মৃদ্যু রিভেঞ্জ

মৃদ্যু রিভেঞ্জ

অনার্স ফাইনাল ইয়ারে এক সাবজেক্টে ফেল করার পর আমার আম্মার সঙ্গে পাশের বাসার আন্টির কথোপকথন,
আন্টি মুখ বাকা করে বলছিল,

___আমার মেয়েটা অনেক বেশি ট্যালেন্ট বুঝলেন ভাবি! সে অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে কোনো সাবজেক্টে ফেল করা তো দূর প্রতিটা সাবজেক্টে গ্রেড পয়েন্ট নিয়ে ফার্স্টক্লাস পেয়েছে ৷ তাকে নিয়ে গর্ববোধ করি আমি ৷ ভাবি কিছু মনে করবেন না, আপনি যদি আপনার ছেলের লেখাপড়ার প্রতি নজর দিতেন তাহলে সে রেজাল্টে এত খারাপ করতে পারতোনা ৷ এত বাজে রেজাল্ট এই যুগে ফাহাদের মত ছেলেরাই করে! আম্মা উত্তর দিলো

___ভাবি আর বইলেন না, আপনার মেয়ে এইচএসসিতে দু-বার ফেল করার পর তৃতীয় বার পাশ করছে ৷ অনার্সে ভর্তি হয়েছে ইতিহাসে ৷ সে এখন সহজে পাশ করবে এটা তো বুঝায় যায়!

___আচ্ছা ভাবি আজ আসি ৷ আরেকদিন কথা হবে! এটা বলে আন্টি মুখটা পোড়া ভাতের মত বানিয়ে তুরতুর করে চলে গেল! এদিকে আমি আন্টির বড় মেয়ে অনিতার প্রেমে পড়ে গেছি ৷ অনিতাকে প্রোপজ করতে গেলে বিদ্রুপের স্বরে বলল,

___ফেল করা ছেলের সাথে প্রেম করবো আমি? কেমনে ভাবলে? তোমার মত ছেলের সাথে প্রেম করার চেয়ে আমাদের বাসার ড্রাইভারের সাথে প্রেম করা ভাল!

আমি তার কথার কোনো জবাব না দিয়ে মুখটা ভার করে চলে এলাম ৷ বাসায় গিয়ে দরজা বন্ধ করে নাকের আর চোখের পানি ফেলে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলাম! ৩ বছর পরের কাহিনীঃ আমি বিসিএস ক্যাডার হয়ে গেছি ৷ চারদিকে আমার নাম ডাক ৷ সকলেই আমার প্রশংসায় পঞ্চমুখ ৷ অনিতার ছোট বোন সুনিতা টানা ১বছর ধরে চেষ্টা করছে আমার সাথে রিলেশন করার জন্য কিন্তু আমি রাজি হচ্ছিনা ৷ আমার পছন্দ ওর বড় বোনকে ৷ কিন্তু অনিতাকেও আর কিছু বলছিনা, প্রোপজ আর কতবার করব? আমি তো সেই আগের ফাহাদ নেই ৷ এখন আমি বিসিএস ক্যাডার ৷ এখন আমি নয় মেয়েরায় প্রোপজ করতে আসবে! শেষবার যখন সুনিতা আমাকে প্রোপজ করতে এসে বলল,

___দেখুন আপনি যদি আমাকে মেনে না নেন তাইলে কিন্তু বিষ খাব! তাকে সহজভাবে বললাম,
___ঘরে যদি বিষ না থাকে তাহলে আমাকে বলো বিষ এনে দিই!
___ইয়ার্কি না সত্যি সত্যি বলছি বিষ খাব!
___খাও, খাওয়ার আগে ফোন দিয়ে বলো যে তুমি বিষ খাচ্ছো!
___তবুও প্রেমে রাজি হবেন না?
___না ৷ আমি তোমার বড় বোনকে বিয়ে করব!
___হা হা, সে তো ফেসবুকে কার জন্য যেন পাগল? এটা শুনে মাথায় বাজ পড়লো ৷ বড়সর হাতুড়ির বারি খেয়ে মচকে যাওয়া মানুষের মত কষ্টমাখা স্বরে বললাম,

___কিহ? কে সে?
___তা তো জানিনা!
___তুমিও জানোমা?
___না ৷ আপুর কথা বাদ ৷ এখন বলেন আমার সাথে প্রেম করতে রাজি আছেন কিনা?
___নাহ ৷ তুমি যাও বিষ খাও! এটা শুনে অনিতা কাঁদতে কাঁদতে আমাদের বাসার ছাদ থেকে চলে গেল ৷ কিন্তু ১৫ মিনিট পর হাঁপাতে হাঁপাতে আমার রুমে ঢুকে শ্বাস ফেলতে ফেলতে বলল,

___ফাহাদ ভাইয়া, আপনার তো সর্বনাশ হয়ে গেছে! সুনিতার কথায় ভরকে গেলাম ৷ কি সর্বনাশ হতে গেল আমার? তাকে বললাম,
___কি সর্বনাশ হলো বলোতো?
___আপু তো!
___আপু কি?
___পালিয়ে গেছে!
___কই?
___আরে তার প্রেমিকের সাথে ভেগে গেছে!

এটা শুনে মনে হলো আকাশ ভেঙ্গে পড়ছে ৷ আর বুকের ভেতর আয়না ভাঙ্গার শব্দ হলো ৷ ঝিম মেরে দাঁড়িয়ে রইলাম ৷ হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে সুনিতাকে বললাম,

___কার সাথে ভাগলো? সুনিতা বলল,

___তার ফেসবুকের প্রেমিকের সাথে ৷ সে চিঠি লিখে গেছে ৷ কাল আপুর অনার্স ফাইনাল ইয়ারের রেজাল্ট দিবে ৷ সে বলছে পরিবার না মেনে নিলেও চলবে ৷ চাকরি করে জীবনযাপন করতে পারবে!

___এই মেয়ে তো সুবিধার না ৷ যাক ভালই হয়েছে ভেগে গিয়ে ৷ ওরে মন থেকে ভুলে গেলাম ৷ তোমাকে সুযোগ দেওয়ায় যায় কি বলো? সুনিতার মুখে মিষ্টি হাসি ৷ শেষপর্যন্ত সুনিতাকেই গ্রহণ করতে হলো! সন্ধ্যা বেলায় সুনিতা এসে বলল,

__শুনছো আপু কার সাথে ফেসবুকে প্রেম করছিল? আমি বললাম,
___কার সাথে?
___আমাদের বাসার ড্রাইভারের সাথে ৷ এতদিন কেউই জানতোনা ৷ আজ দেখা করতে গিয়ে দেখে যে আপু  ড্রাইভারের সাথে ৩ বছর ধরে প্রেম করছিলো!

আপু বাসায় এসে এসব কেঁদে কেঁদে বলছিল আম্মুকে আর আমাকে!, এটা শুনে আমি হাসি থামাতে পারছিলাম না ৷ হাসতে হাসতে বিছানাতে গড়াগড়ি খাচ্ছিলাম! পরেরদিন অনিতার অনার্স ফাইনাল ইয়ারের রেজাল্ট দিলো ৷ সে আমার মতই এক সাবজেক্টে ফেল ৷ এরপরও নির্লজ্জের মত সে আমার বাসায় এলো ৷ পড়নে ছিল নীল শাড়ি ৷ কারণ সে জানতো আমি নীল শাড়ি পছন্দ করি ৷ হাতে ছিল একগুচ্ছ গোলাপ ফুল ৷ আমি ছিলাম ছাদে দাঁড়িয়ে ৷ আমার পিছে দাঁড়িয়ে পিঠে হাত দিলো ৷ তার দিকে নজর দিয়ে ভূত দেখার মত করে তাকালাম ৷ সে ফুলগুলে আমার হাতে দিয়ে মিষ্টি স্বরে বলল,

___তুমি আমাকে প্রোপজ করেছিলে তখন মেনে নিইনি তোমাকে ৷ কিন্তু আজ তোমাকে আমিই প্রোপজ করছি ফাহাদ ৷ আই লাভ ইউ আই লাভ ইউ!” তার হাতে গোলাপফুলগুলো ধরিয়ে দিয়ে সহজ গলাতে বললাম,

___কিন্তু আমি যে তোমার ছোটবোনকে ভালবেসে ফেলেছি! সেটার কি হবে? তাছাড়া আমি বিসিএস ক্যাডার আর তুমি অনার্স ফেল করা ছাত্রী এটা কি মেনে নেওয়া যায়? এটা বলা শেষ না হতেই অনিতা রাগে অগ্নিমূর্তি ধারণ করে বলল,

___তোর সাথে প্রেম করার ইচ্ছাও নাই ৷ কত ছেলে আমার জন্য পাগল জানিস? আমি বিদ্রুপের হাসি হেসে বললাম

___হুম জানি তো কোনসব ছেলে পাগল! ড্রাইভার, কাজের ছেলে, রিকশাওয়ালারা! এটা শুনে অনিতা মুখটা ছোট করে চলে যেতে লাগল ৷ সুনিতা ছাদে আসছিল ৷ তার সাথে দেখা হয়ে গেলে সুনিতা অনিতাকে বলল,

___আপু তোর ছোট বোনের বরকে পছন্দ হয়েছে কি? হ্যান্ডসাম বল? অনিতার মুখটা আরো ছোট হয়ে গেল ৷ মনে হলো সে কান্না করে দিবে ৷ মনে মনে বললাম, “আসলেই কারো কারো মনের কষ্ট অন্তর কাঁপিয়ে দেয়!”

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত