রাতুল সোমবারে আমার বিয়ে আর আজ হচ্ছে শনিবার তোমাকে যে বললাম বিয়েটা ভাঙতে তুমি করছো টা কি? শুনো কোন কারনে যদি আমার বিয়েটা হয়ে যায়! তো আমি বাসর রাতেই সুইসাইড করবো এবং মরার আগে ফেইসবুকে একটা লাইভ করে যাবো। যেখানে সব দোষ – ই তোমার থাকবে তারপর বুঝবে মজা। কত করে বললাম চল পালিয়ে যাই দুজন দুরে কোথাও । না তুমি পালাবে না কারন তুমি ভিতু নও । পালানো ছাড়াই তুমি বিয়ে ভাঙবে বলেছিলে এখন কই তোমার বিয়ে ভাঙা? শুনো রাতুল এত কিছু আমি বুঝিনা তুমি বিয়েটা ভাঙবে যে করেই হোক । আর তা যদি না করতে পারো তাহলে আমি তো মরবোই সাথে তোমাকেও জেলে পাঠানোর ব্যবস্থা করে যাবো…
ধুর বাল কিচ্ছু বুঝতে পারছি না। কি করে যে বিয়েটা ভাঙবো? কোন এক্সপেরিয়েন্স ও নাই বিয়ে ভাঙার । ঐ দিকে সুপ্তি টেনশন টা আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে একটু পর পর ফোন দিয়ে । আজকাল যতটা চাপ আমি নিচ্ছি ততটা চাপ আর এফএল পাইপ ও নিতে পারবে বলে মনে হয় না । একে তো টেনশনে মাথার চুল ছিড়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে ঐ দিকে আবার সুপ্তির আব্বা আমার সাথে মজা লয়! রাতুল সুপ্তির বিয়া তো আইয়া পড়লো রে বাজান। সুপ্তি তো তোর বোইনের মতই হলুদ থাইক্যা শুরু কইরা বিয়া অব্দি থাকবি কিন্তু তুই। অথচ উনি আমার আর সুপ্তির প্রেমে কথা জেনেই তারাহুড়ো করে এই অল্প বয়সে বিয়েটা ঠিক করছে সুপ্তির। আর এটা কে বিয়ে বললে ভুল হবে। এটা তো বাল্য বিবাহ! সুপ্তির বয়স মাত্র ১৬ পেরিয়ে ১৭ তে পা রাখলো আর আমি ২১।
ভাবছিলাম সুপ্তির বিয়ের বয়স হতে হতে আমি নিজেকে গুছিয়ে নিতে পারবো। কিন্তু কে জানতো? ১৭ তেই বিয়ে হয়ে যাবে সুপ্তির! আমার মনে হয় ১২-১৪ বছরের কারোর সাথে প্রেম করার দরকার ছিল। তাহলে অন্তত ২-৪ বছর সময় পেতাম নিজেকে গুছানোর মত। উফ আর ভাবতে পারছি না । মাথা ব্যথা করছে। মাথা ব্যথা নিয়েই ফেইসবুকে একটা পোষ্ট দিলাম। দেশে কি আইন নাই ? আর কত বাল্য বিবাহ হবে !! পোষ্ট দেখে এক লোক কমেন্ট করলো সে পুলিশে জব করে কিন্তু তার পোষ্টিং গাজীপুরে তার কাছে সব ইতিহাস বলার পরে সে বলল বিয়েটা আমি ভেঙে দিতে পারবো তবে ১০ এর মত লাগবে ? আরে ভাই ১০ এর মত না আমি আপনাকে ১০ – ই দিবো আপনি ভাঙার ব্যবস্থা করুন।
সে বলল আচ্ছা আপনি চাপ নিয়েন্না নেত্রকোনায় আমার এক বন্ধু আছে আমি ওর সাথে কথা বলছি সে যাবে বিয়ে ভাঙতে। আপনি আপনার নাম্বার আর মেয়ের বাড়ীর এড্রেস টা দেন আমাকে। কথা মত সব দিলাম পুলিশ বেডারে। এখন একটু ফ্রেশ লাগছে আবার ভয় ও লাগছে বেডা আসবে তো বিয়ে ভাঙতে? ধুর আসবে আসবে টাকার জন্য হলেও আসবে হাজার হোক পুলিশ বলে কথা। ঐ দিকে সুপ্তি কেও জানিয়ে দিলাম বিয়ে ভাঙার ব্যপার টা সে তো আরো মহা খুশি! সে বলছে শুনো আমার বিয়ে ভেঙে গেলে তখন তুমি আমার আব্বা কে একটু সান্তনা দিও। আব্বার পাশে পাশে একটু থেকো যাতে আব্বা তোমার প্রতি একটু দুর্বল হয় এবং আমাদের ব্যপার টা মেনে নেয়। বললাম আচ্ছা ঠিক আছে সান্তনা দিবো নে। দেখতে দেখতে বিয়ের দিন চলে আসলো পুলিশ ও চলে আসলো বিয়ে ভাঙতে তাও একজন পুলিশ নয় !!!
পুরো এক গাড়ি পুলিশ সাথে এসপি সাহেব ও আসছেন বিয়ে ভাঙতে। উফ কি যে মজা লাগছে শেষ মেষ বিয়েটা ভেঙেই যাচ্ছে আর সব চেয়ে মজা লাগছে সুপ্তির আব্বার মুখটা দেখে। বিয়ে বাড়ীর সবাই প্রায় একস্থানে। একজন পুলিশ এসে বলছে আপনাকে এসপি স্যার ডাকছেন। দৌড়ে গেলাম এসপি স্যারের কাছে। এসপি স্যার জানতে চাইলেইন আপনিই তো রাতুল আমি বললাম জ্বী স্যার। তারপর উনি যা বলা শুরু করলেন তার জন্য একদমি প্রস্তুত ছিলাম না আমি! উনি বলতেছেন এই রাতুলের মত সমাজসেবী ছেলেরাই পারে সমাজ থেকে বাল্য বিবাহ বন্ধ করতে । আমাদের সচেতন হতে হবে । কোন বাচ্চা মেয়ে কে অল্প বয়সে বিয়ে দিয়ে তার জীবন কে ঝুকির মুখে ফেলে দিতে পারি না আমরা। আজকে রাতুল যদি আমাদের এই ব্যাপারে না জানাতো তাহলে হয় তো আরেকটি বাচ্চার মেয়ের জীবন অন্ধকারের দিকে পতিত হত।
উনার ভাষন শুনে দৌড়ে পালাতে ইচ্ছে করছে । ঐ দিকে সুপ্তির আব্বা এমন ভাবে তাকাচ্ছে আমার দিকে মনে হচ্ছে এই বুঝি পুলিশের বন্দুক নিয়ে আমাকে গুলি করে দেয়। উনার ভাষন শেষে সুপ্তি এবং সুপ্তির আব্বা আম্মা কে পুলিশের গাড়ীতে তুলল। বর পক্ষ এই খবর শুনে অর্ধেক রাস্তা থেকেই পালিয়েছে। এটা কি হচ্ছে ওরা সুপ্তি কে কেনো গাড়ীতে তুলছে? মাথা তো ঘুরাচ্ছে আমার!!
ঐ দিকে সুপ্তির আব্বা গাড়ীতে উঠার আগে আমার কানে কানে বলেগেলেন – রাতুইল্লা জেল থেকে ছাড়া পাই তারপর তুই বুঝবি এর মজা । আরেক পুলিশ এসে আমার কাছে টাকার কথা বলছে কানে কানে । বললাম চুদির ভাই তোরা তো একটা বিয়ে ভাঙোছ নাই ! ভবিষ্যৎ এ যাতে সুপ্তির সাথে আমার কোনদিন বিয়ে না হয় সেই ব্যবস্থাও করে দিয়েগেছোছ । একটা কানা কড়িও দিবো না তোদের । তখন সুপ্তির আব্বার মত ঐ পুলিশ ও শাসিয়ে গেলো আমাকে। হুর বাল করতে চাইলাম কি? আর অইলো কি! বাড়ীতে থাকা যাবে না কয়দিন । সুপ্তির আব্বা জেল থেকে বেড়িয়েই শালিস বসাবে আমার নামে। সবার কাছে ছোট করবে আমাকে । তার চেয়ে বরং কিছুদিন ঘুরে আসি চিটাগং থেকে। ওখানে ১০ দিন ছিলাম। এই ১০ দিনে সুপ্তির সাথে কোন যোগাযোগ হয়নি ওর নাম্বার বন্ধ ছিল। ভাবলাম হয়তো জেলে আছে ছাড়া পায়নি।
আবার টেনশন ও হচ্ছে তাই চলে আসলাম নেত্রকোনায়। বাজারে এসেই দেখি সুপ্তির আব্বা! আমি উনাকে দেখেই পালাতে চেষ্টা করলাম কিন্তু পারলাম না পালাতে । উনি আমার হাত ধরে টানতে টানতে মিষ্টির দোখানে নিয়ে গেলেন। বাবা রাতুল তোর না মিষ্টি পছন্দ? আজ খা তুই যত মিষ্টি খেতে পারোছ সব বিল আমি দেবো। আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না! কারোর মেয়ের বিয়ে ভাঙলে তারউপর পুরো পরিবার কে জেলে পাঠালে কেউ কি মিষ্টি খাওয়ায় ? আবার এত মধুর শুরে কথা বলে!!! মিষ্টি তো আমার পেটে ঢুকছে না। নিশ্চয় বড় সড় কিছু একটা হইছে। নাকি এই মিষ্টিতে বিষ টিষ আছে? উফ ভাবতে পারছি না । সুপ্তির আব্বাও তো কিছু বলছে না। আমি বার বার জানতে চাচ্ছি মিষ্টি কি জন্যে চাচা? বলছে মিষ্টি খাওয়ার পর সব বলবো । অনেক কষ্টে ২ টা মিষ্টি খেলাম। এবার বলেন চাচা হইছেটা কি যার জন্য আপনি মিষ্টি খাওয়াচ্ছেন?
কথা অইলো গিয়া বাজান সুপ্তির তো বিয়া অইগেছে । সুপ্তির আব্বার মনে হয় তার ছিড়ে গেছে ঐ দিনের ঘটনার পর। পাগল টাগল হয়ে গেছে মনে হয় তার চাল চলনে। দোখান থেকে বেড়িয়ে বন্ধু রিফাতের সাথে দেখা। রিফাত আবার সুপ্তির প্রতিবেশি ওর কাছ থেকেই জানলাম ঐ দিন থানায় ধরে নিয়ে যাওয়ার পর ঐ এসপিই সুপ্তি কে বিয়ের প্রস্তাব দেয় এবং সুপ্তিও রাজি হয়ে যায়!!! আর সুপ্তির আব্বা তো তোর প্রশংসা করছে সবার কাছে আজ তোর জন্যই সুপ্তির এত ভাল বিয়ে হইছে । সুপ্তির বিয়ের পুরো ক্রেডিট -ই উনি তোকে দিচ্ছেন। ইতিমধ্যে সুপ্তি কল দিলো আমাকে…..
আমি: সুপ্তি তুমি এটা করতে পারলা আমার সাথে?
সুপ্তি : তুই আমাকে এবং আমার পুরো পরিবার কে জেলে পাটাইছোছ তোর এক ফাল্তু প্ল্যানের জন্য পুরো এলাকায় বেইজ্জত হইতে হইছে আমার পরিবার কে । তোরে যে এখনো জেলে ভরি নাই এটাই অনেক বেশি । শুন আজকের পরে তুই যদি আমাকে ফোন দিস তাহলে তোকে আমি জেলে পাঠাবো ইভটিজিং এর জন্য। জানিস তো আমি কে? আমি হলাম এসপির বউ বলেই ফোন টা কেটে দিল। তখনি শুনি সুপ্তির আব্বা গান গেয়ে যাচ্ছে মন টা কে বলি হায় কেঁদো না প্রেমের নাম বেদোনা ….