আপনার মনেও একজন ধর্ষক বাস করছে

আপনার মনেও একজন ধর্ষক বাস করছে
আজ একটা ধর্ষণের খবর টেলিভিশনে দেখলাম। ধর্ষকের বিরুদ্ধে আন্দোলন এবং মানব বন্ধনও হয়েছে। সকলের দাবি ধর্ষকে যেন উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হয়। বেশ তাহলে তো ভালোই সকলে মিলে একতাবদ্ধ হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে।
কিছুক্ষণ পর যখন আমি সামাজিক যোগাযোগ মধ্যমে প্রবেশ করলাম তখন লক্ষ্য করলাম এই টপিকের ওপর লেখালেখি চলছে। বেশ তাহলে তো আরো ভালো। আন্দোলন সবখানে চলছে, ধর্ষক এবার রেহাই পাবে না। কিন্তু কিছু লেখা পড়ে আমি বিবর্ত হলাম। লেখালেখি হচ্ছে ধর্ষণের কারণ নিয়ে। ধর্ষণ কেন হচ্ছে? কে দায়ি? নারী না পুরুষ? বেশির ভাগ লেখায় নারীর দোষটা বেশি দেখানো হলো। আরো কোনো লেখায় নারী পুরুষ উভয়ের সমান দোষের কথা বলা হয়েছে। আমিও সহমত নারী পুরুষ উভয়ের দোষ সমান। তাহলে আমার আপত্তি কোথায়? আপত্তি হলো যারা লিখছে তাদের লেখায় একজন ধর্ষণ লুকিয়ে আছে। তাদের যুক্তি যারা গ্রহণ করছে তারাও তাদের মনের এক কোণে একজন ধর্ষণকে জায়গা দিচ্ছে। লেখার ধরণগুলো কিছুটা তুলে ধরছি। সবগুলো পোস্টে একটা কমন বিষয় ছিল, ‘বেড়ালের সামনে শুটকি মাছ অথবা ক্ষুধার্তের সামনে থালা ভরতি ভাত।’ আবার কেউ কেউ এক পাক্ষিক নারীর দোষ দিয়ে যাচ্ছে। এবার আমি আপনাদের মনে বাস করা ধর্ষকের সাথে পরিচয় করাচ্ছি।
বেড়ালের সামনে শুটকি মাছ রাখলে তো বেড়াল থাবা দেবেই। কিন্তু কথা হলো আপনি তো মানুষ। সৃষ্টির সেরা জীব। আর বেড়াল? তার সামনে আপনি মাছ রাখলে সে তো থাবা দেবেই। তার মধ্যে বিবেক নেই কিন্তু আপনার মধ্যে আছে। আপনি তো নিজেকে পশু ভাবছেন। নিজের মনে একজন ধর্ষককে জন্ম দিচ্ছেন। আবার একদল লোক দেখলাম বলছে মেয়েরা বোরকা পড়ে কিন্তু চিপাচাপা দিয়ে সব দেখা যায়। এবার আমি বলি? আপনার নজরই তো চিপাচাপায়। নারী যতই পর্দা করুক আপনি তো চিপাচাপই খুঁজবেন। আরেক দল বলবে স্টাইল করে নারী পর্দা। আমার একটা প্রশ্ন নারী কী নিয়ে এতকিছু আপনারা কী করে জানেন? কী পরলে কী দেখা যায় এতকিছু জানেন কী করে জানেন? আপনাকে ধর্ষক বললে ভুল হবে না। কারণ আপনি চোখ দিয়ে বিনা স্পর্শে প্রতিনিয়ত ধর্ষণ করেই যাচ্ছেন। যিনা খুবই ভয়ঙ্কর!
প্রতি বছর আমাদের দেশে হাজারো নারী ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। কিছু ঘটনা আমাদের সামনে আসে কিছু সুপ্ত থাকে। ধর্ষণ যারা হচ্ছে তাদের মধ্যে বেশির ভাগ নারীই পর্দাশীল অথবা শিশু। খবর যদি দেখে থাকেন তাহলে আশা করি দ্বিমত পোষণ করবেন না। আমাদের দেশে ক’টা নারী অপর্দাশীল? অর্ধেক? উঁহু! খুব কম সংখ্যক। কিন্তু ক’টা পুরুষ পর্দাশীল? চার ভাগের তিন ভাগই পর্দাশীল নয়। ‘নারী পর্দা তখনি কাজে দেবে যখন পুরুষ তার দৃষ্টি সংযত করবে।’ পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল-কোরআনে প্রথমে পুরুষকে তার দৃষ্টি সংযত এবং তারপর নারীকে পর্দা করার কথা বলা হয়েছে। কারণ পুরুষের দৃষ্টি সংযত না হলে নারীর পর্দা কোনো কাজে দেবে না। নারীকে অবশ্যই পর্দা করতে হবে, এটা ফরজ। ধর্ষণ নিয়ে যতগুলো লেখা হয় সবগুলোতে পুরুষকে বেড়াল কিংবা ক্ষুধার্তের সাথে তুলনা করা হয়। এত ক্ষুদা কোথা থেকে আসে? যৌন ক্ষুদা বাদ দিয়ে পেটের ক্ষুদায় আসলাম। এই রোজার মাসে আপনি ইফতারির পূর্বে কেন খাবার খাচ্ছেন না? আপনি কী ক্ষুধার্ত নন?
এবার আসি যৌন ক্ষুদায়। এটাও চাইলে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এবার কিছু বিষয় সামনে আসবে যেমন ‘পর্ণ সাইট সহজ লভ্য, অশ্লীল গান বাজনা, সিনেমা।’ আমি বিস্তারিত কিছু বলব না। এ সম্পর্কে নিশ্চয়ই অনেক লিখা ইতিপূর্বে পড়েছেন। আমি শুধু ধর্ম গ্রন্থের একটা বাক্যই বলব, ‘পুরুষকে তার দৃষ্টি সংযত করতে হবে।’ দৃষ্টি সংযত করেন, করতে পারলে পর্ণ সাইট কিংবা অশ্লীল গান সিনেমা আপনি দেখবেন না।
আপনি যতদিন নিজেকে বেড়াল ভাববেন নিজেকে ক্ষুধার্ত ভাববেন ততদিন আপনার মনে একজন ধর্ষক রয়েছে। এ ধারণা আপনাকে পালটাতে হবে। আপনি যদি আপনার দৃষ্টি সংযত করতে পারেন তাহলে বেপর্দা নারী সামনে এলেও কোনো আকাঙ্ক্ষা জাগবে না। সবকিছু মনের ওপর নির্ভর করে। সৃষ্টির সেরা জীবের মতো আচরণ করুন, সৃষ্টির সেরা জীবের মতো ভাবুন। এবার আসি নারীর পর্দায়। নারীকে নিয়ে আর কী বলব? হাত কাঁপে নারীকে নিয়ে লিখতে গেলে। কেন জানেন? কারণ আমার যোগ্যতা নেই নারীকে নিয়ে লিখার। কারণ নারীর মর্যাদা পুরুষের তুলনায় তিনগুণ বেশি। আমরা মানুষেরা সৃষ্টির সেরা জীব আর মানুষের মধ্যে নারীর মর্যাদা সবচেয়ে বেশি। সেরার সেরা তারা। তবু বোনদের উদ্দেশ্যে পর্দা করার অনুরোধ রইল। বেশির ভাগ নারীই পর্দা করে থাকেন।
আর যারা করে না তাদের ধর্ষণ হতে কিন্তু এখনো আমি দেখিনি। সর্বদা পর্দা করা নারী এবং শিশুদের ধর্ষণের শিকার হতে দেখেছি। একটা নারী নিজেকে নিজে ধর্ষণ করতে পারে না। একটা পুরুষ একাই হাজার নারীকে ধর্ষণ করতে পারে। আপনি(পুরুষ) যদি আপনার দৃষ্টি সংযত না করেন আগামীতে আপনার দ্বারা ধর্ষণ হবে না তার কোনো গ্যারান্টি নেই। আমাদের জোর আছে, সর্বদা নারীর পর্দা ওপর দোষ তুলতে পারি। দোষ তুলতে পারি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে থাকা অশ্লীলতার ওপর।
কিন্তু এই অশ্লীল চিত্র তো আমরাই দেখছি, গিলছি। আমরা তো নিজের দৃষ্টি সংযত করছি না। সারাদিন চিৎকার দিয়ে বলর যাই নারী নারী পর্দা করো তুমি। কিন্তু নিজেরাই পর্দা করছি না। পবিত্র ধর্ম গ্রন্থে আগে পুরুষকে এবং তারপর নারীকে পর্দা করার কথা বলা হয়েছে। এই কথা প্রতিটা মুসলিম জানে। কিন্তু মানে কে? আমল কেউই করে না। কথায় আছে ‘ব্যাধিই সংক্রামক।‘ নিজেকে পশুর সাথে তুলনা বন্ধ করুন। নিজের দৃষ্টি সংযত করুন, আর হ্যাঁ দৃষ্টি সংযত রাখতে পারলে নিজের বোনকেও পর্দাশীল করতে পারবেন। মনে রাখবেন তালি এক হাতে বাজে না।
আধুনিক যুগ, সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলা আপনাকে অবশ্যই শিখতে হবে। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলার অর্থ এই নয় যে পশ্চিমা বিশ্বের মতো অশ্লীলতা গ্রহণ করবেন। সময়ের সাথে নিজের দৃষ্টি সংযত করে তাল মিলিয়ে চলা যায়। কত কাল আর নারীকে দোষ দেবেন? ভুল যান কেন নারীর মর্যাদা আপনার থেকে তিনগুণ বেশি? আর হ্যাঁ, সতীত্বের মূল্য কত সেটা একমাত্র নারীই ভালো জানে। আপনি আমি বুঝব না। নারীর সতীত্বের মূল্য সাত আসমানের চেয়েও বেশি।
ধর্ম অনুসরণ করুন স্রষ্টাকে মান্য করুন। মুখোশধারী মুসলিম হওয়া কোনো দরকার নেই। ইসলাম নামাজ রোজায় সীমাবদ্ধ নয়। এটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। ইবাদতের কোনো মূল্যই নেই যদি দৃষ্টি সংযত না করেন। আর কথা বাড়াব না, বুদ্ধিমানদের জন্যে ইশারাই যথেষ্ট। নিজেকে পশু ভাবা বন্ধু করুন, নিজের মনে বাস করা ধর্ষণকে হত্যা করুন। মনে রাখবেন নারীর পর্দা তখনি কাজে দেবে যখন পুরুষ নিজের দৃষ্টি সংযত করবেন। আর যারা প্রেম করছে, নারী পুরুষ উভয়কে বলছি এই যিনার কাজ থেকে বিরত থাকুন। প্রেম আপনার মনে মন্দ ভাবনার জন্ম দেবে। বিয়ের পর প্রেম।করুন বিয়ের আগে নয়। হ্যাঁ, বিয়ে দেরিতে করতে হচ্ছে জানি তবে করার কিছু নেই। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে তো!
পরিশেষে এতটুকুই বলব আপনার দ্বারা যদি একজন নারী নিরাপদ থাকে… না একজন না! একজন কেন? আপনার আশেপাশের সকল নারী যদি আপনাকে নিরাপদ মনে করে তবেই আপনি পুরুষ। এর অর্থ গভীর রাতে নির্জন সড়কে একটা নারী আপনাকে দেখলে যেন ভয় না পায় বরং নিজেকে নিরাপদ মনে করে। বুঝলেন? যে সকল নারী পর্দা করে থাকে তার কিন্তু ভয় পায়, আঁধার এবং নির্জনতাকে খুব ভয় পায়…! উদাহরণ আপনারই বোন.! পুরুষ জাতি নিজের দৃষ্টি সংযত রাখুন এবং নারী জানি পর্দা করুন।
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত