড্ডা দেয়, ইটিসপিটিশ করে। কুচকুচে কালো মেয়েদের বিয়ে হচ্ছে বড় বড় ঘরে, ছেলে বিসিএস ক্যাডার, সরকারি কোন বড় চাকরি করে, ব্যাংকার এমন কারো সাথে।
ফর্সা মেয়ে গুলো ঘরের দরজা বন্ধ করে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁন্না করে। তাদের বিয়ে একের পর এক ভেঙে যাচ্ছে। তাদের পিতা-মাতার টেনশনের শেষ নেই। কি করে এমন ফর্সা মেয়ের বিয়ে দিবে, এই চিন্তায় তাদের ঘুম নেই।
ফর্সা মেয়েদের বিয়ের সমন্ধ আসছে, রিক্সাওয়ালা, হিরো আলম টাইপের কারো সাথে। ফর্সা মেয়েদের ভালো ঘরে বিয়ে দিতে হলে, দিতে হচ্ছে যৌতুক। কেউ কেউ বাড়ি বিক্রি করে তার ফর্সা মেয়ের বিয়ে দিচ্ছে। সেই বিয়েও বেশিদিন টিকছে না। দুদিন পর পরই মেয়ে যৌতুকের জন্য আসছে। মেয়েরা এখন কালো হবার জন্য বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা করছে। সারাদিন রোদে থেকে তক কালো করছে। বাজারে বিভিন্ন ক্রীম বের হয়েছে কালো হবার জন্য, সেগুলো ব্যবহার করছে। পঁচা ডিম মুখে মাখছে। কেউ কেউ আলু বেটে পনের দিন পঁচিয়ে রেখে মুখে মাখছে। সবার মধ্যেই প্রতিযোগিতা চলছে, কে কত বেশি কালো হতে পারে। যে কোন উপায়েই হোক, কালো হওয়া চাই।
“ফেয়ার এন্ড লাভলী” কোম্পানী এখন আর ফর্সা হবার ক্রীম বানায় না। এখন তারা ফেস কালো হবার ক্রীম বানায়। এই ক্রীমের নাম “ডার্ক ভূত”। এই ক্রীম ব্যবহারে সাত দিনেই ত্বক করে ভূতের মত কালো কুচকুচে। “লাক্স” সাবান এখন, ‘বাদাম, কিসমিস, দুধ, দারচিনি, এলাচ’ দিয়ে তৈরি করে না। এখন ‘লাক্স’ সাবান তৈরি করা হয় ‘গোবর, মুরগীর বৃষ্ঠা, হাসের বৃষ্ঠা, কুকুরের বৃষ্ঠা সহ আরও দশ ধরনের বৃষ্ঠা দিয়ে। “লাক্স” সাবানের বিজ্ঞাপন এখন আর ফর্সা সুন্দরী মেয়েদের দিয়ে করানো হয় না। এখন নাইজেরিয়ার মত কুচকুচে কালো মেয়েরা “লাক্স” সাবানের বিজ্ঞান দেয়। মাত্র তিন সাপ্তায় ত্বক করে কালো থেকে আরও বেশি কালো।
বিউটি পার্লারে ফর্সা হবার জন্য, এখন আর কেউ যায় না। তাই বিউটি পার্লার ব্যবসায়ীরা “বিউটি পার্লার” নাম পরিবর্তন করে “মহিলা গ্যারেজ” নাম দিয়েছে। এই মহিলা গ্যারেজ ব্যবসায়ীদের স্লোগান হচ্ছে, “ফর্সা মেয়েদের দিন শেষ, কালো মেয়েদের বাংলাদেশ” মহিলা গ্যারেজ এমন এক জিনিস। যেখানে ঢুকছে, ফর্সা-রুপবতী-অপূর্ব সুন্দরীরা। আর ভেতর থেকে বের হয়ে আসছে, স্মার্ট কুচকুচে কালো কাজের বুয়া হয়ে।
অনেক খোঁজা খুঁজির পর, ভূতের মতো কুচকুচে কালো এক মেয়ের সাথে নিশাতের বিয়ে হলো। বাসর হলো।
ঘটনা ঘটল পরদিন সকালে। বিয়ের পরদিন সকালে ফ্রেশ হবার পর নিশাত লক্ষ করল, তার বউ ভূতের মতো কুচকুচে কালো নয়। তার বউ অত্যন্ত ফর্সা-রুপবতী-অপূর্ব সুন্দরী। এক সপ্তাহ পর একদল যুবক রাস্তা অবরোধ করে বসে আছে। সেই দলের লিডার হলো, নিশাত। তাদের সকলের হাতে সাইনবোর্ড। সেই সাইনবোর্ড লেখা, “প্রতারক, ধোঁকাবাজ ‘মহিলা গ্যারেজ’ ব্যবসায়ী ও কর্মীদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত, রাস্তা থেকে উঠব না
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত