সিগনেচার

সিগনেচার
পরীক্ষায় ফেল করার কারণে স্যার বলছে পরীক্ষার খাতা তোমার আব্বু/আম্মুরে দিয়ে সিগনেচার করিয়ে আনবা।
আমিতো ভয়ে শেষ, একে তো ফেল তার উপর কোন মুখে সিগনেচার করাবো। আচ্ছা যাইহোক বাসায় গেলাম।কিন্তু অন্যান্য দিনের মত বলিনা, আম্মু আমার এটা লাগবে দাওতো।নিজের যা প্রয়োজন নিজেই করি। যেভাবেই হোক মায়ের মন গলিয়ে সিগনেচারটা নিতে পারলেই কাজ সারছে। সারাদিন আম্মুর যত ধরনের সাহায্যের প্রয়োজন এর থেকেও বেশি করছি।
আম্মু: আজকে হঠাৎ শুভবুদ্ধির উদয় হলো কেন?
আমি: মায়ের কাজ করতে হলে শুভবুদ্ধি লাগে?
আম্মু: কি আকাম করছোস যার কারণে এতকিছু?অতিভক্তি চোরের লক্ষণ। কিছু প্রয়োজন?
আমি: কিছু লাগবেনা বলেই রান্নাঘর থেকে বের হয়ে আসলাম।
মনেমনে বলি,ধরে ফেলছে আমাকে। আমি যে এখনো চুরিবিদ্যায় সফলতা অর্জন করতে পারিনি সে আমি বুঝে গেছি। রাতে আব্বু আসলো, কিভাবে বলবো সিগনেচারের কথা, তাও আবার হিসাববিজ্ঞানে। যে বিষয় নিয়ে কিনা আমি সারাক্ষণ পড়ে থাকি।সারা পড়ার টেবিল জুড়ে হিসাববিজ্ঞানের বই। আসলেও কথা সত্যি বই খোলা থাকলে শয়তানে পড়ে ফেলে,যার কারণে আজ আমি এত পড়েও ফেল। আচ্ছা পরেরবার থেকে নাহয় বই বন্ধ করেই রাখবো এবার তো বাঁচতে হবে। আব্বুর কানের কাছে গিয়ে ঘ্যানরঘ্যানর প্যানরপ্যানর করতে লাগলাম।অবশেষে মুখ দিয়ে বলেই দিলাম আব্বু পরীক্ষার রেজাল্ট দিছে খাতায় সিগনেচার করতে হবে। আব্বু শুরুতেই বলল, কত পাইছোস?
আমি:- আগে সিগনেচার কর, পরে মার্ক দেখাবো,আমি জানি নাম্বার দেখলে কোনোমতেই আব্বু সিগনেচার করবেনা।(সবচেয়ে বড় বিপদ আব্বুও কমার্সের স্টুডেন্ট।)
আব্বু:- খাতা দেখা আমাকে।
আমি:- আগে কথা দাও খাতা দেখে সিগনেচার করবা।
আব্বু:- আগে দেখা তারপর দেখি কি করা যায়।
খাতাটা আব্বুর সামনে দেওয়ার পর আব্বু উল্টাই উল্টাই সব দেখে বলে মানুষের ফেল করারও তো একটা লিমিট থাকে,কেউ ডাবল জিরো পায়?
আমি:- আব্বু জিরো, ডাবল জিরো একই কথা একই দাম।স্যারের আজাইরা সময় বেশি তাই দুইটা শূন্য দিছে।
আব্বু:- চুপ কর বেয়াদব, ফেল তো ফেল।আবার মুখে বড়বড় কথা।
আমি:- আচ্ছা সিগনেচার করে দাও,তাহলে আর কিচ্ছু বলবোনা।
আব্বু:- তোর এই ডাবল জিরো পাওয়া খাতায় সিগনেচার করতেও আমার লজ্জা লাগে।পারবোনা সিগনেচার করতে।
আমিও মুখ কালো করে খাতাটা নিয়ে আমার রুমে চলে এসে দরজা আটকাই দিলাম।আমি জানতাম আমার সাথে এরকমই হবে সেজন্য বিভিন্ন ফলমূল, শুকনো খাবার আমার রুমে এনে জমা করছি সাথে এক বোতল পানি।ব্যস এ দিয়েই আমার দুইদিন সারবে। আমি রুমের মধ্যে এয়ারফোন দিয়ে গান শুনি আর খাই সাথে ফেসবুকিং উফফ দুনিয়া কি শান্তিময়। কিছুক্ষণ পরই আমার দরজার বাইরে তুফান হয়ে যাচ্ছে।
এয়ারফোন সরাতেই শুনতে পেলাম, অনি তুই বের হয়ে আয়,সিগনেচার করে দিব। আম্মু এখন আব্বুকে বকতেছে।রুমের ভেতরে কি না কি করে বসে আছে।আজ যদি আমার মেয়ের কিছু হয় তাহলে তোমার সংসারই আর করবোনা। আব্বুও জব্দ আম্মুও জব্দ। এই কতক্ষণে আমি সব খাওয়া লুকিয়ে রেখে দিছি। পানি সব চোখে দিছি সাথে চোখ কচলিয়ে লাল করে রুমের দরজা খুললাম। সাথেসাথেই কি যে কান্না শুরু করলো, বলল খাতাটা দে সিগনেচার করে দিই।
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত