– লাইটটা অন করি?
– নাহ আমার লজ্জা লাগে। আচ্ছা বলোতো এভাবে অন্ধকারে হা করে তাকিয়ে আছো কেন মুখের দিকে?
– লাইটটা অন করতে তো চাচ্ছিলামই কিন্তু তুমিই দিচ্ছ না। অবশ্য এভাবেও মন্দ লাগছে না তোমায় দেখতে। ভাল বিষয় গুলা ঝাপসা হলে আলাদা একটা ভাল লাগা কাজ করে। জানার ইচ্ছা জন্মায় বেশি করে।
– আমাদের বিয়ের তো ১০ বছর হলো এখনো তোমার দেখার স্বাদ মেটেনি?
– নাহ। এ স্বাদ কখনো মিটবার নয়। অবশ্য এর একটা ছোট ব্যাখ্যা আছে, ধরো তুমি যদি কখনো আমায় ছেড়ে চলে যাও বা যেতে হয় তখন আমার কি হবে এ ভেবে নিজের প্রতি মায়া হয়। আর তাই আমিও চাচ্ছি দেখার স্বাদ মিটে যাক। কিন্তু মনে হচ্ছে কাজটা বিপরীত ভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে। তোমার পানে তাকিয়ে থাকার ইচ্ছা আরো বেড়েই চলেছে।
– আচ্ছা বাবা বুঝলাম। কিন্তু ঘুমাতে তো হবে তোমার। সকালেই অফিস। বাহানা না করে ঘুমাও আমি মাথা টিপে দিচ্ছি।
– না আমার ঘুমের দরকার নেই। ঘুমোলেই তো সকাল। কী দরকার এতোটা সময় নষ্ট করার? এর চেয়ে তোমায় দেখে সময়ের সঠিক মূল্য দিতে পারলে বেশ ভাল হয়।
– উফফফফ। তোমার এই প্রেমের ভেলা যে শুকনোতে চলছে তোমার কি বুঝে আসছে না। রাফিন জেগে উঠবে। ২ দিন পর ওর এক্সাম। কথা না বলে ঘুমাও। ওর ভাল ঘুম হোক। এই কয়দিন ভাল ঘুম ওর খুব দরকার।
– আচ্ছা ইশিতা। তোমার হাতটা দিবে।
– হাত দিয়ে কি করবা?
– দাওনা।
– আচ্ছা।
– দেখো আমার বুক কিভাবে কাঁপছে।
– কাঁপছে কেন?
– জানিনা ইশিতা আমার খুব কান্না পাচ্ছে। অবশ্য কান্না পাওয়ার থেকে কান্না টা করে দেওয়াটা শান্তির।
– আচ্ছা কিন্তু কান্না পাচ্ছে কেনো?
– ইশিতা আমার মনে হচ্ছে তুমি কোথাও চলে যাবে। আর আসবে না। আর কখনো আমার পাশে বসে নিজের সারাদিনের ভুল গুলো বলবে না। বলবে না সাড়া ভাবির সাথে ঘটা মজার ঘটনা গুলো। অফিস থেকে আসার পর আর আমায় চমকিয়ে দেবেনা নানান রকম খাবারের উপহার দিয়ে। তুমি কেনো আমায় ছেড়ে যাচ্ছ বলোতো? আমি তো তোমায় কখনো কষ্ট দেইনি। বন্ধুরা আমায় নিয়ে হাসাহাসি করে। সারাদিন নাকি বউয়ের কাছেই থাকি। আর তোমার ব্যস্ততার মাঝে যখন তোমার জামা কাপড় গুলা ধুয়ে দেই মাঝেমাঝে এটা রত্না জেনে গেছিল। এ নিয়ে যে কত কাহিনী করল। জানো ওরা আমায় বউ পাগলা বলে ডাকে। শুনতে অবশ্য খুব একটা খারাপ লাগেনা।
– আসলেই তো তুমি সারাদিন এত বউ বউ করো কেন? এত ভালবাসতে হয়না আকাশ। তাহলে নাকি বেশি দিন সেই মানুষ টা পাশে থাকেনা।
– যাও এসব বলোনা তো। আমি কেন এত ভালবাসি জানিনা। কিন্তু সবারই উচিত বউকে এভাবেই ভালবাসার। আর তোমাকে না বেসে কি কোনো উপায় আছে। আজ পর্যন্ত যা দিয়েছি তাতেই তুমি খুশি হয়েছো। কখনো বলোনা এটা লাগবে ওটা না। এমনকি কিছু জিজ্ঞেস করলে বলো, “তোমার যা পছন্দের তাই আমার পছন্দ।” এত এমন কেন তুমি?
– কেমন আমি বলোতো?
– বলব না তুমি আসলেই একটা….
– কি একটা?
– ভালবাসা।
– ওমা তাই।
– হ্যা তাই। ইশিতা তোমার কালো লম্বা চুল গুলো আমার বালিশে বিছিয়ে দাও তো।
– আবার পাগলামো।
– দাওনা।
– ওকে দিচ্ছি। এই যে।
– আমার এখন খুব তাড়াতাড়ি ঘুম এসে যাবে। তোমার সেই চিরচেনা চুলের ঘ্রাণ আহা।
– আচ্ছা বাবা ঠিক আছে তুমি ঘুমাও।
( রাফিন উচ্চ শব্দে কেঁদে উঠলো। আকাশ তাড়াতাড়ি উঠলো, ইশিতা কে বলল ” দাঁড়াও আমি দেখছি ” এরপর গিয়ে জড়িয়ে ধরলো রাফিনকে। ” কি হলো বাবা, কি হলো তোমার, ভয় লাগছে? আমার লক্ষি বাবা ঘুমাও, ঘুমাওতো। এইত আমি বাবা। এই যে তোমার আব্বু।” ওকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে আকাশ আবার আসলো ইশিতার কাছে।)
– জানো ইশিতা। ও মাঝে মাঝেই এভাবে কেঁদে উঠে। বেচারা সারাদিন ঘুরাঘুরি করে। দুপুরবেলা বের হতে মানা করি, তবুও সুবল কাকাদের আমতলায় গিয়ে মিনারদের সাথে খেলা করে। বড্ড চঞ্চল ছেলে আমার। ইশিতা। ইশিতা চুপ হয়ে আছো কেনো? কথা বলো। কোথায় তুমি ইশিতা। ইশিতা।
বাইরে থেকে কাক ডাকার শব্দ শোনা গেল। সকালের আলো ছুটাছুটি করে ঢুকতে লাগলো ঘরের ভেতর। আকাশের বুঝতে বাকি রইল না সকাল হয়ে গেছে। হাত ঘড়িটা নিয়ে দরজা খুলে বারান্দায় গেল। ৬.১১ বাজে। বসে থাকলে হবেনা। ছেলেটাকে সকাল বেলা নাস্তা দিতে হবে। এমনিতেই ছেলেটা শুকিয়ে যাচ্ছে দিন দিন। ওয়াশরুমে ঢোকার আগে ইশিতার টাঙানো ছবিটায় চোখ পড়ল আকাশের। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ল।
নাহ এখন আর আকাশের তেমন একটা কষ্ট লাগেনা। তবে ইশিতা মারা যাওয়ার ২ বছর পর্যন্ত যখনি ইশিতা এভাবে কল্পনায় এসে চলে যেতো, আকাশ বাচ্চাদের মত কান্না করতো। ৫ বছরে অভ্যাস হয়ে গেছে। এখন মাঝে মাঝে ইশিতা এসে যখন আবার চলে যায় আকাশ আর কান্না করেনা। চোখের কান্নাকে মনের কান্নাতে রূপান্তর করে নিয়েছে আকাশ। এছাড়াতো উপায়ও নাই। ছেলে বড় হচ্ছে ওর জন্য হলেও নিজেকে প্রফুল্ল রাখা চাই।