অপেক্ষা

অপেক্ষা
আমার সাথে অরুর ৩ মাসের সম্পর্ক৷ কিন্তু এই ৩ মাসে আমি একদম হাঁপিয়ে গেছি৷ ওর মত একটা আনরোমান্টিক মেয়ের সাথে প্রেম করা যে কথা একটা রোবটের সাথে প্রেম করা একই কথা। রাত ১২টা বাজে। আমি আমার রুমে শোয়ে আছি। মাথার উপর ফ্যান ঘুড়ছে। হালকা ঠান্ডা ঠান্ডা অনুভব হচ্ছে দেখে শরীরে কাঁথাটা জড়িয়ে নিলাম৷ মনের ভিতর একটা অন্য রকম ফিলিংস হচ্ছে। তাই অরুকে ফোন দিলাম,
— হ্যালো বাবু, কি করো?
~সরি, বাবুটা আবার কে?
–কে আবার, তুমিই তো আমার ছোট বাবুটা।
~আমি যদি তোমার ছোটবাবু হই তাহলে তো তুমি আমার আব্বু হও।আজ থেকে কি আমি তোমায় আব্বু বলে ডাকবো?
–নাওযুবিল্লা, এইসব কি বলো? আমি তোমার আব্বু হতে যাবো কোন সুখে?
~তাহলে আমি তোমার বাবু হতে যাবো দুখে।
–সরি আমার খুব বড় ভুল হয়ে গেছে তোমায় বাবু ডেকে।
~ইটস ওকে।
বাবা মা আকিকা দিয়ে আমার খুব সুন্দর একটা নাম দিয়েছে।তাই আর কখনো বাবু না ডেকে কষ্ট করে অরু বলেই ডেকো কেমন কথাগুলো শোনার পর মনের ভিতর যত ফিলিংস ছিলো সব জানালা দিয়ে পালিয়ে গেছে। কি আনরোমান্টিক মেয়েরে বাবা। মানুষ তার গার্লফ্রেন্ডকে আদর করে ময়না, টিয়া, জান, কলিজা কত কি বলে ডাকে আর আমি আদর করে বাবু বলে ডাকতে গিয়ে বিপদে পড়লাম।রাগে আমার হাত পা কাঁপছিলো। তাই আর কিছু না বলে চুপচাপ ফোনটা রেখে দিলাম। কয়েকদিন পর আমি আর অরু রিকশা দিয়ে যাচ্ছি। কেন জানি আজ অরুর পাশে রিকশাতে বসতে আন ইজি লাগছে। সত্যি বলতে আজ অরুর কাছে একটা জিনিস চাইবো তাই হয়তো এমন হচ্ছে। আমার এই অবস্থা দেখে অরু বললো,
~ কি হলো পিয়াস, তোমার কি বসতে অসুবিধা হচ্ছে?
–কই না তো.. আসলে তোমায় একটা কথা বলার ছিলো।
~ কি বলবে বলো। এত আন ইজি ফিল করছো কেন?
— অরু আজ ১৩ই ফেব্রুয়ারি।
~তো, আজ তো তোমারও জন্মদিন না আমারও না।
— আসলে আজ কিস ডে। এইদিনে সকল প্রেমিক প্রেমিকা একে অপরকে কিস করে।
~তাই না কি? তো এই কথাটা বলতে এত লজ্জার কি আছে? কিস করো সমস্যা নেই। অরুর কথাটা শোনার পর মনে হলো হাতে চাঁদ পেলাম।ওর মত একটা আনরোমান্টিক মেয়ে কি করে আমার এক কথায় কিস করতে রাজি হয়ে গেলো আমি সেটাই বুঝতে পারছি না। আমি আশে পাশে তাকিয়ে দেখলাম কেউ আমাদের দেখছে কি না। রাস্তাটা খুব নিরিবিলি। কেউ নেই বললেই চলে। আমি রিকসাওয়ালাকে বললাম,
–মামা তুমি সোজা রিকসা চালাও। পিছনে ভুলেও তাকাবে না। অরু আমার চোখের দিকে তাকিয়ে ছিলো। আমিও ওর চোখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। আস্তে আস্তে আমি আমার ঠোঁট গুলো অরুর ঠোঁটের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। যখনি কিস করতে যাবো তখনি অরু বললো,
~থামো পিয়াস। চি চি চি..
— কি হলো, চি চি করছো কেন?
~সত্যি করে বলো তো তুমি কতদিন ধরে ব্রাশ করো না?
— আমি তো প্রতিদিন ব্রাশ করি।
~তাহলে তোমার মুখে এত দুর্গন্ধ কেন?
চরম একটা মুহুর্তে যদি কেউ এমন কথা বলে তাহলে তো মেজাজ এমনিতেই খারাপ হয়ে যায়।তার উপর এত বড় অপমান। তাই আমি কিছু না বলে সোজা রিকাশা থেকে নেমে গেলাম।পিছন থেকে অরু ডাকছিলো কিন্তু আমি ওর ডাকে সারা দেইনি। ফাস্টডেট নামের একটা রোমান্টিক মুভি সারা রাত দেখলাম। কখন ঘুমিয়েছি নিজেও জানি না। ঘুম ভাঙ্গলো রাকিবের ফোনে…
— হ্যালো..
~পিয়াস, আমার বড় আপুর বাচ্চা হয়েছে। আমরা পরিবারের সবাই চট্টগ্রাম যাচ্ছি। তুই কি কয়েকদিনের জন্য আমাদের বাসায় থাকতে পারবি?
–অবশ্যই থাকতে পারবো। তোরা যতদিন ইচ্ছে থেকে আয়। আমার কোন সমস্যা নেই। বুঝতে পারি নি আমার ইচ্ছেটা এত তাড়াতাড়ি পূরণ হবে। রাতে যখন মুভি দেখছিলাম তখন ভাবছিলাম অরুর সাথে কিভাবে রুমডেট করবো। ভাবি নি এত তাড়াতাড়ি সুযোগটা পেয়ে যাবো। কিন্তু এখন চিন্তার বিষয় হলো অরুকে কি করে রাকিবের বাসায় নিয়ে যাওয়া যায়। মনে মনে একটা প্লেন তৈরি করলাম। অরুকে ফোন দিয়ে বললাম,
–অরু কাল দিন পর সকালে আমার সাথে এক জায়গায়ই যাবে?
~কোথায়?
— গেলেই বুঝতে পারবে। সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে ৩০ মিনিট ধরে দাঁত ব্রাশ করলাম।যাতে এইবার অরু বলতে না পারে আমার মুখে গন্ধ। অরুকে নিয়ে রাকিবের বাসার সামনে আসতেই অরু বললো,
~এইখানে কেন? আর এটা কার বাসা?
–ভিতরে আসো। ভিতরে গেলেই বুঝবে। অরুকে নিয়ে বাসার ভিতরে ঢুকলাম।
— অরু এটা আমার বন্ধুর বাসা। ওরা কয়েকদিনের জন্যবেড়াতে গেছে। তাই তোমাকে নিয়ে এলাম বাসার ডিজাইনটা দেখানোর জন্য কারণ বিয়ের পর তুমি আর আমি এই রকম একটা বাসায় উঠবো। অরু হাসতে লাগলো আর ঘুড়েঘুড়ে বাসার ডিজাইন দেখতে লাগবো।আর ঐ দিকে আমার হাত পা কাঁপতে লাগলো। কিভাবে কি শুরু করবো এই চিন্তাই।
~এই পিয়াস তোমার কি হয়েছে? তুমি এইভাবে ঘামছো কেন?
— আসলে খুব গরম তো তাই। এইদিকে আসো বেডরুমের ডিজাইনটা অনেক সুন্দর।। আমি আবার অরুকে বললাম,
— আচ্ছা অরু, তোমার গরম লাগছে না। তুমি চাইলে তোমার মোটা ওড়নাটা সরিয়ে রাখতে পারো। আমার কথা শুনে অরু মনে হয় খুব বড় ধরনের ধাক্কা খেলো। চমকে গিয়ে আমায় জিজ্ঞাসা করলো,
~চি পিয়াস এইসব কি উল্টো পাল্টা কথা বলছো?
— চি বলছো কেন? এইখানে তো আমি ছাড়া কেউ নেই তাহলে সমস্যা কি?
~সমস্যা আছে পিয়াস। চল আমরা চলে যায়। এইখানে থাকলে তোমার মাথায় উল্টা পাল্টা জিনিস ঘুড়বে।
–অরু প্লিজ, আচ্ছা আমার কি রাইট নেই তোমার একটু কাছে যাবার? আমার সব বন্ধুরা তার গার্লফ্রেন্ডর খুব কাছে গিয়েছে। আর আমি তোমার কাছে যাবো দূরের কথা তোমায় একটা কিস পর্যন্ত করি নি।
~ওরা করে দেখে আমরাও করবো না কি? তাহলে ওরা আর আমাদের মধ্যে তফাৎ রইলো কি?
–তফাৎ আছে৷ কারণ ওরা মানুষ আর তুমি হলে একটা তার বিহীন রোবট। যার ভিতর কোন অনুভূতি শক্তি নেই। প্রিয়জনকে কাছে পাওয়ার কোন আগ্রহ নেই।আজ হয় তুমি আমার কাছে আসবে নয়তো সারাজীবনের জন্য আমার থেকে দূরে চলে যাবে কারণ আমি তোমার মত আনরোমান্টিক মেয়ের সাথে সম্পর্ক রাখতে পারবো না। আমি একদমে কথাগুলো বলছিলাম।অরু মন দিয়ে আমার কথা গুলো শুনছিলো। হঠাৎ খেয়াল করলাম ওর চোখ দিয়ে একফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো।
~পিয়াস, আমি তারবিহীন রোবট না। আমার মাঝেও অনুভূতি আছে কিন্তু সব কিছুর একটা নিদিষ্ট সময় আছে। রোমান্টিকতা মানে এই নয় যে রাত জেগে নোংরা নোংরা কথা বলা। তুমি গভীর রাতে আমায় ফোন দিয়ে বাবু বলে ডাকো। কই একটা বার তো দিনের বেলা বাবু বলে ডাকো না। কখনো তো ১টা ফুল আমার হাতে দিয়ে বলো নি, বাবু এটা তোমার জন্য। তোমায় যখন কিস করতে বললাম তখন তুমি আমার ঠোঁটের দিকে নজর দিলে।কেন পিয়াস আমার কপালে কি একটা চুমু দিয়ে বলা যেতো না, অরু আমি তোমায় খুব ভালবাসি।
পিয়াস তোমাকে কাছে পেতে আমারও ইচ্ছে হয় কিন্তু তাই বলে এইভাবে না রোমান্টিকতা মানে যদি রাতের পর রাত নোংরা কথা বলা আর ভালবাসা মানে যদি হয় বন্ধুর বাসায় একান্ত সময় পার করা তাহলে সেই ভালবাসা আমার দরকার নেই। আমি আসি পিয়াস। পারলে তুমি তোমার মত কাউকে খুঁজে নিও।আমি তোমার মত রোমান্টিক হতে পারবো না আমি আমার ভুলটা বুঝতে পেরেছিলাম কিন্তু একটু দেরীতে।তাই আজ ৩মাস ধরে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধে পর্যন্ত অরুর বাসার সামনে দাড়িয়ে থাকি।আমি জানি অরু একদিন আসবে আর আমি সেই অপেক্ষায় আছি।
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত