রিসাইকেল বিন থেকে বলছি

রিসাইকেল বিন থেকে বলছি
তুমি ইন্টারের মেয়ে.. তোমার বয়সটাই লাফানোর পড়ালেখায় মারাত্মক রকমের সিরিয়াস তুমি কিন্তু প্রেমিক সামলাতে গিয়ে তুমি সেই সিরিয়াসনেস এর গোড়ায় মাঝে মাঝে পানি ঢেলে দাও …
মাঝে মধ্যে তুমি ক্যারিয়ার নিয়ে বেপক চিন্তায় পড়ে যাও, ভাল রেজাল্ট করতে হবে, ভাল ভার্সিটিতে চান্স পেতে হবে, স্বাধীন চেতা হয়ে বাবা মায়ের আদর্শ মেয়ে হওয়ার স্বপ্ন জাগে, তোমার স্বপ্ন দেখে তোমার অবিভাবকও তোমাকে সেই স্বাধীনতা দিয়ে দেয়… এই ভেবে তুমি দুইদিন বয়ফ্রেন্ডকে সাইডে রেখে বই নিয়ে জাবর কাটো.. এর পরে দিনই দেখা গেলো পহেলা বৈশাখ..
বয়ফ্রেন্ড তোমাকে দুই জোড়া লাল চুড়ি দিলো আর একটা হুমায়ূন আহমেদ এর বই দিলো… তুমি তো এসব পেয়ে বয়ফ্রেন্ডের গালে লিপস্টিক এর রঙ দিয়ে ঠোট একে দিয়ে এলে.. বাসায় এসে ঐ বই আর চুড়ি টেবিলে রেখে সাথে চায়ের কাপ, চশমা, হেডফোন, নুপুর, হাড়ি পাতিল যা পারলে সব রেখে এন্থেটিক কিছু ফটোশুট করে ফেসবুকে রোমান্টিক ক্যাপশনে পোস্ট দিয়ে রাতারাতি আরও দশজনের ক্রাশ বনে গেলে একদিকে তোমার পিছনে ছেলেদের লাইন, অন্যদিকে রোমান্স-কাব্যের আদলে সাজানো বয়ফ্রেন্ড তোমার… “শরীরে একটা ভাব আসছেনা” টাইপ মুভ নিয়ে তুমি প্রতিদিন চুল উড়াও.. অন্যদিকে তোমার পড়ালেখা জলে হাবুডুবু খাচ্ছে… সেই ব্যাপারে যখনই তোমাকে কেউ জ্ঞান দিতে আসে, সে’ই তোমার স্বাধীনতার বাধা হয়ে দাঁড়ায়… কারন তুমি ইন্টারের মেয়ে… আর সেই জন্য তাকে তুমি টস করে রিসাইকেল বিনে ফেলে দাও…
এভাবে চলতে চলতে এক পর্যায়ে এসে হঠাৎ তুমি কোন এক কারনে শুকনা জায়গায় আছাড় খেলে… বাংলা ছবির নায়িকার মত তোমার হুশ ফিরে এলো.. চোখ খুলে দেখলে তোমার জৌলুশ চুষে নিয়েছে দুষ্টু বয়ফ্রেন্ড আর মাথার মগজ চুষে নিয়েছে মিউজিক্যালি, টিকটক, ফেসবুক আর ইন্সটাগ্রাম এর মত সাময়িক আনন্দের জায়গাগুলো…
আরেকটু জ্ঞান ফেরার পর তুমি বই খুলে দেখলে কিন্তু একি!! বইএর ভিতর কাউকেই তুমি চিনতে পারছো না… ঘাড় ঘুরিয়ে ক্যালেন্ডারের পাতায় দেখলে বছরও তোমাকে পশ্চাৎদেশ দেখিয়ে সামনে দৌড়াচ্ছে..
তোমার এখন আর বয়ফ্রেন্ড ভাল লাগে না, ফেসবুক-ইন্সটায় লাভ রিয়েক্টকে তুচ্ছ মনে হয়.. কিছু একটা করা তো লাগবেই এই ভেবে একটু মোটিভেশান খুঁজো তুমি.. খুঁজতে খুঁজতে রিসাইকেল বিনে ঢুকে সেই জ্ঞান দেয়া মানুষটাকে খুঁজো তুমি যে তোমার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করেছিলো একসময়… কিন্তু তুমি জানোনা, রিসাইকেল বিন একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর অটো অপটিমাইজেশনের মাধ্যমে ক্লিন হয়ে যায়… খুঁজে পাওয়া যায়না.. সহপাঠীরা সবাই ক্যারিয়ারের পথে হেটে চলেছে.. তুমি এখনও কি করবে বুঝে উঠতে পারছো না.. তোমার বন্ধুরাই ইন্টার পাশ করার পর তাদের টাইমলাইনে মিম/ট্রল শেয়ার করছে.. মিম/ট্রলে লিখা থাকে, “ইন্টার পরিক্ষার্থীরা ভয় পেওনা.. এটা অনেক সহজ পরীক্ষা.. আমি নিজেও এটা চারবার দিয়েছি..” তুমি এসব দেখে কান্না করে দিলে… জীবনে এই মুহুর্তে এসে তোমার প্রেম ভালোবাসা, বন্ধুবান্ধব, কাঁচের চুড়ি, বুকগ্রাফি এসব কিছুকে চরমভাবে তুচ্ছ মনে হচ্ছে… তুমি আফসোস করছো তোমার হারানো সম্ভ্রম আর হারানো বছরটাকে নিয়ে..
তুমি ইন্টারের মেয়ে, এতক্ষণ যেটা পড়লে এটা তোমার ফিউচার নয়, এটাকে বর্তমান কিংবা অতীত বলা চলে… কিন্তু তোমার ফিউচার এখনও সামনে.. ভুল যদি না করে থাকো তবে গুড, আর যদি ভুল করে বসে থাকো তাহলে ভেরী গুড… কারন প্রতিটি ভুল যদি একটা শিক্ষা হয়, তবে তুমি তোমার এই এইজে সবার থেকে বেশি শিক্ষিত.. সো শিক্ষাটাকে কাজে লাগাও, সময় ফুরিয়ে যায়নি এখনো..
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত