– গুড নাইট জানু ম্যাসেজ টা সেন্ট হওয়ার পর মুহুর্তে ফোনের উপরের দিকে তাকিয়ে দেখি নাম লেখা আদ্রিতা। মাথায় ছোট একটা চক্কর দিলো, এবার কি হবে, ভুলে তো ম্যাসেজ ভুল মানুষের কাছে চলে গেছে। অবশ্য এ ক্ষেত্রে আমার দোষ নেই। নিরু নিজেই ওর বোনের ফোন থেকে ম্যাসেজ দিয়েছিল, এটা জানাতে যে ওর ফোনের ম্যাসেজ শেষ। আমি উত্তর দিতে গিয়ে নিরুর নম্বরে না দিয়ে ওর বোনের ফোনে দিয়ে দিছি। বেশ কিছুক্ষণ পর ম্যাসেজ আসলো। যেমন ভয় পাচ্ছিলাম তেমন টাই হয়েছে,
– কি হয়েছে মাহির, এই সব ম্যাসেজ দেয়ার মানে কি উত্তর কি দেবো সেটাই ভাবছি। যদি বলি ভুলে চলে গেছে তাহলে তো বলবে কাকে দিছি, আমার নাম্বার কই থেকে পেলে। যদি বলি তোমাকে দিছি, তাহলে তো বকা শুনতে হবে। ভয় বাদ দিয়ে,
– আসলো ম্যাসেজ টা অন্য একজন কে দিতে গিয়ে তোমার কাছে চলে গেছে
– আমার নাম্বার পেলে কই
– তোমার নাম্বার ম্যানেজ করা তেমন কোনো কঠিন কাজ না
– তাই না। ঠিক আছে পরবর্তি তে যেন কোনো ম্যাসেজ না আসে।
– ওকে
মনে হচ্ছে হাফ ছেড়ে বাচলাম। আদ্রিতা মেবি কিছু বুঝতে পারে নি। অস্তিরতা স্বর্থেও ঘুম দিলাম। সকাল বেলা ঘুম ভাঙ্গলো একটু লেট করে, ফোন হাতে নিয়ে দেখি, ২০ টা মিস কল। দ্রুত কল ব্যাক করলাম।
– ওই কই ছিলে, সেই ভোর সকাল থেকে ফোন দিচ্ছি
– সরি জানু ফোন সাইলেন্ট ছিলো
– রাখো তোমার সাইলেন্ট, আপু কে কি বলেছো শুনি
– আমি তো কিছু বলে নি
– তাহলে কাল আপু তোমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা কররো কেন। সারারাত ফোন নিয়ে নিজের কাছে রেখেছিলো
হঠাৎ করে ফোন টা কেটে গেল। কি যেন বলতে ছিলো নিরু। বুঝতে পারলাম না। ফোন দিলাম,
– হ্যা নিরু
– আমি আদ্রিতা
– আদ্রিতা তুমি
তোতলানো কন্ঠে বললাম। বলে না যেখানে বাঘের ভয় সেখানে রাত হয় আমার সাথেও এটাই হয়েছে। সকালের ঘুম ঘুম ভাব মুহুর্তে উধাও। কি বলবো সেটাই খুজে পাচ্ছি না। আগে তো আদ্রিতাকে এত ভয় পেতাম না এখন কেন এত ভয় কাজ করছে সেটা বুঝতে পারছি না।
– আদ্রিতা, সরি
– সরি, সেটা আবার কিসের জন্য
– আচ্ছা, সব কিছু বাদ দাও, আমরা সামনা সামনি কথা বলি, ফোনে তোমাকে বোঝাতে পারবো না।
বিকালের দিকে আমি আর আদ্রিতা বসে আছি। নিরু একটু দুরে বসে আছে
– তো কবে থেকে এই সব
– তোমার সাথে ব্রেকাপ হওয়ার পর থেকে
– এত ছ্যাসড়া কেন তুমি, আমার ছোট বোনের সাথে প্রেম করতে লজ্জা করে না তোমার।
– আগে করতো না তবে এখন করছে
– বুঝেছি উত্তর সব বাসা থেকে রেডি করে নিয়ে এসেছো
– তেমন টা না, দেখ তুমি চলে যাওয়ার পর ডিপ্রেশনে ছিলাম, তখনই তোমার বোনের সাথে কথা শুরু হয়
– কথার বলার সুযোগ টা কাজে লাগিয়ে দিলে
– তুমি আবার ভুল বুঝছো, তোমার বোন আমাকে আগে প্রপোজ করেছে
– কে নিরু
– হুমম বিশ্বাস হয় না ডাক দিবো
– না, ছোট মানুষ একটা ভুল হতেই পারে, তুমি ওকে বুঝাতে পারতে
– তুমি তোমার বোন কে চিনো না নাকি, তোমার থেকে এক পা এগিয়ে সে, মানা করার সুযোগ দেয় নি আমাকে।
আদ্রিতা চুপ হয়ে গেল, হয়তো কিছু ভাবছে।
– শুধু প্রেম করেছো নাকি আরো কিছু করেছো
– আর কি করবো
– যেগুলোর অফার তুমি আমাকে করতে
– না তেমন কোনো কিছু হয় নি আমাদের মাঝে
– ইচ্ছা আছে
– তা তো সবারই থাকে, তবে আমার নেই
– তুমি আবার কোথাকার কোন মহান পুরুষ, যে তোমার মাঝে এই রকম নেশা নেই। আমাকে যখন অফার করেছিলে তখন কোথায় ছিলো এই মহাত্মা।
– তখন কার বিষয় টা আলাদা।
– কেমন আলাদা
– আশে পাশে সবাই দেখতাম কত কিছু করতো, আবেগের বসে বলে ফেলেছিলাম
– তো এখন কি আবেগ কমে গেছে নাকি
– তোমাকে হারানোর পর একটু সাবধান হয়েছি
– তোমাকে চিনি তো আমি , ছোট মানুষ আবেগ বেশি তুমি যদি সুযোগ নাও, ও বুঝতে পারবে না
– তেমন টা না আদ্রিতা নিরুকে ডাক দিলো, নিরু দ্রুত পায়ে হেটে এসে সামনে দাড়ালো, আদ্রিতা চোখ বরাবর তাকিয়ে আছে সে,
– যাকে আমি ছেড়ে দিলাম আমার বোন হয়ে তুই তার সাথে রিলেশন করিস
– সবাই সব কিছুর গুরুত্ব বোঝে না
– বাহ তোর মুখেও দেখি বুলি ফুটেছে, চল আজ বাসায় চল, দেখাচ্ছি মজা
– আপু এমন করছো কেন, আমি কিন্তু এখন বড় হয়েছি
– কত যে বড় হয়েছিস তা তো দেখতেই পাচ্ছি
আমি চুপচাপ দুই বোনের জগড়া দেখছি, এই জগড়ার মুল কারন আমি এটা ভাবতেই অবাক রাগছে। আদ্রিতা আমার এক্স গালফেন্ড, একই এলাকায় থাকি সে ক্ষেত্রে পরিচয়। ভালো জানা শোনা ছিলো। একবার ভুল ক্রমে নিরুকে রুম ডেটের জন্য অফার করি, যদিও প্লান টা এক বন্ধু দিয়েছিল। কিন্তু হিতে বিপরিত হওয়ায় সব কিছু ঝড়ের মত উলট পালট হয়ে যায়।
– মাহির কে ডাক দিলো বুজলাম না, তবে ফিরে তাকালাম নিরুর দিকে
– আমি ডাকছি মুখ ঘুরিয়ে আদ্রিতার দিকে করলাম।
– এত চিন্তা কি আছে
– তেমন কিছু না, তবে আমি অতিত ভাবছিলাম
– না না অতিত নিয়ে কোনো কথা হবে না নিরু প্রথমেই মানা করে দিলো। আমি আর আদ্রিতা নিশ্চুপ হয়ে গেল।
– আমি চাই এই রিলেশন এখানেই সমাপ্তি হোক
– কেন, রিলেশনে কি সমস্যা
– সমস্যা আছে, তুই আমার ছোট আমি যা বলবো তাই শুনতে হবে
– সব কথা কি শুনতেই হবে
– হুমম শুনতে হবে
– সরি আপু আমি মাহির কে ভালবাসি, আমি ওকে ছাড়া থাকতে পারবো না
– আবোল তাবোল বলিস না, বেশি বাড়াবাড়ি করলে কিন্তু কথা উপর তলায় চলে যাবো
– ঠিক আছে তাহলে আমি বলেও দিবো, তুমি কি কি করো
মাহির নির্বাক হয়ে আবার তাদের জগড়ায় মনোযোগ দিলো, এই অনুভুতি কোনো নাম তার নেই, অবশ্য একদিক থেকে তার কাছে মজাই লাগছে। নিরুর প্রতি উত্তরে আমার ভিতরেও এক প্রকার উৎসাহ তৈরী হলো। আদ্রিতা কার সাথে রিলেশন করে । আদ্রিতা কিছুক্ষন চুপ থেকে আবার বলতে শুরু করলো,
– নিরু বেশি বেশি করছিস না
– আমি রিলেশন করলে তোমার সমস্যা কোথায় সেটা তো বলো
– আমার আবার কিসের সমস্যা হবে, তোর যা ইচ্ছে কর। কিন্তু প্রতি সপ্তাহে তোদের এখানে হাজিরা দিতে হবে।
– কেন
– তোমাদের পুরো সপ্তাহের কাজের রিভিও
– আচ্ছা সমস্যা নেই
– নিরু একটু দুরে গিয়ে দ্বারা
আমি বুঝতে পারলাম কোনো কারনে সাবধানতার বানি আমার দিকে আসছে নিরু দুরে গিয়ে দাড়ালো,
– মাহির শোনো, ও আমার ছোট বোন। যদি কোনো খারাপ কাজের প্রস্তাব ওকে দিয়েছো তো তোমার খবর আছে বলে দিলাম
– বললাম না সাবধান হয়ে গেছি
নিরু চল বাসায় যেতে হবে। বাবা আবার খোজ করবে। তোর কারনে যদি কোনো ঝামেলা হয় সে দায় আমায় দিতে পারবি না। আমি পথের বাকে চেয়ে রইলাম। সব কিছু কেমন যেন সহজ সহজ মনে হচ্ছে। আসলে আমি নিজেও কখনো ভাবি নি নিরুর সাথে রিলেশন হবে। সেদিন আমি ছাদে বসে ছিলাম আনমনা হয়ে। আদ্রিতার সাথে ব্রেকাপ হওয়ার পর থেকে সব কিছু পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিল। চুপচাপ থাকার অভ্যাস টা তখন ই তৈরী হয়েছে। ফোনে টোন বেজে উঠলো, ফোন হাতে নিয়ে দেখি অচেনা নাম্বার, রিসিভ করলাম না, দ্বিতীয় বার রিসিভ করলাম। তারপরে ধিরে ধিরে কথা বলতে বলতে রিলেশন হয়ে গেল। হঠাৎ একটা জিনিস বুঝতে পারলাম আদ্রিতার স্মৃতি গুলো এখন আর মনে পরছে না, সো যেমন টা ভাবা ছিলো না তেমন টাই হলো। বাসায় ফিরে রুমে শুয়ে আছি। আদ্রিতা ফোন দিলো,
– মাহির তোমার কাছে মনে হয় না বিষয় টা বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে।
– তুমি হয়তো অতিরিক্ত চিন্তা করছো
– আমি কিন্তু আমার বোনের ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেবো না।
– তুমি কি অন্য কিছু বলবে নাকি, কখন থেকে শুধু একই কথা রিপিট করছো, কি হয়েছে বলবে প্লিজ
– কিছু না, আমি শুধু সাবধান করলাম, এখন রাখি
আমাকে কিছু বলার সুযোগ দিলো না আদ্রিতা। ফোন রেখে দিলো। কিছু একটা বলবে কিন্তু সীমাবদ্ধতায় বলতে পারছে না। কিন্তু কি সেই সীমাবদ্ধতা। আদ্রিতা জানায় সুবিধা হয়ে গেছে, আমি আর নিরু অনায়াসে কথা বলতে পারি। আগে ফিসফিস করে কথা বলতো, কি বলতো কিছুই বুঝতাম না। দেখা যেত অনেক সময় ধরে হ্যালো হ্যালো করে যাচ্ছি নিরুর কোনো খোজ নেই আবার কিছুক্ষন পরে বলবে, সরি আপু ছিলো পাশে। দুদিন পর, বিকালের দিকে আমি রুমে শুয়ে আছি, ঘুম ঘুম ভাব। হালকা গরম পরেছে। নিরুর ফোনে উঠে বসলাম,
– হ্যা বলো
– শপিং এ যেতে হবে তাড়াতাড়ি বের হয়ে আমাদের বাসার সামনে আসো
– এখন মাসের মাঝে কিসের শপিং
– কিছু কেনাকাটা করতে হবে, আপুর জন্মদিন ফ্রাইডে তে।
– ও আচ্ছা আমি আসছি
নিরুর বাসার সামনে দাড়িয়ে আছি, নিরু বের হওয়ার আগে আদ্রিতা বের হয়ে আসলো, আমাকে দেখে কিছুক্ষণ চোখ বড় বড় করে তাকালো আমার দিকে। কিসের এত রাগ তার আমার প্রতি বুঝতে পারি না। কিছুক্ষন পর নিরু বের হলো, সুন্দর লাগছিলো ওকে।
– বাহ তোমাকে আজ অনেক সুন্দর লাগছে নিরু সুন্দর একটা হাসি দিলো, আদ্রিতা অভিমানি স্বরে বললো,
– কেন আমাকে কি সুন্দর দেখাচ্ছে না, তুমি আমাকে বললে না কেন
আমি আর নিরু দুজন তাকালাম আদ্রিতার দিকে, তার এমন কথা মানায় না, নিরু আমাকে একটা চোখ টিপ দিলো, বুঝতে বাকি রইলো না কি হচ্ছে,
– তোমাকে তো সুন্দর দেখাচ্ছে, বলি নি যদি তুমি মাইন্ড করো,
– মাইন্ডের কি আছে
– অবশ্যই আছে তুমি এখন আমার প্রমিকার বড় বোন, তোমাকে সম্মান দেখানো উচিত, তোমাকে কেমন দেখাচ্ছে সেটা কি করে বলি
– বলতে মানা করি নি, বলতে পারো
– ওকে তুমি যদি বলতে বরো অবশ্যই বলবো
– আপু তুই এমন বিহেব করছিস কেন, তুই তো আগের থেকেই অনেক সুন্দর, তোকে কত ফলো করতাম,
তুই কখন কি করতিস, কেমন বিহেব করতিস কার সাথে আদ্রিতা চুপ হয়ে গেল। হয়তো বুঝতে পেরেছে, বেশি বেশি করে ফেলেছে সে। আমি আর নিরু পিছে পিছে হাটছি, আমার হাতের মাঝে নিরুর হাত। মেয়েটা একটু বেশি আবেগি। বড় বোন আর ছোট বোনের মাঝে বিশাল পার্থক্য থাকে। বড়রা চুপ চাপ থাকে, প্রেমের বিষয়ে সিরিয়াস থাকে। আদ্রিতার সাথে যখন রিলেশন ছিলো, স্বাধারন কোনো কাজের জন্য মাঝে মাঝে বকা শুনতে হয়েছে। রাস্তার মাজে তো কখনো আদ্রিতার হাত ধরতে পারি নি। কিন্তু নিরুর ক্ষেত্রে সব টুকু বিপরিত। ওর পাশাপাশি হাটতে হলে ওর হাত ধরতে হবে তা না হলে রাগ করবে। আদ্রিতা পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখলো কি করছি, আমি নিরুর হাত ছেড়ে দিলাম, নিরু আমার দিকে তাকালো।
– তোমার বোন কি না কি ভাববে
– কিছু ভাববে না আদ্রিতা একটা সিএনজি ডাক দিলো,
– কিরে আপু সিএনজি তে যাবি নাকি
– হুমম, যা শুরু করে দিয়েছিস তোরা কেউ দেখলে ঝামেলা আছে,
– সামান্য হাত ধরেছি এতে কি এমন ঝামেলা হবে
– তোকে এত কিছু জানতে হবে না
শপিং করতে করতে রাত হয়ে গেল।নিরু আর ওর বোনকে নিরুর বাসায় নামিয়ে দিয়ে ফিরবো, তখন নিরু ডাক দিলো। আমি দাড়ালাম,
-আপু তুই যা আমি আসছি,
– তোর আবার কিসের ইমপরটেন্ট কাজ যে আমাকে যেতে হবে
– যা না আদ্রিতা রুমের দিকে পা বাড়ালো। যদিও সিড়ির কাছে গিয়ে থেমে গেল,
– আমার কি মনে হয় জানো আপু আমাদের ব্যাপার টা নিয়ে জেলাস
– আদ্রিতা জেলাস
– হুমম, তার কথা বার্তা শুনলেই বোঝা যায় নিরু আমার হাত চেপে ধরলো,
– তুমি আমার আপুর দিকে পা বাড়িয়ো না আমি কিন্তু সহ্য করতে পারবো না
– আরে তোমার তি মাথা খারাপ নাকি, তুমি আমার ফিউচার আমি অন্য কোনো দিকে কখনো পা বাড়াবো না
– ধন্যবাদ জানু, যাও বাসায় গিয়ে ফোন দিও
রাতের খাবার খেয়ে রুমে শুয়ে আছে। দুদিন পর আদ্রিতার জন্মদিন। গিফ্ট কি দিবো সোটাই ভাবছি।রাতের চিন্তা করতে করতে ঘুমিয়ে গেলাম। ঘুম থেকে উঠলাম নিরুর ফোনে, ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি 9 টা বাজে
– কি ব্যাপার এখনো ঘুমাচ্ছে
– হুমম শরীর ক্লান্ত তাই ঘুমিয়ে ছিলাম।
– আচ্ছা শোনো উঠে খাওয়া দাওয়া করে নাও আমি একটু পর ফোন দিচ্ছি
– ঠিক আছে
খাওয়া দাওয়া করে বাসা থেকে বের হলাম নিরুর সাথে দেখা করতে হবে। আমি আর নিরু বসে আছি। পরিবেশ টা শান্ত। তবে নিরুর মুড বুঝতে কষ্ট হচ্ছে।
– কি হয়েছে
– বাবা কোনো ভাবে তোমার আর আমার ব্যাপার টা জানতে পেরেছে
– কি বলো কিভাবে জানলো
– আমি জানি না.. সকালে বাবা হাটতে বের হয়েছিলো, এসেই আমার কথা, বের হয়ে বাবা কে জিজ্ঞাসা করলাম, কি হয়েছে বাবা
– এগুলা কি শুনলাম
– কি শুনলে
– আদ্রিতা কে ডাক দাও আপু কে ডেকে আনলাম।
– জ্বি বাবা বলো
-তুমি থাকতে নিরুর নামে এই সব কি শুনলাম
আমি ভয় পাচ্ছিলাম বাবা না তোমার সম্পর্কে জানতে পারে, তবে ভয় টা তেমন না। কারন আমি জানতাম বাবা আমাকে তেমন কিছু বলবে না। নিরু বললো।
– তারপর কি হলো
– বাবা তোমাকে দেখতে চেয়েছে, বলেছে যদি তোমাকে তার পছন্দ হয় তবেই সে এই সম্পর্ক মেনে নিবে
– তাহলে টেনশন নিও আমি মানিয়ে নেব
– তোমাতে আমার ভরসা আছে ভয় হচ্ছে দিদি কে নিয়ে, যদি উল্টা পাল্টা কিছু বলে দেয় তো
– তোমার বোনের সাথে কথা বলবো নাকি
– না থাক আমি বলবো নি, তুমি দিদির সাথে আলাদা ভাবে কোনো কথা বলবে না
– তুমি ভয় পাও নাকি
– কেন পাব না
– ঠিক আছে তুমি যেমন টা চাও। এখন চলো কিছুক্ষণ হাটি।
আমি আর নিরু পাশাপাশি হাটছি। আমার হাতের মাঝে হাত গুজে দিয়েছে। এটা নিরুর অভ্যাস। আমি কখনো এই সম্পর্কের ফিউচার সম্পর্কে ভাবি নি। তবে হ্যা এখন ভাবতে বাধ্য হচ্ছি। মেয়েতে মায়া জড়িয়ে থাকে নিরু একটু বেশি মায়া ময়, তার টেক কেয়ার, পাগলামি সত্যি ভোলার মত নয়। ভালবাসায় একটা জিনিস সব সময় কাজ করে, ভয়। আর সেটা হলো হারানোর ভয়। তবে নিরুর ক্ষেত্রে সে ভয় টুকু নেই। নিরু তার জিবনের সমাপ্তি বিন্দু জানিয়ে দিয়েছে।
আদ্রিতাকে যেদিন প্রপোজ করেছিলাম, তার ঠিক দুই সপ্তাহ পর রিপ্লে দিয়েছিলো, তবুও এতটুকু বলে যে, আমরা আগে একে অপরের সাথে মিশবো, দুজন দুজন কে চিনবো এবং তারপর ভেবে দেখবো রিলেশন করবো কি করবো না। আমি তখন মানা করি নি, কারন আদ্রিতাকে আমি পছন্দ করতাম। সে অন্য সবার থেকে আলাদা। চোখে জন্ম কাজল ছিলো, বেশির ভাগ সময় চুপচাপ থাকতো। তবে সেদিনের পর থেকে একটা জিনিস সব সময় মাথায় কাজ করতো, যার ক্ষেত্রে এত ভাবতে হয় তার ক্ষেত্রে ভালবাসা কিসে।
আমি শুধু অপেক্ষা করতাম আদ্রিতা আমাকে কবে বিশ্বাস করবে, কবে বলবে আমি তোমাকে ভালবাসি। এত কিছুর পর সে আমাকে বলেনি ভালবাসার কথা। হয়তো আমাকে পছন্দ হয় নি তার। তবে যেদিন থেকে আদ্রিতা জানতে পেরেছে আমি আর নিরু রিলেশন করি, সেদিন থেকে তার ভিতর টা পরিবর্তন হয়ে গেছে। আমার প্রতি তার চিন্তা ভাবনা পজিটিভ হয়ে গেছে, আমাকে নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে। নিরু বাসায় ওকে পৌছে দিয়ে আমি বাসার দিকে রওনা দিলাম। জন্মদিনের পার্টিতে বিশেষ ভাবে দাওয়াত দেয়া হয়েছে আমাকে। সন্ধার দিকে নিরুর বাসায় গিয়ে পৌছালাম। পুরো বাড়ি টা সাজানো হয়েছে। বেশ কিচছু লোক ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। নিরু আমাকে দেখে হাসি মুখে কাছে এসে দাড়ালো,
– কখন এলে
– মাত্রই
– ঠিক আছে চলো, তোমাকে পুরো বাড়ি টা ঘুড়ে দেখায়
– ওকে চলো
দোতালা একটা বাড়ি। নিজেদের জন্য স্পেশাল ভাবে বানানো। দেয়ালে নানা রকমের পেইন্টিং। হয়তো আঙ্কেলের পেইন্টিং অনেক ভালো লাগে। আদ্রিতা রুমের তার কিছু ফেন্ডদের সাথে বসে আছে। দক্ষিনের দিকে ঘড়টা নিরুর। গোছালো রুম, দেয়ালে বড় করে তার একটা ছবি লাগানো।
– বাহ তোমার রুম টা সুন্দর তো
– তুমি আসবে বলে গুছিয়ে রেখেছি। এতটা গুছালো কখনো থাকে না। যদি মাঝে মাঝে দিদি সব কিছু গুছিয়ে দেয়। কিছুদিন পর সব আবার আগের মত হয়ে যায়। আদ্রিতা দড়জায় দাড়িয়ে আমাদের দিকো তাকিয়ে আছে খেয়াল করি নি।
– হ্যাপি বার্থডে আদ্রিতার দিকে তাকিয়ে বললাম। নিরু আমার সাথে সাথে তাকালো,
– চল বাবা তোদের ডাকছে নিচে এসে দাড়ালাম। আঙ্কেল কে দেখে সালাম দিলাম।
-আসো আমার সাথে তোমার সাথে বেশ কিছু কথা আছে আমি আঙ্কেলে৷ সাথে হাটা শুরু করলাম। শান্ত শিষ্ঠ একজন মানুষ মনে হচ্চে। চুলে পাক ধরেছে, চামড়ায় ভাজ।
– বসো আমি আঙ্কেলের পাশে বসলাম
– তো তোমার নাম কি
– জ্বি মাহির
– নিরু কে কি করে চিনো
– আদ্রিতার সাথে পরিচয় ছিলো তারপর ওর সাথে কথা শুরু হয়।
– আমি তোমার সম্পর্কে সব কিছু জানি, আদ্রিতা সব বলেছে। তবুও তোমার সাথে কথা বলার ইচ্ছে ছিলো। নিরুর যখন দুবছর বয়স তখন ওর মা মারা যায়। ছোট বেলার থেকে খুব আদরে বড় হয়েছে।
– আমি ওর খেয়াল রাখতে পারবো
– আমি জানি তুমি পারবে কিন্তু আমার মেয়ে চিন্তা তো হয় তাই তোমাকে বলছি। তাছাড়া ও প্রচুর রাগী।
– আপনি আমার উপর বিশ্বাস রাখতে পারেন।
– ঠিক আছে চলো পার্টি এটেন্ড করো। নিরু হয়তো বিনা কারনে চিন্তা করছে।
এত তাড়াতাড়ি আঙ্কেলের প্রশ্ন শেষ হবে ভাবি নি। আমি নিরু কে ভালবাসি এতটা নিশ্চয় পর্যাপ্ত নয় তবুও গুছিয়ে রেখেছিলাম অনেক কথা। কিন্তু বলতে হয়নি। আমি আর আঙ্কেল ড্রয়িং রুমে এসে দাড়ালাম। নিরু হাতের আঙ্গুল কামড়াচ্ছে। ওর এমন অভ্যাস ছিলো না আজ চিন্তায় হয়তো হয়ে গেছে। আঙ্কেল সোজা গিয়ে নিরুর সামনে দাড়ালো,
– মাহির কে আমার পছন্দ হয়েছে।
নিরু খুশিতে তার বাবাকে জরিয়ে ধরলো। আদ্রিতা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। এই সব কিছুর তার সাথে হতো পারতো কিন্তু ওর চিন্তা ভাবনায় আমি খাপ খাইয়ে নিতে পারি না। তবে নিরু আদ্রিতার থেকে ভালো, ওর ক্ষেত্রে আমাকে কখনো ভাবতে হয় নি। যদি ও রাগি তবে আজ পর্যন্ত কখনো সে আমার উপর রাগ দেখায় নি। ও আমাকে দেখে ভয় পায়। পার্টি শেষে আমি আর নিরু ছাদে দাড়িয়ে আছি। তার খুশি বাধ মানছে না।
– তোমাকে একটা কিস করতে মন চাইছে
– আমি কিন্তু মানা করি নি
নিরু আমাকে কিস করলো। আমি ভেবেছিলাম হয়তো মজা করে বলেছে কিন্তু সত্যি সত্যি করবে এটা ভাবি নি। যদিও আদ্রিতা বলেছিলো এই সব থেকে দুরে থাকতে।
– বাবা কি বললো তোমাকে
– তেমন কিছু বলে নি, তবে সাবধান করেছে
– কেমন সাবধান
– তোমাকে যেন কষ্ট না দেয়, তোমার বাবা বোন দুজনের মাঝে কই জানো তোমাকে সত্যিই অনেক ভালবাসে তারা
– ছোট বেলায় মা মারা যাওয়ার পর থেকে বাবা আর বোনের হাতে মানুষ হয়েছি।
তাদের ভালবাসা এত ছিলো যে কখনো বকা পর্যন্ত শুনি নি। আমি যেমন টা চেয়েছি তেমন টা সবসময় হয়েছে। বাবা জানতো যদি তোমায় কিছু বলে তবে আমি কষ্ট পাবো তাই তোমায় কিছু বলে নি
– আমি ভাবি নি সব কিছু এত সহজ হবে
– বললাম না বাবা আমার পছন্দ কে কেয়ার করে
– যাই হোক তারা দুজনেই কিন্তু ভালবাসার পরিক্ষায় সফল যদি তোমাকে ভালবাসার পরিক্ষা দিতে বলে তো কি করবে নিরু চুপ হয়ে গেল, তার কাছে এর কোনো উত্তর নেই। সারাজিবন যে ভালবাসা পেয়ে গেছে তার কাছে এমন প্রশ্নের উত্তর না থাকার কথা। নিরু কে অন্যের সম্পর্কে ভাবতে শেখাতে হবে।
– তেমন কোনো পরিক্ষা আমায় দিতে হবে না
– নিরু শোন মানুষ রাগ আর অভিমান ছাড়া জন্ম নেই না, তোমাকে কিছু ক্ষেত্রে ছাড় দিতে হয়, আমার ক্ষেত্রে তোমার যে মোহ তা যদি কখনো কেটে যায় তখন কি হবে ভেবে দেখেছো।
– আমি তোমার ক্ষেত্রে যেমন করে ভাবি তা কখনো কারোর ক্ষেত্রে ভাবি নি, এই যে তুমি পাশে আছো, আমি নতুন কিছু ভাবছি না, আমার পরিবারকে নিয়েও না। তুমি যেমন টা তেমন হয়ে থাকবো। যদি বলো কখনো মোহ কেটে যায় তখন তুমি অভ্যাসে থেকে যাবে। তাই বলে তুমি উল্টা পাল্টা করলে তোমাকে ছাড়বো না বলে দিলাম। আমি চুপ হয়ে গেলাম। রাগী মেয়েরা ভালবাসতে জানে তবে অনেক সময় রাগের মাথায় নিজের ক্ষতি করে ফেলে।
– বাসায় যাবে না নিরু দিকে তাকালাম। শান্ত কন্ঠে বললো। ওর মনে কি চলছে সেটা বুঝতে পারছি না, তবে কিছু একটা ভাবছে ও।
– যাবো, কিন্তু তোমার সাথে আকাশ দেখার লোভ টা সামলাতে পারছি না
– তাহলে চলো সারারাত এখানেই দাড়িয়ে আকাশ দেখি
– তুমি বললে কেন নয়
-ভালবাসার রংধনু তোদের কথা মত রং ছড়াবে না। মাহির বাসায় চলে যাক, ওর বাসার সবাই ওকে নিয়ে চিন্তা করছে
আদ্রিতার কথায় আমি আর নিরু পিছন ফিরে তাকালাম।
– ঠিক আছে মাহির তুমি চলে যাও
আমি পা বাড়ালাম। নতুন এক স্বপ্নের পথে আমাকে হাটতে হবে। অবাক করার বিষয়, পছন্দ হলো একজন কে আর ভালবাসলাম অন্যজন কে। ভালবাসা আর ভাললাগার মাঝে পার্থক্য হয়তো এটায়। নিরুর ক্ষেত্রে আমাকে ভাবতে হয় না, আদ্রিতার ক্ষেত্রে আমাকে ভাবতে হয়েছে।
গল্পের বিষয়:
গল্প