একবার এক মেয়ে আমাকে ম্যাসেজ করছে বলছে ভাইয়া আপনি খুব ভাল লেখেন। আমি তাকে রিপ্লে দিয়ে বললাম ধন্যবাদ আপু। মেয়েটা কিছুক্ষণ পর আবার ম্যাসেজ করলো ভাইয়া একটা কথা বলি রাগ করবেন না। আমি বললাম কি কথা বলুন। মেয়েটা রিপ্লে করলো আমি আপনার লেখা পড়ে আপনাকে ভালবেসে ফেলেছি। কথাটা শোনে একটা দীর্ঘশ্বাস বের হলো, আমি তাকে রিপ্লে করলাম আপু তুমি কি করো? আর লেখা পড়ে লেখা ভালবাসা যায় কিন্তু লেখককে নয়। সে রিপ্লে করলো আমি ক্লাস সিক্সে পড়ি, আর আপনার পিকতো আমি দেখেছি আপনি খুব সুন্দর আপনাকে ভালবাসায় যায়।
আমি মেয়েটার প্রশ্নের কি উত্তর দিবো বুঝতে পারলাম না, তাকে ব্লক করে দিয়ে ডাটা অফ করে দিলাম। এর কয়েকমাস পরের ঘটনা, একটা পর্ব গল্প চলছে, তো এর ভিতর একটা ম্যাসেজ রিকুয়েষ্ট আছে সেখানে লেখা আপনার প্রতিটা গল্পই অসাধারণ প্লিজ লিষ্টে নিবেন। আমি তার রিকুয়েষ্ট এক্সেপ্ট করি, এর পরদিন গল্পটা শেষ হয়ে যায়। সে আইডি থেকে ম্যাসেজ আসে চমৎকার একটা গল্প পড়ে শেষ করলাম সত্যিই আপনি খুব ভাল লেখেন, আমি তাকে ধন্যবাদ দিলাম। সে আবার ম্যাসেজ করলো আপনি কি করছেন আমি রিপ্লে করলাম বসে আছি বন্ধুদের সাথে। সে ম্যাসেজ করলো আমরা কি বন্ধু হতে পারি? আমি বললাম, ফেসবুকে যেহেতু ফ্রেন্ড লিষ্টে আছেন সেহেতু আমরা বন্ধুই। সে রিপ্লে করলো না অন্যরকম বন্ধু। আমি জিজ্ঞাসা করলাম কেমন বন্ধু। সে রিপ্লে করলো না মানে আমি আপনাকে পছন্দ করি।
আমি রিপ্লে করলাম একজন লেখক হিসেবে আমাকে পছন্দ হতেই পারে তা দোষের কিছু না। সে রাগী ইমুজি দিয়ে বললো আপনি কি বুঝেন না আমি কি বলতে চাচ্ছি? আমি উত্তর করলাম যা বলেছেন তা বুঝেইতো বললাম। সে আবারও রাগী ইমুজি দিয়ে আমি আপনাকে অন্য রকম পছন্দ করি যার মানে আমি আপনাকে ভালবেসে ফেলেছি। আমি তাকে বললাম কি দেখে ভালবাসলেন? সে বললো আপনার লেখা পড়ে আপনাকে ভালবেসে ফেলেছি। আমি বললাম লেখা পড়লে কি মানুষকে ভালবাসা যায়? সে বললো কেন যাবে না? আমি বললাম আপনি কি লেখাপড়া করেন নাকি অন্য কিছু? সে বললো আমি ক্লাশ এইটে পড়ি।
কথাটা শোনে আমি মোটেও অবাক হলাম না, কারণ বহুবার এর আগে এমনটা হয়েছে আমার সাথে। আমি তাকে বললাম আগে নিজের পড়াশোনায় মনোযোগী হও সামনেই তোমার জেএসসি পরিক্ষা। সে রাগী ইমুজি দিয়ে আমাকে বললো তা নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না আমি ভাল ছাত্রী আর দেখতেও সুন্দরি অনেক ছেলেই আমার পেছন পেছন ঘুরে। আমি বললাম কিন্তু তোমার প্রেমের বা বিয়ের বয়স হয়নি। তোমাকে নিয়ে তোমার পরিবার নিশ্চই অনেক ভাল কিছু আশা করে। মেয়েটা রিপ্লে দিলো আর আমি আশা করি আপনি আমার ভালবাসাটা গ্রহণ করবেন। আমি তাকেও ব্লক দিলাম।
এবার আসুন মূল ঘটনায়, এমন অনেকেই আছে যারা এখনো এস,এস,সি পরিক্ষা দেয়নি কিন্তু আমাকে প্রেমের অফার করেছেন। যাদের আমি ব্লক করতে বাধ্য হয়েছি। আমার থেকে ঠিক যতটুকু করা সম্ভব হয়েছে আমি করেছি, কিন্তু তাতে কি সমাধান হয়েছে? না হয়নি। কারণ আজ আমি ব্লক করেছি কিন্তু অন্যজন যে তাদের ব্লক করবে এমনটা ভাবা যায় না। কিংবা আরও পাঁচজন তাকে ব্লক করলো কিন্তু এতে কি হলো তার মনে ছেলেদের প্রতি একটা খারাপ ধারণা সৃষ্টি হতে পারে। আবার এমনটাও হতে পারে সে এমন কাউকে প্রপোজ করলো যে তার ফায়দাও লুটে নিল। এতেও তার কাছে ছেলেরা খারাপ হলো। একজনের জন্য সবাইকে সে খারাপ ভাবতে শুরু করলো।
বর্তমান সময়ে ক্লাশ ফাইভ, সিক্সে পড়া ছেলে মেয়েদের হাতে তুলে দিচ্ছেন মোবাইল ফোন, আর সে ফোন হাতে পাবার সাথে সাথেই তারা সবার আগে ওপেন করে নিচ্ছে ফেসুবকে একাউন্ট তারপর অন্য অন্য সব কিছু। অথচ আমাদের সময় আমরা ডায়েরীর পাতায় ছোট ছোট কবিতা কিংবা গল্প লেখে রাখতাম। ফেসবুকের বদলে আমরা কোন গেইম খেলে সময় পার করতাম নয়তো মাঠে, ক্রিকেট কিংবা ফুটবলে সময় পার করতাম। সন্তানের আবদার মিটাতে কিংবা তাদের সময় না দেবার কারণে আমরা তুলে দিচ্ছি মোবাইল ফোন, অথচ এই ফোনই যে তাদের আমাদের কাছ থেকে আরও দূরে নিয়ে যাচ্ছে তা আমরা বুঝতেও পারছি না। কিভাবে যে তারা আলোর পথ থেকে অন্ধকার জগৎ এ চলে যাচ্ছে সে দিকে আমাদের নজর নেই।
তাই সন্তানকে মোবাইল নয় বই দিন পড়ার জন্য, অনেক ভাল ভাল বই আছে ছোটদের ভিবিন্ন বয়সে পড়ার জন্য। তাদের কিছুটা সময় দিন, প্রতিদিন না পারুণ দুইদিন পর একদিন দিন কিংবা সপ্তাহে একদিন দিন। যখনি পারেন সময় দিন, সকালে না পাড়লে রাতে দিন যখনই সময় পাবেন সময় দিন তাদেন নিয়ে সপ্তাহে কিংবা মাসে একটা বিনোদনকেন্দ্রে নিয়ে যান।
তাদের মেধাটা সঠিক জায়গায় কাজে লাগানোর সুযোগ করে দেবার দ্বায়িত্বটা আপনাদের তা ভুলে গেলে চলবে না। আজ সন্তান খারাপ হলে সবার আগে সবাই অবিভাবকদের দিকে আঙ্গুল তুলে দেখাবে তা ভুলে গেলে চলবে না।
ভাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দিলেই যে সন্তান ভাল হবে এমনটা ভাবা যাবে না। সন্তানের ভাল ভবিষৎ এর জন্য সবার আগে অবিভাবকদের সচেতনতা সব চেয়ে বেশী জরুরি।
গল্পের বিষয়:
গল্প