বৃষ্টি

বৃষ্টি

ইন্টারভিউ দিতে বের হয়ে পুরো ভিজে একাকার হয়ে গেছি।এই অবস্থায় ইনটারভিউ দিতে যাওয়া ঠিক হবে কি না সেটাই ভাবছি।সকাল বেলা বাসা থেকে বের হওয়ার সময়ও আকাশ বেশ পরিষ্কারই ছিলো। কত কষ্ট করে সকালবেলা উঠে জামা কাপড় আয়রন করলাম।অথচ এখন মনে হচ্ছে ইন্টারভিউ দিতে যাওয়াই আর হবে না। এমনিতেই বর্তমানে চাকরির ইন্টারভিউতে লোকজন খুঁত ধরার জন্য ওৎ পেতে থাকে।তাই এই অবস্থায় যাওয়ার কোন মানেই হয় না। বৃষ্টি এখনো পুরোদমে চলছে।যাত্রী ছাউনির নিচে দাঁড়িয়ে আছি।কিছুক্ষণ পর বন্ধু ফোন দিলো। ইন্টারভিউ কেমন হয়েছে জানতে চাওয়ার জন্যই ফোন দিয়েছে।

আমি ফোন ধরে বলা শুরু করলাম, “আর বলিস না বৃষ্টির জন্য আমার সব পরিশ্রম বৃথা গেলো,আমার পুরো প্রস্তুতিই মাটি করে দিলো বৃষ্টি। বৃষ্টির জন্য এরকম বাজে অবস্থা হবে ভাবি নি।সময় অসময় কিচ্ছু বুঝে না এই বৃষ্টি।” বন্ধুর সাথে বৃষ্টির জন্য মনে জমা সব ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে ফোনটা কেটে দিলাম।পাশে ফিরে দেখি এক মেয়ে চোখ লাল করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। বুঝতে পারছি না এভাবে তাকিয়ে থাকার কারণ।এই মেয়েকে তো আগে কোথাও দেখেছি বলে মনে পড়ে না। আর এভাবে তাকিয়ে থাকার মতো কিছু করেছি বলেও তো মনে হচ্ছে না।

তারপরও কৌতূহলবশত জিজ্ঞেস করলাম, ‘জ্বি আপু এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন কেনো, আমি কি কোন কিছু করেছি??’ মেয়েটি উত্তর দিলো,”আমার নাম বৃষ্টি” অতঃপর আমি বুঝতে পারলাম এভাবে তাকিয়ে থাকার কারণ।আমি আর কথা না বাড়িয়ে বাড়ির দিকে হাঁটা দিলাম।বৃষ্টি তখনও হচ্ছিলো।একবার যখন ভিজেই গেছি তাই আবার ভিজতে কোন সমস্যা নেই। কয়েকদিন পর আরেকটা ইন্টারভিউ দিলাম।এবারের ইন্টারভিউটা খুব ভালো হয়েছে।মনে হচ্ছে চাকরিটা পেয়েই যাবো এবার।ইন্টারভিউ দিয়ে বন্ধুর সাথে ক্যাফেতে বসে আছি। বন্ধু আজকের ইন্টারভিউ কেমন হয়েছে তা জানতে চাচ্ছে।

আমি বললাম,”আজ অনেক ভালো হয়েছে রে।মনে হয় চাকরিটা হয়ে যাবে।ওরা অনেক পজিটিভ ছিলো দেখে মনে হলো।বুঝলি গতবারের মতো এবারে আর বৃষ্টি কোন ঝামেলা সৃষ্টি করে নি।গতবার তো এই বৃষ্টিতে ভিজে দুই দিনের জ্বরেই পড়ে গিয়েছিলাম।” কথাগুলো বলে শেষ করতে না করতেই আবার বৃষ্টি এসে হানা দিলো।আকাশ থেকে নয় এই বৃষ্টি এলো জমিন থেকেই। এ তো সেই মেয়েটা।ঐদিন যে বৃষ্টির সময় চোখ লাল করে তাকিয়ে ছিলো। “আপনার সমস্যাটা কী সত্যি করে বলুন তো।আপনি কী আমাকে ফলো করছেন নাকি??ফলো করছেন তো করছেন তার ওপর আবার আমার নাম নিয়ে প্রতিদিন আজেবাজে কথা।”

>>বিশ্বাস করেন আপু আমি আপনাকে চিনি না।ঐদিন প্রথম দেখেছিলাম।আমি আপনার নামে আজেবাজে কথা কেনো বলতে যাবো।আমার সাথে যা ঘটেছে সেটাই আমি বলছিলাম আমার বন্ধুকে।ব্যাপারটা পুরো কাকতালীয়।

“মোটেই না।এটা কোনভাবেই কাকতালীয় হতে পারে না।আপনি আর আমাকে ফলো করবেন না।ভালো হবে না বলে দিলাম।” কি হলো আমার সাথে কিছুই বুঝতে পারলাম না।ভাবছি এখন থেকে কথা বলার আগে আশেপাশের মানুষের নাম জিজ্ঞেস করে নিবো। কয়েকদিন পরই সুখবরটা পেলাম। হ্যাঁ আমার চাকরিটা হয়ে গেছে।চাকরি হওয়ার ২-১মাস পরেই আম্মু মেয়ে দেখা শুরু করেছে। একদিন আম্মু একটা ছবি নিয়ে এসে আমাকে বললো, ‘দেখতো বাবা মেয়েটা কেমন দেখতে?’ আমি ছবি দেখে ভূত দেখার মতো চমকে উঠলাম।এটা তো মিস বৃষ্টির ছবি। ‘কীরে তুই ছবি দেখার পর এমন করছিস কেনো??তোর পছন্দ হয়েছে কিনা সেটা সেটা বল।’

>>আম্মু।আমার পছন্দ অপছন্দ তো পরে।এই মেয়ে যে আমাকে পছন্দ করবে না এটা আমি নিশ্চিত। ‘মানে কী?তুই কী এই মেয়েকে চিনিস নাকি আগে থেকে?’

>>আসলে ২-১ বার দেখা হয়েছিলো আগে।

‘বুঝেছি আমি বুঝেছি।তোর পছন্দ হয়েছে।’ আম্মু কি বুঝলো সেটা আমিই বুঝতে পারছি না।বাকিটা আম্মু যা করার করুক।এই মেয়ে যে বিয়ে করতে রাজি হবে না সেটা আমি নিশ্চিত। ২ দিন পর আম্মু এসে বললো এই মেয়েকে আংটি পরাতে যাবে আগামীকাল। কিছুই বুঝলাম না।এই মেয়ে রাজি হলো কীভাবে।আমার কোন ছবি কি তাকে দেখানো হয় নি? দেখে থাকলে তো রাজি হওয়ার কথা না। ভাবতে ভাবতে টিভি অন করলাম সেখানেও দেখি সিনেমা হচ্ছে,”হঠাৎ বৃষ্টি” বুঝতে পারছি জীবনে বৃষ্টি কোনদিন পিছু ছাড়বে না।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত