চাহনি

চাহনি

সূর্যটা পশ্চিমাকাশে হেলে পড়ার সাথে সাথে চারিদিকটা যেন স্তব্ধ হতে থাকে। সন্ধ্যার আকাশে রক্তিম সূর্যের বিদায় দৃশ্য দেখতে দেখতে প্রতিদিন দিন ফুরোয় মাহফুজার। আজও সে কফির মগটা হাতে নিয়ে ছাঁদের পশ্চিম কোণে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত দেখছে। পাখিরা সকলে তাদের নীড়ে ফিরছে। সূর্যের লালচে আভাটা এখনও পুরোপুরিভাবে মিলিয়ে যায়নি আকাশের গা থেকে। ছাঁদের একপাশে ফুলের বাগান রয়েছে তার। প্রভাতবেলা যখন সূর্যটা আবার উঁকি দিয়ে হেসে ওঠে ঐ দূর আকাশে। ঠিক তখন এই বাগানের ফুলগুলোও তার অস্তিত্ব জানান দেয়।

মাহফুজা খুব বুদ্ধিমতী এবং পড়াশোনাতে ভালো হওয়ায় তার ভার্সিটির শিক্ষক জনাব আসফাক উদ্দিন তাকে তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উচ্চমাধ্যমিকে পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াতে বলেন। কী যেন একটা সমস্যার কারণে উচ্চ মাধ্যমিকের হিসাববিজ্ঞান স্যার কলেজের শিক্ষকতা ছেড়ে দেন। গত পাঁচদিন ধরে ছাত্রছাত্রীরা আসফাক উদ্দিনকে বলছেন, স্যার আমাদের এই বিষয়টা এখন কে পড়াবে? আমাদের জন্য একজন শিক্ষকের ব্যবস্থা করেন। আর সেই কারণেই তিনি মাহফুজাকে শিক্ষকতার দায়িত্বটা দেন।

আগামীকাল থেকে সে ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষাদান করবে। এটা ভাবতেই তার মধ্যে সুখময় একটা অনুভূতির রাশি দাগ কেটে যায়। জীবনের প্রথম শিক্ষকতার ভার নিবে সে। অবশ্য সে এর আগেও অনেক ছাত্র-ছাত্রীদের পড়িয়েছে। তবে সেটা টিউশনিতে এবং সংক্ষিপ্ত পরিসরে। কিন্তু কলেজের মতো এতো বড় পরিসরে, বড় স্থানে কখনও পড়ায়নি।

সূর্যটা অস্ত গিয়েছে। মাহফুজা তখনও “আগামীকাল কলেজে গিয়ে কিভাবে পড়াবে” সেই ভাবনাতে বিভোর। অন্যদিন সূর্য অস্ত যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সে ছাঁদ থেকে নেমে যায়। কিন্তু আজ কখন সূর্যটা তার নিজ অস্তিত্ব বিলীন করে লুকিয়ে গিয়েছে নিজ দেশে, সেদিকে তার কোনো খেয়ালই নেই। হঠাৎই তার মনে হলো কে যেন তাকে ডাকছে। ভাবনা থেকে বাস্তবে ফিরে সে বুঝতে পারে তার মা তাকে ডাকতে ডাকতে ছাঁদে চলে এসেছেন। মায়ের দিকে তাকিয়ে সে একটা ভুবন ভোলানো হাসি দেয়। যেই হাসির কোনো কারণ নেই, যেই হাসির কোনো অর্থ নেই। তাকে এমনভাবে হাসতে দেখে তার মা জিজ্ঞেস করেন, কিরে এভাবে হাসছিস কেন? সে মুখের কোণে হাসির রেখাটা ধরে রেখেই অতি সুক্ষ্মভাবে উত্তর দেয়, এমনিই।

গভীর রাত। হঠাৎ করেই মাহফুজার ঘুম ভেঙে যায় অদ্ভুত একটা স্বপ্নে। একদিকে শীতের রাত, চারিদিকে কনকনে শীত পড়ার পরেও সে ঘামতে থাকে অবিরত। সে লক্ষ করে দেখে তার পুরো শরীর কাঁপছে। গলা দিয়ে কোনো স্বর বের হচ্ছে না। কোনো মতে সে রুমের বাতিটা জ্বালিয়ে নেয়। তারপর ধীরে ধীরে টেবিলের কাছে গিয়ে ঢকঢক করে কয়েক গ্লাস পানি খেয়ে নেয়।

সচরাচর সে এমন অদ্ভুত ভয়ংকর স্বপ্ন দেখে না। কিন্তু আজ হঠাৎই তার এমন স্বপ্ন দেখার কারণটা সে বুঝে উঠতে পারে না। কারণ উদঘাটন করতে গিয়ে সে ব্যর্থ হয়। হাত ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে দেখে রাত তখন দুইটা বাজে। ঠিক দুইটা বাজে। একটু এদিকও নয়, ওদিকও নয়। তার মধ্যে ভয় কাজ করতে থাকে। না জানি আবার ঘুমালে এমন স্বপ্ন আবারও চোখে ভাসতে পারে। তবুও সে চেষ্টা করে ঘুমানোর। কিন্তু ঘুম আর আসে না তার চোখে। কয়েক ঘণ্টা সে বসেই কাঁটিয়ে দেয়। এরই মধ্যে যে, সে কখন ঘুমিয়ে গিয়েছে সেটা সে নিজেই লক্ষ করেনি। টেবিলের উপর রাখা ঘড়িটাতে এলার্ম বাজছে, বালিশের পাশে থাকা ফোনটাতেও এলার্ম বাজছে।

এলার্মের আওয়াজটা এতোটাই তীব্র যে, সে আর ঘুমিয়ে থাকতে পারে না। উঠে দেখে ফজরের আযানের ধ্বনি ভেসে আসছে দূর থেকে। মোবাইলের এলার্মটা তখনও বেজে চলেছে। কিন্তু টেবিলে থাকা ঘড়ির এলার্ম ততক্ষণে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সে মোবাইলের এলার্মটা বন্ধ করতে করতে ভাবে, এলার্মের শব্দটা এতো তীব্রতর হলো কিভাবে? পরক্ষণেই তার চোখ পড়ে টেবিলে রাখা ঘড়িটার উপর। ঘড়িটা বইয়ের উপর থেকে নিচে পড়ে আছে। তবে কি ঘড়িরও এলার্ম বাজছিলো এতক্ষণ? সে ভাবে, নাহ্ ঘড়ির এলার্ম বাজবে কেন? সে তো কখনও ঘড়িতে এলার্মই দেয় না। ভাবনা থেকে ফিরে সে অজু করে এসে ফজরের সালাত আদায় করে নেয়। সালাত আদায়ের সময় তার চারপাশ জুড়ে হিমেল হাওয়া বইতে থাকে। যেন রুমের মধ্যে নিম্ন গতিতে বৈদ্যুতিক পাখা ঘুরছে।

চারিদিকে আলো ফুটতে শুরু করেছে। পাখির গুঞ্জনে চারিদিক মুখরিত। মাহফুজা এক কাপ চা নিয়ে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ায়। ব্যস্ত শহরের প্রতিটি স্থানের প্রতিটি অঙ্গ প্রতঙ্গও যেন ভোরের আলো ফুটে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। কর্মজীবী মানুষেরা সকলে নিজ কর্মের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হচ্ছে। শীতের সকাল, সকলে মোটাসোটা পোশাকে নিজেকে মুড়িয়ে নিয়ে শীতকে প্রতিহত করার ব্যর্থ চেষ্টা করছে। অবশ্য ব্যর্থ চেষ্টা বললে ভুল হবে, চেষ্টা টা অতি সফল। চায়ের কাপে চুমুক দিতেই হঠাৎ করে তার চোখ পড়ে রাস্তার ওপারে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ছেলের দিকে। চায়ের কাপ থেকে মুখটা সরিয়ে সে রাস্তার দিকে তাকায়। কিন্তু সে সেখানে কাউকেই দেখতে পায় না। উষ্কুখুষ্কু চুল, ছেড়া জামা প্যান্ট, রোগাকীর্ণ শরীর ছেলেটির। রাস্তার ফুটপাতে থাকা ল্যাম্পোস্ট ধরে দাঁড়িয়ে ছিলো সে। তার চোখের চাহনিতে কিছু একটা ছিলো, যা মাহফুজা একবার তাকিয়েই লক্ষ করেছিলো। কিন্তু হঠাৎ করেই চোখের পলকে কোথায় চলে গেলো সে?

মাহফুজা বেলকনির এদিক থেকে ওদিকে গিয়ে ছেলেটিকে খোঁজার চেষ্টা করে। কিন্তু সে কোথাও ছেলেটিকে খুঁজে পায় না। ভোরের আবছা আলোটা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই চারিদিকে সম্পূর্ণ রুপে দিনের আলো ফুটে ওঠে। সকালের জলখাবার খেয়ে মাহফুজা বাসা থেকে বের হতে যাবে, ঠিক সে সময় পেছন থেকে তার মা তাকে ডাক দেয়। সে বলে,

– কিছু বলবে মা?
– হ্যাঁ, আজকে ভার্সিটিতে না গেলে হয় না?
– কেন?
– না মানে, আজকে বাড়িতে মেহমান আসবে।
– মা আজকে থেকে আমার শিক্ষকতা শুরু, ভার্সিটিতে যেতেই হবে আমাকে।

সে আর কিছু না বলে ভার্সিটির দিকে পা বাড়ায়। বড় রাস্তাটা পার হয়ে ওপারে গিয়ে দাঁড়িয়ে সে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। অন্যদিনের তুলনায় আজ রাস্তায় বাসের সংখ্যা বেশি। কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত প্রতিটি বাসই জনমানুষে ভর্তি। পা রাখার মতো জায়গাও নেই। বিষয়টা তার নজর কাড়ে।

সে ভাবে আজকে এতো এতো বাস চলাচল করা সত্ত্বেও এতো ভীড় কেন? অন্যদিন তো কম বাস থাকার পরেও অাসন খালি পড়ে থাকে। আর ভার্সিটির যে বাস আছে, ওটা তো সে কোনো কালেও ধরতে পারে না। হঠাৎই একটা দ্বোতলা বাস এসে তার সামনে ব্রেক কষে। ব্রেকের শব্দে সে নড়ে চড়ে দাঁড়ায়। সামনে তাকিয়ে দেখে বাস দাঁড়িয়ে আছে তার অপেক্ষায়। কোনো কিছু না ভেবে সে বাসে উঠে পড়ে। কিন্তু এ কি? এই বাস তো পুরো ফাকা। বাসের চালক বাদে অন্যকেউ নেই বাসে।

নির্দিষ্ট সময় পর সে ভার্সিটি পৌঁছায়। তার কাছে আজ এই চিরচেনা প্রাঙ্গনটা কেন যেন বড্ড অচেনা মনে হতে থাকে। মনে হয় সে যেন আজকেই এইখানে প্রথম পা রাখলো। সে বুঝতে পারে না, তার এমনটা মনে হওয়ার কারণ কী! অথচ এই প্রতিষ্ঠানেই সে গত তিন বছর ধরে লেখাপড়া করছে। দুপুর ১১ বেজে ৩০ মিনিট থেকে তার পাঠদান শুরু হবে। আর এর পূর্ব মূহূর্ত পর্যন্ত সে তার নিজের ক্লাস করতে পারবে।

ঘড়ির কাটা যখন ঠিক ১১ টা বেজে ২৫ মিনিট। ঠিক তখন মাহফুজা উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠদান করতে চলে যায়। সকল ছাত্র ছাত্রী তাকে শিক্ষিকা হিসেবে পেয়ে বেজায় খুশি। যা তাদের উৎফুল্লতা আর আনন্দ দেখেই বুঝে ফেলে সে। প্রথম দিনের জন্য সে শুধু পরিচয় পর্বটা শেষ করে সকলের সাথে। সকল ছাত্র-ছাত্রীদের পরিচয় নেওয়ার এক পর্যায়ে একটা ছাত্রের দিকে তার চোখ আটকে যায়। ছেলেটিকে সে কোথায় যেন দেখেছে। খানিক সময়ের জন্য সে কল্পনায় ডুবে যায়। কোথায় দেখতে পারে সে ছেলেটিকে! কিন্তু সে মনে করতে পারে না। ছেলেটি তার পরিচয় দিচ্ছে। নাম, গৌতম। বাসা, নুহাশপল্লি।

নুহাশপল্লি নামটা শুনতেই মাহফুজা চমকে ওঠে। নামটা এবং এই জায়গাটা যেন তার অতি চেনা। ছেলেটি তার নিজের সম্পর্কে আরো বর্ণনা দিচ্ছে। এরই মধ্যে বাইরে থেকে আসফাক উদ্দিন স্যার তাকে ডাক দেয়। মাহফুজা কিছুক্ষণের জন্য বাইরে থেকে ঘুরে এসে আবার পরিচয় আদান প্রদান করতে থাকে। শ্রেণীকক্ষে ঢুকতেই প্রথমে তার চোখ যায় গৌতম যেখানে বসে ছিলো ঠিক সেখানে। কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো, সেখান কেউ নেই। সে কক্ষের সকলের উদ্দেশ্যে বলে, গৌতম কোথায় গেলো? কিন্তু সকলের সমস্বর আওয়াজে উত্তর ভেসে আসে, ম্যাম গৌতম কে? মাহফুজা আবারও অবাক হয়। তাহলে কি গৌতম নামে কেউ ছিলোই না এখানে?

যখন সে শ্রেণীকক্ষ থেকে বের হয়, তখন তার কাছে এই চিরচেনা প্রাঙ্গনটা আবারও চিরচেনা হয়ে ওঠে। কিন্তু সকালে যখন সে এসেছিলো, তখন তার কাছে সবকিছু নতুন এবং অচেনা মনে হয়েছিলো। বাসায় যাওয়ার আগে সে একবার আসফাক উদ্দিন স্যারের রুমে যায়। স্যার তাকে দেখেই বলে ওঠে, আরে তুমি হঠাৎ? আমি তো তোমার কাছেই যাচ্ছিলাম। তা কেমন লাগলো শিক্ষকতা পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করতে? উত্তরে মাহফুজা বলে, জ্বী স্যার, ভালো। তবে একটা বিষয়ে জানার জন্য আমি আপনার কাছে এসেছি। মাহফুজার মুখে এমন কথা শুনতেই আসফাক উদ্দিন চমকে যান। তিনি ভাবেন, তিনি যা কল্পনা করছেন, সেটাই আবার সে বলবে না তো? মাহফুজা বলে, স্যার আমাদের সাথে পড়ে তানভীর নামের একটা ছেলে। চিনেন হয়তো আপনি। আসফাক তার কথা শুনে যেন হাফ ছেড়ে বাঁচেন। তিনি বলেন, হ্যাঁ, চিনিতো। ঐ যে সবসসয় চুপচাপ থাকে যেই ছেলেটি, তার কথা বলছো? মাহফুজা বলে, হ্যাঁ স্যার তার কথায় বলছি।

– হ্যাঁ বলো।
– স্যার ছেলেটি অত্যন্ত গরীব। তার দ্বারা এই শহরে থেকে পড়ালেখার খরচ সহ নিজের খরচ চালানোর মতো সামর্থ নেই। আপনি যদি একটু দেখতেন তার বিষয়টা। যদি তাকে এই প্রতিষ্ঠানে বিনা পয়সায় পড়ালেখার একটা সুযোগ করে দিতেন, তবে ছেলেটির খুব উপকার হতো। মাহফুজার কথা শুনে আসফাক উদ্দিন কিছু সময় নিয়ে কী যেন একটা ভেবে বলেন,

– তুমি যখন বলছো, তখন বিষয়টা আমি দেখবো।
– জ্বী স্যার ধন্যবাদ, আসি। আসসালামুঅলাইকুম।

ভার্সিটি থেকে বের হয়ে সে অতি দ্রুতই বাস পেয়ে যায়। প্রতিদিন যেমন পেতো, ঠিক তেমনই। কিন্তু সকালের ঘটনাটা তার কাছে বড় অদ্ভুত মনে হতে থাকে। বাসায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে দুপুর দুইটা বেজে যায়। শীতের দিন, অথচ প্রচুর গরম পড়ছে। যা মাত্রাতিরিক্ত। বাসায় এসে সে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। চোখে ঘুম ঘুম একটা ভাব আসে তার। যেন স্বচ্ছ আকাশে মেঘের আগমন এবং চাতকের আনাগোণা।

এদিকে তার মা তাকে ডেকেই চলেছে। কিন্তু সেদিকে তার কোনো ভ্রুক্ষেপই নেই। ঘুমের রাজ্যের সকল ঘুম পরীরা তার চোখ জুড়ে বসে আছে। তার মা তাকে ডেকে চলে যায়। বিকেল চারটার দিকে তার ঘুম ভাঙে। প্রতিদিনের মতো আজও সে কফির মগটা হাতে নিয়ে ছাঁদে যায়। কিন্তু ছাঁদে পা রাখতেই সে চমকে যায়। ছাঁদে কেউ দাঁড়িয়ে আছে, এটা অনুভব করে সে। ধীরে ধীরে সে এগিয়ে যায় তার ফুলের গাছগুলোর দিকে। দেখে সেখানে মারিয়া আর তার ছোট্ট ভাই মাহিম দাঁড়িয়ে আছে। আজকের ছাঁদের পরিবেশটা তার কাছে কেমন যেন বিরক্তিকর লাগছে। সাথে পারিপার্শ্বিক আবহাওয়াটাও।

– কেমন আছিস আপু? মারিয়া জিজ্ঞেস করে মাহফুজাকে। মাহফুজা কফির মগে একটা চুমুক দিয়ে বলে
– আছি এই একরকম। তুই কেমন আছিস?
– খুব ভালো।
– তা, তোর পড়ালেখা কেমন চলছে?
– পড়ালেখা খুব ভালোই চলছে। একটা খুশির খবর আছে, শুনবি? উৎফুল্লতার সাথে কথাটি বলে মারিয়া। মাহফুজা বলে
– হ্যাঁ, বল শুনি।
– আমাদের ভার্সিটির প্রিন্সিপ্যাল স্যার আমাকে একটা দায়িত্ব দিয়েছেন।
– যেমন?
– তিনি বলেছেন,

আমাদের প্রতিষ্ঠানের উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র-ছাত্রীদের এখন থেকে পাঠদান করাতে হবে। মারিয়ার মুখে এমন কথা শুনে দ্বিতীবারের মতো চমকে যায় মাহফুজা। সে ভাবে, এমন কাজ তো তার ভার্সিটির স্যার তাকে দিয়েছে। কিন্তু মারিয়া? মারিয়ার ব্যাপারটা তার কাছে কেমন যেন অদ্ভুত কিসিমের মনে হয়। সে জিজ্ঞেস করে,

– কবে থেকে শুরু করবি এই দায়িত্ব পূরণের কাজ?
– আগামীকাল থেকে।
– ও, খুব ভালো। শুভকামনা।
– হুম, তারপর তোর খবর বল।

এভাবেই কথা বলতে বলতে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসে। সূর্যটা ডুবে গেলে তারা তিনজনে ছাঁদ থেকে নেমে আসে। রাতের খাবারের পর মারিয়ারা সবাই তাদের নিজ বাসায় চলে যায়। মাহফুজা তার রুমে গিয়ে আবার ভাবনার অতলে নিজেকে হারিয়ে ফেলে। মারিয়া তাকে কী বলে গেলো এসব? এটা কি আদৌ সম্ভব?

ভাবনার অন্তে তার চোখ যায় জানালার দিকে। কিসের যেন একটা আলো জ্বলজ্বল করছে সেখানে। দেখে মনে হচ্ছে বিদ্যুৎ চমকানো আলোক রশ্মি। সে উঠে জানালার কাছে গিয়ে পর্দাটা সরিয়ে দিতেই এক ফালি চাঁদ হাসি হাসি মুখে তাকে আমন্ত্রণ জানায় জ্যোৎস্না বিলাস করতে। সে জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তার হাত দু’টো বাড়িয়ে দেয়। বাইরের হিমেল হাওয়া তার হাতদুটো স্পর্শ করে জানান দেয় তার উপস্থিতি বার্তা। মাহফুজা জানালা বন্ধ করে বিছানায় এসে শুয়ে পড়ে। ঘুমানোর আগে সে মোবাইলের এলার্মটা চালু করে রাখে। সে মনে মনে কল্পনা করতে থাকে, আজকে ভার্সিটিতে সে তার ছাত্র-ছাত্রীদের কী কী শেখালো, কী কী বিষয়ে জানলো তাদের থেকে। কিন্তু সেসবের কিছুই তার মনে পড়ে না। তার থেকে মনে হতে থাকে, সে যেন কোনো ক্লাসই করায়নি।

গভীর রাত, চারিদিকে নিরবতা। শুধু রাস্তার বেখেয়ালী কুকুরটার ডাক ছাড়া আর কিচ্ছু শোনা যাচ্ছে না। ঘড়ির কাঁটা যখন বারো অতিক্রম করে ঠিক তখনই একটা কালো ছায়া তার রুমে প্রবেশ করে। যা সে স্পষ্টভাবে দেখতে পায়। ছায়াটা ক্রমান্বয়ে তার দিকে অগ্রসর হতে থাকে। যখন ছায়াটা একেবারে কাছে চলে আসে, ঠিক তখনই সে ছায়াটাকে চিনতে পারে। সেই চিরচেনা চাহনি, চিরচেনা মুখ। সে ছায়াটিকে জিজ্ঞেস করে, তুমি গৌতম না? ছায়াটি মাথা নাড়ে। তার চোখ দু’টো দেখে মাহফুজা বুঝতে পারে সে কিছু বলতে চায়। কিন্তু কী একটা কারণে যেন সে বলতে পারে না। মাহফুজা নিজেই সেই ছায়া মানব গৌতমকে জিজ্ঞেস করে, আচ্ছা গতকাল সকালে কি তুমিই ঐ ল্যাম্পোস্টের খাম্বাটা ধরে দাঁড়িয়ে ছিলে? গৌতম মাথা নাড়ে। সে ধীরে ধীরে মাহফুজার একেবারে কাছে আসতে থাকে। তার চোখ দুটো রক্তবর্ণ, হাতের নোখগুলো বড় বড় এবং তলোয়ারের ন্যায় ধারালো। ছায়াটি মাহফুজার বুকের উপর চেপে বসে গলা টিপে ধরে। মাহফুজা যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকে। ঠিক তখনই দরজা খোলার আওয়াজ হয়। আর সাথে সাথেই তার ঘুম ভেঙে যায়।

– কিরে মা, কী হয়েছে তোর? অমন চিৎকার চেঁচামেচি করছিলি কেন? পাশের রুম থেকে তার বাবা মা ছুটে আসে তার রুমে। দরজাটা খোলায় ছিলো। তারা এসে দেখেন মাহফুজা কেমন যেন ছটফট করছে। আর অদ্ভুত সব প্রলাপ বকছে। হাঁপাতে হাঁপাতে মাহফুজা জবাব দেয়,

– মা এক গ্লাস পানি দাও। তার মা দ্রুত গ্লাসে করে পানি ভরে দেন। পানি খাওয়া শেষ হলে তিনি বলেন,
– কী হয়েছিলো তোর?

সে তার মায়ের প্রশ্নের কোনো উত্তর দেয় না। সে মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখে রাত দুইটা বাজে। গতকালও সে দুইটার সময় এমন অদ্ভুত স্বপ্ন দেখে। কিন্তু গতকালের থেকে আজকের স্বপ্নটা বেশি ভয়ংকর ছিলো। স্বপ্নের কাহিনীটা সে তার মাকে বলতে গিয়ে ভাষা হারিয়ে ফেলে। স্বপ্নে সে কী দেখেছে, কাকে দেখেছে, সেটা সে তার ভাষাতে বলতে পারে না। শুধু সে কল্পনা করতে পারে। কিন্তু সেটা ভাষায় রুপ দিতে পারে না।

– কিরে কী হয়েছিলো তোর? তার মা আবারও জিজ্ঞেস করে তাকে। এবার সে তার মাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়। আর বলে,
– মা আমার কী হয়েছিলো, সেটা আমি নিজেও জানি না।
– কোনো দুঃস্বপ্ন দেখেছিলি?
– হুম।
– কী দেখেছিলি?
– সেটা বলতে পারবো না মা।
– তুই কি কোনো বিষয় নিয়ে চিন্তা করিস? যার জন্য এমন স্বপ্ন দেখেছিস?
– না, মা।
– তাহলে?
– জানি না আমি।

সে রাতে মাহফুজা আর ঘুমায়নি। সাথে তার মা বাবাও। তারা শেষ রাতটুকু তার মেয়ের পাশে থেকেই কাঁটিয়ে দেন। স্বপ্নের ঘটনাটি মাহফুজার মনে বারবার আগুনের স্ফুলিঙ্গের মতো জ্বলে জ্বলে উঠছে। কিন্তু সেই স্ফুলিঙ্গের পরিসর সীমাবদ্ধ। কারণ সেটা শুধু তার মনের মধ্যেই গেঁথে আছে। কাউকে বলতে পারছে না সে।

গতকালের মতো আজও সে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে বের হয়ে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে আছে। আর আজকেও ঠিক গতকালের মতোই ঘটনা ঘটছে। এত এত বাস থাকা সত্ত্বেও কোনো আসন খালি নেই। এটা দেখে আজকে একটু অবাক হলো সে। তাহলে কি এখন থেকে প্রতিদিনই এরকম হবে? যথা সময়ে একটা দ্বোতলা বাস আসে। বাসটি একদম ফাঁকা, ঠিক গতকালের বাসের মতোই। সে বাসে উঠে পড়ে। ভার্সিটি পৌঁছেও সে অবাক! সব কিছু ভিন্ন, নিত্য নতুন। গতকাল যেমন ছিলো, আজকে তার পুরো পরিবর্তন। উচ্চ মাধ্যমিকের শ্রেণীকক্ষে ঢুকে প্রথমেই তার চোখ পড়ে গৌতমের দিকে। ছেলেটি আজও শ্রেণীকক্ষের ঠিক শেষ বেন্চে বসে আছে। কী অদ্ভুত ব্যাপার! রাতে সে এই ছেলেটিকেই স্বপ্নে দেখলো। যে তাকে হত্যা করতে এসেছিলো।

মাহফুজার চোখের পলক পড়তেই গৌতম অদৃশ্য হয়ে যায় সেখান থেকে। সে আবারও অবাক হয়। সে এটা বুঝে ফেলে তার সাথে যা কিছু হচ্ছে, তার সবটাই অদ্ভুত এবং রহস্যে ঘেরা মৃত্যু খেলা। মন, দেহ, দেহের প্রতিটা শিরায় উপশিরায়, রক্তকণিকায়, সব জায়গাতে ভয় নামক জিনিসটা বাসা বাধতে শুরু করে তার। তবুও সে নিজেকে এর সাথে মানিয়ে নিতে ব্যর্থ চেষ্টা করে।

এই ভাবে কেটে যায় দশটা দিন। মাহফুজা এখন শারীরিক এবং মানসিক, দুটো দিক থেকেই অসুস্থ। সে আর ভার্সিটিতে যায় না। উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠ দানও করে না। তবে তার ইচ্ছাটা দমে যায়নি। সে প্রতিজ্ঞা করে, সুস্থ হলে সে আবারও ভার্সিটি যাবে, শিক্ষকতা করবে। কিন্তু এরই মাঝে অর্থ্যাৎ এই দশটা দিনে সে লক্ষ করে দেখে, প্রতিদিন রাত বারোটা থেকে পরদিন দুপুর বারোটা পর্যন্ত এমন অদ্ভুত ঘটনা ঘটে তার সাথে। এই দশটা দিন যে, সে কলেজে যায়নি, তবুও সেই অদ্ভুত স্বপ্ন এবং হুটহাট করেই গৌতমকে দেখা বিষয়টা তার কল্পনা থেকে সরেনি।

ঐ সময়টার মধ্যে সে যখনই একা থাকে, ঠিক তখনই গৌতমের অবয়বটা তার সামনে আসে। গৌতম তাকে কিছু একটা বলতে চায়, যেটা সে বুঝতে পারে। কিন্তু কখনো গৌতমের মুখ থেকে সেটা শোনা হয়ে ওঠে নি।
দিন যাচ্ছে, মাহফুজার শরীরের অবনতি হচ্ছে। সে এখন আর বিছানা থেকে উঠতে পারে না। বড় বড় ডাক্তার দেখিয়েছেন তার বাবা, তবুও কোনো কাজ হচ্ছে না। তার এরুপ অবস্থার কথা শুনে চারিদিক থেকে বিভিন্ন আত্মীয় স্বজনেরা তাকে দেখতে আসে। সে শুয়ে শুয়ে শুধু ভাবে, মারিয়া তাকে কবে দেখতে আসবে! তার খুব জানতে ইচ্ছে করে, মারিয়ার সাথেও কি এমনটা হচ্ছে?

অবশেষে তার বহুল প্রতিক্ষার অবসান ঘটিয়ে মারিয়া তাকে দেখতে আসে। মারিয়াকে দেখে সে আনন্দে অাত্মহারা হয়ে যায়। যেন সে কোনো মহা অভিযানে অভিযানকৃত সার্থক কোনো ব্যক্তি। রুমের মধ্যে তখন কেউ নেই মাহফুজা আর মারিয়া ছাড়া। মাহফুজা কোনো প্রকার বাধা সংকোচ ছাড়াই মারিয়াকে জিজ্ঞেস করে,

– কেমন আছিস বোন?
– হ্যাঁ, অনেক ভালো। কিন্তু তোর এই অবস্থা কেন? সে মারিয়ার মুখে তার ভালো থাকার কথা শুনে হতবাক হয়ে যায়। এটা কী করে সম্ভব? সে আবার জিজ্ঞেস করে,
– কেমন চলছে তোর শিক্ষকতা জীবন?
– শিক্ষকতা? মারিয়া এমন ভাবে উত্তর দেয়, যেন সে শিক্ষকতা নামটা এই প্রথম শুনছে। মাহফুজা বলে,
– হ্যাঁ, শিক্ষকতা।
– কিসের শিক্ষকতা?
– কেন? তুই না সেদিন বললি, তোদের ভার্সিটির প্রিন্সিপ্যাল তোকে তোদের প্রতিষ্ঠানের উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ানোর দায়িত্ব দিয়েছেন।

– মৌ, তোর মাথা ঠিক আছে তো? (ও হ্যাঁ, মাহফুজাকে অনেকে মৌ নামেও ডাকে। যেমন মারিয়া তাদের মধ্যে একজন)

– এতদিনও ঠিক ছিলো, তবে এখন নেই।
– কেন?
– তোর শিক্ষকতা জীবন কেমন চলে সেটা বল?
– আরে ভাই আমি কোনো শিক্ষকতা টিক্ষকতা করি না।
– মিথ্যে বলবি না, তুই না সেদিন আমাকে ছাঁদ থেকে বললি!
– ওয়েট ওয়েট, কবে বললাম?
– এইতো ১৫, ১৬ দিন তো হবে।
– আরে ১৫,১৬ দিন আগে তো আমি তোদের বাসাতেই আসিনি।
– কি?
– হ্যাঁ।
– তাহলে….
– তাহলে কী?
– তাহলে সেদিন কে কথা বলেছিলো আমার সাথে? আচ্ছা এটা বলতো, সেদিন তোদের বাসা থেকে কারা কারা আমাদের এখানে এসেছিলো? কথাগুলো বলতে বলতে তার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। সে হাঁপাতে থাকে। তার প্রশ্নের জবাবে মারিয়া বলে,

– মা আর বাবা এসেছিলো।

সময়টা দুপুর, মাহফুজা শুয়ে আছে। ঘুমে তার চোখ দুটো লেগে আসছে। ঘুমাতে গেলে ঘুমও অাসছে না। ঝাপসা ঝাপসা চোখের সামনে হঠাৎই গৌতমের আগমন ঘটে। এই ভর দুপুরে গৌতমকে দেখে সে ভয় পেয়ে যায়। গৌতমের চোখ বলছে সে কিছু বলতে চায় তাকে। কিন্তু বলার সুযোগটা হয়ে ওঠে না। মাহফুজা বলে,

– কী চাও তুমি আমার কাছে?
– ম্যাম, আমি চাই আপনি ঐ শিক্ষকতাটা ছেড়ে দিন।
– কী?
– হ্যাঁ।
– কিন্তু কেন? আর তুমি কে?
– আপনি শিক্ষকতা ছেড়ে দিন, তবে আমি আপনাকে ছেড়ে দিবো।

গৌতম হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। মাহফুজা গৌতমকে ডেকেই চলেছে, কিন্তু গৌতমের কোনো খোঁজ নেই। কী বলে গেলো ছেলেটা? শিক্ষকতা ছাড়বো কেন? আর শিক্ষকতা ছাড়লে সে আমায় ছেড়ে দেবে, এটার মানে কী? তার মানে কি আমার এই দূর্দশার কারণ ঐ শিক্ষকতা করা? এসবই ভাবতে থাকে মাহফুজা। ছেলেটা কে? আর শিক্ষকতায় বা ছাড়তে বললো কেন? জানতে হবে আমাকে, সব জানতে হবে, মনে মনে ভাবে সে।

পরদিন সকালেই মাহফুজা পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠে। সে হঠাৎ করে সুস্থ হওয়াতে তার বাবা মা হতবাক হয়ে যান। কত কত ডাক্তার দেখালেন তারা, তবুও সে সুস্থ হলো না। আর আজ হঠাৎ করেই এক রাতের মধ্যে সে কিভাবে সুস্থ হয়ে গেলো, সেটা তাদের মাথায় ঢুকে না। তবে সে সুস্থ হয়েছে, এটাই তাদের জন্য বড় পাওয়া। পরদিন মাহফুজা তার বাবাকে সাথে নিয়ে ভার্সিটি যায়। সর্বপ্রথম তারা আসফাক উদ্দিন স্যারের কাছে যায় এবং স্যারকে জিজ্ঞেস করে গৌতমের বিষয়ে। আসফাক উদ্দিন প্রথমত না না করলেও পরে তাদের চাপে পড়ে বলতে বাধ্য হয়।

আজ থেকে বছর পাঁচেক আগে গৌতম নামে একটা ছেলে ভর্তি হয়েছিলো তাদের প্রতিষ্ঠানের কলেজ শাখায়। ছেলেটি নিতান্তই গরিব ঘরের ছিলো। মাসিক বেতন, পরীক্ষার ফিস, যাবতীয় খরচ তার পরিবারের পক্ষে বহন করা সম্ভব ছিলো না। আর এরই প্রেক্ষিতে একদিন তাকে অপমান করে কলেজ থেকে বের করে দেওয়া হয়। তার ঠিক দুদিন পরেই কলেজের সামনে তার লাশ পাওয়া যায়। লাশের উপরে একটা কাগজে কিছু কথা লেখা ছিলো। সেখানে লেখা ছিলো, আমি যেখানে পড়তে পারিনি, সেখানে কাউকেই পড়তে দেবো না। ঠিক ঐ দিনের পর থেকে উচ্চ মাধ্যমিক অর্থ্যাৎ তার শ্রেণীকক্ষে যেসব শিক্ষক শিক্ষিকা পাঠদান করতেন, তাদের সবার মধ্যে অস্বাভাবিক পরিবর্তন আসতে থাকে। আর তারা চাকরি ছেড়ে চলে যান। ঠিক একই কারণে হিসাববিজ্ঞান স্যারও শিক্ষকতা ছেড়ে হুট করেই এই প্রতিষ্ঠান থেকে বিদায় নেন।

সেদিনই মাহফুজা সেখানকার শিক্ষকতার দায়িত্ব ছেড়ে দেয়। এখন সে পুরোপুরি ভাবে সুস্থ এবং ঠিক আগের মতোই একজন মেধাবী চাঞ্চল্য মেয়ে। প্রতিদিনের রুটিন মাফিক সে আজও গোধূলি লগ্নে ছাঁদের কোণে কফির মগ হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অস্তমিত সূর্যের পানে চেয়ে সে ভাবতে থাকে, মানুষ কতটা নিষ্ঠুর হলে একজন দরিদ্র ছেলের সাথে এমন আচরণ, এমন অবিচার করতে পারে! যেখানে তারা শিক্ষা দেন মানুষকে, ঠিক সেখানেই মনুষ্যত্বহীন কাজ করেন সকলে। মাহফুজা সূর্যের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎই দেখে সেখানে গৌতমের অাবছায়া। তার দু’চোখের চাহনিতে আজ কোনো কিছু বলতে চাওয়ার ভাস্কার্য নেই। বরং সেখানে রয়েছে একরাশ ভুবন ভোলানো হাসি। দূর থেকে যেন সে বলছে তাকে, অনেক অনেক ধন্যবাদ ম্যাম আপনাকে।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত