হঠাৎ দেখি এলাকার এক ছোট ভাই তার গার্লফ্রেন্ড নুসরাতকে আমার একটা গল্পে মেনশন দিয়ে বলেছে ” ভাইয়ের এই গল্পটা পড়ো। অনেক আনন্দ পাবা।” আহা! এই নুসরাতকে আমি চিনি। ওকে দেখলেই আমার বুকে হাসফাস করে। সংসার পাততে ইচ্ছে হয়৷ জারণ বিক্রিয়া করতে মন চায়।
কিন্তু ঐ ছোট ভাইটা আমাকে অনেক সম্মান করে তাই নুসরাতের কাছে গিয়ে ভাগ বসাতে পারি না, মেসেজ দিতেও লজ্জা করে। ছোট ভাইয়ের গার্লফ্রেন্ড বলে কথা! পেস্টিজ একটুও থাকবে না। মাঝেমধ্যে মন চায় আকাশ-পাতাল ভারী করে নুসরাতকে ভালোবাসার কথা জানিয়ে দেই। কিন্তু পারি না। আমি এই সমাজের লজ্জার কাছে বন্দি। হঠাৎ মেসেঞ্জারে টুং করে শব্দ হলো। দেখি নুসরাতের মেসেজ। ” ভাই, আপনি অনেক জুস লেখেন। আমি আপনার ফ্যান হয়ে গেছি। ” আমি কী রিপ্লে দেব ভেবে পাই না। ভাবলেশহীন হয়ে যাই৷ আমার মেরুদন্ড বরাবর একটা শীতল সমীরণ ফুরুৎ করে বয়ে যায়। আমার আশার লাল,নীল,সাদা সবকয়টি বাল্ব একসাথে জ্বলে উঠে। প্রায় আধাঘন্টা ড্যান্স দেওয়ার পরে রিপ্লে দেই __
” এত ভালো লেখালেখি করে কী লাভ বলো? আজ অব্দি মনের কথা বলার মতো একটা মানুষ হইলো না। একটা কাম্লা মেয়েও মুখ তুলে তাকালো না।”
” তাকাবে ভাইয়া। অবশ্যই তাকাবে। কাম্লা না অনেক সুন্দরী মেয়েরা আপনার জন্য অপেক্ষা করছে৷ আপনি শুধু চাইলেই হয়ে যাবে।”
” আমি তো আজ দশ বছর ধরে চাই৷ তোমার মতো সুন্দরীরা আমার জীবনে আসুক। ইলেকট্রন গ্রহণ করুক। কিন্তু চাইলেই তো হয় না। তোমরা অন্যদের দখলে।”
” আহা! দখল ত্যাগ করাতে কতক্ষণ ভাইয়া। সময় যাক। জানাজানি হোক। বিক্রিয়া তৈরি হতে সময় লাগবে না।”
” এইযে! তোমরা এভাবে ভাইয়া ভাইয়া ডাকো বলেই আমি আজও নিষ্ক্রিয় মৌল। কোনো জারণ-বিজারণ বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারি না।”
” ওকে! আজকে থেকে আর ভাইয়া ডাকবো না।”
তারপর এইভাবে তিনমাস চলে যায়। বিক্রিয়া ঘটাবার সকল বন্দোবস্ত আমাদের হয়ে যায়। এখন শুধু বাকী ঐ ছোট ভাইকে ছ্যাঁকা দেওয়া। আমি নুসরাতকে দুইদিন সময় দেই ছোট ভাইটাকে ছ্যাঁকা দেওয়ার জন্য। মাঝেমধ্যে ঐ ছোট ভাইয়ের সাথে দেখা হয়। মাথায় হাত বুলিয়ে দেই। আঙুর,আপেল কিনে দেই আর বলি ” যেকোনো পরিস্থিতিতে শক্ত হয়ে মোকাবেলা করতে হবে। এর নাম পুরুষ। ” ছোটভাই আত্নবিশ্বাসের স্বরে বলে ” আমি যেকোনো পরিস্থিতিতে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারি ভাই।” আহা! অবুঝ ছেলেটা বুঝতেই পারছেনা দুইদিন পরে তাকে কোন পরিস্থিতির স্বীকার হতে হবে।
এরমধ্যে হঠাৎ শুনি আগামী শুক্রবারে নুসরাতের বিয়ে। ছেলে বিসিএস ক্যাডার। আমার মাথায় আমাদের এলাকার সব কারেন্টের পিলার যেন ভেংগে পড়লো। আমি আবেগে আপ্লুত হয়ে নুসরাতকে মেসেজ দেই ” আমি কী দোষ করেছিলাম নুসরাত? কেন তুমি আমার আশার বাতি জ্বালালে? এখন আমি কী দিয়ে বিক্রিয়া ঘটাবো? তোমার বিয়ে ঠিক তুমি বললেই পারতা৷ এইসব নাটক করার কী দরকার ছিল?” এই প্রথম আমি বাংলা ছবির বাপ্পারাজের সুরে গান গাই ” চলে যায় প্রাণের পাখি চলে যায়। পিঞ্জর ভেংগে চলে যায়। নাহ! এই গান গাওয়ার যোগ্যতাও আমার নেই। আমি বাপ্পারাজের থেকেও বড় ছ্যাঁকাখোর। কারণ বাপ্পারাজ প্রেম করে ছ্যাঁকা খায় আর আমি না করেই।
হঠাৎ নুসরাতের আইডি থেকে মেসেজ আসে। আমার নিভে যাওয়া আশার বাতিগুলো আবার জ্বলতে থাকে। নুসরাত লিখেছে ” আসলে ভাই আপনাকে এই মুহূর্তে কী বলা উচিৎ আমার জানা নেই। আমি আপনার এলাকার ছোট ভাই৷ আজ থেকে তিনমাস আগে নুসরাতের বিয়ের আলাপ চলছিল৷ তখন নুসরাত আমাকে ছ্যাঁকা দিয়ে চলে যায়। কিন্তু নুসরাতের আইডির পাসওয়ার্ড আমার কাছে ছিলো বিধায় আমি রাগে,দুঃখে,শোকে সাথেসাথে চ্যাঞ্জ করে নেই৷ আর আপনার সাথে একটা গেম খেলি। ক্ষমা করবেন ভাই৷ আপনার দেওয়া আঙুর,আপেলের সব টাকা আমি বিকাশ করে দিচ্ছি।” আমার কেন জানি মনেহচ্ছে এই মুহূর্তে বিশ্বের সকল আবুলদের লিস্ট করা হলে আমার নাম সবার উপরে থাকবে।
গল্পের বিষয়:
গল্প