অবুঝ অভিমান

অবুঝ অভিমান

তুই ঘর থেকে বেরিয়ে যা এমন ছেলে আমার চাইনা! বুলুর আজ মন খারাপ সে আজ ঘুম থেকে উঠে কাউকে কিছু না বলে কিছু না খেয়ে বিদ্যালয়ে চলে গিয়েছে। সারাদিন পাঠ আদায়ে তার কোনো মন ছিলো না বিষন্ন হয়ে থাকায় প্রতিটি শিক্ষকের কাছেই বকা খেতে হয়েছে তার। যার জন্য মন খারাপের মাত্রা আরও দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে।

৭ম শ্রেণীর ছাত্র বুলু এখন বিদ্যালয় থেকে বেরিয়েছে কিন্তু বাসায় সে যাবে না বাবা-মায়ের উপর অনেক অভিমান করেছে সে আর বড় বোনতো আছেই অভিমানের আরেকটি কারণ হিসেবে। ক্ষুদায় বুলুর পেটে যেনো ইঁদুরের যুদ্ধ শুরু হলো তাও বুলু বাসায় যেতে রাজি নয়। কোথায় যাবে তাও তার জানা নেই, পিঠের উপর বিদ্যালয়ের বইপত্র সমেত থলেটা যেনো ক্ষুদা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। হাঁটতে হাঁটতে বুলু অনেক দূর এসে পৌঁছেছে একটা নদীর পারে। গোধূলি বুলু চেনে না কিন্তু বিকেলের রক্তিম আকাশটা নদীর বুক চিরে যেনো বুলুর দিকেই তাকিয়ে আছে। বুলু প্রকৃতির এই সৌন্দর্য সম্পর্কে হয়তো আগে কখনো পরিচিত ছিলো না তাই তার বড্ড ভালো লাগছিলো গোধূলি দেখতে।

নদীর তীরে বুলুর বয়সী অনেক ছেলে মেয়ে খেলা করছিলো আর তার বড় বোনের বয়সী কিছু মেয়েও ওদের পাশে বসা ছিলো। বুলুরও মন চাচ্ছিলো খেলতে আবার মন খারাপ থাকায় তেমন ভালও লাগছিলো না। তাই সে ওই মেয়েগুলোর কিছুটা কাছে গিয়ে দাড়ালো। অনেকক্ষণ যাবৎ দাঁড়িয়ে খেলা দেখার পরে আর নিজেকে আটকাতে পারছে না বুলু কারণ গোল্লাছুট খেলা যে ওর অনেক পছন্দের। মেয়ে গুলো বুলুকে উসখুস করতে দেখে,

মেয়েরাঃ ওই তুমি কে? নাম কি?

বুলুঃ আমি বুলু।

মেয়েরাঃ স্কুল শেষে বাসায় না গিয়ে এখানে কেনো? বুলু তাদের কথায় কিছুটা ভয় পেলো কারণ সে যে বিদ্যালয় থেকে বাসায় যায়নি তা এই মেয়েরা বুঝলো কি করে! মেয়েরা আবার বুলুকে প্রশ্ন করে, “এখনো স্কুল ড্রেস পরে আছো যে?” বুলু এবার কিছুটা আন্দাজ করতে পারে যে কিভাবে তারা বুঝেছে ওর বাসায় না যাওয়ার গল্প। বুলু কোনো কথার উত্তর না দিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে তাই মেয়েগুলো আর ওরে প্রশ্ন করলো নাহ।

সাঝের সময় হয়ে এলো নদীর তীরের সবাই যে যার ঘরে ফিরছে কিন্তু বসে আছে বুলু। ভাবছে কাল রাতের ঘটনা,
রবিনের সাথে খেলতে গিয়ে বুলু রাত আট’টায় বাসায় ফিরেছিলো কাল আর এজন্যই বাবা অনেক বকেছে বুলুকে। সাথে তার বড় বোনও খুব উৎসাহ দিয়েছেন আর মা তো কোনো প্রতিবাদই করলো না। বুলু যখন নিজের সাফাই দিবে তখন বাবা বলে ওঠেন “তুই ঘর থেকে বেরিয়ে যা এমন ছেলে আমার চাইনা।” এইকথাটিই বুলুর মনে বড্ড আঘাত করে। বুলু সপ্তম শ্রেনীর ছেলে হলেও তার মন এখনো অনেক অবুঝ সে বাবার এই রাগ বুঝতে পারেনি।

সাঝের ছায়া নেমে চারদিক প্রায় অন্ধকার হয়ে এসেছে বুলু এখনো একা বসে নদীর দিকে তাকিয়ে আর পাশে পরে থাকা নুরি পাথর ছুরে মারছে নদীর বুকে। একলোক বুলুকে দেখে জিজ্ঞেস করে, “বাবা তুমি কি এইখান থেকে কোনো ছেলেকে দেখেছো?” বুলুর উত্তর হয় “না দেখিনি আমি” বুলুর কথা শুনে লোকটার চোখ জোরায় কেমন যেন পানি চলে আসলো যা এই অন্ধকারেও বুলুর চোখ এড়াতে পারলো না। লোকটা আবার বিড়বিড় করে বলে, “একটু রাগ দেখাতেই তোর এতো অভিমান হলো!” বুলু কিছুটা বুঝতে পারে যে লোকটা যাকে খুজছে সে হয়তো বুলুর মতোই অভিমান করে এসেছে।

বাড়ি যেতে ইচ্ছে করছে বুলুর। বাবার কথা খুব মনে পরছে কেন যে অভিমান করে এসে পরলো এটা ভেবেই কেদে ফেলে বুলু। হঠাৎ খেয়াল হলো পাশেই একজন লোক এসে দাড়ালো, বুলু তকিয়ে দেখে বুলুর বাবা দাঁড়িয়ে আছে। বুলু উঠে দাড়াতেই তার বাবা চড় বসিয়ে দিলো বুলুর গালে, “ঘরে না গিয়ে এইখানে কি তোর?” বুলু মোটেই তাতে ব্যাথা অনুভব করেনি বরং অজানা এক ভালো লাগায় বিভর সে। বাবার হাতটা ধরে বুলু বললো, বাবা খুব ক্ষুধা পেয়েছে বাসায় চলো। বুলুর বাবা আকাশের দিকে তাকিয়ে বলছে “চোখে ময়লা গেছে মনে হয় কেমন যেনো ঝাপসা লাগছে চোখ”। বুলু নিচে তাকিয়ে বলছে, ” বাবা আমারও”।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত