শাফির বাসায় আজ নিতুর শেষ দিন। তবে যাওয়ার আগে একটা চিঠি শাফি কে দিয়ে যেতেই হবে। শাফি অফিসে যাওয়ার পর পরই নিতু লিখতে শুরু করল – “হাজারো বিষন্নতার মাঝে অনেক দিন পর আজ লিখতে বসেছি। আজ লেখাটা তোমাকে নিয়ে। শুধুই তোমাকে। আমাদের বিয়ের বয়স টা ৫ বছর হতে চলল তাই না শাফি? বিয়েটা পরিবার থেকে হলেও ভালোবাসার এক বিন্দু ঘাটতি ছিলো না।
বিয়ের আগে পুরুষ মানুষ বলতেই আমি বুঝতাম রাগী, জেদি, অত্যাচারী। ছোট থেকে বাবা কে এই রুপে দেখেছি কি না! তবে এই ধারনাটা বিয়ের পর এমন ভাবে বদলে যাবে ভাবি নি। তোমার মনে পরে, বিয়ের পর আমি কেমন নিজেকে তোমার থেকে গুটিয়ে রাখতাম? রাতে ঘুমাতে পারতাম না। বারান্দায় গিয়ে দাড়িয়ে থাকতাম। তুমি কিন্তু বিষয়টা বুঝতে পেরেছিলে। তবুও কোনোকিছুতে জোর করো নি। একদিন রাতে যখন চুপি চুপি বারান্দায় এসে কাধ এ হাত রাখলে, আমি আৎকে উঠে তোমার দিকে চাইলাম। কিসের যেন অজানা ভয় আমাকে গ্রাস করে ফেলল।
তুমি হটাৎ হেসে বললে, “নিতু, আমি কি বাঘ না ভাল্লুক? আমাকে এত ভয় পাওয়ার কি আছে? হতে পারে গায়ের রং টা একটু কালো, বয়স টা একটু বেশি, তবে মন টা কিন্তু একদম সাদা। চাইলে পরখ করে দেখতে পারো! হা হা হা! “
বিশ্বাস করো শাফি, একটা পুরুষ মানুষ এত সুন্দর, সাবলীল ভাবে হাসতে পারে, তার চেহারায় এতটা নিঃশ্পাপ ভাব থাকতে পারে, সেদিন তোমাকে না দেখলে বুঝতাম না। মূহুর্তে আমার সব ভয় কেটে গেলো। চোখের পানি আড়াল করতে কিছু না ভেবেই তোমার বুকে মাথা রাখলাম। সেই থেকে তুমি আর তোমার আমার টোনাটুনির সংসার। সুখের কোনো কমতি ছিলো না, অভাব ছিলো শুধু একটা ফুটফুটে বাচ্চার।
আর সেই সংসার থেকেই আজ আমি বিদায় নিচ্ছি। কি, খুব অবাক হলে তাই না? অবাক যতটা না হয়েছো, তার থেকে বেশি খুশি হওয়ার কথা। ৫ বছর আগে আদর ভালোবাসায় গড়ে তোলা আমার সেই সংসার, আর আজকের সংসারের মধ্যে বিস্তর তফাৎ।আজ সব থেকেও যেন কিছুই নেই, সবকিছুর মাঝে বিরাট শুন্যতা। বিয়ের ৫ বছরেও আমি তোমাকে বাবা হওয়ার যে আনন্দটা দিতে পারি নি, হয়ত সেটা দেওয়া আর কোনোদিনও সম্ভব না। সৃষ্টিকর্তা আমাকেই কেন এ শাস্তি দিলো বলতে পারো শাফি? আমার সব সুখ, এক নিমিষে ধুলোয় মিশে গেলো, সেই সাথে আমার প্রতি তোমার ভালোবাসাটাও।
অনেক সাধনার পর চার বছর আগে যখন প্রথম মা হওয়ার খবর পেলাম, আমার সেই আনন্দটা তুমি দেখেছিলে শাফি। কত স্বপ্ন ছিলো আমাদের। সব কিছু যেন এক মুহূর্তে শেষ হয়ে গেলো। আমার বাচ্চা পৃথিবীর আলো দেখলো, কিন্তু মায়ের মুখ দেখতে পারলো না। জ্ঞান ফেরার পর যখন জানতে পারি আমার বাচ্চাটা হওয়ার পর পরই না ফেরার দেশে আমার পুরো দুনিয়া অন্ধকার হয়ে গেলো। জানি না আমি কিভাবে বেচে ফিরেছি সেদিন। তুমি তো এর সবই জানতে শাফি। বলতে পারো, আমার কি দোস ছিলো সেদিন?
সব থেকে বড় ধাক্কা খেলাম বছর খানেক আগে, যখন জানতে পারলাম আমি আর মা হতেই পারব না!, কত শত চিকিৎসার পরও যখন উপায় হল না, তখন নিজেকে আর সামলাতে পারলাম না। একদিকে মা না হতে পারার যন্ত্রনা, আরেকদিকে সমাজের কটু কথা, আমি ভিতরে ভিতরে শেষ হয়ে যাচ্ছিলাম। তোমার মত মানুষটা আমার পাশে না থাকলে হয়ত এ পৃথিবীর মায়া অনেক আগেই ত্যাগ করতে হত। তুমিও কষ্ট পাচ্ছিলে। কিন্তু তোমাকে বলার মত আমার কিছু ছিলো না, কারন ব্যর্থতাটা যে আমারই। যে ব্যর্থতায় তুমি বাবা হওয়ার মত চরম সুখ থেকে বঞ্চিত হচ্ছিলে। এর প্রতিকার আমার জানা ছিলো না। কিন্তু তুমি হয়ত জানতে। তাই কিছুদিন যেতে না যেতেই তোমার ভালোবাসাটা কেমন যেন বদলে যেতে লাগলো, অনেকটা কর্পুরের উবে যাওয়ার মত। যে ব্যর্থতা আমার আছে, সেটা তো অন্যকারো সক্ষমতা, তা আমি ভুলে গেলেও তোমার ঠিকই মনে ছিলো। তাই তো অন্যকারো দিকে ঝুকে যেতে পারলে।
হটাৎ কেমন ব্যস্ত হয়ে গেলে তুমি। সকাল সকাল বেরিয়ে পরা, রাতে দেরীতে ফেরা তোমার এখন নিত্য দিনের রুটিন। সেদিন পাশের বাসার ভাবী আমাকে দেখেই বলতে লাগলেন, ” আরে ভাবী, ভাই কে সেদিন সন্ধ্যায় দেখলাম কোন একটা মেয়ের সাথে রিকশায়। কে ছিলো ভাবি?” আমি বললাম, ” কই আমাকে তো কিছু বলে নি।” ভাবি শুনে অবাক হওয়ার ভাব ধরে বলল কি জানো? ” ও মা! নিজের স্বামী কোথায় কোন মেয়েছেলের সাথে ঘুরছে একটু নজরে রাখবেন না?” তারপর নিচু গলায় বললেন, ” অবশ্য, বাচ্চাকাচ্চা না দিতে পারলে কি আর পুরুষ মানুষ ঘরে টেকে!” আমি কথাটা শুনেও কোনো জবাব দিলাম না। এ কয় মাসে এসব কথা সয়ে গেছে।
কিন্তু তুমি?তুমি সত্যিই এভাবে বদলে গেলে? আমার একটা ব্যর্থতায় বাকি ৫ টা বছর ভুলে যেতে পারলে শাফি?
তোমার বন্ধু মোরশেদের কাছে জানতে পারলাম মেয়েটা তোমার ভার্সিটির বান্ধবী। কই, গত ৫ বছরে তো কখনো বলো নি। আর এখন দিন রাত তার ফোন কল। কাল যখন বারান্দায় দাড়িয়ে রাস্তায় হটাৎ তোমাদের দুজন কে দেখলাম, আমি প্রথমে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। তোমাদের দুজনের হাস্যোজ্বল মুখ। অথচ তোমার এই হাসিটা কতদিন আমি দেখি নি। জানো আমি ভেবেছিলাম, বাকি পুরুষদের মত হয়ত তুমি হবে না। আর কিছু না হোক, ভালোবাসা দিয়ে তোমাকে আটকে রাখতে পারব আমি। কিন্তু, বেলাশেষে আমি আমার ব্যর্থতার কাছেই হার মানলাম।
তোমাকে আমার বলার কিছুই নেই। কারন বাবা হওয়ার অধিকার তোমার অবশ্যই আছে। তোমার এ অধিকারের কাছে আমার সব সুখ বিসর্জন দিলাম। তুমি হয়ত সব আমাকে খুলে বলতে, কিন্তু তোমার মুখ থেকে এই কঠিন কথাগুলো শোনা আমার পক্ষে সম্ভব হত না। তোমাকে মুক্ত করে চলে যাচ্ছি। আমার এ অন্ধকার জীবনে, তোমার ভালোবাসার প্রদীপটার জ্বালানী আজ ফুরোলো।” এ পর্যন্ত লিখেই নিতু ডায়েরিটা খোলা রেখে ঘরের চারপাশে একবার চোখ বুলিয়ে নিলো। চিরচেনা এ চার দেয়ালের ঘর যেন আজ তাকেই দূর দূর করে তাড়িয়ে দিচ্ছে। চোখ তার ঝাপসা হয়ে আসে। আর দেরী করা যাবে না। এখন বিদায়ের পালা। কোথায় যাবে নিতু জানে না। শুধু জানে, সে শাফি কে আজ তার ব্যর্থতা থেকে মুক্তি দেবে।
নিতু বের হওয়ার জন্য দরজা খুলতেই যা দেখে তার জন্য সে মোটেই প্রস্তুত ছিলো না। দরজার সামনে দাড়িয়ে শাফি, শাফির সেই বান্ধবী আর বছর তিনেকের একটা ফুটফুটে ছোট্ট বাচ্চা। নিতু অবাক হয়ে ভাবতে থাকে, এ বাচ্চা কার! তবে কি ওদের সম্পর্ক নতুন নয়?!..এ বাচ্চা কি তাহলে ওদের! শাফি কি তাহলে এত বছর শুধুই অভিনয় করেছে? নিতু আর কিছু বলতে পারে না। কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে দাড়িয়ে থাকে। কলিংবেল চাপার আগেই নিতুর দরজা খোলায় শাফি কিছুটা অবাক হয়, সে নিতু কে জিজ্ঞাসা করে, “কি ব্যপার! আমরা আসব আগে থেকেই জানতে নাকি?” নিতু চুপ করেই দাড়িয়ে থাকে আর বাচ্চা মেয়েটাকে কেমন অবাক চোখে দেখে। হটাৎ বাচ্চা মেয়েটা নিতুর দিকে তাকিয়ে শাফি কে জিজ্ঞাসা করে, “বাবা বাবা এতা কি আমাল আম্মু?” শাফি উত্তর দেয়, “হ্যা বাবা এটাই তোমার আম্মু।”
নিতু সবটাই শুনতে পায়, কিন্তু কিছুই যেন বুঝতে পারে না। সে যেন আরো হতভম্ব হয়ে যায়। হিসেব মেলাতে পারে না। শাফি বলছে এ বাচ্চার মা সে নিজেই। তা কিভাবে সম্ভব! সে তার দৃষ্টি শাফির দিকে সরিয়ে বিস্মিত গলায় বলে, “কি বলছো তুমি শাফি?!” তখন শাফি আর শাফির সেই বান্ধবী চেচিয়ে বলে, ” সারপ্রাইজ! বাইরেই দাড় করিয়ে রাখবে নাকি ভিতরে ঢুকতে দেবে?” নিতুর তখনও মাথায় কিছু ঢোকে না। শাফি বাচ্চাটাকে কোলে করে ঘরে ঢোকে, সাথে তার বান্ধবীও। নিতু বিস্ময় আটকে না রাখতে পেরে প্রশ্ন করে, “আমাকে বুঝিয়ে বলো শাফি। আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। আমি কিভাবে এ বাচ্চার মা হলাম শাফি? আর এই মেয়ে টা কে?” শাফি হেসে বলে, “আমার বোকা বউটা কিছুই বুঝতে পারছে না। আগে বলো, আমার মেয়েটা দেখতে একদম তোমার মত না?”
নিতু দেখলো, বাচ্চা মেয়েটার সাথে তর চেহারা অবিকল মিলে যায়। সাথে সাথে মেয়ে টা নিতুর কোলে মা বলে ঝাপিয়ে পরে। নিতুর চোখে অদ্ভুত মায়ায় পানি চলে আসে, জড়িয়ে ধরে বাচ্চাটাকে। যেন তাদের বহুদিনের আত্মার সম্পর্ক । চোখের পানি মুছতে মুছতে সে শাফি কে আবার প্রশ্ন করে, “প্লিজ আমাকে বুঝিয়ে বলো। আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।” শাফি তখন তার বান্ধবী কে দেখিয়ে বলতে শুরু করে, “শোনো তাহলে। ও শায়লা, আমার ভার্সিটির বান্ধবী। ভার্সিটিতে থাকতে ক্রিমিনোলজি তে পড়াশোনা করত। এখন একটা সিক্রেট ডিটেকটিভ এজেন্সির সাথে যুক্ত।”
শায়লা নিতু কে সালাম দেয়। নিতু সেদিকে খেয়াল না দিয়ে শাফির দিকেই চেয়ে থাকে। শাফি বলতে থাকে, “মাস তিনেক আগে একটা খবর ছাপে পত্রিকায়। খবরটার বিষয়বস্তু ছিলো বাচ্চা চুরি নিয়ে। জানো নিতু, কয়েক বছর ধরে একটা গ্যাং শহরের বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে নানা কৌশলে বাচ্চা চুরি করতে থাকে, এসব বাচ্চা বড় হলে তাদের দিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি, চুরির মত আরো ভয়াবহ কাজ করানোর উদ্দেশ্যে।কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাদের বিদেশেও পাচার করে দিত এই গ্যাং। এমনই একটা গ্যাং কে আটক করে শায়লার ডিটেকটিভ এজেন্সির টিম।
সেদিন পত্রিকায় উদ্ধার করা কিছু বাচ্চার ছবি দেওয়া হয়েছিলো। হটাৎ একটা বাচ্চার ছবিতে আমার চোখ আটকে যায়। এখন তোমার কোলে যেই বাচ্চাটা আছে নিতু, এই ছিলো সেই বাচ্চা।” নিতু হতবাক হয়ে বলে, “কিন্তু এ বাচ্চা আমার কি করে হয়? আমার বাচ্চা তো সেদিন হাসপাতালেই নিতু কে থামিয়ে দিয়ে শাফি বলে, “বলছি, পুরোটা বলছি। ছবি টা দেখেই আমার মনে হয় এ বাচ্চা আমাদের। হতেও পারে সেদিন বাচ্চা মারা যাওয়ার খবর টা মিথ্যা ছিলো। আমার মনে সন্দেহ তৈরী হয়। আমি পুরো খবর টা পড়ে জানতে পারি আমারই বান্ধবী শায়লা এ গ্যাং আটকের নেপথ্যে। আমি সেদিন তোমাকে কিছু না বলে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যাই। আমি তোমাকে কিছু জানাই নি, কারন যদি আমার ধারনা মিথ্যা হত, তাহলে সবচেয়ে বেশি তুমি কষ্ট পেতে।”
শাফি একটু থেমে আবার বলতে শুরু করলো, ” খুব কষ্টে শায়লার ঠিকানা খুজে বের করি। তার কাছে আমার বাচ্চার ঘটনা খুলে বলি। শায়লা বলে, উদ্ধার করা বাচ্চাদের মধ্যে দুটি বাচ্চা আছে যাদের বয়স ৩ বছরের মধ্যে। এ দুটি বাচ্চা কে সেই হাসপাতাল থেকে চুরি করা হয়, যে হাসপাতালে তোমাকে ডেলিভারির জন্য নেওয়া হয়। চুরি বললে ভুল হবে। এই গ্যাং এ কয়েকজন ডাক্তার জড়িত ছিলো, যারা ডেলিভারির পর বাচ্চা মারা গেছে বলে অন্যের মৃত বাচ্চার লাশ এর বদলে জীবিত বাচ্চা এভাবে গ্যাং এর হাতে তুলে দিতো। ” এতটুকু শুনে নিতুর গা শিউরে উঠলো, সে বলল, “মানুষ এতটা নিকৃষ্ট কিভাবে হতে পারে!” এবার শায়লা বলতে শুরু করল, “এ দুনিয়ার মানুষ বড় বিচিত্র। আমার মন বলছিলো, এ বাচ্চা শাফিরই হবে। আমি ওর বিষয়টা সমাধানের জন্য কাজ শুরু করি।
যেহেতু বাচ্চাগুলো পুলিশি হেফাজতে ছিলো, আমি শাফি কে সেখানে নিয়ে যাই। শাফি সেদিন বাচ্চাটা কে প্রথম দেখেই এ বাচ্চা আমার বলে চেচিয়ে ওঠে।” এবার শায়লা থামে, শাফি বলতে শুরু করে, “সেদিন বাচ্চাটার চেহারায় যখন আমি তোমাকে দেখতে পাই, আমি বুঝে যাই এ বাচ্চা আমাদেরই। এমনকি যে ডাক্তার তোমার ডেলিভারির সময় ছিলো, সে ডাক্তারকেও পুলিশ আটক করে। সব প্রমান যখন আমাদের দিকে তখন আমি আমার মেয়েকে নিয়ে আসতে চাই। কিন্তু বাধ সাধে পুলিশ। এ বাচ্চা আমার তা প্রমান করতে না পারলে তারা বাচ্চা দিতে অস্বীকার জানায়।” নিতু জিজ্ঞাসা করে, “তাহলে কিভাবে কি করলে?”
শাফি উত্তর দেয়, “উপায় একটাই। ডিএনএ টেস্ট। আর এর জন্যেই আমার সোনামনি কে ঘরে আনতে এত দেরী। ডিএনএ টেস্ট এর রেজাল্ট আসতে আসতে দেরী হয়ে যায়। আরো কিছু আইনি।জটিলতা ছিলো। গত সন্ধ্যায় শায়লা বাসার সামনে এসেছিলো পজিটিভ রিপোর্ট নিয়ে। তুমি বিশ্বাস করবে না নিতু, এর থেকে বেশি আনন্দের দিন হয়ত আর আসে নি আমার জীবনে।” এতক্ষনে বাচ্চাটা ঘুমিয়ে পরেছে। তার ঘুমের কোনো অসুবিধা না হয়, এ জন্য নিঃশব্দে কাঁদতে থাকে নিতু। শাফি বলে, “এ বিষয় টা নিয়ে অনেক দুঃশ্চিন্তায় ছিলাম নিতু। অনেক দৌড় ঝাপ করতে হয়েছে। তোমার দিকে খেয়ালই ঠিক মত দিতে পারি নি। পুরো বিষয় টা গোপন করেছি যাতে সারপ্রাইজ দিতে পারি। আমাকে ক্ষমা করে দিও নিতু। তোমাকে অনেক ভালোবাসি। “
শাফি থামল। নিতু নিঃশব্দে কেদেই যাচ্ছে আর ভাবছে, এমন পবিত্র মানুষটা কে নিয়ে কত না আজে বাজে চিন্তা করেছে। অথচ এই মানুষটাই যেন আজ তাকে নতুন জীবন দিল। ভাবতে ভাবতে হটাৎ সে বাচ্চা কোলেই শোবার ঘরে ছুটে যায়। শাফির জন্য তার লেখা চিঠিটা টেবিলেই ছিলো। শাফি পিছন পিছন আসার আগেই সে চিঠিটা টুকরো টুকরো করে ছিড়ে ফেলে।
শাফি ঘরে ঢুকেই প্রশ্ন করে, “আমার উপর অভিমান করে আছো নিতু? এই যে কানে ধরলাম, ক্ষমা করবে না?”
শাফির চোখে এবার পানি চলে আসে। নিতু মেয়েকে কোলে রেখেই কাদতে কাদতে শাফি কে জড়িয়ে ধরে ঠিক বিয়ের পর প্রথম বারের মত। সেদিন যেমন সে প্রথম সুখের সন্ধান পেয়েছিলো, আজ যেন হারিয়ে যাওয়া সে সুখ নতুন করে ফিরে এলো তার ঘরে। বহুদিনের শুন্যতা আজ যেন পরিপূর্ণতা পেল।
গল্পের বিষয়:
গল্প