খুন

খুন
তোমার কি এখন আর আমার সাথে থাকতে ভালো লাগে না? ” কোথায় দরজা খুলার পর মিষ্টি করে বলবে, এক গ্লাস ঠান্ডা পানি এনে দিচ্ছি। তুমি হাতমুখ ধুয়ে নাও। তা না করে তরী এমন একটা শক্ত প্রশ্ন করলো! হাসান কোনো জবাব দিলো না। পায়ের জুতো খুলে দরজার পাশে রাখলো। সোফায় বসে টাই খুলছে সে। তরী কিছুটা নিরামিষ গলায় বললো, “ তোমার কি আমার সাথে কথা বলার আগ্রহও কমে গেছে? ” হাসান এবার জবাব দিলো, “ এক গ্লাস ঠান্ডা পানি দিয়েও তো প্রশ্নগুলো করতে পারতে, না? ” তরীর মনে হলো কাজটা ভুলই করেছে। বেচারা সেই সকালে বের হয়। আসে সন্ধ্যার পর। পাবলিক বাসে করে যাওয়া আসা। শীতকালেও গরম লাগে। পানির তৃষ্ণা পায়। আগে হাতে এক গ্লাস ঠান্ডা পানি দেয়াই উচিৎ ছিলো।
এখন রান্নাঘরে ঢুকে এক গ্লাস ঠান্ডা পানি এনে হাসানকে বললো, “ আমি কি বড় ভুল করে ফেলেছি? “
হাসান বুঝতে পারছে। আজকে বাসায় কেউ এসেছে। তাঁর নামে তরীকে বানিয়ে বানিয়ে কিছু বলে ভয় দেখিয়েছে। ভাবছে ফ্রেশ হয়েই তরীর সাথে কথা বলবে। এক গ্লাস পানি পান করে হাসান আরেক গ্লাস ঠান্ডা পানি আনার আদেশ করলো, “ আরেক গ্লাস ঠান্ডা পানি আনো। আজকে খুবই গরম পড়েছে। ফ্যান চলছে না কেনো? বিদ্যুৎ নেই? “
তরী আরেক গ্লাস ঠান্ডা পানি হাতে নিয়ে খেয়াল করছে হাসান মুচকি মুচকি হাসছে! হাসিটা লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। সে বুঝতে পারলো না হাসান আসার পরে কী এমন হাসির কথা বলে ফেলেছে!
“ তিনটে প্রশ্ন করলাম। একটা প্রশ্নের জবাবও দিলে না। তুমি কি আমার সাথে এখন কথা বলতে চাচ্ছো না? ”
হাসানের মাঝে মাঝে মনে হয়। পাশের বাসার রুমকি নামের মহিলাটা যদি আপন কেউ হতো। তাহলে গালে প্রত্যেকদিন কষে কষে থাপ্পড় দিতো। মহিলার খেয়েদেয়ে কাজ নেই। সারাক্ষণ তরীর মাথা খাবে।
“ গোসলের পানি আছে? ”
“ থাকবে না কেনো? কোনোদিন কি আমি পানি ফুটিয়ে রাখতে ভুল করি? ”
আলমারিতে তাকিয়ে দেখলো হাসান, একটা লুঙ্গিও নেই, তিনটে লুঙ্গির মধ্যে! তরীকে জিজ্ঞেস করলো, “ লুঙ্গি কোথায় আমার? একটাও যে দেখছি না! ” তরী স্বভাবসুলভ অভিমানী কণ্ঠে বললো, “ এক ফকির এসেছিলো। উনার গায়ের পোশাকের অবস্থা খুব খারাপ ছিলো। তাই তোমার লুঙ্গি তিনটা দিয়ে দিছি। প্যান্ট তো পরে না। নাহলে প্যান্টও দিতাম। এখন আবার এর জন্য বকা দিয়ো না! ” হাসান চেপে রাখা মুচকি হাসিটা উন্মোচন করলো। হাসানের এখন আর গোসল করার মতো লুঙ্গি নেই। গোসলখানার দরজা লাগিয়ে এখন গোসল করতে হবে। নাহলে দরজা খোলা থাকে। গোসল করতে করতে অফিসের আলাপ সেরে নেয় তরীর সাথে! তাঁর এই কাজটা করতে এখন কষ্ট হবে। ফকিরকে দুটো লুঙ্গি দিলেও পারতো তরী। একটা থাকলে গোসল করা যেতো পরে কমপক্ষে। তবুও এই ব্যাপার নিয়ে তরীকে বকাবকি করার মতো ছেলে সে নয়।
“ আমি তোমাকে বকি? “
“ ভালো করে কথাও তো বলছো না। আজকে নিশ্চিত বকবে। ”
“ নাহ, আজকেও বকবো না। কারণ তুমি ভুল কিছু করোনি। বুঝা গেছে? এখন আমি গোসল করবো। ”
কথাটা হাসান হাসিমুখেই বলেছে। তবুও তরীর মনে হচ্ছে সে রাগি গলায় বলেছে! গোসলখানায় ঢুকে দরজা লাগিয়ে দেওয়ার পর তরীর সন্দেহের জোর আরো বাড়লো! সঙ্গে সঙ্গেই জিজ্ঞেস করলো, “ কী ব্যাপার? দরজা লাগিয়ে দিলে কেনো? তুমি তো কোনোদিন দরজা লাগিয়ে গোসল করো না। গল্প করতে করতে গোসল করো। এখন কি আর আমার সাথে গল্প করতেও ইচ্ছে হচ্ছে না? ” হাসানের জবাব, “ জানতাম আমি, এই প্রশ্নটাই করবে। লুঙ্গি যে নেই। আমার তো এখন উলঙ্গ হয়ে গোসল করতে হবে। “
“ উলঙ্গ হয়ে গোসল করার কী আছে? প্যান্ট পরে করো! “
“ প্যান্ট পরে কেউ গোসল করে? প্যান্ট পরে গোসল করতে ভালো লাগে না। বিরক্ত লাগে! “
“ আমাকে তোমার বিরক্ত লাগছে এই বলো। ” হাসান আর জবাব দিলো না। পানির শব্দ হচ্ছে। তরী দাঁড়িয়েই থাকলো দরজার সামনে। অপেক্ষা করছে হাসান তোয়ালে আনার জন্য কখন বলবে। তখন জিজ্ঞেস করে নিবে। প্রশ্নের জবাব দিলো না কেনো। কিন্তু হাসান তোয়ালের জন্য বলছে না।
“ কী ব্যাপার? আজকে তোমার তোয়ালেও লাগবে না নাকি? “
“ তোয়ালে নিয়েই না ঢুকলাম। তুমি খেয়াল করোনি! “
তরী অবাক হলো। সে স্পষ্ট দেখেছে হাসান তোয়ালে ছাড়া গোসলখানায় ঢুকেছে। এখন বলছে তোয়ালে নিয়েই! আলমারিতে, খাটে কোথাও তোয়ালে নেই! খুঁজে দেখলো তরী।
“ আচ্ছা, আমি কি আজকাল চোখে কম দেখছি? “
“ সেটা আমি বলবো কীভাবে? তুমি জানো। “
“ তুমি বলবে কীভাবে মানে? একসঙ্গে থাকো আর বলতে পারবে না? “
হাসানের গোসল শেষ। তোয়ালে প্যাঁচিয়ে বের হয়ে আসলো। হাসান খালি গায়ে থাকলে। তরী তাকিয়ে থাকতে পারে না। লজ্জা লাগে। হাসান আরেকটা প্যান্ট আর টি-শার্ট পরে নিলো। তরী এবার সামনে গেলো। অনেকগুলো প্রশ্ন করে ফেলেছে সে। সবকটার উত্তর নিয়েই ছাড়বে সে। হাসান বললো, “ কী ব্যাপার? টেবিলে ভাত দাও। ক্ষুধা লেগেছে তো। “
তরীর মনে হলো। আরেকটা ভুল সে করে ফেলেছে। সকালে কোনোরকম নাশতা করে হাসান বের হয়। তাড়াহুড়োর জন্য ভালো করে খেতে পারে না। তারপর অফিসে দুপুরের খাবার খায় বারোটায়। এরপরে ফিরে এসে গোসল করে ফ্রেশ হতে হতে আটটা বেজে যায়। আজকাল তো আরো বেশি সময় লেগে যাচ্ছে। হাসানের এখন চরম ক্ষুধা। ভাত দেওয়ার পরই এসব প্রশ্ন করা উচিৎ ছিলো। রান্নাঘরে গেলো তরী। ঢেঁড়স ভাজি, দু প্লেট ভাত আর ছোট বাটিতে করে ডাল এনে টেবিলে রাখলো সে। হাসান অবাক হয়ে বললো, “ অমা, দুই প্লেট ভাত তো আমারই লাগে। তুমি খাবে না? “
“ নাহ, আমি খেয়ে নিয়েছি। “
“ মিথ্যা বলছো কেনো? তোমার চোখমুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে খাওনি। যাও তোমার জন্য ভাত নিয়ে আসো। ”
“ বললাম তো খেয়েছি। বিশ্বাস হয় না? “
এই কথাটা একটু রাগ দেখিয়েই বললো তরী। হাসান মনে মনে ভাবছে। এবার বেতন পাওয়ার পর একটা পিস্তল কিনবে। তারপর রুমকিকে গুলি করবে। ভদ্রমহিলার কারণে তরী অকারণে রাগ করে। কি না কি বলে যায়। তরিও বিশ্বাস করে বসে!
“ কি হলো? উঠে পড়লে কেনো? খাবে না? “
“ নাহ, খাবো না। আগে তোমার মনের যত রাগ আর প্রশ্ন আছে। সব বলো। উত্তর দিয়ে তবেই খাবো! “
তরীর মনে হলো এই বুঝি হাসান জেদ করে বসেছে। একবার জেদ করে বসলে সে দুই তিন দিনও খায় না! না খেয়ে অফিস করতে বেচারার খুব কষ্ট হয়। তবুও জেদের কাছে হার মানে না! তরী এবার শান্ত গলায় বললো, “ আরেহ, আমার কোনো রাগ নেই তো। আর প্রশ্ন, কীসের প্রশ্ন? কোনো প্রশ্ন নেই। তুমি খাওতো। “ নাহ, কী কী যেন বলছিলে? এক এক করে বলো! ” ঠিকই তো। হাসান জেদ করে বসেছে! তরী দৌড় দিয়ে রান্নাঘরে ঢুকলো। আরেকটা প্লেটে ভাত আর ঢেঁড়স নিয়ে টেবিলে এসে বসলো। “ আসলে আমিও খাইনি। তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। বসো তুমি। ডাল গরম করে আনবো? ”
হাসান আর কথা বাড়ালো না। চেয়ারে বসে খেতে শুরু করলো। তরীও কিছু বলছে না। খাওয়ার পরে যা বলার বলবে। না খেয়ে ঘুমিয়ে গেলে আবার পেট ব্যথা শুরু হয় হাসানের। হাসান যখন খায়। চোখ প্লেট থেকে সরায় না। একেবারে খাওয়ার পর প্লেট থেকে চোখ তুলে। দেখতে খুব ভালো লাগে তরীর। অবাক হয়ে যখন তাকিয়ে থাকে। তখন হাসান খেয়াল করে না। মাঝেমধ্যে চোখ তুললে। লজ্জায় পড়ে যায় তরী। এমনটা অনেকবার হয়েছে। হাসানের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে। নিজের প্লেটে পুরো ভাতই রয়ে যায়! হাসান উঠার পর সে খায়! আজকেও তাই হলো।
“ খাচ্ছো না কেনো? মজা হয়নি? আজব মেয়ে তুমি। তোমার রান্না আমি পেট ভরে খাই। আর তোমার ভালো লাগে না! “
তরীর খেয়াল হলো। ভাত এক লঙ্কাও মুখে দেয়া হয়নি! “ হ্যাঁ? মজা হয়েছে তো। এইযে খাচ্ছি। ” তারপর তিন মিনিটে সে খেয়ে শেষ করলো। হাসান মশারি টেনে শুয়ে পড়েছে ইতিমধ্যে। প্রত্যেকদিন হাসান মাঝরাতে উঠে একটা সিগারেটে খেয়ে তারপর ঘুমায়। শোবার আগে খেলে তরীর কাছে মুখ নিলে সে বমি করে দেয়! খাওয়া শেষে তরী শোবার রুমে এসে দেখলো আজকে হাসান এখনই সিগারেট ধরিয়ে ফেলেছে! এর অর্থ হচ্ছে আজকে কোনো আদর দেওয়া নেওয়া হবে না! জড়াজড়ি হবে না! এর জন্য তরী নিজেকেই দায়ী করছে! আসার পর থেকেই একের পর এক প্রশ্ন করে ছেলেটার মাথা গরম করে দিয়েছে। তারপর তিনটা লুঙ্গির মাঝে সবকটা দিয়ে দিছে ফকিরকে। আজকে প্যান্ট পরেই গোসল করতে হয়েছে! মশারির ভেতর গা ঢুকিয়ে দিয়ে তরী বললো, “ কালকে আসার সময় একটা লুঙ্গি কিনে আনবে। আর শোবার আগে সিগারেট খাবে না। ”
হাসান মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো। সিগারেট খাওয়া শেষে মশারির ভেতরে এসে গা ছাড়তেই চোখে ঘুম।
পরিশ্রমী মানুষের শরীর বিছানায় লাগার পরপরই চোখে ঘুমের বন্যা এসে যায়। সকাল দশটা বাজে এখন। ভোর রাত্তিরের ঘুমটা ছেড়ে তরীর উঠতে হয়। রান্নাবাড়া করতে হয়। হাসানের দুপুরের খাবার টিফিন বাটিতে সুন্দর করে ভরতে হয়। নাহলে খারাপ হয়ে যায়। হাসান অফিসে যাবার পর কয়েকঘন্টা আবার তরী ঘুমায়, নাহয় মাকে ফোন দেয়। মাকে ফোনে না পেলে কাপড়চোপড় ধুয়ে ফ্যানের নিচে ছড়িয়ে রাখে। এরপরই রুমকি ভাবী এসে যায়। আজকেও তার ব্যতিক্রম হলো না। কলিং বেল বাজার সাথে সাথেই সে দরজা খুলতে গেলো।
“ কী ব্যাপার তরী? কী করছিলে? ”
“ এইতো ভাবী কিছু না। ভেতরে আসুন না। ”
ভদ্রমহিলা সবসময় পরিপাটি থাকে। স্বামী ব্যাংকে চাকরী করে। বাড়িতে কাজের মেয়ে আছে। সব কাজ করে সে। উনার বাচ্চা দেখা সহ। সোফায় বসলো রুমকি। বয়স তাঁর বেশি না। ত্রিশ কি বত্রিশ। কিন্তু তরীর চেয়ে অনেক বড়।
“ আচ্ছা তরী, কালকে তারপর কী হলো? প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়েছে? ” তরী অবাক হয়ে বললো, “ কীসের প্রশ্ন? কে উত্তর দিবে? ”
“ আল্লাহ, তুমি সব ভুলে গেলে? এইযে তোমার বর হাসান, বেশি কথা বলে না তোমার সাথে। ঝগড়া করে না। ঝগড়া হলো ভালোবাসার লক্ষণ। ” তরী আবার অল্পতেই সব ভুলে যায়। কেউ মনে করিয়ে দিলে আফসোস করে। রুমকি ভাবীর কথা শুনে তাঁর বুকের পানি শুকিয়ে গেলো! আসলেই তো, হাসান তাঁর সঙ্গে ঝগড়া করে না। মনে পড়লো কালকের কথা।
“ ভাবী, কোনো উত্তর তো দিলো না। ”
“ তাই? এর মানে সে তোমাকে ভালোবাসে না! ”
“ এমনটা কেনো হবে? সে তো খুব শান্ত মেজাজের। বেশি কথা বলে না! ” রুমকি ভাবী এবার এমনভাবে দীর্ঘশ্বাস নিলো। যেন খুব খারাপ কিছু হয়ে গেছে! তরী অসহায়ের মতো আবার বললো,
“ কী হয়েছে? ”
“ আরে বোকা, শান্তশিষ্ট ছেলেরা হলো মিচকা শয়তান। এরা ঘরে বউ রেখে অন্য মেয়ের সাথে ফষ্টি নষ্টি করে। ”
তরীর কী যে খারাপ লাগলো এই কথাটা। মনে হলো মাথার উপরের ছাদ ফেটে সূর্যের তাপ তালুতে এসে পড়ছে!
“ হাসানও কি এমন? আমার তো মনে হয় না! বেচারা দৌড়াদৌড়ি করতে করতেই কূল পায় না! ”
“ দেখো, তোমার হয়তো কথাগুলো শুনতে খারাপ লাগছে। কিন্তু কদিন পর যখন একটা মেয়ে নিয়ে হাজির হবে তখন কী করবে? তাই বলছি খোঁজখবর রাখো। ”
“ খোঁজখবর আর কীভাবে রাখবো? চোখের আড়াল হলেই তো আর যোগাযোগ করার রাস্তা থাকে না। দুপুরে একবার টেলিফোন করি। টাকাও নাই যে দুটো ফোন কিনবো। মাত্র দশ হাজার টাকা বেতন পায়। বাসা ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল, পানির বিল ইত্যাদি সব দিয়ে পাঁচশো টাকাও থাকে না! ”
“ তোমার কি মনে হয় তাঁর সাথে একটা মোবাইল থাকলেই আর তোমাকে ধোকা দিতে পারবে না? যে ধোকা দিতে জানে। সে পাশে থেকেও ধোকা দিতে জানে! “
“ কিন্তু সে কেনো আমাকে ধোকা দিবে? “
“ হাইরে, বোকা মেয়ে। তোমাকে বুঝাতে পারলাম না। থাকো তুমি। আমি যাই। ”
“ বসেন না, চা করে আনি? “
“ পরে আসবো আবার। এখন না। ”
রুমকি চলে যাওয়ার পর তরী পায়চারি করছে। অশান্তি ঢুকে গেছে মনে। আসলেই কি হাসান এমন? মাকে টেলিফোন করলো সে।
“ হ্যালো, মা? “
“ হ্যাঁ রে, কেমন আছিস? “
“ ভালো না। আচ্ছা মা, তোমার জামাই কেমন? ”
“ হাসানের সাথে ঝগড়া হয়েছে নাকি? জামাই তো অনেক ভালো। টাকা পয়সা খুব নেই। কিন্তু মনটা ভালো। পরিশ্রমী ছেলে। “
“ কিন্তু, সে তো আমাকে ভালোবাসে না! “
“ ভালোবাসে না এমন মনে হলো কেনো? তোর জন্যই তো দিনরাত খেটে যাচ্ছে। ”
“ তাহলে আমার সাথে ঝগড়া করে না কেনো? ঝগড়া তো ভালোবাসার লক্ষণ! “
“ ঝগড়া করা ভালো নাকি? হাসান যখন ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ে।
তখন থেকে দেখে আসছি। সে ঝগড়া করে না। চুপ করে থাকে। নাহলে হাসানের সাথে তোর বিয়ে দিতাম? টাকা পয়সাওয়ালা লোক কি তোর জন্য আসেনি? ” “ উফ মা, এতো কথা বলছো কেনো? আজকে যদি সে আমার সাথে ঝগড়া না করে। আমি তোমার কাছে চলে আসবো। আর এখানে আসবো না! ” “ আমি তোকে বাড়িতে ঢুকতে দিবো না। অহেতুক ছেলেটাকে হয়রানি করাতে চাচ্ছিস? ”
তরী ফোন রেখে দিলো। মা হলো হাসান ভক্ত। সৎ ছেলে, পরিশ্রমী, ভদ্র, কথা বেশি বলে না। এসবই বলে শুধু।
অবশ্য তরীরও তেমনই মনে হয়। কিন্তু ইদানীং অন্যরকম লাগে হাসানকে। রাত করে বাসায় ফেরে। চুপচাপ, খেয়েদেয়ে ঘুম। কোনো বাড়তি কথা নেই। এগুলো কি ধোকা দেওয়ার লক্ষণ? যদি কোনোদিন তরী শুনতে পায়।
অন্য কোনো মেয়ের সাথে হাসান কথা বলে বা সম্পর্ক আছে। তাহলে সে ছাদ থেকে লাফ দিয়ে মারা যাবে। অন্যদিন সে ঘরের কাজ করে সময় পার করে দেয়। আজকে যেন সময় যাচ্ছেই না। ভাবলো একটা ফোন করা যাক হাসানকে। টেলিফোনের কাছে গেলো সে। হাসানের অফিসের নাম্বারে ফোন করলো।
“ হ্যালো, কে? “
“ আমি, তরী। ”
“ হ্যাঁ, কেনো ফোন করেছো? ”
“ কেনো ফোন করেছি মানে? তোমার কাছে ফোন করলে কারণ লাগবে? ”
“ আরে বাবা না। আমি এখন তো খুব ব্যস্ত। আর আজকে ফিরতেও দেরি হবে। তুমি খেয়ে শুয়ে যেয়ো। ”
বলে ফোনটা রেখে দিলো হাসান। তরীর মনে হচ্ছে রুমকি ভাবী ঠিকই বলছে। হাসান তাঁকে ভালোবাসে না। ভালোবাসলে কমপক্ষে দুপুরের খাওয়ার কথাটা জিজ্ঞেস করতো। মন আনচান করছে দেখতে হাসান কি কোনো মেয়ের সাথে কথা বলছে? চারতলা দালান। তিন তলার পুরোটা জুড়ে থাকেন রুমকীরা। এক কোণে তরী আর হাসান। রুমকি ভাবীর দরজায় কলিং বেল চাপলো তরী। দরজা খুললো কাজের মেয়ে, “ আপা, ভালো আছেন? “
“ হুম, রুমকি ভাবী কোথায়? “
“ আয়নার সামনে, সাজগোছ করছেন। আসেন না। ” তরী ভেতরে ঢুকতেই রুমকি ভাবী হাজির।
“ তরী, তোমাকে অস্থির লাগছে কেনো? নিশ্চয় তুমি ফোন দিয়েছিলে তাঁকে? সে ব্যস্ত বলে রেখে দিয়েছে? ” তরীর মনে হলো এসব কথা কাজের মেয়ের সামনে বলা ঠিক হবে না। তাহলে হাসানের সম্মান কমে যায়। কাজের মেয়েকে আদেশ করলো রুমকি ভাবী, “ দুই গিয়ে টিভি দেখ রত্না। ভালো নাটক হচ্ছে। ” কাজের মেয়ে চলে গেলো।
“ আচ্ছা ভাবী, আপনি কীভাবে বুঝে ফেললেন যে সে ব্যস্ত বলে ফোন রেখে দিয়েছে? “
“ প্রথম প্রথম এরকমই বলে। কদিন পর দেখবে তোমার ফোনই তুলছে না! “
“ এখন আমি কী করবো? “
“ আজকে আসলে সরাসরি বলবে একটা বাচ্চা চাই তোমার। বিয়ের দুবছর তো হয়ে গেলো।
প্রমোশন প্রমোশন  করতে করতে তো বুড়ি হয়ে যাবে। আর যদি কোনোদিন তাঁর প্রমোশন না হয়? তাহলে কি কোনোদিনো বাচ্চা নেবে না? বাচ্চা না নেওয়ার কারণ কি তুমি বুঝো না? বাচ্চা মেয়ে না তো। “
তরী চুপ করে রইলো এবার। হাসান এমনই বলে। প্রমোশন হলেই বাচ্চা নিবে। বাচ্চা হলে অনেক খরচ। রুমকি ভাবী আবার বললো, “ আজকে আসলে বলবে যে তুমি প্রেগন্যান্ট। দেখবে কেমন রিয়েক্ট করে! তাহলে বুঝে যাবে তাঁর ভেতরে কী চলছে! ” তরী তাই করার সিদ্ধান্ত নিলো। নতুন একটা শাড়ি পরেছে। লিপস্টিক দিয়েছে ঠোঁটে। কাজল দিয়েছে। চুলগুলো ভালো করে পরিপাটি করে অপেক্ষা করছে হাসানের। হাসান এলো আজকে রাত নটায়। দরজা খুলেই সে বললো, “ আপনি তাহলে এলেন? হাতমুখ ধুয়ে নিন। না আগে ঠান্ডা পানি এনে দিবো? ” তরীর সাজগোছ দেখে হাসান ভাবলো, আজকে মনে হয় দ্বিতীয় বিবাহবার্ষিকী। পানির গ্লাসটা হাতে নিয়ে সে বললো,
“ মায়ের কাছে যাবে নাকি? ”
“ কেনো? “
“ সাজগোছ করলে যে। “
“ মায়ের কাছে গেলেই সাজতে হবে? তাছাড়া সাজতে পারবো না? “
“ এমনটা না। তবে তোমাকে দারুণ লাগছে। কাছে আসো। ”
তরী হাসানের কাছাকাছি গেলো। গলার টাই খুলতে খুলতে বললো, “ লুঙ্গি আনার জন্য বলেছিলাম না? আনোনি কেনো? “
“ ভাবছি দুই তারিখ বেতন পেলে কিনবো। ”
“ তারমানে পাঁচ দিন দরজা লাগিয়েই গোসল করবে? ”
“ প্যান্ট পরে গোসল করতে ভালো লাগে না বাপ। ছেলে হলে বুঝতে। ”
টাই খুলে দিয়ে হাসানের শার্টের বোতামগুলিও খুলতে লাগলো তরী। হাসান বললো, “ প্রতিদিন এভাবে টাই শার্ট খুলায় সাহায্য করলে মন্দ হয় না। ” তরী হাসলো।
“ পানি রাখা আছে তো? ”
“ হুম। তুমি গোসল করে নাও। আমি ভাত আর আলুভাজি গরম করে রাখছি! “
“ শুধু আলুভাজি? ডাল ছাড়া আলুভাজি ভালো লাগে? “
“ ডাল তো শেষ! কালকে ডাল নিয়ে আসবে। “
“ আচ্ছা। ”
হাসানের গোসল হতে হতে তরী ভাত আর আলুভাজি গরম করে ফেললো। টেবিলে ভাত বেরে হাসানের জন্য বসে আছে। চেয়ারে বসার পর হাসান বললো, “ মা অফিসে ফোন করেছিলো। বললো তোমাকে যেন বাসায় ফিরেই একটা থাপ্পড় দেই! কী হয়েছে বলো তো? ”
“ তা মাই জানে। আলুভাজি কী দুপুরে খারাপ হয়ে গেছিলো? “
“ না, আর তখন ক্ষুধার চোটে ভালো খারাপ দেখার সময় থাকে নাকি? “
“ তুমি কিন্তু কিপ্টামি করছো। আমার দিকে তাকাচ্ছো না! “
“ খাওয়া শেষ করতে দিবে তো? “
“ আচ্ছা, দিলাম। ” সেই একই কাহিনী আবার। হাসান দুই প্লেট খেয়ে উঠে পড়েছে কিন্তু তরীর এক লঙ্কাও মুখে তুলা হয়নি!
“ তোমার হয় কী? আমি খাওয়ার সময় তোমার মুখ বন্ধ থাকে কেনো? “
“ তুমি বুঝবে না! আর শুনো, আমার খাওয়া হতে হতে আবার সিগারেট ধরিয়ে ফেলবে না! “
হাসান মশারি টানাচ্ছে। তরী বড় বড় লঙ্কা দিয়ে কোনোরকম এক প্লেট খেয়ে হাত ধুয়ে নিলো। হাসানের বিশ্বাস নেই। শোবার সাথে সাথে তরীকে না পেলে সিগারেট ধরিয়ে বসে। তখন একসাথে ঘুমানোই দ্বায় হয়ে পড়ে। তরী শোবার ঘরে এসেই বললো, “ বাতি নিভিয়ে দিবে না আবার। আজকে অনেকক্ষণ আমাকে দেখতে হবে তোমার। ”
“ বাতি নিভিয়ে দিলেও তোমাকে আমি দেখতে পারি। ”
“ ইশ কী কথা, আর? “
“ আর? কবিতাটবিতা পড়া হচ্ছে না ইদানীং। নাহলে কয়েকটা লাইন বলতাম। “
“ এখন আমার প্রশংসা করতে হলে তোমার কবিতার দারস্থ হতে হয়? আমি রাগ করছি! ”
তরী ভালো করেই জানে। এই কথা বললেই হাসান বুকে টেনে নিবে। কপালে কয়েকটা চুমু দিয়ে বলবে, পাগলী আমার। অনেক ভালোবাসি তোমাকে। ঠিক তাই হলো। এই মুহূর্তই উত্তম প্রেগন্যান্সির কথা বলার জন্য। আস্তে করে সে বললো, “ তুমি কি জানো আজকে কেনো সেজেছি আমি? “
“ নাহ তো, কেনো? “
“ তুমি বাবা হতে যাচ্ছো! “
কথাটা বলেই হাসানের বুকে মাথা রাখলো তরী! হাসান অবাক হয়ে বললো, “ মানে কী? বাবা হতে যাচ্ছি মানে? “
তরীর মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো! এরকম করছে কেনো হাসান?
“ এমনভাবে মানে কী বললে, মনে হচ্ছে আমার পেটে বাচ্চা অন্য কারো! “
“ কথা সেটা নয়! আমার অনুমতি ছাড়া এরকম একটা কাজ কীভাবে করলে? নিজেরাই চলতে পারছি না ঠিক করে। তার মাঝে আবার আরেক জন! “
“ বাবু কি টাকা খাবে? আমরা যতটুকু খাই ততটুকুও তো খেতে পারবে না! আর প্রমোশন আজ না হোক কাল তো হবে না? বাবুতে কী সমস্যা তোমার? “
“ তুমি বুঝবে কী? টাকা পয়সার ব্যাপারস্যাপার আছে। বাবুর জন্য অনেক কিছু কেনাকাটা করতে হয়। “
তরী কান্না করে দিলো। তারমানে রুমকি ভাবীর কথাই ঠিক। হাসান তাঁকে ভালোবাসে না। সন্তান নিতে চায় না। অন্য কোনো মেয়ের সাথে সম্পর্ক আছে! তরীর কান্না দেখে হাসান হাসছে!
“ হাসছো কেনো? ” হাসান কোনো জবাব দিলো না। হাঁটু গেঁড়ে শাড়ির উপর দিয়ে তরীর পেটে চুমু খেলো! তরীর কান্না থেমে গেলো।
“ কান্না থামিয়ে দিলে কেনো আবার? ভালোই তো লাগছিলো। সেই যে বিয়ের দিন তোমার কান্না দেখেছিলাম। এরপরে আর দেখা হয়নি। কান্না করলে তোমাকে অস্থির লাগে। কান্না করো, করো কান্না! ” তরী নিজেই চোখের পানি মুছছে। গালগোল ফুলিয়ে রেখেছে। হাসান তরীর হাতদুটো ধরে বললো, “ বাচ্চাকাচ্চা আল্লাহর রহমত। উনি যেহেতু দিতে চাচ্ছেন। আমাদের কোনো অধিকার নেই নাখোশ হওয়ার। আমি অনেক খুশি। কালকে তোমাকে মায়ের কাছে দিয়ে আসবো। ” তরী খুশি হবে না রাগ করবে বুঝতে পারলো না।
“ মায়ের কাছে দিয়ে আসবে কেনো? “
“ তোমাকে দেখাশোনা করার জন্য একজন লাগবে না? আমি তো অফিসে চলে যাবো। ”
“ তারপর অফিস করে মায়ের কাছে যাবে না বাসায় আসবে? ”
“ এটা আবার কেমন কথা? আমি একা একা থাকবো নাকি? ” তরী কথার জবাব না দিয়ে ভেঙচি দিলো। এই কান্না, এই হাসি তো এই ভেঙচি! হাসান এসব দেখে হাসে।
“ ঘুমাবে না? ”
“ তো জেগে থাকবো নাকি? তুমি যে কি প্রশ্ন করো না! তরী হেসে বললো, “ ভালো প্রশ্ন করি। আর শুনো, তোমার মশারি টানানোটা খুব সুন্দর। আমি টানালে মশা ঢুকে যায়! হাসান এবার হো হো করে হাসলো!
“ মশারি টানানোর মাঝেও সৌন্দর্য দেখতে পাও? বাহ! “
“ যাই বলি, তুমি খালি হাসো, আর কথাই বলবো না! “
চিকচিক করে রোদ উঠেছে। সকালে তরী মানা করে দিয়েছে। কদিন পর যাবে মায়ের কাছে। কিছুদিন এখানে থাকবে। আজকে সে ভীষণ খুশি। রুমকি ভাবীকে এই খুশির খবরটা দেয়ার তর সইছে না তাঁর। অপেক্ষা করছে কখন সে আসবে। ঠিক দশটা বারোতে কলিং বেলের শব্দ। দরজা খুলেই তরী বললো, “ উফ ভাবী, আপনাকে যা লাগছে না আজকে! ” রুমকী চমকে উঠলো! এরকম কথা কোনোদিনো তরী বলে না। সোফায় বসে বললো, “ যা লাগছে না মানে? খুব খারাপ লাগছে? “
“ হায় হায়, কী বলে! একদম পরীর মতো লাগছে। ” যে কোনো মেয়েকে এই কথাটা বললে খুশি হবে। কিন্তু রুমকি খুশি হতে পারলো না!
“ তুমি আজকে খুব খুশি মনে হচ্ছে? “
“ হুম, রাতে তো বললাম আমি প্রেগন্যান্ট। সে অনেক খুশি হয়েছে। আমাকে তো মায়ের কাছে রেখে আসতে চেয়েছিলো। ”
“ তাই? ”
কথাটা একদম সহ্য করতে পারছে না রুমকি। এই বাসায় প্রথম যেদিন তরীকে নিয়ে হাসান উঠেছিলো। সেদিন থেকেই হাসানের প্রতি রুমকির লোভ। ছেলেটা দেখতে যেমন সুদর্শন, হাসিটাও তেমন। ভদ্রতার কথা আর বলা লাগে না। রুমকির স্বামী দেখতে কুচকুচে কালো। মাথায় নেই চুল। খাটো এবং একদম শুকনা।
ব্যাংক ব্যালেন্সের হিসাব ছাড়া, আর কিছু দিতে পারেনি তিনি রুমকিকে। রুমকি চিন্তা করছিলো কোনোভাবে তরীকে হাসানের চোখে খারাপ বানাবে। নাহয় হাসানকে তরীর চোখে খারাপ বানাবে। হাসানকে হাতের কাছে না পাওয়ার কারণে। তরীকেই সে ভুলভাল বুঝাতে লাগলো। বাচ্চা নিতে চায় না হাসান। এই কথাটা যেদিন বলেছিলো তরী। সেদিন থেকেই রুমকি ভাবছিলো তাঁর একটু সুযোগ হলেও আছে। তরী বললো, “ অবাক হলেন কেনো? আমি জানি সে খুব ভালো মানুষ। টাকা পয়সার জন্য চিন্তা করে আরকি। বাচ্চা হলে খরচ তো হয়ই। হয় না? এমনিতে সে খুবই খুশি এই ব্যাপারে। ” রুমকি বললো, “ সে বাচ্চা নিতে চাচ্ছে? “
“ হুম। বিয়ের পর আজকে মনে হচ্ছে আমি দুনিয়ার সবচেয়ে খুশি মেয়ে। আচ্ছা ভাবী, ছেলে হবে না প্রথম মেয়ে হবে? “
“ তুমি প্রেগন্যান্ট নাকি সত্যি সত্যি? ” তরীর মুখ লজ্জায় লাল হয়ে গেলো! একটা মেয়ের সামনে সে কেনো এতো লজ্জা পাচ্ছে বুঝতে পারছে না! আসলে সে গর্ভবতী হয়েছে এক মাস আগেই! হাসানকে বলবে বলবে করে বলেনি।
“ হুম ভাবী! “
“ হায় হায়, বলো কী? “
“ হায় হায়ের কী আছে? আমি কি বাবুর মা হতে পারি না? ” রুমকি নিজেকে সামলে নিলো। সে কেনো এরকম করছে? তরীর সামনে নিজেকে খুশি দেখানো দরকার।
“ আরেহ না রে বোকা, আমাকে বলোনি তো এজন্য। আমার কাছে মনে হয় ছেলেই হবে। তুমি খুব ভালো একটা মেয়ে তো। আল্লাহ তোমার পছন্দ আগে শুনবেন। “
“ কিন্তু আমি চাই মেয়ে হোক। সে বেশি খুশি হোক। তাঁর হাসিমুখ দেখলেই আমি আকাশে উড়ি। আচ্ছা চা করে আনি? “
“ নাহ, দুপুরে এসে খাবো। এখন যাই, কিছু কাজ বাকি আছে। ”
রুমকি নিজের বাসায় ঢুকে পাগলের মতো হয়ে গেলো। কী করবে বুঝতে পারছে না। রত্নাকে বললো, “ রত্না, এদিকে আয় একটু। “
“ জি আপা। “
“ আচ্ছা, আমি কি দেখতে অসুন্দর? “
“ ছিঃ আপা। আপনি দেখতে অনেক সুন্দর। দেখেন না আপনার বাচ্চাটা কতো সুন্দর হয়েছে। “
“ তোর কি টাকা লাগবে? “
“ না আপা। টাকা দিয়া কি করবো এখন? মেলার সময় লাগবে। তখন এক হাজার টাকা দিয়েন। “
“ এর আগে টাকা লাগলে বলতে লজ্জাবোধ করিস না। “
“ আচ্ছা আপা। ” রুমকির ছোট বেলার এক বান্ধবীর নাম রেহানা। সে বড় হয়ে অপরাধের সাথে জড়িয়ে যায়। তাঁর নাম্বার রুমকির কাছে আছে। ফোন করলো তাঁকে, “ হ্যালো, রেহানা? আমি রুমকি! “
“ কিরে, কী খবর? ভুলেই গেলি বিয়ের পর। নাকি ভয় পাস? “
“ নাহ রে, শোন না। একজনকে খুন করতে হবে! পারবি তুই? “
“ কী বলিস এসব? আমি খুন করি না। আমার বস করে। আর কাকে খুন করতে হবে? “
“ আরেহ আমার পাশের বাসায় থাকে তরীর কথা বলেছিলাম না? সে আমার বরের সাথে পরকীয়া করছে। অনেকদিন পর আজকে জানতে পারলাম। আমার সংসারে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে রে। তাঁকে খুন না করে শান্তি পাচ্ছি না। আমি খুন করলে আমার ছেলের ভবিষ্যৎ খারাপ হবে। সেজন্য তোকে বললাম, তোর বস কাজটা করতে পারবে? “
“ করতে পারবে, কিন্তু টাকা লাগবে অনেক! ”
“ টাকা পয়সা কোনো ব্যাপার না। “
“ কবে করতে হবে? ”
“ আজ, এক্ষুণি। সে বাসায় একা এখন। বর গেছে অফিসে। “
“ দাঁড়া কথা বলে দেখছি। ”
কিছুক্ষণ পর আবার রেহানা ফোন করে জানালো কাজটা করতে তাঁর বস প্রস্তুত। আর কাজটা সে ফ্রীতেই করবে। রেহানার বান্ধবী বলে কথা। তারপরও ফোন করে জানিয়ে দিলো রুমকি, “ শোন, সতেরো নাম্বার রোডের, সাত নাম্বার বাসা। তিন তলায় সিঁড়ি দিয়ে উঠার পর। বাম দিকের বাসাটায় থাকে সে। আর ডানদিকে আমরা। তুই বলে দে। “
“ বলে দিয়েছি, বস রওনাও দিয়ে ফেলেছে। “
“ আচ্ছা। আমি অপেক্ষা করছি। ”
হাতে পিস্তল নিয়ে এক লোক নিচে দারোয়ানকে বললো, “ আমি তরীর কাছে এসেছি। ও আমার মামাতো বোন। “
দারোয়ান ঢুকতে দিলো। লোকটা তিন তলায় আসার পর বাম দিকের দরজায় ঠকঠক শব্দ করলো। সুন্দরী একটা মেয়ে দরজা খুলার সাথে সাথেই বুকে তিনটে গুলি করে নিচে নেমে গেট দিয়ে সুন্দর করে বেরিয়ে গেলো! আজকে হাসানের মনটা কেমন কেমন যেন করছে। অফিসের বসকে বলার পরে তিনি ছুটি দিলেন। কারণ চাকরীর বয়সে আজকেই প্রথম ছুটি চেয়েছে সে। বিকেল চারটে নাগাদ বাসায় গিয়ে পৌঁছালো সে। সিঁড়ি দিয়ে শুধু পুলিশের যাওয়া আসে হচ্ছে। নিচেও ছিলো পুলিশ! এসব দেখে মাথায় যেন চক্কর দিয়ে উঠলো হাসানের। তিন তলায় এসে দেখলো তরী দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কান্না করছে!
“ কী ব্যাপার? তুমি কান্না করছো কেনো? ” হাসানের বুকে মাথা রেখে তরী বললো, “ কে যেন রুমকি ভাবীকে খুন করে চলে গিয়েছে! আমাকে গ্রেফতার করেছিলো কিন্তু সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে ছেড়ে দিয়েছে! আমার ভয় করছে! ” হাসান দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললো, “ তোমার পেটে তো বাচ্চা। কান্না করলে অসুবিধে আছে। চলো এক্ষুণি মায়ের কাছে। ” দেরি করলো না তাঁরা বাসে করে মায়ের কাছে রওনা দিলো! হাসানের বুকে মাথা রেখে তরী বললো, “ ভাবীটা খুব ভালো ছিলো জানো! আমার মনেই হতো না যে আমি একলা একটা বাসায় থাকতাম! এখন কী হবে? “
“ চিন্তা করো না তো এসব নিয়ে তুমি। অসুস্থ হয়ে পড়বে। ” এক ঘন্টা বাসের রাস্তা। এসেই মাকে জড়িয়ে ধরলো তরী। সন্ধ্যার পর তরীর গ্লাসে ঘুমের ঔষধ দিয়েছিলো হাসান। মেয়েটার লম্বা ঘুম দরকার এখন। নাহলে চিন্তায় চিন্তায় অবস্থা খারাপ হবে। পরদিন খবরের কাগজে রুমকির ছবি দেখে রেহানা বললো, “ বস। আপনি কাকে খুন করেছেন কালকে? ”
“ কাকে আবার? তিন তলায় গিয়ে বাম দিকের দরজায় কলিং বেল বাজালাম। একটা সুন্দরী দরজা খুললো। গুলি করে চলে এলাম। এটা তোমার বান্ধবী নাকি? ” দীর্ঘশ্বাস নিয়ে রেহানা বললো, “ আপনি মনে হয় ভুল করে ডান দিকের দরজায় কলিং বেল বাজিয়েছিলেন! ” “ হতেও পারে। ”
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত