ইমাম সাহেব মৃত্যুর আগ মূহুর্তে বলে গিয়েছিলেন তাহার জানাযার নামাজ যেন কেউ না পড়ায়।একজন হুজুর আসবেন উনিই যেন ইমাম সাহেবের জানাযার নামাজ পড়ান।এবং পরবর্তীতে যেন উনাকেই মসজিদের ইমাম বানানো হয়।
কাফন পড়িয়ে খাটিয়াতে করে জানাযার জন্য সবাই দাঁড়িয়ে আছে। কেউ তো আসছে না। আধা ঘণ্টা হয়ে গেলো কারো উপস্থিতি টের পাচ্ছে না গ্রামবাসী। ভাবলো নিজেরাই জানাযা সম্পুর্ন করে দাফন করে দেবে। হঠাৎ সাদা জুব্বা পরিহিত একজন মানুষ উপস্থিত হয়েই জানাযা পড়াতে দাঁড়িয়ে গেলেন। কেউ কিছু জিজ্ঞেস না করেই নামাজ সম্পুর্ন করে ইমাম সাহেব কে দাফন করলেন।
পরদিন থেকে ওই ইমাম নামাজ পড়াতে শুরু করলো। আছরের নামায পড়তে গিয়েছিলো ইমরান আর তানভীর। তারা দু’জন খুব কাছের বন্ধু। কয়েকদিন আগেই আল্লাহর রাস্তায় এক চিল্লা দিয়ে এসেছে। ইমরান আর তানভীর ভাবলো নামাজের পর হুজুরের কাছে বসে একটু কোরআন শরীফ পড়বে। নামাজ শেষ করতেই হুজুর উঠে চলে যাচ্ছেন। ইমরান খুব অবাক হলো। নামাজের আগেই তো হুজুর কে বললাম আমরা নামাজ শেষ করে একটু কোরআন শরীফ পড়বো। কিন্তু হুজুর তো না পড়িয়েই চলে যাচ্ছে। ইমরান পেছন থেকে হুজুর কে ডাকতে লাগলেন।হুজুর কোনো কথা না বলেই চলে গেলেন।
পরদিন জহুরের নামাজের পর কামাল মিয়ার বাড়ির সামনে উঠোনে (লন) জায়নামাজ বিছিয়ে জিকির করা শুরু করলো। বাড়ির মানুষ সবাই অবাক। মহিলারা হুজুর কে দেখে ঘরের ভেতরে চলে গেলো। কিন্তু কেউ সাহস পাচ্ছে না হুজুরের কাছে যাবার। হুজুর লাগাতার জিকির করেই যাচ্ছেন। হুজুরের কান্ড দেখে বাড়িতে মানুষে ভড়ে গেলো। দোয়া জিকির শেষ করে হঠাৎ জায়নামাজ উঠিয়ে হুজুর নিজ মনে বিদায় নিলেন। একটু পরেই খবর হলো কামালের আম্মু মারা গেছে। ওইদিন আর হুজুরের ব্যাপারে কোনো কথা হয় নাই। পরদিন বিষয় টা নিয়ে কথা উঠলো। অনেকেই হুজুর কে সন্দেহ করে নানান কথা বলতে লাগলো। গ্রামের মেম্বার এসে সবাই কে বুঝিয়ে সুঝিয়ে বিদায় দিলেন।
ইমরান ও তানভীর কাল ঘটে যাওয়া বিষয় টা নিয়ে খুব এক্সাইটেড। কেনই বা অপরিচিত কারো বাড়িতে উঠোনে (লন) বসে জিকির করবেন দোয়া করবেন হুজুর। কোনো ভাবেই মেলাতে পাচ্ছে না বিষয় টা। হুজুর চাকরিতে জয়েন করেছে প্রায় এক সপ্তাহ হয়ে গেলো। আগের ইমাম সাহেব হুজুর কে গ্রামের প্রত্যেক মুসল্লী একদিন একদিন করে খাবার খাওয়াতেন। এভাবেই তার পুরো মাস কেটে যেতো। কিন্তু এই ইমাম সাহেব আসার পর থেকে খাবার খাওয়া তো দূরের আলাপ। কারো সাথে একটা কথাও বলে নাই। কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে উত্তর ও দেন না। সবসময় তার চেহারায় গম্ভীর একটা ভাব কাজ করে।
গ্রামের মানুষ’ও বিষয় টা নিয়ে এতো ঘাটাঘাটি করেন না। ভাবেন হয়তো নতুন আসছে তাই কারো সাথে কথা বলছে না। এটা ভেবেই কেউ আর কিছু বলে না।কিন্তু ইমরান আর তানভীর এর মনে কৌতূহলের বাসা বেধে আছে। যেভাবেই হোক হুজুরের সাথে কথা বলতেই হবে। এশার নামাজ পড়ে ইমরান আর তানভীর বসে আছে। আজ তারা দেখবে হুজুর কোথায় যায়। কি করে,না করে। যথারীতি নামাজ শেষ করে হুজুর বেড়িয়ে পড়লো। তারাও হুজুরের পিছনে পিছনে বের হলো। হুজুর একমনে হেঁটেই চললেন পেছনে ফিরে একবারো তাকাননি। চলতে চলতে চোখের পলকে হঠাৎ হুজুর উধাও। একে অপর কে জিজ্ঞেস করতে লাগলো। হুজুর কই গেলো? কিন্তু তারা কেউ য়েই টের পায়নি হুজুরের গায়েব হয়ে যাওয়াটা।
আজ আবারো জহুরের নামাজ শেষ করেই বেড়িয়ে পড়লো জায়নামাজ সঙ্গে করে। ক্ষেতে কাজ করছেন মতিন মিয়া ও তার দু’ছেলে। ওদের সামনে ক্ষেতের আইলে (রাস্তায়) বসে জিকির করতে লাগলেন। মতিন হুজুরের বিষয়টা দেখে চমকে উঠলেন।দু’দিন আগেও ঠিক ওরকম ভাবেই কামালের আম্মু মারা গিয়েছিলো। মতিনের ভেতর ভয় কাজ করতে লাগলো। ততক্ষণে হুজুর উঠে চলে গেলেন। আকাশে কালো মেঘ ছিল বৃষ্টি হওয়ার সম্ভবনা। হঠাৎ এক বজ্রপাতে তার ছোট ছেলেটা মারা যায়।বজ্রপাতের কারনে মতিন ও তার বড় ছেলেটা স্তব্ধ হয়ে গেলো। পাশেই অন্যরা কাজ করছিল তারা যেয়ে তাদের কে বাড়িতে নিয়ে আসলো।
এই ঘটনা পুরো গ্রামে ছড়িয়ে পড়লো। কিন্তু হুজুর কে জিজ্ঞেস করার মতো কারো ক্ষমতা নেই। অনেকেই বলাবলি শুরু করলো হুজুর নাকি মানুষ না। হুজুরের শরীরে জ্বিনের আছর আছে ইত্যাদি। আজ ফজরের নামাজ পড়েই ইমরান ও তানভীর প্রস্তুতি নিলো হুজুরের সাথে কথা বলার। যখনি হুজুর কে জিজ্ঞেস করতে যাবে ঠিক তখনি হুজুর নিজ থেকেই বলে দিলো আজ সকাল নয়টায় যেন তারা দু’জন হুজুরের সাথে দেখা করেন।আজই প্রথম হুজুর কারো সাথে কথা বললো।
সকাল নয়টা। ইমরান আসছে বাজার থেকে হুজুরের সাথে দেখা করে।যাওয়ার পথে তানভীরের সাথে দেখা। তানভীর বললো কিরে হুজুর না বলেছিলো দেখা করার জন্য। তুই তো দেখা করলি না? (তানভীর) কি বলিস আমি তো মাত্রই হুজুরের সাথে দেখা করে আসলাম। ইমরানের কথা শুনে তানভীর ও অবাক হয়ে গেলো। তাহলে আমিও তো মাত্রই দেখা করে আসলাম। কই তকে তো কোথাও দেখিনি। বিষয় টা খুব অবাক করে দিলো তাদের। এক টাইমে দু’জনের সাথে হুজুর দেখা করলো। অথচ কেউ কাউকেই দেখি নাই। দু’জন হাঁটতে হাঁটতে পাড়ার আরিফের দোকানে গিয়ে বসলো। আরিফ কে বললো যেন দুটা চা দেয়।আরিফের বয়স তেরো কি চৌদ্দ হবে।রাস্তার পাশেই আরিফের দোকান। চা খাওয়া শেষ করে এবার উঠে যাবে ইমরান ও তানভীর। ঠিক সেই মূহুর্তে রাস্তার ওপাড়ে হুজুর এসে জায়নামাজ নিয়ে বসে জিকির করা শুরু করলো।হুজুরের এরকম উপস্থিতি দেখে পায়ের তলার মাটি সড়ে গেলো ইমরান তানভীরের। ইমরান কনফার্ম এই তিনজনের কেউ হয়তো এবার মরার পালা। তানভীর ভয়ে দোকানের ভেতর লুকিয়ে পড়লো।
ইমরান চিৎকার করে আরিফ কে বলতে লাগলো এখান থেকে পালাতে। দৌড়ে যখনি রাস্তা পাড় হতে যাবে ঠিক তখনি ওপাশ থেকে লরির ধাক্কায় মাটিতে শুইয়ে দিলো আরিফের মৃত দেহ। হুজুর ও সাথে সাথে উঠে চলে গেলেন। গ্রামের মানুষ এবার ক্ষিপ্ত হয়ে হুজুর কে মারার প্লেন করলো। রুমে এসে দেখে হুজুর নেই।হয়তো নামাজের সময় উপস্থিত হবে। কিন্তু না এর পরে হুজুর আর উপস্থিত হয়নি। কোথাও আর খুঁজে পাওয়া যায়নি হুজুর কে।