বাসর রাতেই বুঝতে পারলাম বউ আমার বাংলা সিনেমার চরম ভক্ত। বউ আমাকে প্রশ্ন করেছিল, ” আমাকে দেখতে একদম দ্বিতির মতো লাগছেনা?” দ্বিতিটা কে চিনতে পারলাম না, এ নামের কোনো বান্ধবীর সাথেও পরিচয় করিয়ে দেয়নি আমায়৷ বললাম, ” দ্বিতিটা আবার কে? ” সে অবেক চাহনিতে বলল, ” চেনো না! আরে, ওইযে বাংলা সিনেমায় আলমগির, রাজ্জাক, জসিমের সাথে ছবি করতো ওই নায়িকাটা। “
” আলমগির, রাজ্জাক, জসিম ” বলাতে আমার ” শাবানা আর ববিতা’র ” কথা মনে পড়ল৷ কিন্তু দ্বিতিটা কে চিনলাম না। বললাম, ” মনে পড়ছে না তো! আচ্ছা কীভাবে তোমাকে দ্বিতির মতো লাগছে সেটা বলো, আমারও মনে পড়বে। ” হাদারাম ” বলে নিহা আমাকে ঐ নায়িকার বর্ণনা দিতে লাগল, ” খেয়াল করেন, আমার থুতনিতে যে বড় একটা তিলক, দ্বিতির মুখেও এমন ছিলো। আমার মুখটা মতো দ্বিতির মুখটাও লম্বা। যদিও আমি দ্বিতির থেকে একটু বেশি সুন্দরী। হিহিহি। “
নিহা হাসছে। তবে আমি একটু আঁচ করতে পারছি, ঐ নায়িকার চেহারাটা। তবে নাম যে দ্বিতি তা আমার শিওর মনে আসছে না। রাত দুইটা বাজে আমাকে নিহা জাগিয়ে বলল, ” আসেন, বাহির বসে পূর্ণিমা দেখি। ” ” ধুর! ভালো লাগছে না, ঘুমাতে দাও তো। ” নিহা কাঁদোকাঁদো ভাব নিয়ে বলল, ” আমার খুব ইচ্ছে ছিল, আমাদের প্রথম রাতে আলমগির আর শাবানার মতো আমরাও একটা বট গাছে নিচে বসে পূর্ণিমা দেখবো। ” আমি বিরক্তিকর ভঙ্গিমায় বললাম, ” আমাদের এদিকে কোনো বটতলা নেই৷ ” ” সমস্যা নেই, কদমতলা হলেই চলবে। “
এ তো মহা জ্বালা! বললাম, ” আমাদের এদিক বটতলা, কদমতলা কিছুই নেই৷ তবে শ্যাঁওরাতলা আছে, রাতে সেখানে বসে ভূতেরা আড্ডা দেয়। ওখানে যাবে? ” বউ আমার একটু ভয় পেয়ে বলল, ” থাক লাগবেনা। ” ঘুমিয়ে পড়লাম দুজন। যাক বাবা! মেয়েটার বকবকানি থেকে বাঁচলাম৷ মেয়েটা ভয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে আছে, মোটামুটি একটা ভাব আসতেছে। সকাল হতেই যখন বাহিরের উদ্দেশ্যে বের হচ্ছিলাম তখন বউ বলল, ” এই শুনুন, আমার জন্য তেঁতুল নিয়ে আসবেন তো। ” বললাম, ” আচ্ছা, ঠিক আছে। ” সে আমাকে আবারও ডাক দিয়ে বলল, ” কেন বলেছি শুনবেন না? ” আমি স্বাভাবিক উত্তর দিলাম, ” মেয়েরা এসব খেয়েই থাকে৷ “
” উঁহু না৷ “
” তাহলে? “
” আমি মা হতে চলেছি। “
” হোয়াট? হাও ইট পসিবল! “
বিয়ের পরদিন সকালেই বউ প্রেগন্যান্ট! অবাক না হয়ে পারলাম না। বউ আমার রাগ দেখে নিচুস্বরে বলল, ” আপনি কি কখনো বাংলা মুভি দেখেন নি? নায়ক জসিম আর শাবানার একটা ছবিতে যে বিয়ের পর শাবানা প্রেগন্যান্ট হয়েছিল? “
” হতে পারে, এটাই স্বাভাবিক৷ তবে তুমি এখানে মুভির কথা বলছো কেন? “
” ওদের বিয়ের পরদিনই শাবানা প্রেগন্যান্ট হয়েছিল। আজ সকালে দুইবার বমি করেছি। জানেন? আমিও না প্রেগন্যান্ট। “
নিহার কথা শুনে আমার দুই গ্লাস পানিতে পালাক্রমে ডুবে মরতে ইচ্ছে হলো। আমার রুম থেকে বমির টেবলেট এনে খেতে বলে বাহিরে চলে আসলাম। বাসায় ফিরে নিহা’কে তেঁতুল সহ আরও বিভিন্ন রকমের আঁচার দেয়ার পর সে বলল, ” জানেন? আপনাকে কিন্তু দেখতে নায়ক জসিমের মতো কিছুটা লাগে৷ ” আমি অবাক হলাম৷ কিছুদিন আগে বাংলা মুভির সেরা ভিলেন জাম্বুর একটা ছবি দেখে নিজের সাথে কিছু মিল পেয়েছিলাম। আর এই মেয়ে আমাকে নায়কের সাথেই মিলিয়ে নিলো! আমি কিছু না বলে মাথা নেঁড়ে ‘হ্যাঁ’ সম্মতি দিলাম।
মাঝরাতে ‘ধপ’ করে কিছু পড়ার আওয়াজে দুজনের ঘুম ভাঙলো। বোধহয় চোর এসেছে। নিহার নিরাপত্তার জন্য তার হাতে একটা লাঠি দিলাম। বের হয়ে চুপিচুপি এদিক-ওদিক চোর খুঁজছি৷ চোরের ‘খটখট’ আওয়াজ আমাদের কানে আসছে। নিহা সাহস দেখিয়ে আমার সামনে সামনে হাঁটছিলো। ইতিমধ্যে আমায় প্রকৃতি ডাক দিলো, হিসু করতে হবে আমাকে৷ বাহিরে ছিলাম বিধায় একটা ছোট গাছের আঁড়ালে বসে পড়লাম। হিসু করে তারপর দাঁড়িয়ে এক প্রশান্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। অমনি পেছন থেকে কেউ একজন আমার মাথায় আঘাত করলো৷ পিঁছু ঘুরে দেখলাম লাঠিনহাতে নিহা দাঁড়িয়ে আছে। রক্ত বের হচ্ছে মাথা দিয়ে, সাথেসাথে জ্ঞান হারালাম৷
সকালে একটু হুঁশ ফিরতেই নিহার কান্নার আওয়াজ আমার কানে ভেসে আসতে লাগল। এ তো কান্না নয়, যেন পুরো স্পিকার৷ বিছানা থেকে উঠতে উঠতে ক্লান্তি ভাব নিয়ে বললাম, ” কোথায় আমি? ” বউ আমার পাশে এসে বলল, ” এ কী! তোমার স্মৃতিশক্তি হারিয়ে গেছে! একটু দাঁড়াও লাঠিটা নিয়ে আসি, আরেকটা বারি দিলে স্মৃতিশক্তি আবার ফিরে আসবে। “
গল্পের বিষয়:
গল্প