ডাক্তারী সলুশন

ডাক্তারী সলুশন
তের চৌদ্দ বছরের এক মেয়েকে নিয়ে এক ভদ্রমহিলা আমার চেম্বারে ঢুকলেন –
-স্যার,মেয়েটাকে একটু দেখে দেন। হাসিমুখে জিজ্ঞেস করলাম-কি সমস্যা তোমার?বল মেয়েটা উদাস ভঙ্গিতে আমার দিকে তাকাল!তারপর স্মার্টলি উত্তর দিল-“আমার কিছুই ভাল লাগে না। আই অ্যাম ডিপ্রেজড্!!” আমি কিছুক্ষনের জন্য হতবিহ্বল হয়ে গেলাম!! এই পুচকি মেয়ে কয় কি! এবার তার মা বলা শুরু করল,স্যার,তার এই এক কথাই। ডিপ্রেজড!! তার বাপ তার ডিপ্রেশন কমাতে কিছুদিন আগে থাইল্যান্ড থেকে ঘুরিয়ে নিয়ে আসল।যখন যা চায় তাই দেই।লেখা পড়া নিয়েও কোন চাপ দেইনা। তবুও কি করব স্যার ?অনেকের সাথেই কনসাল্টও করেছি কিন্তু কোন লাভ হয়নি। ভদ্রমহিলার লাষ্টের কথাগুলি হাহাকারের মত শুনাল !!
এবার মেয়েটার দিকে খুব ভাল করে খেয়াল করলাম!হাতে লেটেষ্ট মডেলের আই ফোন গায়ে ওয়েস্টার্ন ড্রেস দেখতেও মাশাল্লাহ্ অনেক সুন্দর,লম্বা লম্বা নখে সুন্দর করে নেইল পালিশ লাগানো,ঠোঁটে গাঢ় মেরুন কালার লিপস্টিক,চুল সুন্দর করে ব্রাউন কালার করানো, মাঝে মাঝেই কপাল থেকে অবাধ্য চুলগুলো সরানোর অপচেষ্টা।
১৩/১৪ বছরের কিশোরীর যে মায়াময় লাবণ্যতা থাকে সেটা আমি কোথাও পেলাম না। কিশোরীর লাবণ্যতা ঢাকা পড়ে গেছে আধুনিকতার বেড়াজালে!! মেয়েটাকে বললাম,কেন তুমি ডিপ্রেজড? কোন কিছুই কেন ভাল লাগে না? তার স্মার্ট উত্তর-জানিনা! পড়াশুনায় সমস্যা??
:না প্রেম কর?
:করতাম! ছেড়ে দিছি! কেন??
:ভাল লাগে না!  এজন্য ডিপ্রেজড?
:না তাইলে??
:জানিনা কেন!! তবে আমার কিছুই ভাল লাগে না!! কি করতে ইচ্ছা করে? মানে তোমার কি করলে মনে হয় ভাল লাগবে??
:কিছুই করতে ইচ্ছা করে না। ফেসবুক,ইন্সটাগ্রাম,মিউজিকালি এগুলো ইউজ করো??
:করি,কিন্তু ভাল লাগে না!!
এইবার সিরিয়াসলি আমার ইচ্ছা করতেছিল নন-স্টপ থাপরাইয়া ওর চেহারার জিয়োগ্রাফি চেইন্জ করে দিই!
থাপরাই আর বলি-ফাজিল মাইয়া!! জীবনের তুই দেখছস টা কি? নাক টিপলে দুধ পড়বে আবার ডিপ্রেজড!!
কিন্তু বলা তো আর যায়না !!
মেয়েটাকে বললাম তুমি বাইরে বস,আমি তোমার আম্মুর সাথে কথা বলব! ওর মাকে বললাম-মেয়েকে দিয়ে ঘরের কাজ কর্ম কিছু করান? সে বলল -না,কাজ তো দূরের কথা তাকে ঠিকমত খাওয়ানোই যায় না। কত কিছু বলে বলে খাওয়াতে হয়! যা চায় সঙ্গে সঙ্গে দেই..তাও মনটা ভাল থাকুক! অকাম তো এখানেই করছেন।যে কোন জিনিষ চাহিবামাত্র দিতে বাধ্য থাকেন বলেই মেয়ের এ অবস্থা! তার পাওয়ার আর কিছুই নেই!এজন্য তার আর কোন কিছুই ভাল লাগে না! ভদ্রমহিলা হাহাকার করে বললেন-কোন উপায়ই কি নেই ?একটাই মেয়ে সবসময় এমন মনমরা হয়ে থাকলে কি ভাল লাগে বলেন!!
আমি বললাম-উপায় একটা আছে! কিন্তু সেটা মনে হয় পারবেন না! উনি বললেন-পারব,বলেন! বললাম -কাঁচা কন্চি চিনেন না!! সেটা ৩-৪ টা একসাথে করে বাঁধবেন । ভোর পাঁচ টায় এক ডাক দিবেন,না উঠলে কন্চি দিয়ে পাছায় বারি,নামায পড়াবেন..ব্রেকফাষ্ট করিয়ে ঘাড় ধরে স্কুলে পাঠাবেন।কোনরকম কাইকুই করলে সঙ্গে সঙ্গে কাঁচা কন্চি! দুপুরে স্কুল থেকে আসলে গোসল করে নামায পড়তে বসাবেন!নামাযের পর লান্চ!কোন রকম হাংকি পাংকি আবারো কাঁচা কন্চি।
লান্চের পর ১ ঘন্টা রেষ্ট!ফোন টোন সব নিয়ে নিবেন!কোন দরকার হলে আপনার ফোন ব্যবহার করবে।
বিকালে ঘরের কাজ কর্ম করবে, নাস্তা বানাবে,মাগরিবের নামাযের পর পড়তে বসবে, রাতে ১১ টা পর্যন্ত পড়াশুনা..মাঝখানে ডিনার ১১ টার পর ঘুম। ১ মাস পর ফলো আপে আসবেন৷
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত