একজন মেয়ের গল্প

একজন মেয়ের গল্প
-নিরা ?
-জ্বী, বলুন । কথা বলার জন্য হাতটা আমার হাতের মধ্যে নিয়ে দেখলাম এপিলেপ্সির রোগীর মত কাঁপছে ।
-তোমার কি শরীর খারাপ লাগছে নিরা ? খারাপ লাগলে ঘুমিয়ে পড়। আজকে আমাদের বাসর রাত , কুছ পরোয়া নেই। ঘুম আসছে?
-ফারাবী, আমার হাতটা ছাড়ুন প্লিজ’ প্রায় চিৎকার করে উঠল সে । আমি হতভম্ব । এটা কি হল ! নিরা কি আমায় পছন্দ করছে না ?
হাত ছাড়িয়ে নিয়ে নিরা খাটের একদম কিনারায় গিয়ে গুঁটিশুঁটি মেরে শুয়ে পড়ল । মেয়েটার ওপর দিয়ে অনেক ধকল গেছে , একটু ঘুমিয়ে নিক । আমি খাটে হেলান দিয়ে সেই শুরু থেকে ভাবতে বসলাম -আমাদের বিয়েটা অ্যারেন্জড ম্যারেজ । নিরা মা’র বান্ধবীর মেয়ে । মাত্র সাতদিন আগেই নিরাকে দেখতে আমি , মা আর বাবা গিয়েছিলাম । ফাইজার ভার্সিটিতে ক্লাস থাকায় ও যেতে পারেনি । হুটহাট করে এভাবে বিয়ে করার কোনো ইচ্ছেই ছিল না আমার । নিতান্তই মায়ের জোরাজুরিতে বাধ্য হয়ে গিয়েছিলাম সেদিন । ভেবে রেখেছিলাম মেয়ে যেমনই দেখতে হোক , মাকে বাসায় গিয়েই বলব মেয়ে আমার পছন্দ হয়নি ।
গুটি গুটি পায়ে হেঁটে নিরা যখন আমার সামনের সোফায় বসল তখনই মনে হল , ও শুধু আমার । একটা হার্টবিট মিস করলাম । উজ্জ্বল শ্যামবর্ণের , কলা পাতা রঙা শাড়ি পরিহিতা অনাড়ম্বর মেয়েটি মুহূর্তেই আমার মনের সমস্ত জায়গাটুকু দখল করে নিল । সে হুমায়ূন আহমেদের ‘মায়াবতী’ নয় , বরং তার চেয়ে কিছুটা বেশি। দিঘীর জলের মত স্বচ্ছ, নিষ্পাপ দুটি চোখ । মনে হল , ওর চোখে চোখ রেখে হাজার বছর পার করে দিতে পারব । নির্লজ্জের মত বারবার ওর দিকে তাকাচ্ছিলাম । কিন্তু ও পূর্বের মতোই ভাবলেশহীন। যেন পৃথিবীতেই নেই, দৃষ্টির সীমা ছাড়িয়ে দূরে কোথাও চলে গেছে ।
পরবর্তী ঘটনা খুব সংক্ষিপ্ত । নিরার বাবা মারা গেছেন কিছুদিন হলো । ওরা দুইবোন । সম্পত্তির দিকে ওর জ্যাঠার ছেলেদের কুনজর আছে । একারনে শাশুড়ী-মা খুব টেনশনে পড়ে গেছিলেন নিরার বিয়ে নিয়ে । মা’কে একদিন সব ঘটনা শেয়ার করার পর মা নিরাকে দেখে নিজের ছেলের জন্য পছন্দ করে ফেলেন । এখন আমারও পছন্দ হওয়ায় মা’র ইচ্ছা যতদ্রুত সম্ভব শুভ কাজ শেষ করা । তাই সাতদিনের মধ্যেই তাড়াহুড়ো করে সব আয়োজন সম্পন্ন করা হলো।
এই সাতদিনে আমি কিংবা নিরা কেউ কারো সাথে একবারও কথা বলিনি । বিবাহ বহির্ভুত সম্পর্ক আমার মোটেও পছন্দ নয় । আর নিরাও কোনো এক অজানা কারণে যোগাযোগ করেনি । তখন ভেবেছিলাম , হয়তো লজ্জা পাচ্ছে বলে কথা বলতে চায়নি । কিন্তু এই মুহূর্তে এসে পরিস্থিতি আমাকে অন্যকিছু ভাবতে বাধ্য করছে । নিরা কি কাউকে ভালোবাসতো ?
একথা মাথায় আসা মাত্র আমার চোখ ফেটে জল এল । এটা সত্যি নাও হতে পারে । কিন্তু যদি সত্যি হয় ! বউকে ভালোবাসব বলে কোনোদিন একটা মেয়ের সাথে কথা পর্যন্ত বলিনি । আর এখন যদি আমার ভালোবাসার মানুষের হৃদয়ে অন্য কারো বাস হয় , তবে ! নিরার ঘুমন্ত মুখটার দিকে তাকালাম । ইশ! কে যেন পৃথিবীর সমস্ত পবিত্রতা আর মায়া এই মেয়েটার চেহারায় ঢেলে দিয়েছে । আমার খুব প্রেম প্রেম পাচ্ছে । কেমন জড়োসড়ো হয়ে শুয়ে আছে আমার মায়াবতী । আস্তে আস্তে ওর কাছে গিয়ে চুলে নাক ডুবিয়ে আলতো করে একটা আদর দিলাম । নিরা ঘুমের মধ্যেই কেঁপে উঠল । কেন জানি আমার মনে হল , এটা নিছক স্পর্শ পেয়ে কেঁপে ওঠা নয় । আতঙ্ক, গভীর আতঙ্ক।
পরদিন সকালে সবকিছুই স্বাভাবিক হয়ে গেল । শুধু নিরাকে কাছে টানতে চাইলে অদ্ভুত আচরণ করে । প্রচন্ড আতঙ্কিত হয়ে যায় । জিজ্ঞেস করলে কখনোই কিছু বলে না । অন্যদিকে ফিরে কান্না শুরু করে । তাই আমিও এখন আর কিছু জিজ্ঞেস করি না । আমাদের বিয়ের কয়েকমাস হয়ে গেছে । এরমধ্যে আমাদের সম্পর্কেরও কিছুটা উন্নতি হয়েছে বৈ কি । তবে, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক গড়ে ওঠনি । কারণ , মায়াবতী একান্তই আমার । তার সুখে আমার সুখ । ওর অনুমতি ছাড়া আমি কখনোই ওর ওপর স্বামীত্বের অধিকার ফলাতে চাই না । তবে, এই কয়েকমাসের উল্লেখযোগ্য ঘটনা হচ্ছে তার আতঙ্কের কারণ জানা ।
২সপ্তাহ আগে হঠাৎই সিজনাল জ্বরে আক্রান্ত হয় নিরা । মা, ফাইজা সবাই মিলে ট্যুরে গেছে । আমি ছুটি পাইনি বলে যেতে পারিনি । আর আমার কারণে নিরাও যেতে পারেনি । আমি অফিস থেকে ফিরে দেখি নিরা কিচেনের ফ্লোরে পড়ে আছে । কলিজায় ধ্বক করে কামড় দিল । হাত দিয়ে দেখলাম জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে । তাড়াতাড়ি বেডে এনে শোয়ালাম । মুখু কয়েকবার পানির ছিটা দিতেই জ্ঞান ফিরল ওর । আমার যেন ধড়ে প্রাণ ফিরে এল । জ্ঞান ফেরার পর কি যেন হলো ওর । চোখ-মুখ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে গেল আর চিৎকার করতে লাগল – রনি ভাই আমাকে ছেড়ে দেন প্লিজ । আম্মু বকা দিবে । প্লিজ ছেড়ে দেন । আমার অনেক খিদা লাগছে প্লিজ ছেড়ে দেন । প্লিজ ..’ বলতে বলতে কান্না শুরু করে দিল । আমি ওর মুখের ওপর ঝুঁকে বসছিলাম । এসব শুনে আমার মাথার ভেতরে ভোঁ ভোঁ করছে । এসব কি শুনছি ! এই রনি ভাইটা কে !
নিরা এক ঝটকায় আমাকে নিচে ফেলে দিল । এরপর দু’হাতে নিজের চোখ-মুখ ঢেকে কান্না শুরু করল । আমি উঠে কোনমতে ওকে শান্ত করে শোয়ালাম । সেদিন হাত পুড়িয়ে ওর জন্য রান্না করলাম । নিজ হাতে ওকে খাইয়ে , ইমার্জেন্সী মেডিসিন দিয়ে ঘুম পাড়িয়েছি । সেদিন প্রথমবারের মত আমার মায়াবতী আমার বুকে মাথা রেখে , আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়েছে । আমার নিজেকে তখন পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ মনে হল ।
পরক্ষণেই ‘রনি ভাই’ এর কথা মনে পড়তেই মনের মধ্যে প্রবল অস্বস্তি মাথা চাড়া দিয়ে উঠল । কিন্তু ভালোবাসি তো । নিরার মুখ থেকে শুনব বলে আপাতত মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিলাম । সন্ধ্যার পরে নিরার জ্বর নেমে গেল । রাতে দশটা এগারোটার দিকে নিরা তখন অনেকটাই সুস্থ। আমি ওকে খাবার আর ঔষধ খাইয়ে রেস্ট নিতে বললাম । এই ফাঁকে আমি খেয়ে নিয়েছি । রাতে ১২টার পরে আমার এক মগ কফি খাওয়ার অভ্যাস, বহু আগ থেকেই । ‌অভ্যাস না বলে এটাকে বদভ্যাস বলাই ভালো । বিয়ের আগে কফির সাথে ১-২টা গোল্ডলিফও চলতো । কিন্তু এখন নিরা পছন্দ করে না বলে ছেড়ে দিয়েছি । যাই হোক কফিতে চুমুক দিতে দিতে রুমে এসে দেখি নিরা জেগে আছে ।
-তোমার ঘুম আসছে না ?
-না ফারাবী।
-মাথায় হাত বুলিয়ে দিব ?
-তুমি আমাকে এত ভালোবাসো কেন বলতো ?
-কি করব! ভালো না বেসে থাকতে পারি না যে !
নিরা ডুকরে কেঁদে উঠল । আমি পাগলীটার হাত ধরে উঠিয়ে ব্যালকনিতে নিয়ে এসেছি । আকাশে শুক্লপক্ষের চাঁদ । ঝলমল করছে সবকিছু । আমার মায়াবতীকে আরো মোহনীয় দেখাচ্ছে । ‘রনি ভাই’য়ের ব্যাপারটা জিজ্ঞেস করতে খুব ইচ্ছা হচ্ছিল । পরক্ষণেই ভাবলাম , এত সুন্দর একটা মুহূর্ত নষ্ট করে কি লাভ! ও’কে ছোট্ট করে ডাকলাম,
-মায়াবতী ?
-হুঁ
-ভালোবাসি
-এত ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্যতা আমার নেই ।
-কি বলছো এসব ? কষ্ট পাচ্ছি তো।
-তোমাকে আজকে কিছু কথা বলব । শুনবে ? নিরার গলার স্বর যেন কেঁপে উঠল । বললাম- শুনব । নিরা আমার গলা জড়িয়ে ধরে বসল ।
-নিরা, কফি খাবে ?
-হুম
-ওয়েট কর তাহলে । বানিয়ে আনছি । খেতে খেতে শুনব, কেমন?
-উহুঁ। তোমার মগ থেকে খাব । এক চুমুক আমি , এক চুমুক তুমি । চলবে না ?
-চলবে না , দৌড়াবে । এ তো মেঘ না চাইতেই জল ।
দুজনেই হেসে ফেললাম । নিরা মগে একটা চুমুক দিয়ে বলতে শুরু করল -আমি তখন ক্লাস থ্রিতে পড়ি । বয়স ৭-৮ বছর। রিনি তখনো মায়ের কোলে শুয়ে ওঁয়া ওঁয়া করত । তখন আমাদের একান্নবর্তী পরিবার । বাবা-চাচা- জ্যাঠারা সবাই একত্রে এক ফ্যামিলি । বাবা ঢাকায় জব করতেন । কিন্তু স্যালারি ভালো না হওয়ায় আমাদেরকে নিয়ে আসতে সাহস করেন নি । সবাই আমাকে খুব আদর করতো । বিশেষ করে জ্যাঠাই মা । আমার সব আবদার উনি পূরণ করতেন । আমার কাজিনরা সবাই আমার বড় হওয়ায় তাদের আদরও পেতাম খুব ।
রনি ভাই আমার ছোট চাচার ছেলে । আমার বেশ কয়েক বছরের বড় । আমাকে খুব ভালোবাসতো । কিন্তু ঠিক কি ধরণের ভালোবাসা ছিল , তা আমি বলতে পারব না । একদিন দুপুরে জরুরী দরকারে মা বাইরে গিয়েছেন । আমাকে জ্যাঠাই মার কাছে রেখে গেলেন । কাজিনরা সবাই স্কুলে । রনি ভাইয়ের কলেজ কোনো কারণে বন্ধ। সারা বাড়িতে শুধু আমি, জ্যাঠাই মা আর রনি ভাই । কিছুক্ষণ পর রনি ভাই চকলেটের লোভ দেখিয়ে আমাকে তার রুমে নিয়ে গেল । রনি ভাইয়ের খুব সুন্দর একটা এলার্ম ঘড়ি ছিল । সেটা আমার হাতে দিল । এরপর যা হল আমি তোমাকে ভেঙে বলতে পারব না ফারাবী – বলতে বলতে নিরা কান্নায় ভেঙে পড়ল । আমি ওর হাত শক্ত করে ধরে বললাম- আমি আছি তো পাগলী ।
নিরা চোখ মুছে আবার বলতে লাগল -ওটা রেপ ছিল না । আমি কোনো ব্যথা পাইনি । কিন্তু সে আমাকে সেক্সুয়ালি অ্যাবিউজ করেছে -এটা বুঝতে পেরেছি বহুবছর পর । তার অ্যাডালেসেন্সের পরিবর্তনে সে ধৈর্য ধারণ তো করেইনি বরং খুবই জঘন্যভাবে একটা শিশুকে মলেস্ট করেছে । এই কারণটার জন্যই আমি কোনোদিন তাকে ক্ষমা করব না। সেদিন খুব কেঁদেছি । যদিও তখন বুঝতে পারিনি আমার সাথে ঠিক কি হয়েছে , তবুও অবচেতন মন বুঝেছিল যা হয়েছে খুব খারাপ হয়েছে । আমি আর পারতপক্ষে তার সামনে যেতাম না। একটা চাপা আতঙ্ক কাজ করত । কিন্তু এটাই শেষ ছিল না । প্রায় একমাস পর আবার একদিন সে একা পেয়ে আগের ঘটনারই পুনরাবৃত্তি ঘটাল । আগের বারের মত এবারেও বলে দিল- “নিরা, তোর আম্মুকে কিছু বলবি না কিন্তু। বললে তোকে বকবে । ভাইয়া তোকে অনেক আদর করিনা, হুম?”
এবার আমি প্রচন্ড আতঙ্কিত হয়ে গেলাম । আম্মুকে কিছু বলিনি । কিন্তু রাতে দু:স্বপ্ন দেখে জেগে যেতাম , চিৎকার করে কাঁদতাম। আম্মু বুকের ভেতরে চেপে ধরে রাখতো । আমি চোখ বন্ধ করলেই চোখের সামনে বিভীষিকা ভাসে । কত রাত ঘুমাতে পারিনি । সেই নরপিশাচটা তখনো সন্তুষ্ট হয়নি । ঠিক এক সপ্তাহ পরে আবার আমাকে জোরাজুরি করে তার রুমে নিয়ে গেল । দরজা বন্ধ করতে দেখে আমি চিৎকার করে বললাম -এখনি দরজা খুলুন । নইলে আমি কান্না করব আর সবাইকে বলে দেব সবকিছু । রনি ভাই ভয়ে দরজা খুলে দিল। আমি একদৌড়ে আম্মুর কাছে চলে গেলাম । সেই থেকে পুরুষদের প্রতি এক ধরণের আতঙ্ক তৈরী হয়ে গেল । পুরুষের ছায়া মাড়াতেও ভয় লাগে । আব্বু ছাড়া আমার জীবনে তুমি একমাত্র পুরুষ , যার সাথে আমি এতটা ফ্রী হয়েছি। তোমাকে অনেক ধন্যবাদ ফারাবী । মনে হচ্ছে , আমার জন্য তোমার চেয়ে পারফেক্ট আর কেউ হতেই পারতো না । আমি হাসলাম । বললাম -দূর , কি যে বল ! আচ্ছা সেই নর্দমার কীট এখন কোথায়? আমাদের বিয়েতে আসেনি ?
-না। বলছি , শোনো । লাস্ট ঘটনার কিছুদিন পর তার এইচএসসি পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষা দিয়ে ঢাকায় গিয়ে অনার্সে ভর্তি হল । আর আমিও হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম । প্রায় পাঁচ বছর পর একদিন – রনি ভাই ঢাকা থেকে এসেছে । রিনি ক্লাস টু’তে পড়ছে । দেখলাম , রিনি রনি ভাইয়ের রুম থেকে কাঁদতে কাঁদতে বের হচ্ছে । বুকটা ধ্বক করে উঠলো । জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করলাম , কি হয়েছে ? রিনি কান্না থামিয়ে বলল, আপু রনি ভাই খুব খারাপ । খুব খারাপ- বলেই আবার কান্না শুরু করল ।
আমি ওর ভেতরে পাঁচ বছর আগের সেই আমাকেই দেখতে পেলাম । ছোট বোনটার জন্য খুব কষ্ট হচ্ছিল । সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম, না ! আর নয় । অনেক সহ্য করেছি । যে করেই হোক এই নরক থেকে বের হতে হবে । সেবার আব্বু আসার পর খুব করে জেদ ধরলাম , আমি পড়লে ঢাকায়ই পড়ব । না হয় পড়বই না । ততদিনে আব্বুর স্যালারি বেড়েছে । তাই কোনো অসুবিধা ছাড়াই চলে এলাম । আমি জীবনে আর কোনোদিন ওবাড়ি মুখো হইনি । খালি একটা আফসোস রয়ে গেল জীবনে । আমি বা রিনি কেউ যদি একটাবার অন্তত আম্মুকে বলতাম , আব্বু রনি ভাইকে টুকরা টুকরা করে কুত্তা দিয়ে খাওয়াতো । যা হোক , এখন আর এসব বলে লাভ নাই। শুনেছি আমাদের বিয়ের কিছুদিন পরই বিয়ে করেছে । কি দরকার একটা মেয়ের সংসার ভাঙার” এতটুকু বলে নিরা চুপ করে রইল ।
আমার চোখে পানি । মেয়েটা কত কিছুই না সহ্য করে এসেছে । বিয়ের পরই আমি যদি অধিকার ফলাতে যেতাম তাহলে সে হয়তো কোনোদিনই আমাকে ভালোবাসতে পারতো না । যে কথাগুলো নিজের মা’কেও কোনোদিন বলেনি , সে কথাগুলো আমাকে বলেছে । এই নির্ভরতাটুকু আমি কখনোই নষ্ট হতে দিব না । নিরার গাল টিপে দিয়ে বললাম- পাগলী, এসব ভুলে যাও। খারাপ স্মৃতি মনে রাখতে নেই । আমি আছি না ? এত ভালো ভালো স্মৃতি তৈরি করে দেব যে, এসব আর মনেই পড়বে না । ‌অনেক রাত হয়েছে । ঘুমাতে চল। এক বছর পর আমি অফিসে যাওয়ার জন্য তৈরী হচ্ছি এমন সময় নিরা ডেকে বলল -ফারাবী, আম্মু ফোন দিয়েছিল একটু আগে ।
-কি বললেন উনি ?
-“রনি ভাইয়ের মেয়ে হয়েছে সকালে । দেখতে হুবহু ওর মত,” বলে নিরা কিচেনে চলে গেল।
আমি এক মুহূর্তের জন্য থমকে গেলাম । অস্ফুটে বলে উঠলাম- প্রকৃতি প্রত্যেকের কৃতকর্মের শাস্তি দিয়ে দেয় । স্রষ্টা এই অবুঝ শিশুটিকে ক্ষমা করুন ।
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত