শাশুড়ি মা

শাশুড়ি মা
সাওলি অফিস থেকে ফিরেই এক গ্লাস পানি ঢক ঢক করে গিলে ফ্যান ছেড়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো। সে একটা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র প্রভাষক। মার্চ মাস গরম পড়তে শুরু করেছে। শরীর টাও বিগড়ে বসেছে। প্রায় ঘুমিয়ে যাওয়া সাওলির মাথায় এসে হাত বুলিয়ে দিতে থাকেন শেফালী বেগম। বললেন, আগে ওঠো কাপড় পাল্টাও খেয়ে তারপর ঘুমিও। আজ তোমার পছন্দের চিংড়ি ভর্তা করেছি মসুর ডাল দিয়ে পালং শাক আর ছোট মাছের চচ্চড়ি। শ্বাশুড়ির কথায় কান না দিয়ে ঘুমাতে যাচ্ছিল সাওলি। বলল মা আমি পরে উঠে খাব। এখন আমার ভালো লাগছে না। শেফালী বেগম ধমকের সুরে বললেন আমি রান্না করে না খেয়ে বসে আছি তোমার সাথে খাবো। আর তুমি পরে খাবে না! শাশুড়ির মিষ্টি শাসনে সাওলি উঠতে বাধ্য হল।
পুত্রবধূ আর শাশুড়ি খাবার টেবিলে বসে একসাথে গল্প করলো আর অনেকক্ষণ বসে খেলো। কতশত গল্প খাবার টেবিলে! শাহেদ যখন পেটে ছিল সেই সময়ের গল্প শাহেদেরর ছোটবেলার গল্প আরো কত কি! শাওলির শ্বশুরের গল্প। শ্বশুর ছিলেন এলাকার মাতব্বর গোছের মানুষ। একশত বিঘা জমি, মাছের ঘের, আম বাগান আরও কত কি! শেফালি বেগম বললেন আমরা তো কত অল্প বয়সে মা হয়েছি এত কিছু বুঝতাম না। অনেক বড় সংসার, কত কত ধান সিদ্ধ, শুকানো, প্রতিদিন অনেক দিনমজুর কাজ করত। এরসাথে গরু ছাগল, মেহমান, পিঠা পার্বন সব সামলে মা হওয়া। বাচ্চা লালনপালন। তোমার শ্বশুর ভীষণ রাগি মানুষ ছিলেন। কিন্তু সব বাজার করে দিতেন ঠিকঠাক। সাওলি ও যোগ করলো মা সে তো ঠিক কিন্তু আমাদের সময় খাবার, আবহাওয়া, বাতাস সবকিছুতেই সমস্যা। আমাদের চ্যালেঞ্জ টা পরিশ্রমের ও অধিক অন্যকোথাও মা।
সাওলির এখন সাড়ে আট মাসের গর্ভকালীন সময়। সাওলির মাএকজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। বাবা একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ও ডিমেনশিয়া আক্রান্ত রোগী। তাছাড়া ভাইবোন সব এখনো পড়াশোনা করছে। সাওলির মা মানে খেয়া একেবারে ই সময় পান না, মেয়েকে দেখতে আসার। তাছাড়া তিনি কঠিন পরিশ্রমী নারী। মায়া মমতা যত্ন এসব তিনি কম বোঝেন। গর্ভকালীন যত্ন আত্তি সাওলি শ্বাশুড়ি থেকেই পেয়েছে। শেফালী বেগম সাওলির জন্য কদবেল এনেছেন এতগুলো, বহুপদি শাক সাওলির পছন্দ এনেছেন সেসব। কদবেল ভর্তা করে শাওলি একা খায় শ্বাশুড়ি মিটমিট করে হাসেন, বলেন শাহেদকে একটু দাও। সাওলি বলে না কাউকে দেবো না।
ডাক্তারের কাছে নিয়মিত চেকআপে যায় সাওলি। ডক্তার সাওলিকে হাসপাতালে ভর্তি হতে বলে। কারণ প্রথম বাচ্চা মিসকারেজ হয়েছে। এবার কোনো ধরনের রিস্ক নেয়া যাবে না। এবার শ্বাশুড়ি সাওলির সাথে হসপিটালে থাকেন। পনেরো দিন পর সিজার করে সাওলির ছেলে হয়। নাম রাখা হয় মুগ্ধ। মুগ্ধ অনেক দুর্বল কারণ সাওলির গর্ভকালীন ডায়াবেটিস ছিল। তাছাড়া মুগ্ধর জন্ডিস হয়েছে। শেফালী বেগম নিয়মিত মুগ্ধ কে রোদে বসেছেন। হাসপাতালে মুগ্ধ র দেখাশোনা করেছেন। মোট পঁচিশ দিন পর সাওলি মুগ্ধকে নিয়ে বাসায় আসে।
সাওলি সারাদিন মুগ্ধর পাশে বসে থাকে। দেখে ও কিভাবে শ্বাস নেয়, কিভাবে নড়াচড়া করে। একমাস শেফালী বেগম মুগ্ধ কে খুব যত্ন করেছে। তেল মাখিয়ে দিয়েছে। সাওলির পছন্দের খাবার রান্না করে দিয়েছে। যা কিছু করা প্রয়োজন সব করেছে। কিন্তু এবার তিনি বাড়ি ফিরবেন। সাওলি সারাক্ষণ মুগ্ধ কে নিয়ে ভয়ে থাকে। সাওলি খুব চায় শ্বাশুড়ি আর পনের দিন অন্তত থেকে যাক। কিন্তু শেফালী বেগম বাড়ি ফিরবেন। বাড়িতে ছোট ছেলের সংসার। অনেক কাজ। মাছের ঘের, গরু, ছাগল, ফসল তিনি আর কোনভাবেই থাকবেন না। এরই মধ্যে সাওলির ছোট বোন সিমিন এর এম এ পরীক্ষা শেষ হয়ে যায়। সিমিন আসাতে শাওলির স্বস্তি মেলে।
সাওলির সারাক্ষণ মাথা ঘুরায়। মুগ্ধ কে কোলে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যেতে পারে না। সব জায়গায় নিয়ে যায় সিমিনকে। শাহেদ ধীরে ধীরে যেন নিজের জগতে ডুবে যায়। বরাবর ই সাওলি আর শাহেদের একটা সুক্ষ্ম ব্যক্তিত্বে দ্বন্দ্ব যেন ছিলই। আর সিমিন মাঝে মাঝে শাহেদকে কাঁটা কাঁটা কথা শোনায়। শাহেদ বড় হয়েছে একটা পুরুষতান্ত্রিক পরিবারে। যেখানে শাহেদের বাবাকে সকলে পীরের মত মেনে চলতেন। বাড়ির মেয়েরা পুরুষের তোষামোদ করে চলবেন। সাওলি বেড়ে উঠেছে একটা উদার প্রগতিশীল পরিবারে। সাওলি মুক্তিযোদ্ধা শিক্ষক বাবাকে মায়ের কাপড় ধুয়ে দিতে দেখেছে। মাকে ভাত বেড়ে দিতে দেখেছে। এসব দ্বন্দ্ব মুগ্ধ হওয়ার পর যেন আরও প্রকট হয়। মুগ্ধ কে নিয়ে সারাক্ষণ সাওলি ব্যস্ত থাকে। কিভাবে খাওয়াবে! কিভাবে ঘুম দিবে। কখন মুগ্ধ একটু বড় হবে। শাহেদ ও অফিস থেকে এসেই মুগ্ধর সাথে সময় কাটায়। এরই মধ্যে তিনমাসে মুগ্ধ প্রথম উপুড় হয়। প্রথম দেখতে পায় শাহেদ। চিৎকার করে সাওলিকে ডাকে।
সাঁইত্রিশ দিনের মাথায় মুগ্ধ খুব অসুস্থ হয়েছিল। বমি করত খুব। এছাড়া আর তেমন অসুস্থ হয়নি। কিন্তু দেড়মাস এর মাথায়ই শাওলি বুঝতে পারে মুগ্ধ আসলে সেভাবে বুকের দুধ পাচ্ছে না। তাই শুরু করে ল্যাক্টোজেন ফর্মুলা দুধ। পাঁচ মাসের মাথায়ই শুরু করে খিচুড়ি। সর্বাত্মক চেষ্টা কি করে ছেলেকে বড় করবে। শাহেদ দিন দিন অন্যকিছু তে ডুবে যাচ্ছে। শাহেদের ধারণা হয় শাওলি সন্তান আর নিজের ভাইবোন ছাড়া আর কিছু বোঝে না।
দেখতে দেখতে সাওলির মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষ। এবার প্রাণের ধনকে রেখে অফিসে যোগদান করতে হবে। শাওলির কলিজা ছিড়ে যায় মুগ্ধ কে রেখে অফিসে আসতে। ভরসা বোন আর কাজের মেয়ে। এবার ছোট বোন সিমিনের বিসিএস কোচিং। সাওলি খুব চায় শেফালী বেগম দুইমাস এসে মুগ্ধ কে দেখুক। কিন্তু শেফালী বেগম আসতে পারবেন না। খুব মনোক্ষুণ্ণ হয় সাওলি নিজের নাতির প্রতি এই অবজ্ঞা নিতে পারে না। শাহেদ কখন ই তো সত্যি কথাটা জোর গলায় বলার ছেলে না। কাজের মানুষের কাছে রেখেই যেতে হয় অফিসে।
দিন দিন সাওলি মুগ্ধ কে বড় করা, চাকরি, বাবার অসুস্থতা, ছোট ভাইবোনকে নিয়ে চিন্তা এই সবকিছু নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। শাহেদও ব্যস্ত হয়ে পড়ে নিজের মুখবই, মুভি দেখা আর নিজের জগত নিয়ে। মুগ্ধর জন্মের পর বাসায় আসার পরই শাহেদ বিছানা আলাদা করে ফেলে। সাওলির প্রথমে খুব কষ্ট হত। ধীরে ধীরে সব সয়ে যায়। এমন সময় সিমিনের বিয়ে হয়। সিমিনের বর বিসিএস ক্যাডার। সাওলি নিজে পছন্দ করে বিয়ে করেছিল শাহেদ কে। শাওলির মায়ের খুব আফসোস ছিল এত ভাল ভাল পাত্র থাকা সত্তেও সাওলি নিজের বন্ধুকে বিয়ে করল।
সেই কষ্ট যেন সাওলির পরিবার সিমিনের বিয়ে দিয়ে পুষিয়ে নিয়েছে। সিমিনের শ্বশুরবাড়ি কে পারলে সাওলির মা হাতের তালুতে রাখেন। সাওলির মা কখনো ফোন করেও শাহেদকে ঈদের দাওয়াত দেন নি। কিন্তু সিমিনের বরের জন্য তিনি সারারাত জেগে রান্না করেন। এসবকিছুর প্রভাব পড়ে সাওলি আর শাহেদের সম্পর্কে। সাওলি চেয়েও শাহেদকে পায় না। সাওলি প্রায়ই দরজা বন্ধ করে গান ছেড়ে একা একা কাঁদে। সে কান্না দেখে মহাকাল আর দেয়াল।
এমন সময় শাহেদের একটা চাকরির প্রস্তাব আসে টাঙ্গাইলে একটা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার হিসেবে।শুরুতেই ৭০ হাজার বেতন। সাওলি শাহেদকে বলে, তুমি এই চাকরিতে যোগদান করে ২ বছর পরে ঢাকায় চাকরি নিয়ে ফিরবে। শাহেদ বর্তমান চাকরি নিয়ে সন্তুষ্ট না। কিন্তু শাহেদ ঢাকা ছেড়ে যেতে খুব সাহস পায় না। সাওলির কথায় শাহেদ চাকরি ছেড়ে টাঙ্গাইল যেতে রাজি হয়। কিন্তু একরকম কিছুটা নিজের অনিচ্ছায়ই। দেখতে দেখতে চলে আসে শাহেদের টাঙ্গাইল যাবার দিন। মুগ্ধর বয়স দেড় বছর। একদিন খুব সকালে শাহেদ টাঙ্গাইল চলে যায়।
শাহেদ যদিও বিছানা ছেড়ে চলে গিয়েছিল। তবুও সন্ধ্যায় শাহেদ বাসায় ফিরলে মুগ্ধর সাথে কিছুক্ষণ থাকতো। সন্ধ্যায় শাহেদের জন্য নাস্তা বানানো। প্রথম দিনই শাহেদের জন্য সাওলির কান্না আসে। প্রথম প্রথম শাহেদ মাসে দুইবার আসত। সবকিছু খুব সুন্দর ই চলছিল। কয়েকজন অফিসার মিলে একটা বাসা নিয়ে থাকত। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ শাহেদের বেতন কমিয়ে দেয়। এমনিই শাহেদ তার নিজের জগতে ঝুঁকে গিয়েছিল। তার ওপর নিজের অনিচ্ছায় সাওলির কথায় ঢাকা ছেড়েছিল। শাহেদ মাসে একবার ঢাকা আসা শুরু করে। আর সাওলির সাথে চরম দুর্ব্যবহার শুরু করে। ভীষণ বাজে গালি দেয়। এরই মধ্যে একদিন ঢাকায় আসলে তুমুল ঝগড়া বাধে। শাহেদ ডিভোর্স চায়। সাওলি বলে না। মুগ্ধ বড় হোক। শাহেদের হাতে পায়ে ধরে সাওলি ডিভোর্স ঠেকায়। শুধু বলে, এখন ডিভোর্স হলে আমার ছেলে বাবা কি সেটা বুঝবে না! সাওলি সবকিছু শেফালী বেগমকে জানায়। শেফালী বেগম বলেন আমি শাহেদের সাথে কথা বলব। তুমি একটু ধৈর্য ধর সব ঠিক হয়ে যাবে!
সাওলির পরিবারে শাহেদের যথার্থ সম্মান না পাওয়া, সাওলির কথায় ঢাকা ছেড়ে যাওয়া, চাকরি নিয়ে অনিশ্চয়তা, সাওলি আর শাহেদের সাংস্কৃতিক আর পারিবারিক মূল্যবোধের গ্যাপ যেন সম্পর্ক টাকে বিষিয়ে তুলেছিল। এবার শাহেদ মোবাইলেও সাওলি কে গালি দেয়া শুরু করে। সাওলি এবার সরাসরি শেফালী বেগমকে জানায়, আপনার ছেলের দুর্ব্যবহার বন্ধ না হলে আমি সবার বিরুদ্ধে আইনিপদক্ষেপ নেব। আপনার ছেলে যত সহজ ভেবেছে। এত সহজে আমি ছাড়বো না। শেফালী বেগম বলেন, আমি দেখতেছি। তুমি চিন্তা করো না।
চলে যায় শাহেদের চাকরি। ঢাকায় ফেরে শাহেদ। সাওলি বলে, সমস্যা নেই চাকরির চেষ্টা কর হয়ে যাবে চাকরি। চেষ্টা করতে থাকে শাহেদ। এবার সম্পর্ক আরও অনিশ্চয়তার দিকে চলে যায়। দুই মাস পরে চাকরি হয় শাহেদের। টাঙ্গাইলে দীর্ঘ ছয়মাস একা থাকা নিজের জগতে ঝুঁকে যাওয়াকে আরও বেগবান করেছে। এবার শাহেদ শারিরীক, মানসিক সবভাবেই সাওলিকে বর্জন করতে শুরু করে। সাওলির বাঁধা মাতৃত্ব। শাহেদের খুব ভালো সময় কাটে তার মুখবইয়ের বান্ধবীর সাথে। শেফালী বেগম সবসময়ই খোঁজ খবর রাখেন। নিজ হাতে হলুদের গুঁড়ো, মরিচের গুঁড়ো, চালের গুঁড়ো, আমসত্ত সব করে পাঠান। নিজে এসে বেড়িয়ে যান। কিন্তু সাওলি নিজের সমস্যা কাউকে জানাতে পারে না। নিজের মা, শ্বশুরি,ভাইবোন কাউকে না! কিন্তু যে কটা দিন শেফালী বেগম থাকেন, সাওলির পছন্দের পিঠা বানিয়ে দেন, নাড়ু বানিয়ে দেন, নিজ হাতে রান্না করেন। এও সাওলির এক প্রশান্তি। এতটুকু ও সাওলি অন্য কারো কাছে পায় নি।
সম্পর্কের মাধূর্য্য যখন পাত্রের তলায় তখন সেপারেশনেই তার সমাধান খোঁজা আধুনিক সমাজের সহজাত প্রবৃত্তি। শাহেদ এবার চাকরির অযুহাতে আলাদা বাসা নেয়। কারণ অফিসে যেতে এবং আসতে প্রায় ৪ ঘন্টা সময় লেগে যায়। এই ধকল নিতে শাহেদ রাজি না। সপ্তাহান্তে এসে মুগ্ধর সাথে সময় কাটিয়ে যায়। ধীরে ধীরে সেটা পনের দিন অন্তর কিংবা বিশ দিন অন্তরে যেয়ে ঠেকে। সাওলি দু একবার সাওলি আর শাহেদের অফিসের মাঝামাঝি বাসা নেয়ার কথা বলেছে কিন্তু শাহেদ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে সে ভালো আছে। বুঝে গিয়েছে সাওলি শাহেদ সম্পর্ক টা শুধু কাগজে ই রাখতে চায়। সাওলি ও মনে মনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়, আরেকটু বড় হোক মুগ্ধ তারপর না হয়…!
দেখতে দেখতে শাহেদের আলাদা বাসার এক বছর হয়ে যায়।এরই মধ্যে শেফালী বেগম স্ট্রোক করে বিছানায় পড়ে যান। আর তিনি ঢাকায় আসতে পারেন না। এর মধ্যেও ছোট ছেলে কে দিয়ে আম পাঠিয়েছেন, চালের গুঁড়ো, বাজেপদি শাক, লোকজন নিয়ে পিঠা বানিয়ে পাঠিয়েছেন। সাওলিকে বারবার বলেন তুমি দাদুভাইকে নিয়ে ঘুরে যাও। কিন্তু শাহেদের সাথে এই কাগজের সম্পর্কের শ্বশুরবাড়ি যেতে সাওলির মন একেবারেই টানে না। সাওলি বলে যাবো মা। এই যাই যাবো করেও ছয়মাস চলে যায়। এবার হার্ট এটাক হয় শেফালী বেগম এর। এবার কথা বলতে পারেন না আর স্পষ্ট করে। শাহেদ চলে যায় মাকে দেখতে। এবার সাওলি নড়েচড়ে বসে।
মুগ্ধ কে নিয়ে ওঠে যশোরের এসি বাসে। আর আল্লাহ কে ডাকতে থাকে। যেয়ে যেন শেফালী বেগম কে অন্তত দু তিনটি দিন সুস্থ পায়। যেয়ে মুগ্ধ কে নিয়ে পৌছায় সাওলি। শেফালী বেগম মুগ্ধ আর শাওলিকে দেখে ডুকরে কেঁদে ওঠে। ইশারায় কাছে ডাকেন মুগ্ধ কে। কাছে যায় সাওলিও। জড়িয়ে ধরে শেফালী বেগমকে। দুচোখে শ্রাবণের ধারা নেমে এসেছে সাওলির। শাহেদ বাজারে যায়। নিয়ে আসে সাওলির পছন্দের দেশি গরুর কলিজা, বেলে মাছ। সাওলি শেফালী বেগমের পছন্দের রসমালাই নিয়ে এসেছে। নিজ হাতে খাইয়ে দিচ্ছে। পুডিং বানিয়েছে, সেমাই রান্না করেছে নিজ হাতে। এরই মধ্যে একদিন শেফালী বেগম সাওলি, শাহেদ আর মুগ্ধ কে একসাথে ডাকেন। ডেকে তিনটি হাত একসাথে করে দেন চোখের জলে। সাওলি বলে মা সব ঠিক আছে মা। আপনি ভাববেন না।
এর পরের দিন আবার বুকের ব্যাথা উঠে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন শেফালী বেগম। সাওলি শেফালী বেগমের গোসলে উপস্থিত থাকে। কোরান তেলাওয়াত করে, গোসলে সাহায্য করে।এবার ঢাকায় ফেরার পালা। সাওলি মুগ্ধ কে নিয়ে শেফালী বেগমের কবরে যায় ফাতিহা পাঠ করতে। দুহাত তুলে শ্বাশুড়ির জন্য চোখের জলে মোনাজাত করে। এরই ফাঁকে এসে শাহেদও এসে দাঁড়িয়েছে মায়ের কবরে। শাহেদ ও হাত তুলেছে আল্লাহর দরবারে। মোনাজাত শেষে শাহেদ করজোড়ে সাওলির কাছে ক্ষমা চায়। বলে আমি তোমাদের সাথে থাকতে চাই। মুগ্ধ যেয়ে শাহেদ কে জড়িয়ে ধরে। সাওলির চোখে আজ জল বাঁধ মানছে না। শুধু মনে মনে বলছে মা মৃত্যুতেও আপনি আমাকে মহিমান্বিত করে গেলেন!
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত