বাবা তুমি একটা সেলফিশ!তুমি খুব খারাপ!!আমাদেরকে একটুও ভালোবাসো না তুমি।তোমার মতো বাবা লাগবে না আমার।!” চৌদ্দ বছর বয়সী মেয়ে ইরার মুখে এই কথাটা শুনে আজাদ সাহেব ও তার স্ত্রী রাহেলা কিছুটা থতমত খেয়ে গেলেন।এমন একটা কথা শোনার জন্য তারা মোটেই প্রস্তুত ছিলেন না।রাহেলা বললেন
–ছিঃ ইরা!এসব কি বলছিস??তোর বাবা হয় না?
–হ্যাঁ মা।কিন্তু বাবা খুব খারাপ।
রাহেলা কি বলবেন বুঝতে পারছেন না।মেঝেতে পাটি বিছিয়ে তারা রাতের খাবার খাচ্ছিলো !এমন সময় ইরার এই কথাটা তাদের কিছুটা বিব্রত করে ফেলে।রাহেলা স্বামীর দিকে চোখ দিয়ে ইশারা করে খাবার শেষ করে নিতে বলেন।
আজাদ সাহেব একটা বেসরকারী ক্লিনিকের সামান্য কর্মকর্তা!!সারাদিন তার ক্লিনিকেই কাটে এক প্রকারের।সকালে নাস্তা করে যাওয়ার সময় দুপুরের খাবার হটপটে পুরে দেন রাহেলা।রাতে খেতে আসেন কাটা ৯টায়।এর মধ্যে আর কোনো বিরতি নেই।মাঝে মাঝে রাতেও বাসায় ফিরতে পারেন না।কাজের চাপ বেশি থাকে।
বাসা থেকে প্রায় ৫ কি.মি অতিক্রম করে আজাদ সাহেবের কর্মস্থান!! প্রতিটা দিন নানা ব্যস্ততায় যায় তার।সামান্য বেতনের হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম বাধ্য হয়েই করতে হয় তাকে।ইরাকে একটা ভালো স্কুলে পড়াতে হচ্ছে।একমাত্র মেয়ের ভরণ পোষনে কোনো প্রকার কমতি রাখে না।ছোট ছোট দুটো রুমের একটা ভাড়া বাসায় থাকে তারা।একটা চিপা গলির ভেতরে তাদের বাসা! সংসারের যাবতীয় খরচ,বাসা ভাড়া,ইরার পড়াশুনোর খরচ সব মিলিয়ে টেনেটুনে কোনোমতে চলে যায় তাদের দিন। সঞ্চয়ের কোনো উপায় নেই।এর মধ্যে একমাত্র সম্বল হচ্ছে এই চাকরীটাই।তাই যখন যেভাবে করতে বলে সেভাবেই করতে হচ্ছে আজাদ সাহেবকে।গত আট মাস যাবত এই চাকরীটা করে যাচ্ছেন তিনি।আগে চাকরী করতেন একটা কোম্পানীতে।কোম্পানীর পার্টানারদের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হওয়ার কারনে তারা ব্যবসা বন্ধ করে দেয়।ফলে অনেকেই বেকার হয়ে পড়ে।এখন একমাত্র ভরসা এই ক্লিনিকের চাকরীটা!বিধায় আজাদ সাহেব কোনো প্রকার আপত্তি ছাড়াই অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। রাতের খাবার শেষে ইরা ঘুমিয়ে পড়েছে নিজের রুমে।আজাদ সাহেব স্ত্রীকে বললেন
–মেয়েটা আজকে এমন একটা কথা কেনো বলল হঠাৎ করে!!
–আমি জিজ্ঞেস করবো ওকে।তুমি এসব নিয়ে চিন্তা করোনা।ও এখনো অবুঝ।না বুঝেই কোনো কারনে বলে ফেলেছে।
–ওর কোনো কিছুর কমতি রেখেছি আমি রাহেলা?
–আহহা।তুমি এত ভাবছো কেনো এটা নিয়ে।বাচ্চা মেয়ে যে কোনো কারনে বলে ফেলেছে!! আমি বললাম তো ওকে জিজ্ঞেস করবো।ঘুমাও।সকালে উঠতে হবে।
–আজকে আর ঘুম আসবে না। কথাটা বলেই আজাদ সাহেব পাশ ফিরে শুয়ে পড়লেন। আজাদ সাহেবের কথা শুনে রাহেলা কিছুটা বিষণ্ণ হয়ে পড়ে।পাশেই বসে থাকে।ভাবতে থাকে “লোকটা এত কষ্ট করে মেয়েটার জন্য।আর মেয়েটা আজকে এমন একটা কথা বলে কলিজায় আঘাত দিয়ে দিলো।”
–জানো রাহেলা ছোট বেলায় দেখতাম বাবা-মা আমাদের জন্য কত কিছু করত!!আমাদের দুই ভাই বোনের জন্য সব ধরনের চেষ্টা করতেন।প্রথমে বুঝতাম না।যখন একটু একটু করে বড় হতে লাগলাম,সবকিছু বুঝতে শুরু করলাম তখন বুঝেছি বাবা-মা আমাদের জন্য কত কি করেন। ওপাশে ফিরেই কথাগুলো বলছিলো আজাদ সাহেব।
“বাবা প্রায় সময় বাজার থেকে ফেরার সময় গরুর মাংস আর মাছ নিয়ে আসত।প্রায় সময়ই দেখতাম বাবা-মা নিজের পাতে মাছ মাংস কম নিতো,কখনো কখনো নিতোই না।সবসময় আমাদের পাতে তুলে দিত।এক বেলাও আমাদের প্লেট মাছ মাংসহীন যায়নি।মাছ না হলে মাংস,মাংস না হলে মাছ।একটা না একটা আমাদের পাতে আসতোই।
কখনো কখনো দেখতাম ঈদের সময় বাবা নতুন কাপড় নিতেন না।মায়ের জন্যও মাঝে মাঝে নিতো না।অথচ আমাদের জন্য দিব্যি কয়েকটা জামাকাপড় কিনে আনতো।আমাদের জামাকাপড় গুলো থেকে দু’য়েকটা কম নিয়ে তারা নিজেও নিতে পারতো।কিন্তু কখনো নিতো না।মাকে সবসময় দেখতাম দুইটা শাড়ি পরতে।আর দুইটা শাড়ি সবসময় তোলা রাখতেন।বাবা আমাদের জন্য জুতো নিয়ে আসতো ঠিকই কিন্তু নিজের পায়ের জুতোটা বারংবার মুচির কাছ থেকে সেলাই করে আনতেন।সেটা পায়ে লাগিয়ে দিব্যি হাসিমুখে ঘর থেকে বের হতেন সকালে।শার্ট এর বিভিন্ন জায়গায় জোড়া তালি দিয়ে দিব্যি কাটিয়ে দিতেন অনেকগুলো দিন।
আমার এখনো স্পষ্ট মনে আছে।আমার স্কুলের জুতা আর ড্রেস বানানোর জন্য বাবার কাছে বলেছিলাম তখন বাবার হাতে পর্যাপ্ত টাকা ছিলোনা বাবাও অসুস্থ ছিলো।বাবা ডাক্তার দেখানোর টাকা দিয়ে আমাকে স্কুল ড্রেস আর জুতা কিনে দিয়েছিলেন।ছোট বোনকেও ড্রেস বানিয়ে দিয়েছিলেন।তখন জানতে পারিনি।কথাটা জেনেছি যখন একটু বড় হয়েছি তখন।যখন বাবার শারীরিক অসুস্থতা বেড়ে গিয়েছিলো।তখন মাকে বলতে শুনেছি আমাদের পেছনে টাকা দিয়ে বাবা ডাক্তার দেখান নি।আমি আড়াল থেকেই শুনেছিলাম।সেদিন মনে মনে খুব কষ্ট পেয়েছিলাম।যদি জানতাম তাহলে ওই সময়টাতে চাইতাম না ড্রেস জুতা!!
বাবা মা আমাদের জন্য অনেক করেছেন।বিনিময়ে আমি কিছুই করতে পারিনি।কষ্ট দিয়েছি সবসময়। ওনারা বেচে থাকলেও কিছুই করতে পারতাম না।আমার এই সামান্য চাকরী,সংসার!!” কথাগুলো বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন আজাদ সাহেব।রাহেলাও একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া কোনো কিছু বলতে পারেনা।হঠাৎ করেই আজাদ সাহেবের ফোন টা বেজে উঠে।ফোন টা রিসিভ করে কানের কাছে নিলেন।উত্তরে বললেন “আচ্ছা আসছি” ফোন টা রেখেই আজাদ সাহেব বিছানা থেকে উঠে শার্ট -প্যান্ট পরছিলো। রাহেলা জিজ্ঞেস করলো
–ক্লিনিকে যাচ্ছো?
–হ্যাঁ কিছু এক্সপার্ট এর মালপত্র এসেছে নাকি।সেগুলো গিয়ে গুছাতে হবে!!
–তার মানে ভোর হবে আসতে আসতে!
আজাদ সাহেব কিছু না বলে ঠায় দাঁড়িয়ে ছিলেন কিছুটা সময়।তারপর ইরার রুমের দরজার সামজে দাঁড়িয়ে ওকে কিছুক্ষন দেখলেন। তারপর বেরিয়ে গেলেন।রাহেলা দরজা ভালো করে আটকিয়ে ইরার পাশে গিয়ে শুয়ে পড়লেন। সকালে ইরা বাবাকে দেখতে না পেয়ে মাকে বলল
–দেখেছো মা!!বাবা আজকেও নাই।কয়দিন পরে আমাদের স্কুলে ফাদার’স ডে। আমি সিউর বাবা সেদিনও থাকবে না কোনো বছর ছিলোনা এই বছর ও থাকবে না
–কালকে তুই এমন একটা কথা কেনো বলেছিস তোর বাবাকে?তোর বাবা কত কষ্ট পেয়েছে জানিস?
–বলবো না তো কি করবো মা।আমার সব ফ্রেন্ডসরা প্রতি ভ্যাকেশনে ট্যুরে যায় ফ্যামিলিকে নিয়ে,আর আমি বাসায় বসে থাকি।ওরা এসে আমার কাছে ট্যুরের গল্প করে আমার কি খারাপ লাগে না তখন?আমারও তো ইচ্ছা করে বাবা মায়ের সাথে কোথাও গিয়ে ঘুরে আসতে।
–তুই দেখিয়া না তোর বাবা কাজে ব্যস্ত থাকে?
–হ্যাঁ দেখি তো।আমার ফ্রেন্ড দের বাবারা কি কাজ করে না?ওরা তো ঠিকই বাবার থেকে সময় পাচ্ছে।
ঘুরছে,আনন্দ,ফুর্তি করছে।আমি ওদের সবার বাসায় গিয়েছি।অথচ আমার বাসায় আমি কাউকে নিয়ে আসতে পারিনি।গরীব হয়ে কেনো জন্ম দিলে আমাকে তোমরা!
রাহেলা সহ্যের সীমা ছড়িয়ে গেছে।তাই ঠাস করে একটা চড় লাগিয়ে দেয় ইরার গালে। “তোর বাবা তোর জন্যই এত হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে।তুই কোনো জিনিসের আবদার করা মাত্রই যে করেই হোক তোকেই এনে দেয়।আর তুই এইভাবে কথা বলছিয়া?আমাদের সবচেয়ে বড় ভুল ছিলো তোকে এত দামী প্রাইভেট স্কুলে ভর্তি করানো।বড়লোকের বাচ্চাদের সাথে মিশে তুই দিনদিন ভেস্তে যাচ্ছিয়া।স্কুল থেকে তুই এইভাবে কথা বলা শিখেছিস,নম্রতা,ভদ্রতা বলতে কিছুই নেই!!” ইরা গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো।সে ব্যাগ কাধে নিয়ে স্কুলের দিকে চলে গেলো।রাহেলা রাগে ওর পেছন পেছন যায়নি। ইরা চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরে আজাদ সাহেব বাসায় আসলো।রাহেলার চোখমুখ লাল হয়ে আছে।আজাদ শার্ট খুলতে খুলতে জিজ্ঞেস করলো
–কি হয়েছে??
–তেমন কিছু না।
–ইরাকে দিয়ে এসেছো স্কুলে?
–একা গেছে!
–কি?একা গেছে মানে?তুমি যাওনি কেনো?
কথাটা শেষ করতেই শার্ট টা আবার পরতে পরতে বেরিয়ে গেলো ইরার স্কুলের দিকে। প্রায় এক ঘন্টা পর আজাদ সাহেব বাসায় আসলেন।রাহেলা তখন ঘর গুছাচ্ছিলো।আজাদ সাহেব হাত মুখ ধুয়ে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিতে দিতে বললেন
–কি হয়েছে রাহেলা আমাকে বলবে একটু?আমার পাশে এসে বসো!
–আসছি। রাহেলা ঘর গুছানো শেষ করে আজাদ সাহেবের পাশে বসলেন।
–কি হয়েছে ইরার বলো তো,আমি স্কুলে গেলাম,আমার সাথে কথা না বলেই ক্লাসে চলে গেলো। রাহেলা আজাদ সাহেবকে সব খুলে বললেন সকালে ঘটনা। আজাদ সাহেব বললেন
–মেয়েটা তো ভুল কিছু বলেনি।ওকে আমরা কি দিতে পেরেছি।এই সামান্য দেওয়াতে কিছু হয়না।মেয়েটার তো কত ইচ্ছে থাকে।কোনোটাই তো পূরণ করতে পারিনা।তুমি ওকে মেরেছো কেনো!ভালো করে বুঝিয়ে দিলেই পারতে।ও এখনো অবুঝ।কালকে রাতে তো আমাকে তুমিই বুঝালে।আর আজকে তুমি রাহেলা কিছু বলে না।মাথা নিচু করে বসে থাকে।ইরাকে চড় দেওয়ার ব্যাপারটা রাহেলার কাছেও খুব খারাপ ঠেকছে।এভাবে বলাও ঠিক হয়নি হয়তো।ব্যর্থতা তো আমাদেরই।মেয়েটার সব ইচ্ছে পূরণ করতে পারিনা। কিছুদিন পর খেতে বসে ইরা বলল
–বাবা কালকে ফাদার’স ডে।তুমি যাবে না?
–কালকে তো ক্লিনিকে অনেক কাজ আছে।
–হুম জানি।তোমার কাজের তো শেষ নেই।যেতে হবেনা। রাহেলা বলল
–ইরা চুপ করে খাওয়া শেষ কর!আমি যাবো তোর সাথে!!
–তুমি গেলে কি হবে মা?কালকে তো মাদার’স ডে না। ফাদার’স ডে!!
–তোর বাবার কাজ আছে বুঝতে পারিস না কি বলেছে?এতটুকু বুদ্ধি নেই?
ইরা আর তর্ক না করে খাওয়া শেষ করে নিজের ঘরে চলে যায়। পরদিন রাহেলা ইরার সাথে স্কুলে যায়।সবার বাবাই এসেছিলো শুধু ইরার বাবা আসে নি। সবাই যার যার মতো বাবাকে নিয়ে অনেক কিছু বলছে,বাবার সাথে কোথায় যাচ্ছে,বাবা কি করছে, কিভাবে তাদের সাথে সময় কাটাচ্ছে সবই বলছে।কিন্তু ইরার কিছুই বলার নেই।সে বাবার হাত ধরে কখনো কোথাও যায়নি,কখনো বাবার কাছে দু’টো মিনিট সময় পায়নি তার দিনটা কেমন গেছে তা শেয়ার করার জন্য। ইরার পরিচিত এক বড় আপু স্নেহা সবার সামনে দাঁড়িয়ে মঞ্চে কিছু বলল!!
“আমি জানতাম আমার বাবা পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ বাবা।আমাকে কখনো সময় দেয় না,আমার অন্যান্য বান্ধবীদের মতো আমাকে নিয়ে ঘুরতে যায়না,ছুটির দিনেও তাকে কাছে পেতাম না।আমার সুখ,দু:খ গুলো শেয়ার করার জন্য, আমার দিনগুলো শেয়ার করার জন্য তাকে কাছে পেতাম না।সে সবসময় আমার কাছে এক অপরিচিত মানুষের মতোই ছিল।সকালে বের হয়।বাসায় ফিরে রাত এগারোটা কিংবা বারোটার পরে।এর মধ্যে কখনোই সুযোগ হয়নি তার সাথে বসে খুনসুটি করতে।কখনো আমার খোজও নিত না মনে হয়।
আজকে এখানে সবার বাবাই আছে।শুধু আমার বাবা নেই।বাবা কি তা সেদিন বুঝতে পেরেছি যেদিন বাবা আমাদেরকে ছেড়ে পরপারে চলে যায়।সেদিনের পরে আমি জানতে পেরেছি আমার বাবা মাঝরাতে বাসায় ফিরে সবার আগে আমার ঘুমন্ত কপালে চুমো খেতো।যখন ছোট ছিলাম তখন আমাকে বুকে নিয়ে ঘুমাতো।বাবা আমাদের জন্যই কষ্ট করেছেন সবসময়।আমাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার জন্যই তিনি সারাদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যেতেন।আমাদের ভালো রাখার জন্য তার এত ত্যাগ ছিলো।আমি যখন যা চাইতাম তখন তা পেতাম।মাঝে মাঝে চাইতে হতো না।চাওয়ার আগেই পেয়ে যেতাম।কখনো জানার প্রয়োজন মনে করিনি কোথা থেকে পেয়েছি,কিভাবে পেয়েছি।যেদিন থেকে বাবার শূন্যতা অনুভব করেছি সেদিন থেকে বুঝতে পেরেছি আমার বাবা আমার সব চাহিদা পূরন করতো।তিনি চলে যাওয়ার পর আমার চাহিদাগুলো চাহিদাই থেকে গেলো।সেগুলো আর পূর্ণ হয় না।তখন থেকে বুঝতে শুরু করে,জানতে শুরু করেছি বাবাই আমার সব ছিলো।মায়ের ওত সাধ্য কোথায় আমার সব চাহিদা পূরণ করার!!
আমার বাবা পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো বাবা ছিলেন।বাবা থাকাকালীন সময় এটা বুঝতে পারিনি।বাবার অনুপস্থিতি টা খুব কষ্ট দেয় আমাকে।আমি গভীর ভাবে বাবাকে অনুভব করি এখন।কিন্তু সবকিছুই এখন একটা দীর্ঘশ্বাস আমার কাছে।
আজ আমার বাবা বেচে থাকলে হয়তো এখানে উপস্থিত থাকতেন।খুব মনে পড়ে বাবাকে!!খুব বেশি!” স্নেহার গলাটা কান্নায় ভিজে এসেছিলো। সে মঞ্চ থেকে নেমে আসে। স্নেহার কথাগুলো শুনে ইরার মনে কেমন যেনো একটা অদ্ভুত শিহরন জানান দিয়েছে।ও একবার মায়ের দিকে কিছুক্ষন অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো। রাতে খাওয়ার সময় ইরা বসে বসে প্লেটে আঙুল দিয়ে ভাত নেড়েচেড়ে যাচ্ছিলো।খাচ্ছে না।কিছু বলছেও না।আজাদ সাহেব বললেন
–আমাকে ক্ষমা করে দে ইরা।আমি তোর স্কুলে যেতে পারিনা।তোকে সময় দিতে পারিনা বলে তোর মন খারাপ হয়। ইরা কি মনে করে সেখান থেকে উঠে চলে গেলাও নিজের রুমে।আজাদ সাহেব হতাশা নিয়ে রাহেলার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে ছিলেন।রাহেলা বলল
–আজকে স্কুল থেকে আসার পর থেকেই মনমরা হয়ে আছে।কথা বলছে না,টিভি দেখছে না,নিজের ঘরে শুয়ে আছে সারাদিন।
–তুমি ওকে আবার কিছু বলেছো?
–না।আমি তো আর কিছু বলিনি ওকে।
খাওয়া শেষ করে আজাদ সাহেব আর রাহেলা প্লেটে খাবার নিয়ে ইরার রুমে গেলো। ইরা শুয়ে ছিলো।আজাদ সাহেব ইরার পাশে বসে মাথায় হাত রেখে ডাক দিলেন,
–ইরা ইরা শোয়া থেকে উঠে বসলো।ওর চোখ দু’টো ফুলে লালচে হয়ে আছে। আজাদ সাহ্বব বলল
–কিরে তুই কাঁদছিস কেনো?
–কিছু না বাবা!
–তোর মা কিছু বলেছে?
–না বাবা।মা কিছু বলে নি।
–তাহলে স্কুলে কেউ কিছু বলেছে?
–বাবা আমাকে ক্ষমা করে দাও তুমি।আমি কখনো বুঝতে পারিনি তুমি আমাদের জন্য এত কষ্ট করো।আমাদেরকে ভালো রাখার জন্য এত পরিশ্রম করো। আমি তোমাকে হারাতে চাইনা বাবা।আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও।আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি।
–কি আবোলতাবোল বকছিস?
–আবোলতাবোল না বাবা।আমি তোমাকে সেদিন খুব বাজে কথা বলেছি।আমাকে ক্ষমা করে দাও।আজকে স্নেহা আপু আমার ভুলটা ভেঙে দিয়েছে।
–তুই তোর ভুল বুঝতে পেরেছিস এটাই আমার কাছে অনেক।আর কিছু লাগবে না।যা মুখ ধুয়ে এসে খেয়ে নে।শরীর খারাপ করবে।আমার আবার কাজে যেতে হবে আজকে।
–আচ্ছা বাবা।
বাবারা কখনোই ইচ্ছা করে পরিবার থেকে দূরত্ব বজায় রাখেনা।পরিবারের কল্যাণের স্বার্থেই তারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে যায়।