১৯৯০ সাল। তানিয়াদের বাড়িতে পা রাখতেই সে বললো, “ আপনি সবসময় ঝামেলার দিনগুলোতেই আসেন কেনো বলেন তো? আজকে আমার জরুরী কাজ আছে। আপনার সাথে কথা বলতে পারবো না! সকাল সকাল চারজনকে গুলি করার পরে মন খারাপ। অবশ্য তাঁদের গুলি করার জন্য সরকারিভাবেই অনুমতি ছিলো। গুলশান থানার একজন পুলিশ ইনস্পেক্টর আমি। আমার মন খারাপ হলে এই তানিয়া নামের মেয়েটিকে দেখতে আসি। তাঁর হাসি দেখলে আমার মন মুহূর্তেই ভালো হয়ে যায়। তাঁর হাসিতে মনে হয় কোনো ঔষধ লুকিয়ে আছে। এ ঔষধ দেখলেই হয়, যেকোনো রোগ সেরে যায়! তানিয়ার কথা শুনে মনটা আরো খারাপ হলো, “ আচ্ছা, আপনার বড় ভাই কোথায়?
“ ছাদে আছে, দাদাভাই আপনার কথাই বলছিলো। ”
কালো একটা জামা পড়েছে তানিয়া। চাকরীর জন্য ঘুরছে। তাঁদের যে টাকা পয়সার অভাব তা না। তবুও সে চাকরী করতে চায়। অবশ্য এ নিয়ে কারো কোনো আপত্তি নেই। ছাদে আর যাওয়া লাগলো না। তানিয়ার বড় ভাই আরিফের সাথে দেখা হয়ে গেলো। আমাকে দেখেই বললেন, “ আরে পুলিশ সাহেব যে! হঠাৎ কী মনে করে? ”
“ এমনিই, আপনাদের সাথে কথা বলতে এলাম। ”
“ ভালো করেছো, তবে আজ আর তুমি চা পাবে না। তানিয়া বাইরে চলে গেছে। ”
আরিফ সাহেবের বিয়ে হয়েছে, স্ত্রী আছে, সন্তানও আছে। কিন্তু স্ত্রী সন্তান আলাদা থাকে। এটা একটা বড় কাহিনী। ছোট করে বলতে গেলে, আরিফ সাহেবের সাথে বেগমের দেখা হয়েছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অনুষ্ঠানে। আরিফ সাহেব ছিলেন তখন পুলিশে। বেগম ভালো ছাত্রী ছিলেন, কবিতা আবৃত্তি করতেন। আরিফ সাহেবের কবিতা আবৃত্তি শুনতে বেশ পছন্দ। সেভাবেই কথা হয়। বন্ধুত্ব হয়, বিয়েও হয়। বিয়ের দশ বছর পর হঠাৎ করেই বেগম বললেন, “ আমি আপনার সঙ্গে আর থাকছি না। আমার সন্তানদের নিয়ে আমি চলে যাচ্ছি! ”
আরিফ সাহেব কারণ জানতে চাইলে তিনি নানান কথা শুনান। আরিফ সাহেব আবার শান্ত প্রকৃতির মানুষ। জোরাজুরি করলেন না। কদিন পর সন্তানদের নিয়ে যুক্তরাজ্যে চলে যান বেগম। পাঁচ বছর ধরে তিনি একা!
এক বছর হলো তিনি চাকরীও ছেড়ে দিয়েছেন। এতো বড় একটা বাড়িতে শুধু দুজন মানুষই থাকে। আরিফ সাহেব আর তাঁর বোন তানিয়া। দীর্ঘশ্বাস টেনে আরিফ সাহেব বললেন, “ আচ্ছা ওয়াহিদ, আমি বড় চিন্তায় আছি বুঝলে? তানিয়ার বিয়ের বয়স হয়েছে। মেয়েটাকে বিয়ে দেয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো সে রাজি হয় না। বলে ঘরজামাই না পেলে বিয়ে করবে না। এর কারণটা অবশ্য আমিই। আমাকে একা ছেড়ে সে যেতে চায় না। এর একটা সমাধান তুমি করে দাও তো। আমি মন দিয়ে কথাটা শুনে বললাম, “ সমাধান তো একটাই। কোনো ছেলেকে ঘরজামাই করতে হবে! ”
“ তা, তোমার খুঁজে এমন কোনো ছেলে আছে যে ঘরজামাই থাকতে রাজি? ”
“ খুঁজতে হবে, আমি সন্ধান পেলে আপনাকে জানাবো। ”
“ আচ্ছা, এখনো কোনো চাকরী তানিয়া পায়নি। পেয়ে গেলে আবার বিয়ে নাও করতে পারে! ”
উনার সাথে কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলে আমি চলে এলাম। তানিয়ার বিয়ের ব্যাপারে কথা উঠলেই আমার বুকটা কেঁপে উঠে। তানিয়ার মা বাবা বেঁচে থাকলে আমি কবেই তানিয়ার বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব দিতাম। কিন্তু এখন কী যে একটা সমস্যায় আছি। আমার পক্ষে তো ঘরজামাই থাকা সম্ভয় নয়।আমাদের বড় পরিবার। সবাই একসাথে থাকি। জয়েন ফ্যামিলি যাকে বলে। আমাদের বংশে কেউই ঘরজামাই থাকেনি। আল্লাহ্ এর রহমতে এরকম পরিস্থিতিও আমাদের হয়নি। সমাজে আমাদের সম্মানও আছে। আমার বাবাও ছিলেন পুলিশে। চাচারা ব্যবসা করেন। বড় ভাই মিলিটারিতে। এরকম পরিবারের ছেলে তো ঘরজামাই থাকতে পারে না! ব্যাপারটা আমাকে খুব কষ্ট দেয়। কী করবো আমি বুঝতে পারি না।
আজকে আকাশের অবস্থা বেশি ভালো না। এই দিন কালো হচ্ছে তো, এই রোদ ওঠছে! আমার মনে হচ্ছে কিছুক্ষণ পরেই বৃষ্টি হবে। বৃষ্টি এলেই তানিয়ার কাছে যাওয়ার জন্য মনটা ঝটফট করে। আজকেও করছে। থানা থেকে বের হয়ে মনে হচ্ছে আজকে কোনো বিশেষ দিন। অনেকের হাতেই ফুল। আমিও একটা ফুল নিয়ে তানিয়ার বাড়ির দিকে গেলাম। থানা থেকে তানিয়ার বাড়িতে হেঁটে গেলে সময় লাগে পাঁচ মিনিট। তানিয়ার বাড়িতে যাওয়ার পরেই বৃষ্টি শুরু হলো! যেমনটা আমি ভাবছিলাম। জানালা দিয়ে আমাকে দেখেই তানিয়া দরজার সামনে এলো।
“ আপনি এসেছেন ভালোই হলো। আপনার সাথে আমার কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে। হাতের ফুল কিছুটা ভিজে গেছে। তানিয়াকে দিয়ে বললাম, “ আজকে কোনো বিশেষ দিন নাকি? সবার হাতে ফুল দেখলাম তাই আপনার জন্যও একটা নিয়ে আসলাম।
তানিয়া ফুলটা নিয়ে বললো, “ ধন্যবাদ আপনাকে। আজকে মনে হয় মাদার ডে। থেমে গিয়ে আবার সে বললো, “ দেখুন না আমাদের টেলিফোনটা কাজ করছে না। সকাল থেকেই একজন ভদ্রলোক ফোন দিয়ে যাচ্ছেন। আমি কথা বলছি কিন্তু তিনি শুনতে পাচ্ছেন না! ” বাড়িতে আসতে না আসতে একটা কাজও পাওয়া গেলো। আমার এই বিষয়ে কোনোই অভিজ্ঞতা নেই যদিও। বসার ঘরে দরজার পাশে টেলিফোন। আমরা গিয়ে দেখি টেলিফোন বাজছে। তানিয়া টেলিফোনটা তুলছে না। আমি বললাম, “ ধরুন ফোনটা। “ নাহ, কোনো কাজ হচ্ছে না। আমি অনেকক্ষণ ধরেই চেষ্টা করছি। আমার কথা যাচ্ছে না, আমি শুধু শুনতে পাচ্ছি! আমি ফোনটা তুলে দেখলাম ঠিক কিনা। ওপাশ থেকে কেউ একজন বললেন, “ হ্যালো, এটা কী তানিয়াদের বাসা? ”
“ হ্যাঁ, আপনি কে? ”
“ আমি বায়েজিদ, তানিয়ার সঙ্গে একটু কথা বলা যাবে? ”
“ হ্যাঁ, দিচ্ছি। ”
আমি তো কথা স্পষ্ট শুনলাম এবং আমার কথাও ভদ্রলোক শুনলেন! তানিয়া অবাক হয়ে কানে টেলিফোন ধরে বললেন, “ জি বলুন, কে আপনি? ”
“ আমি বায়েজিদ, আপনার বড় ভাই নাকি একজন ঘরজামাই খুঁজছেন? আমি আগ্রহী। তানিয়া অবাক হয়ে বললো, “ আপনি থাকেন কোথায়? ”
“ উত্তরায়। ”
“ কী করেন? ”
“ কিছু করি না বলেই তো ঘরজামাই থাকতে চাচ্ছি! ”
“ আমাকে আপনি দেখেছেন? ”
“ নাহ, আপনি কানা, লুলা, বয়রা হলেও আমি রাজি। ”
“ আপনার উচ্চতা কতো? ”
“ পাঁচ ফুট পাঁচ ইঞ্চি। ”
“ আপনার প্রিয় লেখক কে? ”
“ কাজী নজরুল ইসলাম। আচ্ছা আপনি এসব প্রশ্ন আমাকে সামনাসামনিই করবেন কেমন? আমি কালকে আপনাদের বাড়িতে আসছি। পছন্দ হলে আমি একেবারে থেকে যাবো। ”
“ আচ্ছা। বলে টেলিফোনটা রেখে তানিয়া হাসলো।“ লোকটা বেশ মজার মনে হচ্ছে। সে নাকি ঘরজামাই থাকতে আগ্রহী। মেয়েরা মজার মানুষ পছন্দ করে। আমার সেই ভয়। আবার তানিয়া বললো, “ আচ্ছা আপনি ধরতেই কীভাবে টেলিফোনটা ঠিক হয়ে গেলো বলুন তো? আপনার হাতে নিশ্চয়ই জাদু আছে! আমি হেসে বললাম, “ বিয়েটা তাহলে করেই ফেলবেন? তানিয়া মাথা নাড়ালো। হলুদ একটা শাড়ি পরেছে সে। এই মেয়েটার অদ্ভুত সব রুচি। সাদা শাড়ি পরবে, হলুদ শাড়ি পরবে! বিধবাদের রঙ সাদা এটা সে মানে না। হলুদ শাড়ি যে শুধু গায়ে হলুদেই পরতে হবে এমন কোনো কথা নেই।
“ উপায় তো নেই। দাদাভাইকে ছেড়ে তো থাকতে পারবো না। আর আজ নাহয় কাল তো বিয়ে করতেই হবে। ”
“ তাও কথা। আচ্ছা আমি তাহলে যাই? ”
“ এখন যাবেন? বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে তো। থেমে গেলে যাবেন কেমন? আমি চা নিয়ে আসছি। ”
“ আপনার দাদাভাই কোথায়? ”
“ রাজশাহী গেছে কী একটা কাজে। কাল আসবেন। ”
“ আপনার একা থাকতে ভয় লাগে না? ”
“ আমি কি বাচ্চা মেয়ে? ”
“ নাহ। ”
তানিয়া চা বানাতে গেলো। আমি ভাবছি হয়তো কাল পরশু থেকে আমার এই বাড়িতে আর আসা হবে না। তানিয়া ব্যস্ত থাকবে তাঁর স্বামীকে নিয়ে। আমার মন খারাপ হলেই তানিয়ার হাসি দেখতে আসা হবে না! বিয়ের পরে অনেক কিছুই পাল্টে যায়। দুকাপ চা নিয়ে আসলো তানিয়া। বৃষ্টি পড়ার বেগ অনেক। বাতাসও আছে। ঠান্ডা বাতাসে তানিয়ার চুলগুলো উড়ে। লম্বা লম্বা চুলগুলো তখন নৌকার পালের মতো লাগে। সে কী সুন্দর দৃশ্য। তানিয়া জিজ্ঞেস করলো, “ আচ্ছা, আমার বিয়ে হয়ে গেলে আপনার মন খারাপ হবে? কঠিন একটা প্রশ্ন। উত্তরটা হ্যাঁ হলেও আমি না বললাম। সে আবারো বললো, “ একটুও মন খারাপ হবে না? ”
“ নাহ, আপনি তো আর বিয়ের পরে শ্বশুর বাড়ি চলে যাবেন না। এখানেই থাকবেন। ইচ্ছে হলেই দেখতে আসতে পারবো। ”
“ কিন্তু তখন তো আমি কারো স্ত্রী হয়ে যাবো! কথাটা বলে কিছুক্ষণ বৃষ্টির দিকে চেয়ে থাকলো তানিয়া। আমার খুব ইচ্ছে ছিলো এরকম বৃষ্টিতে তানিয়ার হাত ধরে হাঁটার।
এ ইচ্ছেটা অপ্রকাশিতই রয়ে যাবে! আবারো তানিয়া বললো, “ বিয়ের পর আপনি আর আমার সামনে আসবেন না। নিজেকে সামলাতে পারবো না! আমি উত্তর দিলাম, “ আচ্ছা। নিজের অজান্তে চোখে কীভাবে পানি চলে আসলো বুঝতে পারলাম না। তানিয়া আমার দিকে না তাকিয়েই বললো, “ আপনার চোখে পানি কেনো? আমি দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললাম, “ যাকে ইচ্ছে আমি বিয়ে করি। এতে মা কিছুই বলবে না। কিন্তু ঘরজামাই থাকা যে আমার পক্ষে সম্ভব না! মা লজ্জায় মারাই যাবে! বৃষ্টির মধ্যেই আমি হাঁটতে শুরু করলাম। বুকে তুফান বইছে। আর এই বৃষ্টি আমার কী করবে? তানিয়াও আমাকে আটকালো না। পরদিন থানায় বসে বসে ঝিমুচ্ছি। রাতে ঘুম হয়নি। টেলিফোন বেজে উঠলো।
“ হ্যালো, গুলশান থানা? ”
“ জি, আপনি কে বলছেন? ”
“ আমি তানিয়া, আপনি এক্ষুণি আমাদের বাড়িতে আসুন তো। সমস্যা হয়ে গেছে! ”
দৌড় দিয়ে আমি তানিয়ার বাড়িতে গেলাম। উঠোনে তিনটি চেয়ার রাখা। মাঝখানে একটা টেবিল। এক চেয়ারে তানিয়া আর আরেক চেয়ারে এক ভদ্রলোক বসে আছে! বাকি চেয়ারটা আমার জন্যই রাখা। তানিয়া তাই বললো।
আমাকে দেখেই ভদ্রলোক সালাম দিলো। আমি সালামের উত্তর দিলাম। তানিয়া বললো, “ ইনার নামই হচ্ছে বায়েজিদ। তো বায়েজিদ সাহেব আপনি ঘরজামাই থাকতে চাচ্ছেন কেনো? ”
“ চাকরী দেয় না কেউ। ”
“ আপনার পড়াশোনা? ”
“ বাংলায় মাস্টার্স সম্পূর্ণ করেছি। ”
“ আচ্ছা, আমার দাদাভাই আসলে আপনার সাথে বিয়ের দিন তারিখ নিয়ে আলোচনা করবেন। আজকে আসতে পারেন। ”
ভদ্রলোক চেয়ার থেকে উঠতেই এক কান্ড হয়ে গেলো। আরিফ সাহেবের স্ত্রী বেগম বাচ্চাদের নিয়ে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করেছেন! তানিয়া দৌড়ে গিয়ে বললো, “ ভাবী তুমি? বাচ্চাগুলো বড় হয়ে গেছে অনেক। বেগম বললো, “ হ্যাঁ আমি, অনেক কাহিনী আছে। তোকে পরে বলবো। আগে বিশ্রাম নিতে দে। ”
এটুকুই শেষ না। আরিফ সাহেবের হাতে ব্যাগ! বড় বড় দুটো ব্যাগ! ব্যাগ নিয়ে তিনি বাড়িতে প্রবেশ করছেন। তানিয়া জিজ্ঞেস করলো, “ দাদাভাই তুমি না রাজশাহী গেলে? ভাবীর সাথে কীভাবে? তিনি জবাব দিলেন, “ মোটা মোটা ব্যাগ দুটো টেনে আমি ক্লান্ত। আগে এক গ্লাস পানি নিয়ে আয়। পরে সব বলছি! তানিয়া দৌড়াদৌড়ি শুরু করে দিলো। এদিক থেকে ওদিক যাচ্ছে। বারান্দা থেকে গেটে যাচ্ছে! এরকম খুশি আমি কোনোদিনো তানিয়াকে দেখিনি! আমি আর বায়েজিদ নামের লোকটি চেয়ারে বসেই রইলাম। তাঁরা বাড়ির ভেতরে ঢুকে গেলো। কিছুক্ষণ পর তানিয়া দৌড়ে এসে বললো, “ মিস্টার বায়েজিদ, আপনি যতদিন চাকরী না পান। ততদিন আমার ভাইয়ের ছেলে মেয়েদের পড়াতে পারেন। এ বাড়িতে থেকেই পড়াবেন, কোনো সমস্যা নেই। বেতন নিয়ে একদম চিন্তা করবেন না! ”
ভদ্রলোক চুপ থাকলেন কিছুক্ষণ। তারপর বললেন, “ বিয়ে করতে এসে টিউশনি পেলাম! ভালোই তো। এটুকু বলে তিনি উঠলেন আজ। তানিয়ার সাথে কার বিয়ে হতে যাচ্ছে সে ভালো করেই বুঝেছে। এবার তানিয়া আমার দিকে তাকালো। মুখটা তাঁর লাল হয়ে গেছে! বললো, “ এখন আপনি যান কেমন? সন্ধ্যায় আমি ফোন করবো। মিষ্টি নিয়ে আসবেন তখন। “ আচ্ছা। ত্রিশ বছর পর, এখন ২০২০ সাল। যে হাতটা ধরেছিলাম ১৯৯০ এ। সে হাতটা আজও ধরে আছি। দেখতে দেখতে কেমন করে এতগুলো বছর কেটে গেলো। বায়েজিদ নামের লোকটা টানা পাঁচ বছর টিউশনি করিয়েছিলো। তারপর সে চাকরী পেলো। দুটো মেয়ে একটি ছেলে আমাদের। সবার বড় মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। বাচ্চাও আছে একটা। ছেলে পড়ে ভার্সিটিতে আর সবার ছোট মেয়ে কলেজে।
তাঁর সাথে তানিয়ার প্রতিদিনই ঝগড়া হয়। পড়ালেখায় একদম কাঁচা বিধায় তানিয়া বারবার বলে, “ তোর জন্য একটা ঘরজামাই খুঁজছি। পেলেই বিয়ে দিয়ে দেবো। তোর আর পড়ালেখার নামে টাকা উড়ানোর দরকার নেই! ” আজকেও মনে হয় বলেছে। সে কাঁদতে কাঁদতে আমার কাছে হাজির। “ আব্বু, তুমি আম্মুকে কিছু বলো না কেনো? এই মহিলা প্রত্যেকদিন আমার জন্য ঘরজামাই আনবে বলে! আমি বরাবরই চুপ! তানিয়াও পেছন পেছন রুমে প্রবশ করলো, “ তুই কাকে মহিলা বলছিস হুম? এই মহিলা তোকে জন্ম দিছে! চুপ করে পড়তে বস যা। আর একটা কথা বললে ঝাঁটার বাড়ি খাবি! ” “ তুমি পড়ো, আমার ভালো লাগে না। ”
এবার তানিয়া সত্যি সত্যিই ঝাঁটা হাতে তুলে নিলো, ঝুমুর দৌড়ে পালালো! ক্লান্ত হয়ে তানিয়া আমার কাছে এসে বললো, “ তোমার মেয়ের জন্য একটা ঘরজামাই দেখো তো। ” আমি চশমাটা ভালো করে চোখে লাগিয়ে বললাম, “ তোমার জন্য যখন ঘরজামাই খুঁজে পাইনি। তোমার মেয়ের জন্য তখন কীভাবে পাবো? ” তানিয়া চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকলো কিছুক্ষণ। তারপর আমার বুকে মাথাটা রেখে বললো, “ তোমার এতকিছু কীভাবে মনে থাকে?