মা দিবস সমাচার

মা দিবস সমাচার
রাত ৩টা। তুহিন শুয়ে শুয়ে মোবাইল ঘাটছে।এমন সময় গার্লফ্রেন্ড শোভার ম্যাসেজ-
~আমার বাবুতা কি করে?
:কি ব্যাপার, এতো রাতে ঘুমাও নি শোভা।আমার ঘুম আসতেছে না।জেগে আছি।তুমি কি করো?
~আমি কি করি মানে।তুমি জানো না!আজকে মা দিবস। আমি, আম্মু সেজেগুজে বসে কেক কেটে ছবি তুলবো। তারপর ফেসবুকে আপলোড দিবো।
:তো,এসব এতো রাতে কেন?৩টায় এসব করার জন্য উঠছো!
~উফ তুমি তো আসলেই একটা গাধা!তুমি তো জানো আমি রোযা রাখি না।তাই সেহেরী খাওয়ার জন্যও উঠি না। বাট এখন এত রাতে ছবি আপলোড দিলে সবাই ভাববে আমি আম্মুর কত খেয়ালও রাখি।
:ওররে!! কত বুদ্ধি।এত বুদ্ধি নিয়া ঘুমাও কেমনে।
~এসব রাখো তো।তুমি আন্টিকে মা দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে কোন পোস্ট দিলা না যে!আমার বেস্টি আস্ক্ করতেছে যে তুমি আমার সাথে ঝগড়া করে মুড অফ কিনা।
:আরেহ, আমি কি এসব মা দিবস মুখস্ত করে রাখি নাকি!
~না,তুমি এখনই পোস্ট দাও।আর আমার পোস্টেও কমেন্ট করবা।আমি এখন গেলাম।যা বলছি ফটাফট করো। তুহিন ডাইনিংরুমে যায়।গিয়ে দেখে সেখানে তার মা স্বভাবসুলভ ভাবে কাজের মেয়ে রাবেয়ার সাথে ক্যাচক্যাচ করছে।
~কিরে রাবেয়া, পানি দিয়ে গেলি না!(তুহিনের মা)
>খালাম্মা, আনতাছি। (কাজের মেয়ে)
~হুম,এক জগ পানি আনতে তুই তো দিল্লী চলে গেছিস হারামজাদী।
(তুহিনের মা) তুহিন মার পাশের চেয়ারে বসে।ডাইনিং টেবিল ভর্তি খাবার।তুহিন হঠাৎ মনে পড়ে আজ হতে ঠিক ৮বছর আগে তুহিনদের কোন কাজের লোক ছিলো না।ডাইনিং টেবিল ভর্তি খাবার থাকতো না সেহেরী টেবিলে।তুহিনের মা নিজে রান্না করতেন।তুহিন খেতে না চাইলে মা খাইয়ে দিতো।অফুরন্ত একটা শান্তি মিশে থাকতো।আজ তুহিনদের অবস্হা অনেক বদলে গেছে।সাথে অনেককিছুই। বোঝায় যায়,তুহিনের বাবার সাদা-কালো অর্থের মাখামাখিতে ডাইনিং টেবিলের অনেক খাবারের ভীড়ে স্বাদের শান্তিটুকু মিলে না। হঠাৎ তুহিনের মা বলে উঠলো-
~কিরে!আজ একদম ঠিক টাইমে আসলি।অন্যদিন তো ডেকেও তোলা যায় না।(তুহিনের মা)
:না আম্মু, কিছুনা।(তুহিন)
~কিছু লাগলে বল।প্রতিবন্দীদের মতো আমতা আমতা করতেছিস ক্যান?(তুহিনের মা,)
:আম্মু,দাদীকে বৃদ্ধাশ্রম থেকে নিয়ে আসলে হয় না! (তুহিন)
~কিহ্।দাদীকে নিয়ে আসবি!নিজে যখন টাকা রোজকার
করবি তখন আনিস। যেমন বাপ, তেমন ছেলে।(তুহিনের মা) তুহিন তার বাবার চোখের দিকে তাকায়।বাবা চুপচাপ মূর্তির মতো খেয়ে চলে যায়।তুহিনও খেয়ে রুমে চলে আসে।তুহিন হঠাৎ ভাবতে থাকে তাদের এত কিছু।অথচ তার দাদী গত ৩টা বছর ধরে বৃদ্ধাশ্রমে পড়ে আছেন।অথচ তুহিন শুনেছে, তুহিনের বাবাকে তার দাদী কত কষ্টে মানুষ করেছে। ফজরের আজান দেয়। তুহিন উঠে পড়ে বিছানা হতে।নামায পড়বে আজ সে।আজানের ধ্বনির আলোড়ন ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্রময়।নামায পড়ে তুহিন পা বাড়ায় বাবা -মার ঘরে। পরদিন বিকালে তুহিন একটু বাইরে যায়।ফিরে এসে দেখে কাজের মেয়েকে তুহিনের মা মারসে।তুহিন তাড়াতাড়ি রুমে ঢুকে বলে-
:ওকে মারসো ক্যান?(তুহিন)
~ক্যান মারতেছি!তা এই হারামজাদীকেই জিজ্ঞাসা কর!(তুহিনের মা)
:আরেহ বলবা তো কি হইসে(তুহিন)
~কি আর হবে।আলমারিতে ৫০হাজার টাকার একটা বান্ডিল ছিলো।বিকালে ভাবছিলাম বাইরে হতে ইফতারি আনাবো।আলমারি খুলে দেখি ১টা টাকাও নাই। এই হারামজাদীই সরাইছে।(তুহিনের মা)
:আম্মা,থামো।টাকাটা কেউ নেয় নাই।আমিই নিছি (তুহিন)
~তুই এতো টাকা দিয়া কি করছোস!(তুহিনের মা)
:আম্মু,বুকিং দিসি।অনেক ভালো জায়গা তো আর আগেই দিচ্ছি।তাই টাকা একটু বেশিই লাগলো।(তুহিন)
~কিসের বুকিং দিসিস তুই!ও আল্লাহ্।(তুহিনের মা)
:বৃদ্ধাশ্রম (!তুহিন)
~কি কইলি তুই!(তুহিনের মা)
:হুম আম্মু।আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।
তাই তোমাকে একটা কাজের গিফট দিলাম।আর,আমি যে বৃদ্ধাশ্রমে বুকিং দিসি সেইটা অনেক ভালো।দাদীর ঘরের মতো ফ্যান ছিলো না।আমি আগেই তাদের বলে দিসি ফ্যান লাগাইতে যাতে গরমে তোমার কষ্ট না হয়। (তুহিন)
~তুই কি আমার সাথে ঠাট্টা করিতেছিস।(তুহিনের মা)
:ঠাট্টা ক্যান মা!আব্বুর মাও তো বৃদ্ধাশ্রমে থাকে। তোমরা তো একদিন খোঁজও নাও না।ইভেনকি আব্বু নিতে গেলেও আব্বুকে বকাবকি করো।কিন্তু আম্মু আমি তোমার খোঁজ নিতে যাবো।কারণ আব্বুর মায়ের মতো তুমিও অনেক কষ্ট করেই আমাকে বড় করেছো।(তুহিন) তুহিনের আম্মু কেঁদে দিয়ে বললেন-
~আল্লাহ!কি করেছি আমি।আমি ভুল করছি।তুই আর তোর আব্বু মিলে তোর দাদীকে নিয়ে আয়।(তুহিনের মা) আজকে তুহিনের মনটা অনেক ভালো।তুহিন দের বাসার কাজের মেয়ে বাড়িতে গেছে তার অসুস্হ মাকে দেখতে। তুহিন,দাদী, তুহিনের বাবা সবাই একসাথে আজ দুপুরের খাবার খেতে বসেছে।তুহিনের মা রান্না ঘরে।তুহিন গরম গরম মাছ ভাজি পছন্দ করে। তাই তুহিনের আম্মু মাছ ভাঁজছে।তুহিন রান্নঘরে গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে বললো-
:আম্মু!একটা কথা বলবো?(তুহিন)
~কি!বল।আমি তো মাছ ভেজে নিয়েই আসছি।(তুহিনের মা)
:আম্মু,আমি তোমার জন্য আসলে বৃদ্ধাশ্রমে কোন বুকিং দেই নি।আমি আসলে দাদীকে দেখতে বৃদ্ধাশ্রমে গিয়েছিলাম।গিয়ে দেখি দাদীর রুমের ফ্যান নষ্ট।শুধু দাদী না।আরো ও অনেকের রুমের ফ্যান নষ্ট।কারো ঔষুধ শেষ৷ হয়ে গেছিলো।তাই ৫০হাজার টাকা এসব করে খরচ করেছিলাম।(তুহিন)
~আমি জানতাম,তুই অনেক ভালো ছেলে হয়েছিস। জানিসতো,আমি হয়তো কোন পুণ্য করেছি।তাই আল্লাহ তোর মতোন সন্তান দিয়েছেন।এখন থেকে যতটা পারিস ঐ বৃদ্ধাশ্রমে সাহায্য করবো।(তুহিনের মা)
:আম্মু,আই লাভ ইউ।(তুহিন)
~হয়ছে,আর ন্যাকামি করতে হবে না।যা,আমি মাছ নিয়ে আসছি।(তুহিনের মা)
:আম্মু,আমি হেল্প করি,প্লিজ।(তুহিন)
~পাগল!আচ্ছা, আচ্ছা! শোভা ম্যাসেজ দিচ্ছে।
~বাবু, কি হইছে তোমার।আমার কোন খবর ই রাখো না। তুহিন ডাটা অফ করে আম্মুর সাথে মাছ ভাঁজিতে মন দিলো।আজ কোন মা দিবস না।কিন্তু তুহিন দেখলো তার মায়ের হাসিটা অনেক সুন্দর।
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত